চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

চেরি ফলের উপকারিতা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। কিন্তু চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম আমাদের অনেকেরই অজানা। চেরি ফল শুধু যে দেখতে লোভনীয় তা নয়। বরং এই ফল খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুনেও ভরপুর।
চেরি-ফলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
আজকে আমরা আলোচনা করব পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ চেরি ফলের উপকারি দিক এবং এই ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। সুতরাং চেরি ফল সম্পর্কিত সকল খুঁটিনাটি তথ্য সহজ, সরল ভাষায় জানতে হলে আর্টিকেলটি এক্ষুনি একবার পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ চেরি ফলের উপকারিতা

চেরি ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

চেরি ফলের উপকারী এবং অপকারি দিক দুটোই রয়েছে। বিশেষ করে এই ফলে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের পশুকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফিড আর্টিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এছাড়াও চেরি ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং ফাইবার রয়েছে।
যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, চেরি ফলে মেলাটোনিন এর উপস্থিতিও পাওয়া যায়। যা কিনা অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে। আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চেরি ফল নিয়মিত খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ বিশেষ করে আর্থাইটিসের ব্যথা হ্রাস পায়।
 
শুধু উপকারিতাই নয়, চেরি ফলের কিছু অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। কারণ, এতে চিনি পরিমাণ বেশি থাকে। শুধু তাই নয়, মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খাওয়ার ফলে আপনার এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই বলবো চেরি ফল খাওয়ার সময় এর পরিমাণের দিকে নজর রাখাটাও জরুরী।

চেরি ফলের উপকারিতা

চেরি ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ভীষণই উপকারী। আমরা অনেকেই আছি যারা এখনো চেরি ফলের গুনাগুন সম্পর্কে অবগত নই। অথচ এই ফলটি প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই ফলের কিছু উপকারি দিক -
  • চেরি ফলে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন, ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের দেহের কোষকে ক্ষতিকর রেডিক্যালস হাত থেকে রক্ষা করে এবং সেই সাথে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
  • আপনি কি আর্থাইটিসের ব্যথায় ভুগছেন? তাহলে আজ থেকেই নিয়ম করে চেরি ফল খাওয়া শুরু করুন। কারণ, চেরি ফলে থাকা ফেনোলিক যৌগ এবং অ্যান্থোসায়ানিন আর্থাইটিস সহ শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথা প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
  • যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন বা রাতে ভালো ঘুম হয় না তাদের জন্য চেরি ফল উপকারী। কারণ, এই ফলে রয়েছে মেলাটোনিন যা আপনার ঘুম নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এতে করে অনিদ্রা দূর হয় এবং ঘুম ভালো হয়।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও চেরি ফল দারুন কাজ করে। আপনার হৃদ রোগের সমস্যা থাকলে আজ এখন থেকেই নিয়ম করে চেরি ফল খাওয়া শুরু করুন। এতে করে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
  • এই ফলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেকটাই কম। ফলে রক্তে গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে চেরি ফল। যার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
  • আপনি কি জানেন নিয়মিত নিয়ম করে চেরি ফল খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে এর ফল।
  • চেরিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং অন্যান্য মিনারেলস যা আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে কাজ করে। ফলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • প্রতিদিন শরীর চর্চর পেশির ব্যথা কমাতে আপনি খেতে পারেন এক গ্লাস চেরির রস। কারণ, চেরির রস ব্যাথা কমাতে খুবই কার্যকরী।
  • দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা এবং হজমের সমস্যা দূর করতে আপনি চেরি ফল খেতে পারেন। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করে। 
চেরি-ফলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে, নিয়মিত চেরি ফল খেলে এটি মুদ্রা সয় থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। যা কিনা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।
  • চেরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের জন্যও উপকারী। চেরি ফল খেলে ত্বক ভালো রাখে এবং ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর হয়।
  • দৈনন্দিন জীবনের কর্মব্যস্ততায় আমরা বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপে ভুগতে থাকি। মানসিক এই অবসাদ দূর করতে পারে চেরি ফল। কারণ, চেরির ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের মস্তিষ্কের স্ট্রেস কমায় এবং সেই সাথে মানসিক অবসাদ দূর করে।
  • শুধু তাই নয়, নিয়মিত চেরি ফল খাবার মাধ্যমে আপনি মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগ থেকে খুব সহজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। কারণ এই ফলে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
  • আবার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, হারানো স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে খুব ভালো কাজ করে চেরি ফল।
  • হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে, হাড় মজবুত করতে পারে চেরি ফল। কারণ, এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
সম্মানিত পাঠক, চেরির উপরিউক্ত উপকারিতা পরিপূর্ণরূপে পেতে আপনি নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে চেরি ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ অতিরিক্ত খাওয়া যে কোন কিছুই স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

চেরি ফল খাওয়ার অপকারিতা

চেরি ফলের যেমন  উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। এবার চলুন অতিরিক্ত চেরি ফল খাওয়ার কিছু অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই-
  • পেটের সমস্যাঃ প্রথমেই বলি, চেরি ফলে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার পেট ফোলা, হজমে সমস্যা, পেটে গ্যাস এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • উচ্চমাত্রার শর্করাঃ চেরি ফলে শর্করার স্তর অন্যান্য ফলের তুলনায় তুলনামূলক ভাবে বেশি। যার ফলে অতিরিক্ত চেরি ফল খেলে এটি আপনার রক্তে গ্লুকোজের স্তর বাড়িয়ে দিতে পারে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদজনক।
  • এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খেলে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের এলার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন- চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, গলা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
  • কিডনি পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ আপনারা যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত। কারণ, এই ফলে রয়েছে অক্সালেট। যা অতিরিক্ত খেলে আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে
  • ওজন বৃদ্ধিতেঃ যারা ওজন কমাতে চান তারা অতিরিক্ত চেরি ফল না খেয়ে পরিণত পরিমাণে খান। কারণ, অতিরিক্ত চেরি ফল খেলে আপনার শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যা আপনার ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • দাঁতের ক্ষতিঃ দীর্ঘদিন ধরে একটানা অতিরিক্ত চেরি ফল খাওয়ার ফলে এতে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা এবং এসিড আপনার দাঁতের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • প্রস্রাবের রঙের পরিবর্তনঃ অত্যধিক পরিমাণে চেরি ফল খেলে আপনার প্রস্রাবের রং কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। যা আপনার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ক্ষতিকর নয়।
সম্মানিত পাঠক, চেরি ফলের অপকারিতা গুলো। এই অপকারিতা গুলো আপনি তখনই পাবেন যখন নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি ফল খাবেন। তবে নিয়ম মেনে চেরি ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ এবং উপকারী।

চেরি ফল খাওয়ার নিয়ম

চেরি ফল খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যে নিয়ম মেনে চেরি ফল খেলে আপনি এই ফল থেকে সর্বাধিক উপকারিতা পেতে পারেন। তো চলুন এবারে আমরা চেরি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই -
  • প্রথমেই বলি, চেরি ফল খাওয়ার সময় আপনি সতেজ এবং পাকা চেরি বেছে নেবেন। নষ্ট এবং থেতলে যাওয়া চেরি ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • অনেকেই চেরি ফল না ধুয়েই খেয়ে ফেলেন। কিন্তু এই ভুল কাজটি কখনোই করবেন না। চেরি ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নেবেন। কারণ, ফলের গায়ে যেকোনো ধরনের পেস্টিসাইড থাকতে পারে।
  • চেরি ফল আপনি সকালের নাস্তার সাথে কিংবা বিকেল বা সন্ধ্যার নাশতা হিসেবে খেতে পারেন। কারণ, নাস্তার সাথে চেরি ফল খাওয়া শরীরের জন্য আরো বেশি উপকারী।
  • সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি কাঁচা চেরি ফল চিবিয়ে খান। কারণ, কাঁচা অবস্থায় চেরি ফল খেলে এতে থাকা ভিটামিন, মিনারেলস এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুব সহজে শরীরে শোষিত হতে পারে।
  • আপনি চেরি ফল দিয়ে জুস বানিয়েও খেতে পারেন। চেরির জুস দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, খেতেও ঠিক সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
  • আপনি বিভিন্ন ধরনের স্মুথির সাথেও চেরি ফল ব্যবহার করে খেতে পারেন। তাছাড়া স্মুদি তৈরির প্রধান উপকরণই হলো চেরি ফল।
  • বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট যেমন ধরুন- চেরি পাই, চেরি কেক, চেরি ক্রেম্পল ইত্যাদি তৈরিতে আপনি চেরি ফল ব্যবহার করতে পারেন।
  • আপনি সালাদের সাথে টুকরো টুকরো করে চেরি ফল কেটে খেতে পারেন। এতে সালাদের স্বাদ যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি সালাদের পুষ্টিগুণ অনেকটাই বেড়ে যাবে।
  • আপনি চাইলে চেরি ফল দিয়ে জ্যাম,জেলি বা সস তৈরি করে তা সকালের নাস্তার সাথে রুটি বা ব্রেডের সাথে খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খাওয়ার উপকারিতাও কম নয়। গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রূণের পুষ্টির জন্য চেরি ফল অত্যন্ত উপকারীর একটি ফল। সম্মানিত পাঠক, এবার আমরা জানবো গর্ভাবস্থায় চেরি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে-
  • চেরি ফলে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফোলেট এবং পটাশিয়াম রয়েছে। এই ভিটামিন সি গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে এবং ফোলেট গর্ভস্থ ভ্রূণের সঠিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • গর্ভকালীন সময়ে শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ বৃদ্ধি পেতে পারে। এই প্রদাহ রোধে আপনি খেতে পারেন চেরি ফল। কারণ, চেরিতে থাকা অ্যান্থসায়ানিন যেকোনো ধরনের প্রদাহু কমাতে সক্ষম।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য গর্ভকালীন সময়ের একটি সাধারণ সমস্যা। এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন চেরি ফল। কারণ, চেরিতে থাকা ফাইবার হজমের জন্য সহায়ক।
  • গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি নিয়ম করে চেরি ফল খেতে পারেন। কারণ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে চেরি ফল।
  • গর্ভাবস্থায় চেরি ফল খেলে এতে আপনার ঘুম ভালো হবে। আর ভালো ঘুম একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য এবং তার অনাগত সন্তানের জন্য উপকারী।
  • দেরিতে থাকা ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভকালীন সময়ে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
  • একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে অতিরিক্ত শক্তির দরকার পরে। এ শক্তির চাহিদা মেটাতে পারে চেরি ফল। বিশেষ করে, গর্ভকালীন শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে চেরি ফল খুবই উপকারী।
  • চেরি ফলে কিছু পরিমাণে পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে। এই পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম একজন গর্ভবতী মায়ের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং তার গর্ভস্থ ভ্রূণের হাড়ের গঠনে অতীব জরুরী।

চেরি ফল চেনার উপায়

চেরি ফল চেনার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। বর্তমান সময়ে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আসল চেরি ফলের আদলে নকল চেরি ফল বিক্রি করে থাকে। তাই চেরি ফল খাওয়ার আগে সেটি আসল নাকি নকল তা জানাটাও জরুরী। আসল চেরি ফল চেনার বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এবার চলুন চেরি ফল আপনি কিভাবে চিনবেন সে উপায় সম্পর্কে জেনে নিন-
  • রংঃ আসল চেরি ফলের গা সাধারণত উজ্জ্বল এবং চকচকে হয়। চেরি ফল কেনার সময় যদি দেখেন চেরির রং মলিন বা খুব একটা উজ্জ্বল নয় তাহলে বুঝবেন এটি নকল চেরি ফল। আসল চেরি ফল লাল বেগুনি বিভিন্ন রঙের হতে পারে।
  • গন্ধঃ আসল চেরি ফলে কিছুটা মিষ্টি এবং টক গন্ধ থাকে। চেরির এই টক মিষ্টি গন্ধ পেলেই বুঝবেন এটি আসল চেরি ফল। যদি গন্ধ না থাকে তাহলে বুঝতে হবে এটি নকল চেরি।
  • আঠালো ভাবঃ এবং আকৃতি আসল চেরি ফল দেখতে সাধারণত ছোট ও গোলাকৃতির হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, চেরি স্পর্শ করলে তাতে একটি নরম এবং আঠালো ভাব থাকে। যা নকল চেরি ফলে থাকে না।
  • বীজের আকৃতিঃ আসল চেরি ফলের বীজ সাধারণত বড় এবং মসৃণ হয়। কিন্তু নকল চেরি ফলের বীজ আসল চেরি ফলের থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। ফলে চেরি ফলের বীজের আকার ও গঠনের দিকে খেয়াল করলেই আপনি আসল চেরি ফল খুব সহজেই চিনতে পারবেন।
  • মৌসুমঃ চেরি ফল সাধারণত গ্রীষ্মকালে বেশি পাওয়া যায়। ফলে এই সময় খুব সহজে আসল চেরি ফল পাওয়া যায়। তবে বর্তমান সময়ে গ্রীষ্মকাল ছাড়াও কম বেশি সারা বছরই চেরি ফল পাওয়া যায়।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত নির্দেশনা গুলি অনুসরণ করে চেরি ফল কেনার চেষ্টা করুন।এতে করে খুব সহজেই আসল চেরি ফল পাবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।

চেরি ফলের গাছ কোথায় পাওয়া যায়

চেরি ফলের গাছ কোথায় পাওয়া যায় জানেন কি? অনেকেই আছেন যারা চেরি ফলের চারা কিনতে চান কিন্তু কোথায় পাওয়া যায় তা জানেন না। তাহলে জেনে রাখুন, আপনি চেরি ফলের চারা আপনার নিকটতম বিভিন্ন নার্সারি এবং হোটেল গার্ডেন থেকে পেয়ে যাবেন। আবার বর্তমান সময়ে অনলাইনে বেশ কয়েকটি গার্ডেনিং সাইটও রয়েছে। 
 
সেখান থেকেও আপনি খুব সহজেই চেরি ফলের চারা সংগ্রহ করতে পারেন। চেরি ফলের চারার দাম সাধারণত ৩০০-১০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে চেরির জাত এবং আকারের ওপর নির্ভর করে দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে। অর্থাৎ ছোট চারার দাম তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং বড় চারা গুলো একটু বেশি দামে বিক্রি করা হয়।

চেরি ফলের বীজ খেলে কি হয়

চেরি ফলের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনারা এতক্ষণ জেনেছেন। কিন্তু আপ বীজ খেলে কি হয়? অনেকেই মনে করেন চেরি ফলের বীজ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু না! বরং চেরি ফলের বীজ খেলে আপনার স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ চেরি ফলে সাইনোজেনিক গ্লাইকোসাইড নামক একটি পদার্থ রয়েছে যা আমাদের শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
চেরি-ফলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
চেরি ফলের বীজ যখন চিবানো হয়, ঠিক তখন এই পদার্থটি সায়ানাইডে রূপান্তরিত হয় যা অত্যন্ত বিষাক্ত। যদিও চেরি ফলের খোসা এবং এর মাংসল অংশ অত্যন্ত পুষ্টিকর কিন্তু বীজের বিষাক্ততার কারণে বীজ খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আপনি যদি ভুলবশত অল্প পরিমাণে চেরি বীজ খেয়ে ফেলেন তাতে তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা নাও দিতে পারে।
 
তবে অতিরিক্ত পরিমাণে চেরি বিজ খেলে আপনার মাথা ব্যথা, মাথা ঘোড়া, বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট এবং পেটের অস্বস্তি যেমন- পেট ফাপা, পেট ফোলা, বদহজম, ডাইরিয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বলবো স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যতটা পারুন চেরি ফল খাওয়ার সময় এর বীজ খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

চেরি ফলের দাম বাংলাদেশ

চেরি ফলের এতসব উপকারিতা জানার পর এবার আপনার মনে নিশ্চয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে চেরি ফলের দাম কত? কি তাইতো! আমরা অনেকেই আছি যারা চেরি ফলের সঠিক দাম জানিনা। ফলে ফলটি কেনাও হয় না। আজ আমরা আপনাকে জানিয়ে দিব চেরি ফলের দাম সম্পর্কে। চেরি ফল মৌসুমী ফল হওয়ার কারণে এর দাম অন্যান্য ফলের থেকে তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। 
 
সাধারণত আমাদের দেশের বাজারে প্রতি কেজি চেরি ফলের দাম পরে ৫০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। সে হিসেবে আপনি ৫০০ গ্রাম চেরি ফল ২০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। তবে চেরি ফলের মধ্যেও আবার বিভিন্ন ধরনের প্রজাতি রয়েছে। বিশেষ প্রজাতির উচ্চ গুণমান সম্পন্ন এরির দাম আরো কিছুটা বেশি হতে পারে। 
 
আবার চিনির মৌসুম চাষাবাদ এবং বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে চেরি ফলের দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে। বর্তমান সময়ে মানুষ চেরি ফলের পুষ্টিগুণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সকলেই সচেতন। ফলে চেরি ফলের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে বাজারে এর চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক। যা এই ফলের দামকে প্রভাবিত করেছে

চেরি ফলের পুষ্টিগুণ

চেরি ফলের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেকটাই বেশি। শুধু পুষ্টিগণ নয় বরং খেতেও বেশ সুস্বাদু এই ফল। এবার চলুন প্রতি 100 গ্রাম চেরি ফলে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন-
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ভিটামিন সি ৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ ৬৪ IU
ভিটামিন কে ২.১ মাইক্রোগ্রাম
পটাশিয়াম ২২২ মিলিগ্রাম
ফাইবার ১.৬ গ্রাম
আয়রন ০.৩৬ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম
ফোলিক এসিড ৩ মাইক্রোগ্রাম
সিরামিন ১ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১৬ গ্রাম
আন্থোসায়ানিন ২০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই ০.৪-০.১ মিলিগ্রাম

চেরি ফলের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

চেরি ফলের উপকারিতা আজকের আলোচনায় আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হয়ে যান এবং চেরি ফল সম্পর্কিত অজানা বিভিন্ন তথ্য জানতে পেরেছেন আশা রাখছি। চেরি ফল অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি ফল। বর্তমানে আমরা রোজকার কাজের ব্যস্ততায় দিনকে দিন পুষ্টিকর খাবার বা ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছি। 
 
এতে করে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বলবো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু ফলমূল বা খাবার রাখা উচিত যা আমাদের শরীর সুস্থ রাখবে। এমন একটি ফল হিসেবে আপনি অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন চেরি ফল। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url