আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানুন
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানতে চান? আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে জানেন কি? না জেনে থাকলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
কারণ, আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব আক্কেল দাঁতের ব্যথা আপনি কিভাবে কমাতে পারেন, আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ এবং আক্কেল দাঁত সম্পর্কিত খুঁটিনাটি সকল তথ্য। তাহলে চলুন আর দেরি না করে আজকের মত আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আক্কেল দাত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানুন
- আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়
- আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায়
- আক্কেল দাঁত উঠার লক্ষণ
- আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে
- আক্কেল দাঁত উঠলে কি হয়
- আক্কেল দাঁত ওঠার বয়স
- আক্কেল দাঁত উঠতে কত দিন সময় লাগে
- আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়
- আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ঔষধ
- আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর হোমিও ঔষধ
- আক্কেল দাঁত তোলার খরচ কত
- আক্কেল দাঁত বাঁকা হলে করণীয়
- লেখকের মন্তব্য
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায়
আক্কেল দাঁত ওঠার সময় এক ধরনের তীব্র ব্যথার উদ্রেগ হয়, যা অনেক সময় সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই আবার এই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ব্যথা নাশক বিভিন্ন ঔষধও খেয়ে থাকেন। অনেকের আবার আক্কেল দাঁত ওঠার সময় অস্ত্রপাচার করারও প্রয়োজন পড়ে। এই আক্কেল দাঁত আসলে কি?এই দাঁত উঠতে কেনই বা এত তীব্র ব্যথা হয়, আক্কেল দাঁতের ব্যথা কতদিন পর্যন্ত থাকে এবং আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় কি হতে পারে এর সবটাই আজকে আপনি আমাদের আর্টিকেল থেকে জেনে যাবেন। তো চলুন আলোচনা শুরু করি।
আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায়
আক্কেল দাঁত ওঠার সময় মাড়ি ফোলা খুব সাধারন একটি সমস্যা। অনেকের মুখে ৩২ টি দাঁতের জায়গা থাকে না বিশেষ করে তাদের আক্কেল দাঁত বের হওয়ার জায়গা পায় না। এতে করে মাড়ি ফুলে যায় এবং মাড়িতে প্রচন্ড ব্যথা হয়। এই ব্যথা দূর করতে শুধু ঔষধ নয় বরং ঘরোয়া কিছু টোটকাও রয়েছে। এবার চলুন আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা কমানোর উপায় সম্পর্কে আপনাকে কিছু ঘরোয়া টোটকা জানিয়ে দিই --- লবণ জলের ব্যবহারঃ আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা ব্যথা কমাতে আপনি নুন জল দিয়ে গার্গল করতে পারেন। এটাই দেখবেন আপনার ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে কারণ লবণ জলের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া নাশক ক্ষমতা থাকে। যার কারণে, লবণ পানিতে গার্গল করলে বা কুলকুচি করলেও আক্কেল দাঁত মাড়ি ফোলা ব্যথা একেবারে কমে যায়।
- বরফের টুকরোঃ আক্কেল দাঁতের ব্যথা তীব্র হলে সে ব্যথার স্থানে আপনি এক টুকরো বরফ দিতে পারেন এতে ওই নির্দিষ্ট অংশে রক্ত চলাচল কমবে। রক্ত চলাচল কমলে ব্যথার প্রকোপও কমে আসবে।
- ভিনেগার জলের ব্যবহারঃ আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা দূর করতে আপনি ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনার ঘরে ভিনেগার থাকলে এক চা চামচ ভিনেগার এর সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার এতে তুলা ভিজিয়ে আপনার আক্কেল মাড়ির ফলা স্থানে দাঁত দিয়ে চেঁপে ধরুন। ব্যথা যতক্ষণ পর্যন্ত না কমবে ততক্ষণ এই পদ্ধতি আপনি ব্যবহার করতে থাকুন। দেখবেন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে মাড়ি ফোলা কমে যাবে।
- লবঙ্গের তেলেসমাতিঃ আক্কেল দাঁতের এবং মাড়ি ফোলার ব্যথা কমাতে আপনি একটি লবঙ্গ মুখে নিয়ে না চিবিয়ে দাঁত দিয়ে মাড়ির স্থানে চেপে ধরে রাখুন। এতে করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনার মাড়ি ফোলা এবং দাঁতের ব্যথা দূর হবে।
- ঠান্ডা বা গরম সেকঃ আক্কেল দাঁতের মাড়ি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেলে আপনি মুখের উপর থেকেই ঠান্ডা বা গরম পানির সেক দিতে পারেন। কারণ, যে কোনো ব্যথায় ঠান্ডা বা গরম পানির সেক ব্যথা কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
- পেঁয়াজের ব্যবহারঃ আবার আপনি পেঁয়াজ দিয়েও আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলানোর ব্যথা দূর করতে পারেন। এর জন্য একটু একটু পেঁয়াজ আপনার মাড়ির ব্যাথার স্থানে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে থাকুন। এই পেঁয়াজের রস আপনার ব্যথা কমাতে কাজ করবে
- ব্রেকিং সোডার বাজিমাতঃ আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা ব্যথা কমাতে বেকিং সোডা ও খুব ভালো কাজ করে। এর জন্য আপনি একটি তুলার সাহায্যে বেকিং সোডা আপনার মাড়ির স্থানে রাখুন। এতে দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যথা কমতে শুরু করবে।
- পেয়ারা পাতাঃ পেয়ারা গাছের কচি পাতা আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা বেথানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! হ্যাঁ সম্মানিত পাঠক, এর জন্য আপনি পেয়ারা গাছের কচি পাতা পানিতে সেদ্ধ করে সেই পাতা আপনার আক্কেল দাঁতের গোড়ায় কিছুক্ষণ রেখে দিলেই ব্যথা কমতে শুরু করবে।
- শসা, আলু, বাঁধাকপির ব্যবহারঃ শসা আলু বাঁধাকপি সাইজ মত কেটে আপনার মাড়ির ক্ষতস্থানে চেপে রাখুন। এতেও ক্ষতস্থানের ব্যথা দূর হবে এবং মাড়ি ফোলা কমবে।
- হলুদের মাউথ ওয়াশঃ আক্কেল দাঁত মাড়ি ফোলা কমাতে আপনি একটা গরম পানিতে হাফ চা চামচ হলুদের গুড়ো দুটি লবঙ্গ ও দুটি শুকনো পেয়ারা পাতা মিশিয়ে নিন। এবার এই পানি দিয়ে কুলকুচি করে। এতে মাড়ি ফোলা এবং দাঁতের ব্যথা উভয়েই সারবে।
- রসুন থেরাপিঃ দাঁত এবং মাড়ি ব্যথা কমাতে রসুনের কোন জুড়ি নেই। আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা কমাতে আপনি একটি রসুনের কোয়া দাঁতের মাড়িতে চেপে ধরে রাখুন। পেতে ব্যথা প্রশমিত হবে এবং ফোলাও কমবে।
- এলোভেরার ব্যবহারঃ আক্কেল দাঁতের মাড়ি ফোলা কমাতে আপনি অ্যালোভেরাও ব্যবহার করতে পারেন। আপনার যেখানে আক্কেল দাঁত উঠেছে সেখানে এলোভেরা তেল পাওয়ায় বেশ প্রশান্তি পাবেন এবং সেইসাথে বাড়ির লাল ফোলা ভাব কমে আসবে।
- পুদিনার রসঃ ব্যাথায় এবং প্রদাহ কমাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান হল পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতার রস খেলে দাঁতের মাড়ি ব্যথা ও খোলা থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন।
আক্কেল দাঁত উঠার লক্ষণ
আক্কেল দাঁতের ব্যথা কিভাবে কমাবেন সে উপায় আপনাকে আমরা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছি। এবার আপনাকে আক্কেল দাঁত ওঠার কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা দেবো। যে লক্ষণগুলো আপনার শরীরে পরিলক্ষিত হলে আপনি বুঝবেন এটি আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ। যেমন ধরুন-আরো পড়ুনঃ চিরতরে মেছতা দূর করার ২০টি উপায়
- আক্কেল দাঁত ওঠার আগে আপনার দাঁত ওঠার জায়গায় অথবা মুখের পেছনের অংশে সামান্য ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- যে স্থানে আক্কেল দাঁত উঠবে সেই স্থানের আশপাশে মাড়ির ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে।
- ওঠার কারণে আপনার মাথা ব্যথা হতে পারে।
- আপনার দাঁতের চারপাশে অস্বস্তি বা চুলকানির উদ্রেক হতে পারে।
- আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ হিসেবে কখনো কখনো আপনার মুখের ভেতরের অংশে লালচে ভাব আসতে পারে।
- খাবার জীবনে অসুবিধা হতে পারে বিশেষ করে আপনার পেছনের দাঁতের কারণে।
- আক্কেল দাঁত ওঠার কারণ হিসেবে আপনার গলা ব্যথাও হতে পারে।
- মুখ খোলার সময় অসুবিধা বা ব্যথা হতে পারে।
- আপনার মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে এবং মুখের স্বাদ পরিবর্তিত হতে পারে।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে
আক্কেল দাঁতের ব্যথা ঠিক কতদিন থাকে এটি নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কারণ, একেকজনের ক্ষেত্রে ব্যথার স্থায়িত্ব একেকরকম হয়ে থাকে। তবে আক্কেল দাঁতের ব্যথা সাধারণত দাঁত ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকদিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। আর ব্যাথার তীব্রতা এবং ব্যথা কতদিন স্থায়ী হবে সেটি আপনার দাঁত ওঠার প্রক্রিয়ার উপর অনেকটাই নির্ভর করে।স্বাভাবিকভাবে নতুন আক্কেল দাঁত ওঠার সময় মাড়ি ফোলা, মাড়ি ব্যথা, দাঁতের গোড়ায় ব্যথা ইত্যাদি অস্বস্তি আপনার অনুভূত হতে পারে। যা কয়েক দিন থেকে শুরু করে এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। কখনো কখনো এই ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে। যার কারণে আপনার জ্বর, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, মুখের দুর্গন্ধ, খাবারের প্রতি অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
তবে, ব্যাথার তীব্রতা যদি বেগতিক হয়, মাড়ি অতিরিক্ত ফুলে যায় এবং মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয় সেক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই একজন ডেন্টিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত। আক্কেল দাঁতের ব্যথা ঠিক কতদিন স্থায়ী হতে পারে আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
আক্কেল দাঁত উঠলে কি হয়
আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর কিছু ঘরোয়া টোটকা আপনি ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। অনেকেই জানতে চান আক্কেল দাঁত উঠলে কি হয়? আবার অনেকেই জানেন না আক্কেল দাঁত ওঠার লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে। তাহলে জেনে রাখুন, আক্কেল দাঁত উঠলে আপনার মুখে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সংক্রমিত এই আক্কেল দাঁত পেরিকরোনাইটিস নামেও পরিচিত। আর পেরিকরোনাইটিস তখনই ঘটে যখন আপনার আক্কেল দাঁতের চারপাশের টিস্যু স্ফীত এবং সংক্রমিত হয়।ঠিক এই সময় আক্কেল দাঁত ওঠার চারপাশ যে মাংস দিয়ে ঢাকা থাকে সেটিকে অপারকুলাম বলা হয়ে থাকে। এই অপারকুলাম ভেদ করে দাঁত যখন বেরোতে না পারে ঠিক তখনই ব্যথার সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, কখনো কখনো এই ব্যথা তীব্র থেকে তীব্র তর হতে পারে, আপনার মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে, দাঁতের চারপাশে ফুলে যেতে পারে,
মাড়ি ও জিহ্বাতে লালচে ভাব দেখা যেতে পারে, মাড়ি থেকে পুঁজ বেরিয়ে আসতে পারে এবং ইনফেকশনও সৃষ্টি হতে পারে। আবার কখনো কখনো আক্কেল দাঁত সম্পূর্ণভাবে উঠে না আসলে অন্য দাঁতের সাথে আটকে যেয়ে ডেমপেন বা ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। আবার আপনার দাঁতের সমস্যা অনুযায়ী কখনো বা আক্কেল দাঁত অপসারণেরও প্রয়োজন হতে পারে।
আক্কেল দাঁত ওঠার বয়স
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় জানানোর পর এবার আপনাকে জানাবো আক্কেল দাঁত ঠিক কত বছর বয়সে ওঠে। আজকের সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যেই ওঠা শুরু করে। একটি শিশুর দুধ দাঁতগুলো যখন পড়তে শুরু করে তখন চোয়ালের ভেতরের অংশে প্রথম ধাপের মোলার দাঁত গুলো উঠতে শুরু করে।আবার ১২ বছর বয়সে যখন এই দাত গুলো ক্ষয় হতে শুরু করে ঠিক তখন দ্বিতীয় ধাপের মোলার দাগ ওঠা শুরু হয়। আর সর্বশেষ তৃতীয় ধাপে শুরু হয় মোলার দাঁত বা আক্কেল দাঁত। যদিও কারো কারো ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত ওঠার এই সময় আগে বা পরে শুরু হতে পারে। এই সময় মুখের পেছনের অংশে তৃতীয় মোলার দাঁত গুলো উঠতে শুরু করে যা আপনার প্রাপ্তবয়স্কত্বের একটি অংশ হিসেবে ধরা হয়।
আক্কেল দাঁত উঠতে কত দিন সময় লাগে
আক্কেল দাঁত ব্যথা কতদিন থাকে জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই জানতে চান আক্কেল দাঁত উঠতে ঠিক কত দিন সময় লাগে। আক্কেল দাঁত উঠতে কতদিন সময় লাগবে এটিও নির্দিষ্ট করে বলাটা মুশকিল। কারণ, আক্কেল দাঁত ওঠার সময়কাল একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। তবে সাধারণভাবে আক্কেল দাঁত সম্পূর্ণভাবে উঠতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।কারণ, প্রথমে দাঁতগুলি আপনার মুখের ভেতরে গামের নিচে অঙ্কিত হতে শুরু করে এবং এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতি ঘটে। পরবর্তীতে একবার দাঁত বের হতে শুরু করলে পুরোপুরি দাঁত উঠতে আরো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এই আক্কেল দাঁত পুরোপুরি ওঠার জন্য দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। আবার কখনো কখনো পুরোপুরি উঠে নাও আসতে পারে। আক্কেল দাঁত উঠতে কতদিন সময় লাগে আশা করছি এর উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন।
আক্কেল দাঁত তুললে কি সমস্যা হয়
আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর উপায় তো জানলেন। এবার চলুন আক্কেল দাঁত তুললে আপনার কি সমস্যা হতে পারে সে সম্পর্কে জানাবো। মূলত সারা পৃথিবীর মানুষই আক্কেল দাঁত নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। কেউ এই আক্কেল দাঁত তুলে সমস্যার হাত থেকে নিস্তার পান। আবার কেউ জীবনভর ওই আক্কেল দাঁত নিয়েই বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকেন।আবার চিকিৎসকদের মধ্যেও আক্কেল তোলা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আক্কেল দাঁত কে মূলত থার্ড মোলার্স বলা হয়। এখন আপনিই ভাবুন দুজন সম্পর্কের মধ্যে যদি তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকে পড়ে সে ক্ষেত্রে যেমন সমস্যা হয়, দাঁতের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এই আক্কেল দাঁতের চাপে অনেক সময় দাঁতের গোড়া ফুলে যায়, ব্যথা হয়, কখনোবা ঘা ও হতে পারে।
আর এরকমটা হলে ঠিক তখনই আপনার আক্কেল দাঁত তুলে ফেলা যুক্তিযুক্ত হবে। অন্যথায়, কোন সমস্যা না হলে আক্কেল দাঁত না তোলাটাই ভালো। তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্কেল দাঁত তুলতে সার্জারির সাহায্য নিতে হয়। এই সার্জারির পর আপনার শরীরে নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এমনকি হাড় ও দাঁতের ক্ষয় রোগেও আপনি ভুগতে পারেন। আক্কেল দাঁত তোলার ব্যাপারটা কি হতে পারে জেনেই তো নিলেন। এবার সেই মতো সতর্ক থাকুন।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর ঔষধ
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় তো জেনেছেন। এবার নিশ্চয়ই ব্যাথা কমানোর ঔষধ সম্পর্কে আপনি জানতে চান? আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য কয়েকটি ঔষধ রয়েছে। যা ব্যবহারে আপনার ব্যথা ও অস্বস্তির কিছুটা উপশম হতে পারে। তো এবার চলুন আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর কয়েকটি ঔষধের নাম ও ডোজ সম্পর্কে জেনে নিন-- আইবুপ্রোফেন(Aibuprofen)
- কাজঃ আইবুপ্রোফেন একটি অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ঔষধ যা আপনার আক্কেল দাঁতের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে কাজ করবে। তাছাড়া একটি গ্রামের ফুলে যাওয়া ও ব্যথা কমাতেও বেশ কার্যকর।
- ডোজঃ এটি আপনি প্রথম ডোজ হিসেবে ২৫০-৫০০ মিলিগ্রাম গ্রহণ করতে পারেন এবং এরপর প্রতি ৮-১২ ঘন্টায় পুনরায় একই ডোজ নিতে পারেন।
- কাজঃ এটি আপনার গামের উপর সরাসরি প্রয়োগ করলে ব্যথা অতি দ্রুত কমতে শুরু করে এবং গামের স্থানে স্নায়ু সংবেদনশীলতা কমিয়ে আনে।
- ডোজঃ এটি সাধারণত জেল বা ক্রিম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আপনি জেল যেমন ব্যবহার করেন ঠিক সেভাবেই এটি আপনার আক্কেল দাঁতের ক্ষতস্থানে কিছুক্ষণের জন্য লাগিয়ে রাখুন। আর ব্যবহার করার আগে অবশ্যই প্রস্তাবিত নির্দেশিকা অনুসরণ করুন
- কাজঃ এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী এন্টি ইনফ্লামেটরি ঔষধ যা আপনার আক্কেল দাঁতের ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে কাজ করে।
- ডোজঃ আইবুপ্রোফেনের মত এটিও প্রথম হিসেবে আপনি ২৫০-৫০০ মিলিগ্রাম নিতে পারেন এবং এরপর প্রতি ৮-১২ ঘন্টায় পুনরায় একই ডোজ গ্রহণ করতে পারেন।
- কাজঃ প্যারাসিটামল এটি কোন এন্টি ইনফ্লামেটরি নয়। শুধুমাত্র ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে খুব একটা কার্যকরী নয়।
- ডোজঃ প্যারাসিটামল সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতি ৪-৬ ঘন্টায় ৫০০-১০০০ মিগ্রা দেওয়া হয় এবং সারাদিনে এর সর্বোচ্চ ডোজ ৪ গ্রাম হতে পারে।
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর হোমিও ঔষধ
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি হোমিও ঔষধও সেবন করতে পারেন। হোমিওপ্যাথির বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে যা আপনার দাঁতের ব্যথা সমাধান চটজলটি দিতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো ওষুধগুলোর নাম কি? তো চলুন হোমিওপ্যাথিক এই ঔষধ হলো সম্পর্কে জেনে রাখুন--- সিলিকাঃ সাধারণত দাঁতে ব্যাথার কারণ হিসেবে দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমলে হোমিওপ্যাথিতে এই সিলিকার ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মাড়ির বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে এটি বেশ কার্যকর।
- আর্নিকাঃ আর্নিকা এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ। আর এই উদ্ভিদ থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধের নামও হল আর্নিকা। আক্কেল দাঁতের ব্যথা সহ বাড়ির ব্যথায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে এই আর্নিকা হোমিওপ্যাথিক ঔষধটি।
- মার্ক সলঃ আক্কেল দাঁত ওঠার মুখ গহবরে ঘা, মাড়ির তীব্র ব্যথা মুখে মাত্রাতিরিক্ত লালা তৈরি হওয়া ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে দারুন কাজ করে এই মার্ক সল। দাঁতে ব্যথা এবং মাড়ির যন্ত্রণার উপশমে দারুন উপকারি এই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ।
আক্কেল দাঁত তোলার খরচ কত
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। এবার আপনাকে জানাবো আঙ্কেল দাঁত তুলতে আপনার কত টাকা খরচ হতে পারে। তার আগে একটি কথা বলি, আক্কেল দাঁত তোলার খরচ আপনার দাঁতের অবস্থান, জটিলতা এবং চিকিৎসার স্থান ভেদে একেক রকম হতে পারে। সাধারণত বর্তমান সময়ে আক্কেল দাঁত তুলতেআপনার খরচ হতে পারে ৫০০০-১৫০০০ টাকা। তবে বড় ডেন্টিস্ট বিশেষজ্ঞদের কাছে এই খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। আবার আপনার দাঁতের অবস্থা যদি জটিল হয় বা সার্জারি করতে হয় সে ক্ষেত্রেও খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত খরচে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে আপনার দাঁতের এক্স-রে, আনাস্থেসিয়া।
আক্কেল দাঁত বাঁকা হলে করণীয়
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় জানার পর অনেকেই জানতে চান আক্কেল দাঁত বাঁকা হলে করণীয় কি? দেখুন, যদি আক্কেল দাঁত বাঁকা হয় তবে এর ফলে আপনার মুখের অন্যান্য দাঁত এবং দাঁতের সারি সঠিকভাবে সজ্জিত নাও হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে আমার কিছু পরামর্শ হলো--- আপনি প্রথমে একজন দক্ষ ডেন্টিস্ট বিশেষজ্ঞের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করুন। তারা আপনার দাঁতের বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে দাঁতের সঠিক অবস্থান বুঝতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
- আবার আপনার দাঁত যদি অতিরিক্ত বাঁকা হয় বা পুরোপুরি উঠে না আসে সেক্ষেত্রে দাঁত অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে এই আজকেরটা যখন আপনার আশপাশের দাঁতগুলোর ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি করবে ঠিক তখন।
- আক্কেল দাঁত বাঁকা হওয়ার কারণে যদি আপনার মাড়ির ব্যথা প্রদাহ বা অন্য কোন ব্যথাজনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি ব্যাথানাশক ঔষধ যেমন ধরুন, আইবুপ্রোফেন, সাধারণ প্যারাসিটামল এবং মাউথ ওয়াশ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
- নিয়মিত ব্রাশ করা, ফ্লসিং এবং দাঁতের সঠিক যত্ন নিন। যাতে করে আপনার দাঁতের ফাঁকে কোন ব্যাকটেরিয়া না জমে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি না হয়।
লেখকের মন্তব্য
আক্কেল দাঁত ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন আশা রাখি। আসলে আক্কেল দাঁতের ব্যথা এমনই যা একটা নির্দিষ্ট বয়সে কমবেশি সকলকেই ভুগতে হয়। আর এই ব্যথা আরো বাড়তে পারে যদি আপনার দাঁতটি সোজা পথে না উঠে আসে। আক্কেল দাঁতের ব্যথা আপনার নানা কারণে হতে পারে। তবে ব্যথা যদি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছায় সেক্ষেত্রে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।শুধু তাই নয়, আপনার দাঁতের সার্জারি করারও প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই আক্কেল দাঁতের ব্যথা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই ব্যথা কমানোর জন্য চিকিৎসকরা যেমন বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দিয়ে থাকেন, তেমনি ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিও রয়েছে। যেগুলি আপনি ব্যবহার করে আক্কেল দাঁতের ব্যথা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দূর করতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url