পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে আপনি নিজেও চমকে যাবেন। খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়? জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ে নিন। সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে এবং রোগ নিরাময়ে পাথরকুচি গাছ কম বেশি সকলেই চেনেন। 
পাথরকুচি-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
পাথরকুচি পাতার বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা ও অপকারিতার পাশাপাশি এই পাতা আপনি কিভাবে খাবেন এবং পাতার রস খেলে কি হয় এর সবটাই জানতে পারবেন আজকের আর্টিকেল থেকে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা এবং অপকারিতা জেনে নিন

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেকেই আমরা জানি না। কিন্তু চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাচীনকাল থেকে যেসব ঔষধি গাছ ব্যবহৃত হয়ে আসছে তার মধ্যে পাথরকুচি পাতা অন্যতম। বিশেষ করে কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ সহ বিভিন্ন রোগের বিশেষ উপকারে আসে এই পাথরকুচি পাতা। পাথরকুচি পাতার এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ
আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি করে, তেমনি হজম শক্তি বাড়াতেও খুব ভালো কাজ করে। তাছাড়া সর্দি, কাশি ও জ্বরের উপশমে এই পাতা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে পাথরকুচি পাতার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। তাই পাথরকুচি পাতা সেবনে এই বিষয়গুলোও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা কি

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। যা আপনি হয়তো নিজেও জানেন না। পাথরকুচি মূলত একটি ঔষধি গাছ যার অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি উপকারী এই ভেষজের অসাধারণ কিছু গুনের কথা--
  • প্রথমেই বলি, পাথরকুচি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। ফলে এটি আপনার শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে।
  • যারা অল্পতেই ঠান্ডা লাগা, কাশি, সর্দিতে ভুগতে থাকেন তাদের জন্য পাথরকুচি পাতা একটি মহৌষধ। কারণ, এই পাতার অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ আপনার সর্দি-কাশির উপশমে মে ম্যাজিকের মত কাজ করে। শুধু তাই নয় এর পাশাপাশি আপনার গলা ব্যথা কমাতেও কাজ করে পাথরকুচি পাতা।
  • হজমের সমস্যাতেও পাথরকুচি পাতা বেশ উপকারী। এই পাতার অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ আপনার হজমতন্ত্রের প্রদাহ কমাতে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে খুব ভালো কাজ করে।
  • একটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস সেবনে এটি আপনার রক্তে গ্লুকোজের লেভেল ঠিক রাখে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকার।
  • যারা ওজন কমাতে চান তারা আজ থেকে পাথরকুচি পাতার ব্যবহার শুরু করুন। কারণ, এই পাতার এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী আপনার শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া এই পাতা শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে। যার ফলে ওজনও কমতে থাকে।
  • আপনার শরীরের লিভারের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাথর প্রতি পাতার ভূমিকা অনন্য। নিয়মিত পাথরকুচি পাতা সেবনে এটি লিভারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে লিভারও সুস্থ থাকে।
পাথরকুচি-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
  • আপনাদের যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এই পাতার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার রক্তচাপ কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • আপনি জানলে আরো অবাক হবেন যে, পাথরকুচি পাতার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ আপনার ত্বক পরিষ্কার রাখতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে। শুধু তাই নয়, আপনার চুলের জন্যও এই পাতা অত্যন্ত উপকারী।
  • পাথরকুচি পাতার অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • নিয়মিত পাথরকুচি পাতার সেবন করলে এটি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত সকল পদার্থ অপসারণ করে দেয়। ফলে আপনার শরীর ভেতর থেকে সুস্থ ও তরতাজা থাকে।
  • পাথরকুচি পাতা শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। যাক পাবন্দ পিরিয়ড বা মাসিক জনিত যে কোন সমস্যার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী।
  • পাথরকুচি পাতার এন্টি ইনফ্লামেটোন আপনার পেটের ব্যথা এবং পেটের যেকোনো ধরনের অস্বস্তি কমাতে ভীষণই ভালো কাজ করে।
  • আপনার শরীরের যে কোন কাটা ছেড়া বা ক্ষতস্থানে পাথরকুচি পাতা হালকা তাপে গরম করে লাগালে ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে যাবে।

পাথরকুচি পাতার ক্ষতিকর দিক

পাথরকুচি পাতার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আর এই অপকারিতা গুলো তখনই দেখা দিবে যখন আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে দীর্ঘ মেয়াদে এই পাতা সেবন করবেন। এবার চলুন অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার সেবনে আপনার শরীরে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--
  • লিভারের সমস্যাঃ পাথরকুচি পাতার অতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার লিভারের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এটি লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারে এবং এর ফলে আপনার লিভার সিরোসিসের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় বিপদজনকঃ গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করলে তাতে আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকে অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া এটি আপনার হরমোনাল পরিবর্তনও ঘটাতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • হরমোনাল ভারসাম্যহীনতাঃ পাথরকুচি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে আপনার হরমোনাল স্তরে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। যা কিনা আপনার প্রজনন স্বাস্থ্যে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সমস্যা বেশি হয় যাদের হরমোনের সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে তাদের।
  • এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ অতিরিক্ত পরিমাণে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করলে আপনার শরীরে এলার্জিক বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া যেমন ধরুন- চর্মরোগ, ফুসকুড়ি, চুলকানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • ডায়াবেটিসে সমস্যাঃ যদিও পাথরকুচি পাতা রক্তে গ্লুকোজের স্থল কমাতে পারে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীরা এই পাতা অতিরিক্ত ব্যবহার করলে তাতে আপনার রক্তে গ্লুকোজের স্তর একেবারেই নিচে নেমে যেতে পারে। যা বিপদজনক হতে পারে।
  • মূত্রপথের সমস্যাঃ মাত্রতিরিক্ত পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে এটি আপনার মূত্র পথে নানান ধরনের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
  • পেটের অস্বস্তিঃ অতিরিক্ত পরিমাণে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করলে আপনার পেটের অস্বস্তি বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
  • বমির উদ্বেগ হয়ঃ অনেক সময় পাথরকুচি পাতা ব্যবহারে আপনার বমি বমি ভাবের সৃষ্টি হতে পারে।
  • ঔষধের সাথে বিক্রিয়াঃ পাথরকুচি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা আপনার ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা রক্তচাপ কমানোর ঔষধ সেবন করছেন তাদের পাথরকুচি পাতা ব্যবহার না করাটাই ভালো।
সম্মানিত পাঠক, পাথরকুচি পাতার উপরিউক্ত ক্ষতিকর দিক গুলি এড়াতে আপনি নিয়ম মেনে পরিমান মত পাথরকুচি পাতা সেবনের অভ্যাস করুন। এতে ভালো ফল পাবেন।

খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয়

খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় অনেকেই জানতে চান। তাহলে জেনে রাখুন, খালি পেটে পাথরকুচি খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
  • প্রতিদিন সকালে দিনের শুরুতে পাথরকুচি পাতা খেলে এটি আপনার হজম ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেয়। এতে করে আপনি বদহজম, পেট ফাঁপা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে এটি আপনার অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন কমাতে পারে এবং পাচন তন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে।
  • পাথরকুচি পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। যা খালি পেটে খেলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে।
  • পাথরকুচি পাতা খালি পেটে খাওয়ার ফলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ে এবং সেই সাথে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
  • শুধু তাই নয়, নিয়মিত খালি পেটে পাথরকুচি পাতা সেবন করলে এটি আপনার মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশার লক্ষণ কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • হৃদপিন্ডের সুস্থতা কেনা চায় বলুন তো। হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে চাইলে আপনি খালি পেটে পাথরকুচি পাতার খাওয়া শুরু করুন। কারণ, খালি পেটে এই পাতা খেলে এটি আপনার রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং হৃদপিন্ডের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে এর এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ আপনার ত্বককে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • দিনের শুরুতে খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে এটি সারাদিনের জন্য আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি সরবরাহ করতে থাকে। ফলে সারা দিনভর আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মে এনার্জি আসে।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত এই উপকারিতা গুলি পেতে আপনি খালি পেটেও পাথরকুচি পাতা খেতে পারেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে খাবার সময় অবশ্যই পরিমাণ বুঝে খাবেন।

পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এবার আপনাকে জানাবো পাথরকুচি পাতা। আপনি কি জানেন এই পাতা খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। যা অনেকেই জানেন না। তো চলুন পাথরকুচি পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন--
  • প্রথমেই বলব পাথরকুচি পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি সতেজ তরতাজা পাতা সংগ্রহ করুন। কারণ, শুকনো বা কয়েক দিনের পুরোনো পাতা হলে তা খেয়ে খুব একটা উপকার নাও পেতে পারেন।
  • পাথরকুচি পাতা আপনি সবসময় সকালে খালি পেটে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
  • টাটকা সতেজ পাতা সংগ্রহের পর কথা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। যাতে করে পাতায় কোনরকম ময়লা বা বিষাক্ত পদার্থ না থাকে।
  • আপনি টাটকা পাথরকুচি পাতা শুধু চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
  • আবার আপনি চাইলে পাথরকুচি পাতা অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানের সাথে যেমন ধরুন- মধু, লেবুর রস ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • পাথরকুচি পাতা আপনি খাবার সালাদের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে সালাদের স্বাদ তীব্র এবং কিছুটা তিক্ত হলেও তাতে পুষ্টিগুণ ঠিক ঠাক থাকে।
  • যারা পাথরকুচির কাঁচা পাতা খেতে অভ্যস্ত নন, তারা পাথরকুচি পাতা শুকিয়ে এই পাতা দিয়ে চা বানিয়েও খেতে পারেন। এর জন্য পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে কিছু সময় রেখে দিতে হয়। তারপর স্বাদমতো লেবুর রস, মধু মিশিয়ে এই চা পান করতে পারেন।
  • আপনি আপনার রান্নার সাথে পাথরকুচি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য পাথরকুচি পাতার পেস্ট করে মসলার সাথে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার খাবারের স্বাদ ও গুনাগুন দুটোই বাড়বে।
  • আপনি চাইলে টক দইয়ের সাথে পাথরকুচি পাতা খেতে পারেন। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এবং পেটের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
পাথরকুচি পাতা খাওয়ার পরিমাণ
  • সাধারণভাবে প্রতিদিন আপনি ৫-১০ টি পাথরকুচির তাজা পাতা খেতে পারেন।
  • আপনি যদি হজমের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য এই পাতা ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে দিনে ২-৩টি পাতা খাওয়াই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট।
সম্মানিত পাঠক, উপরিক্ত নিয়ম মেনে পাথরকুচি পাতা খেলে এর থেকে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন। এতটুকু বলতে পারি। আর অতিরিক্ত পাতা ব্যবহার করতে চায় না অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করবেন। কেননা তাতে আপনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয়

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। পাথরকুচি পাতার রস খেলে কি হয় এই প্রশ্ন আপনারা অনেকেই করে থাকেন। আসলে পাথরকুচি পাতার রস খাওয়া ঠিক পাথরকুচি পাতা খাওয়ার মতই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পাথরকুচি পাতার রসে সাধারণত প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট, আন্টি ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য থাকে।
 
যা খেলে আপনার পেটের হজমের সমস্যা দূর হবে। এতে করে গ্যাস অম্বলের সমস্যা এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, নিয়মিত নিয়ম করে পাথরকুচি পাতার রস খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও সংক্রমনের বিরুদ্ধে খুব সহজে লড়াই করতে পারে।
 
আবার যারা ওজন কমাতে চান পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। কারণ, এই পাতার রস ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় পাথরকুচি পাতার রস খেলে আপনার পেটে অস্বস্তি হতে পারে। তাই বলবো আপনি যদি প্রথম পাথরকুচি পাতার রস খেয়ে থাকেন তাহলে অল্প পরিমাণে শুরু করুন।  পরবর্তীতে পরিমাণ আপনি বাড়িয়েও খেতে পারেন।

পাথরকুচি পাতা কখন খেতে হয়

খালি পেটে পাথরকুচি পাতা খেলে কি হয় তা খানিক আগেই আপনাকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু আপনি কি জানেন পাথরকুচি পাতা ঠিক কখন খেতে হয়। পাথরকুচি পাতা খাওয়ার কিছু সময় রয়েছে। যে সময়মতো খেলে আপনি পাতার সর্বাধিক উপকারিতা পেতে পারেন। তাহলে চলুন পাথরকুচি পাতা আপনি কোন সময় খাবেন তা জেনে নিন--
  • সকাল বেলা খালি পেটেঃ পাথরকুচি পাতা খাওয়ার সব থেকে উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা খালি পেটে। এতে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শরীরের ডি-টক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত হয়।
  • খাবারের পরঃ আপনি যদি গ্যাস অম্বল বা কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা বুঝতে পারেন সে ক্ষেত্রে খাবারের পর পাথরকুচি পাতা খেতে পারেন। কারণ, খাবারের পর এই পাতা খেলে আপনার হজম ক্রিয়া অনেকটাই সহজ হবে।
  • রাতের খাবারের পরঃ রাতে খাবারের পরেও আপনি পাথরকুচি পাতা খেতে পারেন। রাতে খেলে এটি আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত পানীয় এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ সাহায্য করে।
  • ব্যায়ামের পরেঃ শারীরিক পরিশ্রম বা শরীর চর্চার পরে পাথরকুচি পাতা খেলে এটি আপনার শরীরে রিকভারি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে নিয়মিত শরীরচর্চার পরেও আপনি এই পাতা খেতেই পারেন।
  • রাতে ঘুমানোর আগেঃ আপনি চাইলে রাতে ঘুমানোর আগেও পাথরকুচি পাতা খেতে পারেন। এতে আপনার রাতের ঘুম ভালো হবে।
সম্মানিত পাঠক, যখন তখন এই উপকারিতা না খেয়ে আপনি উপরিউক্ত সময় গুলি মেনে আপনি পাথরকুচি পাতা খাওয়ার চেষ্টা করুন। তাতে ভালো ফল পাবেন।

পাথরকুচি পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

পাথরকুচি পাতার নানামুখী উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন। আপনি কি জানেন, এই পাথরকুচি পাতার বৈজ্ঞানিক নাম হল Bryophyllum pinnatum এবং এটি একটি বিরূপ জাতীয় ঔষধি উদ্ভিদ। পাথরকুচি পাতার গাছ সাধারণত ২ ফুটের মতো উঁচু হয়। এর পাতা অনেকটা মাংসল এবং মসৃণ ধরনের। পাতার রং গারো সবুজ।
 
পাতার আকৃতি খানিকটা ডিমের মত এবং পাতার চারপাশে ছোট ছোট গোল খাঁজ থাকে। আপনি জেনে আরো অবাক হবেন যে, পাথরকুচি গাছের কোন বীজ হয় না। পাতার এই খাঁজ থেকেই নতুন চারার জন্ম হয়। অনেক সময় গাছ বয়স্ক হলে বা পুরনো হয়ে গেলে সেই গাছে পাতার খাঁজ থেকে জন্ম নেয় নতুন চারা। এই গাছটি লাগাতেও তেমন কিছু প্রয়োজন হয় না।
 
কেবলমাত্র মাটিতে ফেলে দিলেই কিছুদিন পর তা থেকে চারা গজায়। পাথরকুচি পাতার একটি পাতা থেকে ৫-১০টি চারা উৎপাদন সম্ভব। সাধারণত কাকর মাটিতে পাথরকুচি চারা জন্মে থাকে। তবে স্যাতসেতে এবং ভেজা মাটিতে এই উদ্ভিদ গাছ খুব দ্রুত বেড়ে ওঠে। বিভিন্ন স্থানে পাথরকুচি পাতা কফপাতা বা পটিয়াপুরি নামে পরিচিত হলেও আমাদের দেশে এটি পাথরকুচি নামে সর্বত্রই পরিচিত।

পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুন

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এই পাতার ঔষধি গুন সম্পর্কে জানতে চান। তো চলুন এবার এই উপকারী পাতার কিছু ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিন-
পাথরকুচি-পাতার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
  • কিডনির পাথর অপসারণেঃ আপনার কিডনিতে যদি পাথরজনিত কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে দিনে ২-৩ টি পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে এর রস খান। কারণ, পাথরকুচি পাতা কিডনি ও গলগন্ডের পাথর অপসারণে বিশেষ ভাবে কাজ করে।
  • কলেরা, ডায়রিয়া এবং রক্ত আমাশয় প্রতিরোধেঃ এই সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি ৩ মিলিলিটার পাথরকুচি পাতার জুসের সাথে ৭ গ্রাম ঘি এবং ৩ গ্রাম জিরা মিশিয়ে টানা কয়েকদিন খান। তাতে বেশ উপকার পাবেন।
  • জন্ডিসের নিরাময়েঃ পাথরকুচি আপনার লিভার সুস্থ রাখতে এবং লিভারের সুরক্ষায় তাজা পাথরকুচি পাতা এবং এর জুস ভীষণ উপকারী। এর জন্য আপনি প্রতিদিন পাথরকুচি পাতার রস সেবন করতে পারেন।
  • পাইলস প্রতিরোধেঃ আপনি পাইলস ও অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোলমরিচ মিশিয়ে পান করুন। এতে অতি দ্রুত পাইলস এর যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবেন।
  • কাটা ছেঁড়ায় পাথরকুচি পাতাঃ আপনার শরীরের যেকোনো কাটায় স্থান পা ক্ষত স্থানে পাথরকুচি পাতার হালকা তাপে গরম করে উক্ত স্থানে লাগান। এতে অনেকটাই আরাম পাবেন।
  • ত্বকের যত্নে পাথরকুচিঃ পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ থাকে যা আপনার ত্বকের জন্য উপকারী। তাছাড়া ত্বকের ব্রণ, ফুসকুড়ি, কালো দাগ ইত্যাদি দূর করতে পাথরকুচি পাতা বেটে আপনি আপনার ত্বকে ব্যবহার করতেই পারেন।
  • শিশুর পেটের ব্যথা কমাতেঃ আপনার শিশুর পেটে ব্যথা হলে ৩-৬০ ফোটা পাথরকুচি পাতার রস পেটে মালিশ করুন। এতে পেটের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
  • সর্দি সারাতেঃ আপনি দীর্ঘদিনের সর্দিতে ভুগছেন। কোনভাবেই ঠান্ডা লাগা, সর্দি কমাতে পারছেন না। তাহলে এক্ষুনি পাথরকুচি পাতার রস গরম করে তাতে একটু সোহাগার খই মিশিয়ে নিন। খেয়াল রাখবেন, এটি যেন ৩ চা চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রামের মত হয়। তা থেকে ২ চা চামচ মত নিয়ে সকালে এবং বিকালে দুবার খান। এভাবে খেলে আপনি আপনার পুরনো সর্দি কাশি থেকে অনেকটাই পরিত্রাণ পাবেন।
  • মৃগী রোগ নিরাময়েঃ মৃগী রোগের ক্ষেত্রে পাথরকুচি পাতার রস ২-৯ ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। এই রস আপনার পেতে গেলেই রোগের উপশম ঘটবে।
  • রক্তপিত্বেঃ পাথরকুচি পিত্তজনিত ব্যথায় রক্তক্ষরণ হলে আপনি এক চা চামচ পাথরকুচি পাতার রস টানা ২ দিন দুবেলা করে খাবেন।
  • শারীরিক মেহ সারাতেঃ অনেক সময় সর্দি-জনিত কারণে শরীরে ফোড়ার আবির্ভাব ঘটে। এটিকে সাধারণত মেহ বলা হয়ে থাকে। শারীরিক এই মেহু দূর করতে আপনি পাথরকুচি পাতার রস ১ চামচ করে টানা ৭ দিন সকাল বিকাল খেতে থাকুন। এতে আপনার শারীরিক মেহু খুব সহজেই দূর হবে।
  • পেট ফাঁপা রোধেঃ অনেক সময় দেখবেন আপনার পেট ফুলে গেছে, পেটে চাপ ধরে আছে কিংবা আধোবায়ু সরছে না। এই সমস্যা সমাধানে আপনি ১-২ চামচ পাথরকুচি পাতার রসের সাথে সামান্য চিনি মিশিয়ে গরম করে সিকি কাপ পানির সাথে খেয়ে ফেলুন। এতে আপনার পেট ফাঁপা দূর হবে।
সম্মানিত পাঠক, মনে রাখবেন ভেষজ চিকিৎসার মধ্যে সবথেকে উপকারী হল পাথরকুচি পাতা। এটি আপনার কিডনি থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের উপসম ঘটাতে পারে। তবে এর উপকার পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে।

পাথরকুচি পাতার ব্যবহার

পাথরকুচি পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতার পাশাপাশি এর আরো নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। যা অনেকেরই অজানা। তো চলুন পাথরকুচি পাতার অন্যান্য ব্যবহার গুলো কি কি তা জেনে রাখুন--
  • পাথরকুচি পাতা আপনি রান্নার সাথে ব্যবহার করতে পারেন বিশেষ করে সালাদ, স্যুপ, কিংবা মাংস রান্নায় এই পাতা ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ আরো দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়। তাছাড়া দক্ষিণ এশীয় ও আফ্রিকান রান্নায় এই পাতা বহুল ব্যবহৃত হয়।
  • আপনার বাড়ির কিংবা ঘরের পোকা তাড়াতে পাথরকুচি পাতার প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। এটি বিশেষভাবে মশা এবং অন্যান্য ছোট কীটপতঙ্গ দূর করতে সাহায্য করে।
  • পাথরকুচি পাতা আপনার বাড়ির গার্ডেনিংয়ে প্রাকৃতিক সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, এই পাতা মাটির উর্বরতা আরো বাড়িয়ে দেয়।
  • কানের ব্যথা বা যন্ত্রণা কমাতে কানের ভেতর পাথরকুচি পাতার কয়েক ফোটা রস দিলে কানের ব্যথা অনেকটাই সেরে যায়।
  • অনেক সময় আমাদের মাথায় উকুনের উপদ্রব হয়। বিভিন্ন ধরনের উপন্যাসের শ্যাম্পু ব্যবহার করেও উকুন রোধ করা যায় না। এই উকুন দূর করতে আপনি পাথরকুচি পাতা পেস্ট করে আপনার চুলে লাগান। উকুন দূর হবে এবং চুলের বৃদ্ধি ও ভালো হবে।
  • আপনার কি নিশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়? কিংবা বিভিন্ন ধরনের পেস্ট ব্যবহার করেও দুর্গন্ধ দূর করতে পারছেন না। তাহলে বলবো আপনি পাথরকুচি পাতা চিবিয়ে নিন। এতে আপনার নিঃশ্বাসের সাথে যে দূর্গন্ধ বের হয় তার সহজে দূর হবে।

পাথরকুচি পাতার মূল এর কাজ কি

পাথরকুচি পাতার এতসব উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই গাছের মূলের কাজ জানতে চান। সম্মানিত পাঠক, পাথরকুচি পাতার মূলেরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে এটি আপনার সুরক্ষায় ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, পাথরকুচি পাতার মূল চুলে ব্যবহার করলে এটি আপনার চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে
 
এবং অতিরিক্ত চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া পাথরকুচির এই মূল পেশীর ব্যথা কমানোর জন্য এবং শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ জনিত সমস্যায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূলত এই মূল একটি বহুমুখী ঔষধি গুণ সম্পূর্ণ উপাদান। যা নিয়মিত নিয়ম মেনে সেবন করলে এর থেকেও আপনি নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন।

লেখকের মন্তব্য

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার নিকট বোধগম্য হয়েছে। পাথরকুচি পাতা এমনই একটি উপকারী ভেষজ আপনার কিডনি থেকে শুরু করে শরীরের সকল প্রদাহে সমানভাবে উপকারী। তাছাড়া এই পাতার সবথেকে ভালো একটি দিক হলো যে কোন বয়সের অর্থাৎ যুবক, শিশু কিংবা বৃদ্ধ সকলেই এই পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
 
এই পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুন এতটাই যে একে "মিরাকল লিফ" ও বলা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের জন্য নয় বরং আপনার ত্বক এবং চুলের জন্যও এই পাতা উপকারী। সম্মানিত পাঠক, সবশেষে একটা কথাই বলবোআপনার সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে আপনি নিয়মিত পাথরকুচি পাতার ব্যবহার শুরু করুন। ভালো, থাকুন সুস্থ থাকুন। পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url