আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেকেই জানতে চান। কিন্তু এর অপকারিতা এড়াতে আখের রস কখন খাওয়া উচিত জানেন কি? হয়তো তা জানেন না। তাহলে বলব আর্টিকেলটি এক্ষুনি একবার পড়ে নিন। 
আখের-রসের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
কারণ, আজকে আমরা আলোচনা করতে চলেছি আখের রস খাওয়ার নানান উপকারী ও অপকারী দিক এবং এই রস ঠিক কোন সময় কখন খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন মূল আলোচনায় ফিরে যাওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা

 আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা হয়তো অনেকেই জানেন না। শরবত হিসেবে সুমিষ্ট এই আখের রস খেতে ছোট বড় কমবেশি সকলেই পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন ভিটামিন ও মিনারেলের সব থেকে ভালো উৎস হল আখের রস। এই আখের রসে ক্যালরির পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক, কার্বোহাইড্রেট, ফসফরাস, পটাশিয়াম, 
আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। আখের রস উচ্চমাত্রায় ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি আপনার হজম শক্তি বাড়ায়, শারীরিক দুর্বলতা দূর করে এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে। সেই সাথে প্রচন্ড গরমে আপনার শরীরের ডিহাইব্রেশনের সমস্যা দূর করতে পারে এই আখের রস। 
 
আপনি জেনে আরো অবাক হবেন যে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও আখের রস খুব ভালো কাজ করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে আখের রস খেলে আবার আপনার ওজন বাড়ার খানিকটা ঝুঁকি থেকেই যায়। সেই সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও কিন্তু বাড়তে পারে। তাই বলবো আখের রস খাওয়ার আগে আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে পরিমাণ মত খান।

আখের রসের উপকারিতা

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। আখের রস একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর পানীয় যা খাওয়ার ফলে আপনি এর থেকে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন। তো চলুন জেনে আসি আখের রস খাওয়ার উপকারী দিক সম্পর্কে-
  • আখের রসে উচ্চ পরিমাণে প্রাকৃতিক সুগার থাকে। যা খেলে অতি দ্রুত আপনার শরীরের শক্তি সরবরাহ করে। আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীরও তরতাজা থাকে। 
  • আখের রস আপনার লিভারের জন্য উপকারী। কারণ, আখের রস লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করে দেয়।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেও আখের রস বেশ কার্যকরী। তবে অন্যান্য ফলের রসের তুলনায় আখের রসে ফাইবার তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
  • আখের রসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন থাকে। যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা খুব সহজেই পূরণ করতে পারে।
  • ত্বকের জন্য আখের রস ভীষণই উপকারী। নিয়মিত আখের রস খেলে এটি ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করে। ফলে ত্বক ভালো রাখতে আপনি নিয়ম করে আখের রস খেতে পারেন।
  • আখের রসে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আপনার শরীরের কোষগুলোকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়। 
  • নিয়মিত নিয়ম করে এক গ্লাস আখের রস খেলে এতে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ, আখের রসে রয়েছে ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
  • প্রচন্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরকে ঠান্ডা রাখতে আপনি খেতে পারেন এক গ্লাস টাটকা আখের রস। এতে শরীর পেট দুটোই ঠান্ডা থাকে এবং শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা হলেও কমে।
  • আপনি কি জানেন, আখের রস রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে? সুতরাং কোলেস্টেরলের সমস্যা দূর করতে আপনি আখের রস পান করুন। এতে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে।
  • নিয়মিত আখের রস খেলে এটি আপনার মূত্রনালী পরিষ্কার করে এবং মুত্রজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। 
আখের-রসের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্যও আখের রস বেশ উপকারী। কারন, আখের রসে যে ফাইবার রয়েছে তা আপনার ওজন কমাতে কাজ করে। তবে অতিরিক্ত আখের রস খেলে আবার ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • আখের রসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ফসফরাস আয়রন ক্যালিসিয়াম এবং পটাশিয়াম রয়েছে। যা আপনার হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়, হাড় শক্ত করে এবং সেই সাথে হাড়ের ব্যথা দূর করে।
  • আখের রসের সাধারণত ফাইবার, ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল খুব কম পরিমাণে থাকে। কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে।যা খেলে আপনার শরীর চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
  • শুধু তাই নয়, আখের রস খেলে এটি আপনার শরীরে ফ্লাভোনয়েড উপাদানের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যা আপনাকে যেকোনো ধরনের ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে।
  • আখের রসে থাকা ক্যালসিয়াম আপনার দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী। তাছাড়া শুধু আখ চিবিয়ে খেলেও তাতেও দাঁত শক্ত হয় এবং দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  • প্রচন্ড গরমে আমাদের শরীরে পানির প্রয়োজন হয় এবং অনেক সময় শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। শরীরে পানির এই অভাব দূর করতে গরমের সময় আপনি খেতে পারেন এক গ্লাস তাজা আখের রস। এতে আপনার পানিশূন্যতা দূর হবে।
  • আপনার পেটের যেকোনো ধরনের ইনফেকশন সারাতে আখের রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • আখের রস মিষ্টি হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি উপকারী। কারণ, এই রসে জিআই এর পরিমাণ খুবই কম থাকে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা আখের রস নিয়ম করে খেলে তাতে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খাওয়া উচিত।

আখের রসের অপকারিতা

আখের রসের উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু স্বাস্থ্য অপকারিতাও রয়েছে। আখের রস সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার কিছু শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নেই আখের রস খাওয়ার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি হতে পারে-
  • উচ্চমাত্রার ক্যালোরিঃ আখের রসে রয়েছে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি। ফলে দিনে এক গ্লাসের বেশি আখের রস খেলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমতে থাকে। এতে করে আপনার ওজনও বাড়তে থাকে।
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ আপনার যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আখের রস যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। কারণ আখের রসে প্রচুর পরিমাণে সুগার থাকে যা আপনার রক্তে শর্করার স্তর বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • রক্ত পাতলা করে ফেলেঃ আখের রসে রয়েছে পোলিকোসানোল। আপনার শরীরে রক্ত পাতলা করে ফেলতে পারে। সুতরাং আপনি যদি রক্ত পাতলা করার ঔষধ সেবন করে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই আখের রস পান করা পরিহার করুন।
  • নিদ্রাহীনতার সৃষ্টি করেঃ আখের রসে পোলিকাসানোল যৌগ থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে খেতে এটি আপনার শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে এই যৌগের ফলে আপনার মাথা ঘোরা, অনিদ্রা ভাব এবং পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ অনেক সময় আমরা পথের ধরে আখের রস খেয়ে থাকি। আর আখ বিক্রেতারা আখ না ধুয়েই সেটি মেশিনে দিয়ে রস সংগ্রহ করে। এই অস্বাস্থ্যকর রস পান করার ফলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন।
  • দাঁতের ক্ষতি করেঃ আখের রসে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি থাকে যা আপনার দাঁতের জন্য ক্ষতিকর এবং এটি ক্যাভিটি সৃষ্টি পড়তে পারে।
  • মেটাবলিজম বিঘ্নিত হয়ঃ অনেক সময় অতিরিক্ত পরিমাণে আখের রস খেলে তাতে আপনার মেটাবলিজমে সমস্যা হতেই পারে। এতে আপনার শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
  • কিডনির সমস্যাঃ আখের রসে উচ্চ শর্করা এবং পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি আপনার কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং কিডনি সুস্থ রাখতে চাইলে আপনি অতিরিক্ত আখের রস খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
  • হজমের সমস্যাঃ আখের রসে অন্যান্য ফলের রসের তুলনায় ফাইবারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। ফলে অতিরিক্ত আখের রস খেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
  • প্রথমেই বলি, আপনি সব সময় তাজা টাটকা আখের রস খাওয়ার রস খাবেন।
  • আপনি পথের ধারে যেন তেন নোংরা জায়গা থেকে আখের রস খাবেন না। তাতে ময়লা ব্যাকটেরিয়া থেকে আপনার শরীরে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
  • আপনি আখের রস অবশ্যই ২০ মিনিটের বেশি সময় সংরক্ষণ করে রেখে খাবেন না। কারণ ২০ মিনিটের অধিক হয়ে গেলে রস অক্সিডাইজড হয়ে যায়। যা আপনার শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আখের রস কখন খাওয়া উচিত

আখের রস আপনার কখন খাওয়া উচিত জানেন কি? আখের রস খাওয়ারও একটি সময় রয়েছে। যে সময় মেনে আখের রস খেলে আপনি এর থেকে সর্বাধিক উপকারিতা পেতে পারেন। তো এবার চলুন আপনি আখের রস কখন খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-
  • সকালে খালি পেটেঃ সকালে খালি পেটে আখের রস খেলে এর থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কারণ, সকালে আখের রস পান করলে এটি আপনার শরীরে সারা দিনের জন্য অতিরিক্ত শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ করতে থাকে। সেই সাথে আপনার পেটও পরিষ্কার রাখে।
  • প্রচন্ড গরমের সময়ঃ প্রচন্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে আপনি আখের রস খেতেই পারেন। কারণ, গরমের দিনে আখের রস খেলে এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। সাথে শরীরের ডিহাইড্রেশনও প্রতিরোধ করে।
  • দুপুরে খাবারের পরেঃ আপনি দুপুরে খাবারের পরেও আখের রস খেতে পারেন। আখের রস খাওয়ার এটি একটি উত্তম সময়। এই সময় আখের রস খেলে আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ভালো থাকে এবং হজম সহজ হয়।
  • শরীর চর্চার পরেঃ আপনি যদি নিয়মিত শরীর চর্চা করেন সেক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন পড়ে। তাই অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন মেটাতে আপনি ব্যায়ামের পরে এক গ্লাস আখের রস খেয়ে নিন। শরীরের দ্রুত এনার্জি পাবেন।
  • বিকেলের নাস্তায়ঃ সারাদিন কাজ শেষে বিকেল বেলা স্নাক্স হিসেবে আপনি আখের রস পান করতেই পারেন। এতে খানিকটা স্বস্তি পাবেন এবং সারাদিনের ক্লান্তিবোধ দূর হবে। তবে এই সময় অন্যান্য খাবারের সাথে আখের রস মিশিয়ে খাওয়া ভালো।
সম্মানিত পাঠক, আখের রস কখন খাবেন আশা করছি এবার বুঝতে পেরেছেন। উপরিউক্ত সময় মেনে আপনি আখের রস পান করুন। তাতে ভালো উপকার পাবেন।

আখের রস খাওয়ার নিয়ম

আখের রসের নানা রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা এখন নিশ্চয়ই আপনি জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন আখের রস খাওয়ারও কিছু নিয়ম রয়েছে। যে নিয়ম মেনে আখের রস খেলে আপনার শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা নাও দিতে পারে। এবারে চলুন আখের রস খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন-
  • আপনি আখের রস পরিমিত পরিমাণে অর্থাৎ দিনে ১-২ গ্লাসের বেশি পরিমাণ খাবেন না। কারণ এতে অতিরিক্ত সুগার থাকে।
  • আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই তাজা আখের রস খাবেন। অনেকক্ষণ সংরক্ষণ করে সেই রস কখনোই খাবেন না। তাতে আখের রসের পুষ্টিগুণ আগুন নষ্ট হয়ে যায়।
  • আপনি বাজারে কেনা আখের রস খাওয়া যতটা সম্ভব পারুল এড়িয়ে চলুন। কারণ বাজারে আখের রস অনেক সময় প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা হয়।
  • আখের রস গরমকালে খাওয়াটা স্বাস্থ্যের জন্য সবথেকে বেশি উপকারী। এতে আপনার শরীর ঠান্ডা থাকে এবং পিপাসাও মেটে।
  • দিনে আপনি সকালের নাস্তা ছাড়াও দুপুরের খাবারের পরেও আখের রস খেতে পারেন।
  • আখের রসে প্রাকৃতিক চিনি বেশি থাকায় এটি খেতে খুবই মিষ্টি হয়। আপনি যদি অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে অভ্যস্ত না হন সে ক্ষেত্রে এই রসের সাথে সামান্য পানি মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে রসের মিষ্টতা কমবে। খেতেও ভালো লাগবে।
  • আপনি আখের রসের সাথে অন্যান্য উপাদান যেমন- পুদিনা পাতা, আদা ইত্যাদি যোগ করেও খেতে পারেন। এতে আখের রসের পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যাবে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম আখের রস খাওয়ার নিয়ম। আখের রস খাওয়ার আর তেমন বিশেষ কিছু নিয়ম নেই। উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে আখের রস খেলেই তাতে আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

আখের রস খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে

আখের রস খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে? এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা প্রায়শই এই প্রশ্ন করে থাকেন। আবার অনেকেই আছেন যারা ডায়াবেটিস এর জন্য আখের রস একেবারেই এড়িয়ে চলেন। তাহলে জেনে রাখুন, আখের রস খেলে কিন্তু ডায়াবেটিস বাড়ার সম্ভাবনা কিছুটা থেকেই যায়। 
 
কারণ, এই রসে উচ্চমাত্রায় চিনি থাকে। তাছাড়া এই রসে গ্লুকোজ সুক্রোজ এবং ফ্রুকটোজ থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। যা কিনা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অতিরিক্ত না খেয়ে আপনি যদি পরিমাণ মতো আখের রস খান, 
 
সেক্ষেত্রে এটি আপনার শরীরে দ্রুত শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করবে এবং হজমে সাহায্য করবে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আখের রস উপকারী কিন্তু আপনাকে আপনার স্বাস্থ্য বুঝে পরিমাণ মতো খেতে হবে। তাতে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার কোন ঝুঁকি থাকবে না। আখের রস খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে কিনা আশা করছি এর উত্তর আপনি পেয়ে গেছেন।

গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতা

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতা কতখানি? হয়তোবা জানেন না। গর্ভাবস্থায় এই আখের রস খাওয়ারও বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তো চলুন এইবারে গর্ভাবস্থায় আখের রসের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন-
  • পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধঃ আখের রসে বিভিন্ন রকম পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। আর এই সমস্ত পুষ্টি উপাদান একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকটি গর্ভবতী মায়েরই শরীরে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন পড়ে। আর আখের রসে যেহেতু প্রাকৃতিক চিনি থাকে। ফলে এটি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। তাই গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন মেটাতে পারে একমাত্র আখের রস।
  • মর্নিং সিকনেস কমাতেঃ গর্ভাবস্থায় সাধারণত সকালের দিকে প্রত্যেকটি গর্ভবতী মা-বোন শারীরিক দুর্বলতা বেশি অনুভব করেন। যা মর্নিং ফিটনেস নামে পরিচিত। সকালের এই দুর্বলতা কাটাতে আপনি খেতে পারেন এক গ্লাস সতেজ আখের রস।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরই হজমের সমস্যা হয়। গর্ভকালীন এই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আখের রসের ভূমিকা অনবদ্য। ফলে এই সময় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন আপনি আখের রস খেয়ে।
  • পানি শূন্যতা দূর করেঃ গর্ভকালীন সময়ে মা-বোনদের অনেক সময় শরীরে পানি শূন্যতার অভাব দেখা দেয়। ঠিক এই সময় আখের রস পান করলে শরীরের পানি শূন্যতা দূর হয় এবং হাইড্রেশন বজায় থাকে।
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে আখের রসে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে তা আমরা সকলেই জানি। ফলে গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে আপনি আখের রস খেতে পারেন।
  • ভ্রূণের বৃদ্ধিঃ গর্ভাবস্থায় আখের রস খেলে এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান আপনার ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। তাছাড়া এই রস আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণের স্নায়ু ও হাড়ের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভাইরাল ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধেঃ গর্ভকালীন সময়ে আখের রস পান করলে এটি কেবলমাত্র আপনার শরীরের পুষ্টি সরবরাহই করে না বরং এটি আপনার শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  • দাঁতের সমস্যা দূর করেঃ গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দাঁতের সমস্যা অন্যতম। আর আখের রসে যেহেতু পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। ফলে এই রস অন্তঃসত্ত্বকালীন সময়ে আপনার দাঁত ভালো রাখে।
গর্ভাবস্থায় আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
  • প্রথমতঃ আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, বাজারের আখের রস অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং নোংরা মেশিনে তৈরি করা হয়। সব থেকে ভালো হয় যদি আপনি বাড়িতে তৈরি করে আখের রস খেতে পারেন।
  • দ্বিতীয়তঃ আপনি সব সময় চেষ্টা করবেন আখের রস খেতে। ২০ মিনিটের বেশি সময় আখের রস সংরক্ষণ করে অবশ্যই খাবেন না। কারণ তাতে আখের রসের পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। যত দ্রুত পারবেন খেয়ে নেবেন।
  • তৃতীয়তঃ অন্তঃসত্ত্বাকালীন সময়ে আপনি কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে আখের রস খাবেন না, কারণ এতে কিন্তু প্রাকৃতিক চিনি প্রচুর পরিমাণে থাকে। অতিরিক্ত খেলে আবার আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে।

খালি পেটে আখের রস খেলে কি হয়

আখের রসের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি খানিক আগেই জেনেছেন। কিন্তু খালি পেটে আখের রস খাওয়ার উপকারিতা জানেন কি? খালি পেটে আখের রস খাওয়ারও নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন। তাহলে চলুন এবার খালি পেটে আখের রস খেলে কি হয় তা জানবেন-
আখের-রসের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • খালি পেটে আখের রস খেলে এটি দ্রুত আপনার শরীরে শক্তি সরবরাহ করতে থাকে। ফলে আপনার শরীর দ্রুত এনার্জি পায়।
  • সকালে খালি পেটে আখের রস পান করলে এতে থাকা ফাইবার আপনার পেট পরিষ্কার রাখে, পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
  • গরমের দিনে সকাল বেলা দিনের শুরুতে আখের রস খেলে এটি আপনার শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখে। ফলে আপনার সারাদিনে পিপাসা কম পাবে।
  • নিয়মিত খালিপেটে আখের রস খেলে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে। ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়।
  • খালি পেটে আখের রস খেলে এটি আপনার রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খালি পেটে আখের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
  • নিয়মিত নিয়ম মেনে পরিমান মত সকালবেলা আখের রস খেলে এটি আপনার ত্বক হাইড্রেটেড ও সতেজ রাখে। তাছাড়া ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ ব্রনের দাগ ইত্যাদি দূর করে।
  • আপনি কি জানেন খালি পেটে আখের রস খেলে এর পুষ্টি উপাদান গুলি আপনার শরীরে খুব সহজেই শোষিত হতে পারে।
  • দিনের শুরুতে এক গ্লাস ফ্রেশ হতে আখের রস খেলে সারা দিনভর এটি আপনাকে চনমনে এবং চাঙ্গা রাখে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম সকালে খালি পেটে আখের রস খেলে কি হতে পারে। এতসব উপকারিতা পেতে আপনি আজ থেকেই নিয়ম করে সকালবেলা খালি পেটে অথবা নাস্তার সাথে আখের রস খাওয়ার অভ্যাস করুন।

আখের রস খেলে কি ওজন বাড়ে

আখের রস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা যা আজকের আলোচনার মাধ্যমে আপনি জেনেছেন। এই অপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি হল ওজন বাড়ার সমস্যা। আপনি ইতিমধ্যে জেনেছেন আখের রসের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সুগার থাকে। শুধু সুগার নয় বরং আখের রসে আরো রয়েছে উচ্চমাত্রার শর্করা এবং উচ্চ ক্যালোরি। 
 
ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে আখের রস খেলে আপনার শরীরে ক্যালরির পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যায়। আর ক্যালোরি বাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই ওজনও বাড়বে। কারন, ওজন বাড়ার জন্য দায়ী কাবন ক্যালরি। যা কিনা আপনার ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে। তবে আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের সাথে মানিয়ে যদি 
 
আখের রস খেতে পারেন তাতে ওজন বাড়ার তেমন একটা সম্ভাবনা থাকে না। বরং তখন আখের রস আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করবে। তাছাড়া আখের রস খাওয়ার পাশাপাশি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন। এতে আপনার ওজন কখনোই পারবেনা। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

আখের রসে চিনির পরিমাণ কত

আখের রসে চিনির পরিমাণ কত তা অনেকেই জানতে চান। আখের রস অত্যন্ত সুমিষ্ট ফলে এতে চিনির পরিমাণও বেশি থাকে। আখের রসে চিনির পরিমাণ শতকরা হিসেবে প্রায় ১০-১৫% হতে পারে। তবে আখের রসে চিনির পরিমাণ সাধারণত আখের জাত, ফলন এবং আখের পরিপক্কতার উপর অনেকটাই নির্ভর করে। এতে চিনি ছাড়াও আরো বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

আখের রসের পুষ্টিগুণ

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা এতক্ষণ আমরা জেনেছি। এবার আমরা জানবো এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। সম্মানিত পাঠক, প্রতি ১০০ মিলি লিটার আখের রসে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে নিচের একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন---
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
ক্যালরি ৬০-৭০ কিলো ক্যালরি
জিংক ০.০১ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন ০.০২ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.০৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ১০০-১৫০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ২৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম
প্রোটিন ০.৩ গ্রাম
শর্করা ১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ২০ গ্রাম

লেখকের মন্তব্য

আখের রসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। আখের রস খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তাছাড়া গরমের সময় এই রসের চাহিদা বেড়ে যায় ব্যাপক। আখের রস পানে শুধু যে পিপাসায় মেটে তা কিন্তু নয়, বরং এই রসের অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। 
 
যা আপনি ইতিমধ্যে আজকের আলোচনায় জেনেছেন।আবার প্রচন্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতেও এই আখের রসের জুড়ি মেলা ভার। এই গরমে আপনার শরীরকে পানি শূন্যতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র আখের রস। তাই বলবো গরমে সুস্থ থাকতে আপনি নিয়মিত এক গ্লাস আখের রস পান করার অভ্যাস করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url