কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে বিস্তারিত জেনে নিন
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে জানেন কি? বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে বলব আর দেরি না করে এক্ষুনি আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিন।
কোন কোন খাবার খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে এবং ঘরোয়া উপায়ে আপনি কিভাবে এই ব্যথা দূর করবেন তা আজকের এই পোস্ট থেকেই জেনে নিতে পারবেন। সাথে আরো জানতে পারবেন বাত ব্যথার ঔষধ সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে
- কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে
- বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
- বাতের ব্যাথার লক্ষণগুলো কি কি
- বাতের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়
- বাতের ব্যথার কারণ
- বাতের ব্যথার ব্যায়াম
- বাতের ব্যথার আয়ুর্বেদিক ঔষধ
- রস বাত কি
- বাতের ব্যাথার ঔষধের নাম বাংলাদেশ
- কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে এ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে
কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে বাতের ব্যথা অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ, এই সমস্ত খাবার খেলে আপনার শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ে এবং সেই সাথে শরীরের প্রদাহও বেড়ে যায়। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই বাতের ব্যথায় আপনি কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন-- যে সব খাবারে সাধারণত রক্তচাপ বাড়ে বিশেষ করে গরুর মাংস, খাসির মাংস এ সমস্ত খাবার খেলে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আপনার যদি বাতের ব্যথা থেকে থাকে তাহলে এই সমস্ত খাবারগুলো সীমিত পরিমাণে খান বা এড়িয়ে চলুন।
- বিভিন্ন ধরনের দুগ্ধজাত পণ্য খাওয়ার ফলেও বাতের ব্যথা বাড়তে পারে। কিছু কিছু দুগ্ধজাত পণ্য যেমন ধরুন- দুধ, দুধের তৈরি যে কোন খাবার যেমন পনির, দই ইত্যাদিতে আর্থাইটিস এর প্রদাহ বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত চিনি যুক্ত বা মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন- সোডা, কেক, সন্দেশ, পেস্ট্রি, কোমল পানীয় ইত্যাদি খাবার খেলে আপনার বাতের ব্যথার প্রদাহ বাড়তে পারে।
- অনেকেই আছেন যারা প্রতিদিন ফাস্টফুড খেতে অভ্যস্ত। বিশেষ করে পিৎজা, বার্গার, চিপস এই খাবারগুলো বাতের ব্যথা বাড়াতে কাজ করে। সুতরাং বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনি আজ থেকেই ফাস্টফুড খাওয়া বন্ধ করুন।
- কিছু কিছু সবজি আলু, টমেটো, লেবু, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, বেগুন, পালং শাক এই সবজি গুলো বাতের ব্যথা বাড়াতে কাজ করে। তবে একেক ব্যক্তির শরীরে সবজি একেক ভাবে কাজ করে। তাই আপনি যদি মনে করেন যে এই সবজিগুলোর মধ্যে কোনটি খেলে আপনার বাতের ব্যথা বাড়ছে তবে সেগুলি খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- অতিরিক্ত সোডিয়াম যুক্ত খাবার যেমন- ক্যান স্যুপ, প্রক্রিয়া জাত করার নুন দেওয়া শাকসবজি, সয়া সস, বারবিকিউ সস, পপকর্ন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এই খাবারগুলো খেলে আপনার বাপের ব্যথা বাড়তে পারে। কারণ, এই সমস্ত খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে সোডিয়াম থাকার কারণে তা আপনার শরীরে পানি ধারণে সাহায্য করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে।
- অনেকেই আছেন যারা ভুট্টার তেল খেতে বা ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না ভুট্টার তেলে রয়েছে অমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই ফ্যাটি এসিড আপনার বাতের ব্যথা বাড়ার জন্য দায়ী।
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু আপনি কি জানেন, ডিমের কুসুম আপনার বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ ডিমের কুসুমে রয়েছে আরাকিডনিক এসিড যা খেলে বাপের প্রদাহ বাড়বে। এর জন্য আপনি ডিমের কুসুম বাদে শুধুমাত্র সাদা অংশটুকু খান। তাতে কোন সমস্যা হবে না।
- অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন। বাতের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই এলকোহল সেবন বা মদ্যপান থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাতের ব্যথা দূর করতে ঘরোয়া কিছু উপায় রয়েছে। যে ঘরোয়া পন্থা অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই বাত ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। তো চলুন ঘরোয়া উপায় গুলো কি কি তা আমরা এবার জেনে নিই -- ঠান্ডা ও গরম থেরাপিঃ বাতের ব্যথা কমাতে ঠান্ডা ও গরম থেরাপি বেশ কার্যকর। বাতের ব্যথা অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আপনি গরম পানিতে স্নান করতে পারেন বা গরম টাওয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং পেশী শিথিল হবে। শুধু তাই নয় অনেক সময় ঠান্ডা প্যাক বা বরফের ব্যাগ ব্যবহার করলে বাতের ব্যথা এবং ফোলা উভয়ই কমে।
- সরষে তেলের ব্যবহারঃ বাতের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি সরষে তেল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য ফুটন্ত পানিতে সরষে তেল মিশিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এতে শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়বে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।
- বাত ব্যথা কমাতে হলুদঃ আপনি কি জানেন আপনার রান্নাঘরে থাকা হলুদ গুঁড়ো বাতের ব্যথা কমাতে খুবই উপকারী। কারণ হলুদে থাকা কারকিউমিন যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে কাজ করে। তাই বলবো আপনি বাত থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন গরম দুধে ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- আদাঃ আদা সাধারণত আমরা তড়িৎ তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আদার রয়েছে বিভিন্ন প্রদাহ প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য। ফলে বাত ব্যথা কমাতে আপনি এক টুকরো আদা চিবিয়ে খেতে পারেন কিংবা আদা দিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারেন।
- আপেল সিডার ভিনেগারঃ আপনি যদি প্রতিদিন ১ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে পান করতে পারেন, তাহলে আপনার বাতিল-ব্যথা নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
- নিয়মিত শরীর চর্চাঃ বাতের ব্যথা কমাতে নিয়মিত শারীরিক ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই বললেই চলে। নিয়মিত হাটা, যোগ ব্যায়াম করা, সাঁতার কাটা, সাইকেলিং করা ইত্যাদি করলে আপনার জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়বে এবং ব্যথা কমবে।
- খালি পায়ে হাটার অভ্যাস করুনঃ বাত ব্যথা কমানোর সবথেকে সহজ এবং ঘরোয়া টোটকা হলো খালি পায়ে হাঁটা। প্রতিদিন খালি পায়ে হাঁটলে আপনার বাতির ব্যথা প্রায় ১২% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস না থাকলে আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার পায়ের গড়ন মত জুতা ব্যবহার করুন। তাতেও বাত ব্যথা কমবে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করুনঃ যাদের ওজন অতিরিক্ত তারাই সাধারণত বাত ব্যথায় ভুগতে থাকেন। ফলে বাতের ব্যথা কমাতে হলে আপনাকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। যে খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুনঃ আমরা অনেকেই সারাদিনের কর্মব্যস্ততায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা থেকে বিরত থাকি। কিন্তু বাত ব্যথা কমাতে আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান ভীষণই উপকারী। এতে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যাবে। যা বাতের ব্যথা কমাতে সহায়ক।
বাতের ব্যাথার লক্ষণগুলো কি কি
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে তা ইতিমধ্যেই আমরা আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। বাতের ব্যথা সাধারণত জয়েন্ট বা শরীরের অন্য অংশে বিভিন্ন প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। এবার চলুন বাতের ব্যথার লক্ষণ গুলো কি কি হতে পারে তা জেনে নিন-আরো পড়ুনঃ চিরতরে মেছতা দূর করার ২০টি উপায়
- বাতের প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হল শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। অর্থাৎ আপনার শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট বিশেষ করে হাত, পা, হাটু বা আঙ্গুলের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা অনুভূত হবে।
- আপনার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল যদি কারণে-অকারণে ফুলে যায় বা ব্যথা হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি বাতের ব্যথা। কারণ, বাত ব্যথা শুরুই হয় পায়ের বৃদ্ধাঙ্গলি থেকে।
- বাতের ব্যাথার কারণে অনেক সময় জয়েন্টে ফোলা ভাব দেখা দেয় এবং প্রদাহের সৃষ্টি হয়। আপনার হাঁটু বা আঙ্গুলের জয়েন্টের দুই পাশে ফোলা ভাব এবং ব্যথা হলে বুঝে নেবেন এটি বাতের ব্যাথা।
- কখনো কখনো আপনার হাত-পা হাঁটু আঙ্গুলের জয়েন্টের চারপাশে ত্বক লাল হয়েও যেতে পারে এবং সেইসাথে জয়েন্ট স্পর্শ করলে তা গরম মনে হতে পারে। এটি বাত ব্যাথার আরেকটি প্রধান লক্ষণ।
- বাতের ব্যথা সাধারণত বেশি হয় বিশ্রামের সময় বা রাতে বেলা। অর্থাৎ রাতে ঘুমানোর সময় যদি আপনার শরীরের জয়েন্টে ব্যথা হয় এবং সকালে ব্যথা তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে বুঝতে হবে এটি আপনার বাতের ব্যথা।
- বাতের ব্যথা আপনার শরীরের মাংসপেশিতেও হতে পারে।
- অনেক সময় বাত ব্যথার কারণে শরীরে হালকা জ্বর হতে পারে এবং এই জ্বর মাঝেমধ্যেই হবে। এটিও বাত প্রদাহের একটি কারণ। তবে জ্বর ১০০ টি ফারেনহাইটের বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- বাতের ব্যাথার কারণে অনেক সময় আপনার জয়েন্টের আক্রান্ত স্থান মচকে যেতে পারে।
- কখনো কখনো বাতের ব্যথা আপনার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে করে আপনার মাথা ব্যথা হতে পারে।
- বাতের ব্যথা হলে সাধারণত শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা যায়। এর ফলে আপনার শরীর অত্যধিক দুর্বল হয়ে পড়বে। শরীর এতটাই দুর্বল হবে যে তাতে আপনার চলাফেরা করাই মুশকিল হয়ে যাবে।
- এছাড়াও আপনার যদি অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন কমে যায়, ক্ষুধা না লাগে, খাবারের প্রতি অরুচি ভাব হয় এমনটা হলে বুঝতে হবে এটি আপনার বাতের ব্যথার লক্ষণ।
বাতের ব্যথা কোথায় কোথায় হয়
কি কি খাবার খেলে বাতের ব্যথা বেড়ে যায় তা এতক্ষণে আপনি জেনে গেছেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে বাতের ব্যথা শরীরে কোথায় হয়। বাতের ব্যথা বা আর্থাইটিস মূলত শরীরের বিভিন্ন সংযোগস্থলে বা জয়েন্টে দেখা যায়। শুধু তাই নয় শরীরের স্থান ভেদে বাতের ব্যাথার ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ ও অনুভূতিও হতে পারে। এবার চলুন বাপের ব্যথা আপনার শরীরের কোথায় কোথায় হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-- হাঁটুর জয়েন্টেঃ বাতের ব্যথা সাধারণত বেশি হয় হাঁটুর সংযোগস্থলে। হাঁটুতে ব্যথা হলে সাধারণত আমাদের উঠতে বসতে বেশ অসুবিধা হয়। অনেক সময় বাতের ব্যাথার কারণে আপনার হাটু ফুলে যেতেও পারে।
- কব্জির জয়েন্টেঃ বাতের ব্যথা আপনার হাতের কব্জির জয়েন্টেও হতে পারে। কব্জিতে বাতের ব্যথা হলে কাজ করতে অসুবিধা হয়। সেই সাথে ধীরে ধীরে কব্জি শক্ত হয়ে পড়ে ও ব্যথাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
- পায়ের আঙ্গুলেঃ পায়ের আঙ্গুলে বাতের ব্যথা হলে সাধারণত আঙ্গুল ফুলে যায় এবং হাটার সময় প্রচন্ড অস্বস্তিকর ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে সকালবেলা উঠে চলাফেরার সময় এই ব্যথা বেশি বোঝা যায়।
- কোমরের জয়েন্টেঃ আপনার শরীরে কোমরের জয়েন্টেও বাতের ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ওজন বেশি তাদের এই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। কোমর ব্যথা হলে সাধারণত শরীরের নিচের অংশে চাপ সৃষ্টি হয় এবং শরীরের গতি কমতে থাকে।
- হাতের জয়েন্টে ব্যথাঃ আপনার হাতের জয়েন্টে বা হাতের আঙ্গুল বাতের ব্যাথার কারণে ফুলে যেতে পারে এবং তাতে ব্যথা হতে পারে। হাতে বাতের ব্যথা হলে লিখার সময় কাজ করতে এবং কোন কিছু ধরতে অসুবিধা হয়।
- মাংসপেশীতে ব্যথাঃ কখনো কখনো আপনার মাংসপেশীতেও বাত ব্যথা হতে পারে।
বাতের ব্যথার কারণ
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে তা ইতিমধ্যে আজকের আলোচনায় জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন এই বাতির ব্যথার আসল কারণ কি? কেন বাতের ব্যথা হয়? বাতের ব্যথার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এবার চলুন জেনে আসি ঠিক কি কারনে বাতের ব্যথা হয়-- আর্থ্রাইটিসঃ আর্থ্রাইটিস এর বিভিন্ন ধরন যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অস্টিও আর্থ্রাইটিস বাত ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ। অস্টিও আর্থ্রাইটিস হলে এতে আপনার কার্টিলেজ ক্ষয়ে যায়। ফলে জয়েন্টের হাড় একে অপরের সাথে ঘষা খেয়ে ব্যথা অনুভূত হয়।
- গাউট এর কারণেঃ গাউটও এক প্রকার আর্থ্রাইটিস। সাধারণত শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। গাউত এর কারণে আপনার পায়ের আঙ্গুলের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি হবে এবং সাথে আঙ্গুল ফুলে যাবে।
- বয়স জনিত কারণঃ বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের শরীরের জয়েন্টগুলো প্রাকৃতিকভাবে ক্ষয় হতে থাকে এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে করে জয়েন্টে ব্যথা হয়। যা আপনার বাত ব্যথার কারণ হতে পারে।
- জিনগত কারণঃ জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণেও বংশ পরম্পরায় বাতের সমস্যা হতে পারে। আবার কিছু কিছু জিনের কারণে বাতের ব্যথার প্রবণতা দিনকে দিন বৃদ্ধি পেতেই থাকে।
- অতিরিক্ত ওজনঃ আপনাদের যাদের শরীরের ওজন অতিরিক্ত তাদের এই বাতের ব্যথা হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। কারণ, অতিরিক্ত ওজন হাটু এবং শরীরের অন্যান্য জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। যা কিনা আপনার বাত ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
- অনিয়মিত জীবন যাপনঃ নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভাস ইত্যাদি কারণে আপনার জয়েন্টের পেশী ও টিস্যুতে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। যা বাতের ব্যাথার সম্ভাবনাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
- প্রদাহজনিত রোগঃ প্রদাহ জনিত বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে লুপাস, সরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস ইত্যাদির কারণে আপনার বাতের ব্যথা হতে পারে। এই রোগ গুলো শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথার সৃষ্টি করে।
- খাদ্যাভ্যাসঃ পিউরিন যুক্ত খাবার যেমন- লাল মাংস, অ্যালকোহল ইত্যাদি খেলে শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তাতে গাউটের ঝুঁকি বাড়ে।
- পরিবেশগত কারণঃ কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে আবহাওয়ার পরিবর্তনেও বাপের ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন- আকাশ মেঘলা থাকলে, ঠান্ডা ও আদ্র পরিবেশে বাতের ব্যথা বেশি বেড়ে যায়।
বাতের ব্যথার ব্যায়াম
কি কি খাবারে আপনার বাতের ব্যথা বাড়তে পারে তা কিছুক্ষণ আগেই জেনেছেন। বাতের ব্যথা কমাতে আপনি নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করতে পারেন। যে ব্যায়ামগুলো নিয়ম মেনে করলে আপনি অতি দ্রুত বাতের এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। তো চলুন এবারে বাতের ব্যথার ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন--- প্রতিদিন হাটুনঃ বাতের ব্যথা দূর করার একটি কার্যকরী ব্যায়াম হল নিয়মিত সময় করে হাঁটাহাঁটি করা। খুব ভালো হয় যদি আপনি খালি পায়ে হাঁটতে পারেন। নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট হাঁটলে এটি জয়েন্ট গুলোকে অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ করে।
- স্ট্রেচিং করুনঃ আপনার শরীরের জয়েন্ট গুলোকে লোচকশীলতা করতে নিয়মিত স্ট্রেচিং করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেমন- হাত এবং পায়ের পেশী টানাটানি করুন বা ম্যাসাজ করুন, কোমর নিচু করে কিছু সময় ধরে রাখুন।
- সাইক্লিং করাঃ বাতের ব্যথা জন্য খুবই উপকারী একটি ব্যায়াম হলো সাইকেল চালানো বা সাইক্লিং। নিয়মিত সাইক্লিং করলে তাতে পেশি শক্তিশালী হয় এবং জয়েন্টের ব্যাথা দূর হয়। বাতের ব্যথা দূর করতে আপনি প্রতিদিন ৩০ মিনিট করা বেছে নিতে পারেন।
- সাঁতার কাটাঃ নিয়মিত সাঁতার কাটার অভ্যাস করলেও আপনার বাতের ব্যথা দূর হতে পারে। কারণ, পানিতে ভেসে থাকার কারণে শরীরের জয়েন্ট গুলোতে চাপ কম পড়ে। ফলে শরীরের সমস্ত পেশী শক্তিশালী হয়।
- শক্তি প্রশিক্ষণ করুনঃ আপনি রোজ ১০-১৫ মিনিট হালকা ওজন ব্যবহার করে শরীরের শক্তি প্রশিক্ষণ করুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ সাধারণত ওজন বেশি হলে বাতের ব্যথার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই বলবো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ, শরীরের ওজন কম থাকলে বাতের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
বাতের ব্যথার আয়ুর্বেদিক ঔষধ
বাতের ব্যথার আয়ুর্বেদিক ঔষধ আছে কিনা তা অনেকেই জানতে চান । সম্মানিত পাঠক, আয়ুর্বেদে বাতের ব্যথার কার্যকরী কিছু ঔষধ ও পদ্ধতি রয়েছে। বাত ব্যথার কিছু আয়ুর্বেদিক ঔষধ সম্পর্কে জেনে নিন। যা আপনার উপকারে আসবে।- গোল্ডেন মিলেটঃ আয়ুর্বেদে গোল্ডেন মিলেট এর বেশ পরিচিতি রয়েছে। এই কিরালু পাতার রস বা গোল্ডেন মিলেটে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে এটি বাত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- শালকুন্দঃ একটি দাঁতের ব্যথা কমাতে এবং বাত জনিত প্রদাহ নিরাময়ে বেশ কার্যকর। শাল কুন্দ ছাড়াও নাগরবেল, মেথি, তুলসী ইত্যাদি বাত ব্যথা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- পঞ্চকর্মঃ আয়ুর্বেদে পঞ্চকর্ম একটি সামগ্রিক শারীরিক ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের টক্সিন খুব সহজে বের হয়ে আসে।
- আসফোটিডিটাঃ এটি এক ধরনের মসলা যা বাত ব্যথা কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। আপনি নিয়মিত দুই তিন ফোটা আসফোটিডিটা এক কাপ গরম পানিতে মিশাই খেলে বাতের ব্যথা খুব সহজেই দূর হবে।
- গুড় ও আদার ব্যবহারঃ আপনি কি জানেন গুড় এবং আদা একসাথে খেলেও বাতের ব্যথা কমে যায়। শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন তাই তো! এর কারণ হলো আদায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং গুড় শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন করে।
- কালোজিরার ব্যবহারঃ বাতের ব্যথা কমাতে আপনি কালোজিরা বীজ বা কালোজিরার তেল খেতে পারেন। আয়ুর্বেদে বাতের ব্যথা কমাতে কালোজিরা এবং এর তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়।
- নিয়মিত যোগব্যায়ামঃ আয়ুর্বেদে বাপের ব্যথা কমাতে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম ও প্রাণায়ামের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ, নিয়মিত যোগ ব্যায়ামের ফলে শরীর শক্তিশালী হয় এবং মানসিক চাপ কমে। এতে করে বাতের ব্যথাও দূর হয়।
- দুধ ও হলুদের ব্যবহারঃ আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় যেকোনো রোগ সারাতে হলুদের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। সে হিসেবে আপনি নিয়মিত যদি এক কাপ দুধের সাথে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন তাহলে বাতের ব্যথার উপশম হবে।
রস বাত কি
রস বাত কি? রস বাত নামের সাথে পরিচিত হলেও আপনার হয়তো অনেকেই জানেন না রস বাত আসলে কি। তাহলে জেনে রাখুন, রস বাত হলো এক ধরনের আর্থ্রাইটিস যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। এতে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে জয়েন্টে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং তাতে ব্যথার উদ্রেক হয়। সাধারণত পায়ের আঙ্গুলের দিকে রস বাত বেশি হয়।তবে শরীরের অন্যান্য জয়েন্টেও এটি হতে পারে। মূলত শরীরে অতিরিক্ত রস জমে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ওজন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে রস বাতের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। রস বাতের প্রধান লক্ষণ গুলো হলো জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া, আক্রান্ত স্থান গরম হয়ে ওঠা, লালচে ভাব ইত্যাদি।
বাতের ব্যাথার ঔষধের নাম বাংলাদেশ
বাতের ব্যথা কি কি খাবার খেলে বাড়ে তা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই বাতের ব্যথার ঔষধের নাম সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে চলুন বাতের ব্যথার কিছু ঔষধের নাম জেনে রাখুন যা আপনার উপকারে আসবে।- ডাইক্লোফেনাকঃ এটি সাধারণত ট্যাবলেট বা ইনজেকশন হিসেবে পাওয়া যায়। বাত ব্যথা কমাতে ওষুধটি খুব ভালো কাজ করে।
- নাপ্রোক্সেনঃ এটিও এন্টি ইনফ্লামেটরি সম্পূর্ণ একটি ঔষধ। যা গাটের ব্যথা কমাতে কার্যকরী।
- অলোক্সানঃ অলোক্সান গাটের ব্যথা উপশমে খুব ভালো কাজ করে। এটি সাধারণত শরীরে ইউরিক এসিডের স্তর কমাতে কাজ করে।
- কলচিসিনঃ গাউটের তীব্র ব্যথা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় এই ঔষধটি।
- মেলোক্সিকামঃ এটি আর্থাইটিস সহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- কোন্ড্রুইটিনঃ এটি সাধারণত গাউ কোলের সাথে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধ ব্যবহারে এটি জয়েন্টের ঘর্ষণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে ব্যথা কম হয়।
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে এ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
কি খেলে বাতের ব্যথা বাড়ে আশা করছি আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনি তা বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। মূলত বাতের ব্যথা প্রতিরোধে একটি শুদ্ধ জীবন ধারা অনুসরণ করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা যোগব্যায়াম করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া আপনাকে এই বাত রোগ থেকে দূরে রাখতে পারে।বাতের ব্যথা দূর করার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই সবকিছু মেনে চললে আপনি খুব সহজেই বাত থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। এতক্ষণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url