কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন

কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়? তা হয়তো অনেকেরই অজানা। আজকে আমরা আলোচনা করবো কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অতিরিক্ত কচু শাক খেলে এলার্জি হয় কিনা সে সম্পর্কে।
কচু-শাকের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
তাছাড়া কচু শাকের পুষ্টিগুণ এবং এই শাকের অপকারিতা সম্পর্কেও আজকের এই আলোচনা থেকে আপনি জেনে যাবেন। তাহলে চলুন আর সময় ক্ষেপণ না করে আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা

কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা

কচু শাকের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ প্রচুর। অনেক সময় সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তাররা বেশি পরিমাণে শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কচু শাক তার মধ্যে অন্যতম একটি। কচু শাক অনেকে অনেক ভাবেই খেয়ে থাকেন। কেউবা ভর্তা করে খেতে পছন্দ করেন। আবার কেউ ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ কিংবা শুটকি মাছ দিয়ে রান্না করে খেতে পছন্দ করেন। 
কচু শাক ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ একটি শাক। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হজম শক্তি উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কচুশাক ভীষণই উপকারী। শুধু তাই নয়, কচু শাকের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। 
 
তবে উপকারী এই শাক অতিরিক্ত খেলে আবার হতে পারে বিপত্তি। কারণ, কচু শাকের মধ্যে উচ্চমাত্রার অক্সালেট থাকে। যা আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। খাওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়ম মেনে পরিমান মত খেতে হবে। তাতে কোন অসুবিধা নেই। তাছাড়া সঠিকভাবে কচু শাক রান্না করে খেলে তাতে অপকারিতার থেকে উপকারই বেশি পাওয়া যায়।

কচু শাকের উপকারিতা

কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। কচু শাকের স্বাদ একবার আপনি যদি পান তাহলে বারবার খেতে চাইবেন। কিন্তু অনেকে আবার গলা চুলকানোর ভয়ে কচু শাক খেতে চান না। তাহলে চলুন জেনে নিন প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর কচু শাক খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-
  • প্রথমেই বলি, আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে কচুশাক। এতে করে শরীরে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে
  • কচু শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • কচু শাকের উচ্চ ফাইবার কনটেন্ট আপনার পেটের গন্ডগোল বদহজম, হজমের সমস্যা ইত্যাদি দূর করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারেন এই কচু শাক খেয়ে।
  • কচু শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। খেলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়বেই। সেই সাথে এটি আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধির সংক্রমণ থেকে দূরে রাখবে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে রেহাই পেতে আপনি আজ থেকে কচু শাক খাওয়া শুরু করুন। কেননা এই শাকে রয়েছে ফাইবার এবং পটাশিয়াম যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং চোখ ভালো রাখতে কচু শাকের ভূমিকা অনন্য। কারণ, এতে রয়েছে ভিটামিন এ যা আপনার চোখে সকল সমস্যা দূর করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
  • কচু শাকে ক্যালরির তুলনায় ফাইবার বেশি থাকে। ফলে এই শাক আপনার ওজন কমাতেও দারুন কাজ করে।
  • আপনি আপনার কিডনি সুরক্ষিত রাখতে চাইলে আজ এখন থেকেই কচুর শাক খাওয়া শুরু করুন। কারণ, কচুশাকে জলীয় অংশ বেশি থাকায় এটি আপনার কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং কিডনির দূষিত পদার্থ নিষ্কাশনে কাজ করে।
  • কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উজ্বীজ প্রোটিন যা আমাদের দেহের বৃদ্ধি এবং কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কচু শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি আপনার ত্বককে সজীব ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিয়মিত কচু শাক খেলে এটি ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে এবং রুক্ষতা কমায়।
  • আপনি কি মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে বলবো কচু শাট খান। কারণ, কচু শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আপনার মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের সমস্য সমাধানে সহায়ক হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এটি রক্তের শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে।
  • আপনার শরীরের জয়েন্টের ব্যাথায় এবং হাড়ের ব্যথা দূর করতে পারে কচু শাক। কারণ এতে থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে হাড় ভালো রাখে এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।
কচু-শাকের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
  • কচু শাকের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। ফলে আপনি যদি অ্যানিমিয়া কিংবা রক্তাল্পতায় ভুগে থাকেন। তাহলে বলব কচুশাক খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। আপনার অ্যানিমিয়া দূর করতে পারে এই কচু শাক।
  • কচু শাকের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী আপনার শ্বাসকষ্টের লক্ষণ কমাতে কাজ করে এবং শ্বাস যন্ত্র পরিষ্কার রাখে।
  • কচুর সাথে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
  • কচু শাকের উচ্চ জলীয় অংশ আপনার কিডনি এবং লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং সেইসাথে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে দেয়। ফলে আপনার শরীর থাকে সুস্থ সুন্দর।
  • শুধু তাই নয়, কচু শাকে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
  • কচু শাক রক্তে কোলেস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যার উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী।
  • নিয়মিত কচু শাক খাওয়ার ফলে আপনি কোলন ক্যান্সার এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
  • গর্ভকালীন সময়ে কচু শাক খাওয়া একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রুনের জন্য উপকারী। কারণ, কচুর শাকে থাকা ফলেট মা এবং শিশু উভয়ের পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কচু শাকের অপকারিতা

কচু শাকের উপকারী দিক যেমন রয়েছে তেমনি এর কিছু অপকারী দিকও রয়েছে। তবে এর অপকারিতা উপকারিতাr থেকে নিতান্তই নগণ্য। এবার চলুন অতিরিক্ত কচু শাক খেলে কি কি অপকারিতা দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • অনেক সময় কচু শাক খেলে আপনার গলা চুলকাতে পারে। কারণ, এতে রয়েছে অক্সালেট নামক উপাদান। যার কারণে গলায় চুলকানি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে কচু শাক খেলে আপনার শরীরে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আর এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্বাসকষ্ট, চুলকানি ফুসকুড়ি পেটে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
  • মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণ কচু শাক খেলে আপনার পেটে গ্যাস অম্বল এবং বদহজমে সমস্যা হতে পারে। এর ফলে আপনার ডায়রিয়া দেখা দিতে।
  • আপনাদের যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের সীমিত পরিমানে কচু শাক খাওয়া উচিত। কেননা কচু শাকে যে অক্সালেট রয়েছে তা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে কচু শক খেলে কচু শাকের অক্সালেট এবং ফাইটেট আপনার শরীরে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন ধরুন- ক্যালসিয়াম এবং আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে।
  • কিছু গবেষণায় দেখা গেছে কচু শাকের উপস্থিতি আপনার থাইরয়েড এর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • যদিও কচু শাক আয়রন সমৃদ্ধ। কিন্তু অতিরিক্ত আয়রন খেলে এটি আবার আপনার শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

কচু শাক খেলে কি এলার্জি হয়

কচু শাক খেলে এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিনা তা অনেকেই জানতে চান। দেখুন কচু শাক খাওয়া স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যকর। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে। কারণ, কচু শাকের মধ্যে কিছু ফাইটোকেমিক্যাল এবং অক্সালেট উপাদান রয়েছে। 
যা আপনার শরীরে এলার্জির সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার অনেকেই আছেন যারা পাতা জাতীয় খাবার বা শাকসবজি খেলে এলার্জি বেড়ে যায়। আর এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার শ্বাসকষ্ট, ত্বকে চুলকানি, ফুসকুড়ি, ত্বকে লালচে দাগ ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। খাওয়ার ফলে আপনার যদি অতিরিক্ত এলার্জির সমস্যা হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে কচু শাক খাওয়া পরিহার করুন।

কচু শাক খেলে কি হয়

কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কচু শাক খেলে কি হয় জানেন কি? সম্মানিত পাঠক, কচুশাক প্রচুর পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি সবজি। যা খেলে আপনি এর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা খুব সহজেই পেতে পারেন। কারণ, কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, 
 
ফাইবার এবং আয়রন এর মত গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদান। যা আপনার চোখ, হাড়, হৃদযন্ত্র, ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী। এছাড়াও কচুশাকে রয়েছে ফাইবার যা আপনার পাঁচনতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। এতে করে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে অনায়াসেই স্বস্তি পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, কচুর শাকে থাকা আয়রন আপনাকে রক্তাল্পতা থেকেও মুক্তি দিতে পারে।
 
তবে একটি কথা, কচু শাকের সর্বাধিক উপকারিতা পেতে আপনি নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে খাবেন। কারণ, অতিরিক্ত খেলে এতে থাকা অক্সালেট উপাদান আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দিতে পারে। ফলে আপনার গ্যাস, অম্বল এবং এলার্জির  সমস্যা দেখা দিতে পারে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

গাটি কচুর উপকারিতা

কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন গাটি কচুর উপকারিতাও কম নয়। এবার চলুন গাটি কচুর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন--
  • পুষ্টির উৎস হিসেবেঃ গাটি কচু পুষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং আয়রন এর একটি দুর্দান্ত উৎস হলো গাটি কচু। যা খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব সহজেই বৃদ্ধি পাবে।
  • হাড় ভালো রাখেঃ গাটি কচুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা খাওয়ার ফলে আপনার হাড়ের ব্যথা দূর হবে এবং সেই সাথে হাড়ের ঘনত্ব বাড়বে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে নিয়মিত গাটি কচু খেলে পেটে থাকা ফাইবার আপনার হজম সহজ করবে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হবে।
  • শরীরের ডিটক্সিফিকেশনেঃ গাটি কচু আপনার শরীরে প্রাকৃতিক ডিটোক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে। যা কিনা আপনার লিভারের জন্য উপকারী।
  • এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ গাটি কচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী আপনার শরীরের কোষগুলোকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে খুব সহজেই সুরক্ষা দিতে পারে।
  • অবসাদ দূর করেঃ গাটি কচু খেলে এতে যেমন আপনার শরীরের শক্তি বাড়বে, তেমনি আপনার মানসিক অবসাদ দুশ্চিন্তাও দূর হবে। কারণ গাটি কচুতে এমন সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম গাটি কচু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। আপনি গাটি কচু ছাড়াও ওল কচু, দুধ কচু, মান কচু, পঞ্চমুখী কচু, কচুর লতি এবং মুখি কচুও খেতে পারেন। যে আপনার স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।

কচু শাক খেলে কি গ্যাস হয়

কচু শাকের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন। আবার অনেকেই জানতে চান কচু শাক খেলে পেটে গ্যাস হয় কিনা। দেখুন, কচু শাক খেলে আপনার কিছুটা গ্যাস অম্বলের সমস্যা হতে পারে। আর এই গ্যাসের সমস্যা তখনই হবে, যখন আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে এবং দীর্ঘমেয়াদি কচুর শাক খাবেন। 
 
কারণ, কচু শাকে উচ্চ মাত্রার ফাইবার এবং প্রাকৃতিক শর্করা রয়েছে। যা আপনার পেটে গ্যাস উৎপন্ন করতে পারে। এছাড়াও কচুশাকে রয়েছে অক্সালেট যা আপনার পেটের নানা ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তবে আপনি যদি সঠিক ভাবে কচু শাক রান্না করে এবং পরিমিত পরিমাণে খান সেক্ষেত্রে গ্যাসের সমস্যা কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

কচু শাক খেলে গলা চুলকায় কেন

কচু শাকের উপকারিতা যেমন অনেক তেমনি এর অপকারিতাও কম নয়। বিশেষ করে কচুশাকের অপকারিতার মধ্যে রয়েছে গলা চুলকানোর মতো একটি সমস্যা। আপনি কি জানেন কচু শাক খেলে কেন গলা চুলকায়? কারণ, কচু শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে রেফাইড।রেফাইডের বৈজ্ঞানিক নাম হল ক্যালসিয়াম অক্সালেট। 
 
কচু গাছের মূল, কাণ্ড এবং পাতা সবেতেই প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে। এগুলি হলো কচু গাছের রেচন পদার্থ। এই ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর আকৃতি দেখতে অনেকটা সুচের মতো। ফলে আপনি যখন কচু শাক খান তখন এই অক্সালেট আপনার গলার মিউকাস ঝিল্লিতে গলায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং আটকে যায়। 
 
এতে করে গলাতে চুলকানির সৃষ্টি হয়। এই চুলকানি থেকে রেহাই পেতে আপনি শুরু থেকেই উচ্চ তাপমাত্রায় কচু শাক রান্না করার চেষ্টা করবেন। কারন,  অতিরিক্ত তাপে সঠিক ভাবে কচু শাক রান্না করলে ক্যালসিয়াম অক্সালেট অনেকটাই গলে যায়। ফলে গলা খুব কম চুলকায়। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

কচুতে হাত চুলকালে করণীয়

কচুতে হাত চুলকালে করণীয় কি অনেকেই জানতে চান। আবার অনেকেই জানেন না কচু কাটার পর হাত চুলকালে চুলকানি প্রতিরোধে কি করতে হয়। এবার আপনাকে কিছু ঘরোয়া টোটকা জানাবো। যে টোটকা মেনে কচু কাটার পরেও আপনার হাত চুলকাবে না। যেমন-
কচু-শাকের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
  • কচু পানিতে ভেজাবেন নাঃ আপনি কচুর লতি বা কচুর শাক কাটার আগে অবশ্যই পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন না। কারণ, পানিতে ভিজিয়ে রাখলে কাটার সময় আপনার হাত বেশি চুলকাবে। তাই চেষ্টা করবেন কচু কাটার পরে ধুয়ে নিতে।
  • পানির সাথে লবণ মেশানঃ আবার মনে করুন আপনি ভুল করে পানিতে প্রচুর ভিজিয়ে ফেলেছেন। সেক্ষেত্রে পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে দিন। এতেও আপনার হাত চুলকাবে না। কারণ, লবণে ক্ষার থাকে যা চুলকানি প্রতিরোধ করে।
  • নারকেল তেল ব্যবহার করুনঃ কচু কাটার পর সাথে সাথে যদি আপনার হাত চুলকাতে শুরু করে তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে হাতে কিছুটা নারিকেল তেল লাগিয়ে নিন এবং মালিশ করতে থাকুন। এতেও চুলকানি থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
  • অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার করুনঃ কচু কাটার পর আপনার হাত অতিরিক্ত চুলকালে আপনি হাতে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলকানি কিছুটা হলেও কমবে এবং স্বস্তি পাবেন।
  • চুলকানি দূর করতে লেবুঃ কচুর শাক কাটার পর তাৎক্ষণিকভাবে হাতের চুলকানি দূর করতে আপনি এক টুকরো লেবু হাতে চুলকানির স্থানে ঘষে ম্যাসাজ করুন। এতে অতি তাড়াতাড়ি চুলকানি দূর হবে।
  • কচু রোদে শুকিয়ে নিনঃ কচু সাধারণত জলাশয় এবং ভেজা জায়গায় বেশি জন্মে থাকে। ফলে চেষ্টা করবেন কচু কাটার আগে কিছুক্ষণ রোদে শুকিয়ে নিতে। কিছুক্ষণ রোদে রাখলেই কচু শুকিয়ে যাবে এবং এরপর কাঁটলেও আপনার হাত চুলকাবে না।
  • সরষের তেল ব্যবহার করুনঃ কচু কেটে হাত চুলকানি দূর করার আরেকটি উপায় হল কচু কাটার আগে আপনার হাতে ভালো করে সরষে তেল মেখে নিন। এতে করে কচু থেকে যে আঠা বা কস বেরোবে তা আপনার হাতে লাগবেনা এবং হাত চুলকানির সম্ভাবনাও থাকবে না।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত নিয়ম গুলো মেনে কচু কাটলে আপনার হাত চুলকানোর সম্ভাবনা একেবারেই কম হবে। যারা হাত চুলকানোর ভয়ে কচু কাটতে ভয় পান তারা অবশ্যই এই নিয়মগুলো মেনে চলবেন। আশা করছি ঘরোয়া এই টোটকা আপনার অনেকটাই উপকারে আসবে।

কচু কিভাবে রান্না করলে গলা চুলকাবে না

কচু শাকের উপকারিতা জেনেছেন সাথে এর অপকারিতাও জেনেছেন। প্রতিশোধের অপকারিতের মধ্যে প্রথমেই পড়ে গলা চুলকানোর বিষয়টি। গলা কেন চুলকায় কচু শাক খেলে তা আপনি ইতিমধ্যে জানতে পেরেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন কচু শাক রান্না করার দুটি উপায় রয়েছে? যে দুই উপায়ে রান্না করলে আপনার গলা কখনোই চুলকাবে না। 
 
এর প্রথমটি হল আপনি যখন কচু শাক রান্না করবেন শুরু থেকেই চেষ্টা করবেন অতি তাপমাত্রায় রান্না করতে। কারণ, অতি তাপে কচুতে থাকা অক্সালেট এবং রেফাইড গলতে শুরু করে। এই উপায় রান্না করলে আপনার গলা ধরার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। আবার আরেকটি উপায় হলো কচু শাক রান্নার সময় আপনি এতে সামান্য 
 
পরিমাণে সিরকা, তেতুলের রস এবং লেবুর রস যোগ করে রান্না করতে পারেন। এই দুই উপায় মেনে কচুর শাক রান্না করলে আপনার কখনোই গলা চুলকাবে না। এ কথা হলফ করে বলতে পারি। আরেকটি কথা, কচু শাক রান্না করার সময় অবশ্যই ভাল করে সেদ্ধ করে নেবেন এবং রান্নার সময় এর থেকে নির্গত জল ফেলে দিয়ে তবেই রান্না করবেন।

কচু শাকের পুষ্টি উপাদান

কচু শাকের নানান ধরনের উপকারিতা ও অপকারিতা তো এতক্ষণ জানলেন। এবার আপনি নিশ্চয়ই কচু শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। সম্মানিত পাঠক, তাহলে চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার একটি তালিকা দেখে নিন---
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ৩৬ কিলোক্যালরি
প্রোটিন ২.৬ গ্রাম
ফাইবার ৩ গ্রাম
ফ্যাট ০.৫ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ৭ গ্রাম
জিংক ০.৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি-৬ ০.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ৩০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ ৬০০ IU
ভিটামিন সি ৩৫ মিলিগ্রাম
ফসফরাস ৪০ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ৩২ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ৩০০ মিলিগ্রাম
আয়রন ১.৫ মিলিগ্রাম
কালসিয়াম ১২৫ মিলিগ্রাম

কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা

কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতাও কিন্তু কম নয়। তাছাড়া চিংড়ি বলুন, ইলিশ , লইট্যা আর ফাইসা শুটকি মাছ বলুন ইত্যাদির সাথে কচুর লতি খেতে কিন্তু দারুন লাগে। এবার চলুন কচুর লতি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানবেন--
  • প্রথমেই জানিয়ে দেই, কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশ, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, লোহা, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি। এই প্রত্যেকটি উপাদান আপনার শরীরের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • গরমকালে সাধারণত আমাদের শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হয় ফলে শরীর শুকিয়ে যায়। শীতকালে কম পরিমাণে পানি খাওয়ার ফলে ও সরে শুকিয়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত প্রচুর লতি খান তাহলে আপনার শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকবে। কারণ, কচুর লতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় অংশ রয়েছে।
  • আপনি কি জানেন কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন এবং ভিটামিন বি। যা আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • কচুর লতিতে থাকা খাদ্য আঁশ আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে।
  • আপনারা যারা দ্রুত ওজন কমাতে চান তারা কচুর লতি খেতে পারেন। কারণ, কচুর লতি ওজন কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং শরীরে হাড়ের ব্যথা দূর করতে আপনি আজ থেকে কচুর লতি খাওয়া শুরু করুন। কারণ, এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা আপনার হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • এছাড়াও প্রচুর লতিতে প্রচুর পরিমাণে লোহা রয়েছে। যা আপনার রক্তশূন্যতার সমস্যা দূর করতে পারে। ফলে যারা রক্তশূন্যতার সমস্যায় ভুগছেন কচুর লতি হতে পারে তাদের জন্য একটি উপদেয় পথ্য।
  • কচুর লতি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে থাকে।
  • আবার যারা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত কচুর লতির তরকারি খেতে পারেন। কারণ, কচুর লতি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
  • শুধু তাই নয়, বয়সজনিত কারণে অনেক সময় আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও আপনি খেতে পারেন কচুর লতি। এতে আপনার চোখের সমস্যা দূর হবে।

লেখকের মন্তব্য

কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছেন। আমাদের দেশের মানুষের কাছে কচু শাক অতি পরিচিত একটি শাক। তাছাড়া দামে সহজলভ্য এবং সস্তা হওয়ায় এটি অনেকের কাছেই জনপ্রিয় একটি সবজি। তাছাড়া কচু গাছের কোন অংশই ফেলনা নয়। বরং কচুর মুল থেকে শুরু করে কাণ্ড, পাতা, ফুল, লতি সবকিছুই খাওয়ার উপযোগী।
 
কিন্তু যেগুলো বনে জঙ্গলে জন্মায় সেগুলো বুনো কচু হিসেবে পরিচিত এবং মোটেও খাওয়ার উপযোগী নয়। সাধারণত ওল কচু, মুখী কচু, পঞ্চমুখী কচু এবং মান কচু এগুলো খাওয়ার উপযোগী। আবার পুষ্টিগুণেও কচু শাকের ভূমিকা অনবদ্য। তাই বলব নিজেকে সুস্থ সুন্দর এবং সতেজ রাখতে আপনি আজ থেকেই কচুর শাক খাওয়া শুরু করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url