অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম আমাদের অনেকেরই অজানা। আজকে আমরা আলোচনা করব অর্জুন গাছের ছালের গুনাগুন এবং এই ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
অর্জুন-গাছের-ছালের-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
অর্জুন গাছের ছাল বহু ঔষধে গুণে সমৃদ্ধ। এই ছাল এতটাই উপকারী যে শরীরের যে কোন রোগ ব্যাধি অতি সহজেই দূর করে দিতে পারে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে অর্জুন ছাল সম্পর্কিত আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছাল বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বেশ পরিচিত। বিশেষ করে হৃদরোগের চিকিৎসায় অর্জুন গাছ বহুল ব্যবহৃত হয়। কারণ, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখে। শুধু তাই নয়, এই গাছের ছাল কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে, হজমের সমস্যা এবং অগ্নাশয়ের প্রদাহ কমাতে খুব ভালো কাজ করে। 
এছাড়াও অর্জুনের ছালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি মাইক্রোবিয়াল গুণাবলীও রয়েছে। যা কিনা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে অর্জুনের ছাল ব্যবহার করলে বা সঠিক নিয়ম না মেনে অর্জুনের ছাল ব্যবহার করলে, 
 
তাতে শারীরিক কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে অর্জুনের ছাল সেবন করলে তাতে রক্তচাপ কমে যেতে পারে এবং শরীরে এলার্জির প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। আবার কখনো কখনো অতিরিক্ত অর্জুন ছাল ব্যবহার  আপনার পেটের সমস্যার কারন হয়েও দাঁড়াতে পারে। 
 
তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদী অর্জুন ছাল ব্যবহারে এটি অগ্নাশয় জটিলতা বা কিডনির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অর্জুনের ছাল ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই সতর্কভাবে এবং নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত। যা আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি। তাহলে চলুন এবার মূল আলোচনায় ফিরে যাওয়া যাক।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারী দিক অনেক। ভারতীয় উপমহাদেশে অর্জুন গাছ একটি ঐতিহ্যবাহী ঔষধি গাছ এবং এর বিভিন্ন ঔষধি গুণাবলী সারা বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই এই গাছের ছাল সেবনের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
  • হৃদরোগের প্রতিকার হিসেবেঃ হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী অর্জুনের ছাল। বিশেষ করে এই ছাল রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং হৃদপেশীর কার্যকারিতা বাড়াতে কাজ করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অর্জুনের ছাল হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খুব ভালো কাজ করে। তাছাড়া নিয়মিত অর্জুনের ছাল সেবনে এটি রক্তে অক্সিজেনের পরিবহন সহজতর করে এবং সেই সাথে হার্টের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেঃ আপনি কি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে বলব আজ থেকেই নিয়ম করে অর্জুনের ছাল সেবন শুরু করুন। কারণ, অর্জুন গাছের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী একটি ঔষধি উপাদান। অর্জুনের ছাল সেবনে এটি রক্তবাহী নালীগুলোকে প্রশস্ত করে। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়। তাছাড়া এটি সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক উভয় রক্তচাপকেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কিংবা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখেঃ নিয়মিত নিয়ম মেনে অর্জুন গাছের ছাল এটি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া এই ছাল রক্তে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রেখে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে দারুন কাজ করে।
  • হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ আপনার হজমের সমস্যা থাকলে আজ এখন থেকেই অর্জুন ছাল সেবন শুরু করে দিন। কারণ, এটি অগ্নাশয় অ্যালক্যালাইন তৈরি করে এবং হজমের সহায়ক এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হয়। শুধু হজম নয় বরং গ্যাস, এসিডিটি সহ পেটের অন্যান্য যেকোনো সমস্যা সমাধানে এই ছাল খুবই উপকারী।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও অর্জুনের ছাল বেশ উপকারী। কারণ, অর্জুন গাছের ছাল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে এবং শর্করা বিপাকের হার বাড়িয়ে দেয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অর্জুন গাছের ছালকে প্রাকৃতিক ঔষধ ও বলা হয়ে থাকে।
  • অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ অর্জুন গাছে ছালে বিদ্যমান এন্টি অক্সিডেন্ট গুনাবলী আমাদের শরীরের ভেতরে প্রবাহিত ফ্রি রেডিকেলগুলোকে সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। এছাড়াও কোষের ক্ষয় রোধ করতে, অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে, ক্যান্সার ও অন্যান্য জটিল রোগের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে অর্জুন ছাল।
  • এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যঃ অর্জুন গাছের ছালে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে কার্যকরী। বিশেষ করে এটি আর্থাইটিস, গাউট মাংসপেশি ব্যথা, শরীরের অন্যান্য যেকোনো ধরনের প্রদাহ জনিত চিকিৎসায় বিশেষভাবে উপকারী।
  • গ্যাস অম্বল নিরাময়েঃ আপনি কি জানেন গ্যাস্ট্রিক আলসারের মত চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয় অর্জুনের ছাল। কারণ, এটি পাকস্থলীর সংবেদনশীলতার হ্রাস করে এবং পাকস্থলীতে ক্ষয়কারী অম্ল সৃষ্টি প্রতিরোধ করে। ফলে অর্জুনের ছাল সেবনে এটি গ্যাস্ট্রিক, আলসার বা পেপটিক আলসারের পুনরাবৃত্তি রোধে কাজ করে।
  • লিভারের সুরক্ষায়ঃ অর্জুন ছাল লিভার ভালো রাখতেও অর্জুনের ছাল বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিয়ম মেনে অর্জুনের ছাল সেবনে এটি লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে লিভারের কার্যক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং এটি লিভারের প্রদাহ ও অন্যান্য সমস্যা যেমন ধরুন হেপাটাইটিস এর বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
অর্জুন-গাছের-ছালের-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • কিডনি সুরক্ষায়ঃ কিডনির কার্যক্ষমতা উন্নত করতে এবং কিডনির ক্ষয় রোধ করতে পারে একমাত্র অর্জুন ছাল। কিডনির ক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল মূলত প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। ফলে অর্জুনের ছাল সেবনে এটি কিডনিজনিত যেকোনো সমস্যা যেমন কিডনির পাথর বা কিডনি ফেইলুর প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • ফোড়া নিরাময়েঃ অর্জুন গাছের ছালে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্ট্রি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত শরীরের যেকোনো ধরনের আকেল, ফোড়া বা ত্বকের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ নিরাময়ে উপকারী।
  • প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ নারী পুরুষ নির্বিশেষে উভয়ের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অর্জুনের ছাল অতীব উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সেই সাথে শরীরের হরমোনাল ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
  • শ্বাসতন্ত্রের জন্য উপকারীঃ শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার জন্য উপকারী এই অর্জন ছাল। আপনার যদি শ্বাসকষ্ট জনিত কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিশ্চিন্তে অর্জুন ছাল সেবন করতে পারেন। কারণ, এটি ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, কাশির সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট জনিত যেকোনো রোগের প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।
  • ওজন কমাতে সহায়কঃ যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলতে চান প্রাকৃতিকভাবে তাদের জন্য অর্জুনের ছাল হতে পারে একটি আদর্শ মহৌষধ। নিয়মিত অর্জুন ছাল সেবন করলে এটি শরীরের মেটাবলিজম যেমন বৃদ্ধি করে তেমনি শরীরের ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি অর্জুন ছাল সেবন করতেই পারেন।
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতেঃ অর্জুন গাছের ছাল মূত্রনালীর সংক্রমণ কমাতেও কাজ করে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকরী এবং মুত্রাশয়ে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া প্রস্রাবের বাধা দূর করতে আপনি অর্জুন গাছের ছাল দুই কাপ জলে খুব ভালো করে ফুটিয়ে নিন। জল যখন ফোটানোর পর অর্ধেক হয়ে আসলে ঠান্ডা করে খেয়ে নিন। এতে আপনার প্রস্রাবের সমস্যা দূর হবে।
  • মাইক্রোবায়াল প্রতিরোধেঃ অর্জুন গাছের ছাল মূলত এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ফাঙ্গাল সমৃদ্ধ। ফলে শরীরের যেকোনো ধরনের ফাঙ্গাসজনিত রোগের বিরুদ্ধে খুব সহজেই এটি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে অর্জুন গাছের ছালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্লাভোনয়েদ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। ফলে অর্জুনের ছাল সেবনে আপনি মরণব্যাথি ক্যান্সার থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।
  • হাড় মজবুত করতেঃ অনেক সময় ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগাতে ব্যবহার করা হয় অর্জুন ছাল। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে হাড় শক্ত করার উপাদান রয়েছে। তাছাড়া হাড় শক্তিশালী ও মজবুত করতে আপনি দুধের সাথে মিশিয়েও অর্জুন ছালের গুঁড়ো খেতে পারেন।
  • গলা ব্যথা দূর করতেঃ অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আমাদের অনেকেরই সর্দি কাশি, ঠান্ডা লাগা, গলা ব্যথা লেগেই থাকে। এই গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন অর্জুন ছাল।
  • ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ত্বক পরিষ্কার রাখতে এবং ত্বকের প্রদাহ কমাতে অর্জুনের ছাল অত্যন্ত উপকারী। ত্বকের বলিলেখা দূর করতে আপনি বাদাম, হলুদ, অর্জুন ছাল এবং কর্পূর পরিমাণমতো মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ত্বকের বলিরেখা যেমন দূর হবে তেমনি ত্বক উজ্জ্বল হবে।
  • চুলের জন্য উপকারীঃ শুধুমাত্র ত্বক নয় বরং চুলের জন্যও আপনি অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারেন। অর্জুন ছাল এবং হেনা নিয়মিত চুলে ব্যবহারে আপনার সাদা চুল কালো হবে এবং সেইসাথে চুলের গোড়াও শক্তিশালী হবে।
  • মুখের ফোসকা দূর করতেঃ মুখের ফোসকা দূর করতে আপনি অর্জুনের ছালের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে আপনার ত্বকের ফোসকার স্থানে লাগান। এতে আপনার ত্বকে ফস্কার সমস্যা দূর হবে।
সম্মানিত পাঠক, অর্জুন গাছের ছাল শরীরের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। তবে এটি ব্যবহার করার আগে আপনার অবশ্যই সঠিক পরিমাণ এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আপনার জেনে নেওয়া উচিত। কারণ, অতিরিক্ত ব্যবহার বা ভুল ব্যবহারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

অর্জুন ছালের অপকারিতা

অর্জুন ছালের অপকারিতাও কম নয়। অর্জুন ছালের উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে। এই অপকারিতা গুলো আপনি তখনই টের পাবেন যখন নিয়ম না মেনে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে অর্জুন ছাল সেবন করবেন। এবার চলুন অর্জুন ছালের অপকারিতা গুলো জেনে নিই-
  • অর্জুন গাছের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাজ করে এ কথা ঠিক। কিন্তু অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি রক্তচাপ অত্যধিক কমিয়ে দিতে পারে।এতে আপনার নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যার ফলস্বরূপ আপনি মাথা ঘোরা, শারীরিক দুর্বলতা বা অসুস্থতা অনুভব করতে পারেন। সুতরাং যাদের স্বাভাবিক বা নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের অর্জুন ছাল ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত।
  • অর্জুনের ছাল হজম শক্তি বাড়াতে সহায়ক হলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার পেটে গ্যাস, পেট ফোলা বা ডায়রিয়া হতে পারে। আবার কিছু কিছু মানুষের পেটের জন্য অর্জুনের ছাল খুব শক্ত বা ভারী হতে পারে, যা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • অর্জুনের ছাল কিডনির জন্য উপকারী এ কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারে আপনার কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শুধু তাই নয়, কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাও ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অর্জুনের ছাল সেবন করা উচিত।
  • অর্জুন গাছের ছাল রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহারে রক্তনালীর প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে এবং সেই সাথে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া অস্বাভাবিক দিকে পরিচালিত করতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থা বা অস্ত্রপাচার পরবর্তী পরিস্থিতিতে অনেক সময় এই ছাল শারীরিক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
  • গর্ভকালীন সময়ে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করা মোটেও নিরাপদ নয়। কারণ, এই সময় অর্জুন ছাল ব্যবহারে আপনার পেশীতে সংকোচন সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে আপনার গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। অতএব গর্ভবতী মা-বোনদের জন্য অর্জুন ছাল ব্যবহারে অতি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
  • আপনি যদি অন্যান্য ঔষধ বিশেষ করে রক্তচাপ কমানোর ঔষধ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ঔষধ সেবন করেন সেক্ষেত্রে অর্জুনের ছাল সেবন না করাটাই ভালো। কেননা এটি অন্যান্য ঔষধের সাথে আন্তঃক্রিয়া করে ঔষধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
  • আবার অর্জুন গাছের ছাল কখনো কখনো আপনার এলার্জির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ এটি ত্বক বা শ্বাস-প্রশ্বাসে অনেক সময় এলার্জি সৃষ্টি করে।
  • ত্বকের যত্নে নিয়ম না মেনে অর্জুন গাছের ছাল বা ছালের নির্যাস ব্যবহার করলে তাতে ত্বকে চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই অর্জুন ছাল ব্যবহারে ত্বকে যেকোনো ধরনের অস্বস্তি হলে শিগগির এর ব্যবহার বন্ধ করে আপনার একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
  • অর্জুন গাছের ছাল যেহেতু রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়াতে কাজ করে। তাই যেকোনো ধরনের অস্ত্র পাচারের পরে এটি অতিরিক্ত রক্ত প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারে। যা কিনা রক্তক্ষরণ বা অন্য কোন বিপত্তির কারণ হতে পারে। তাই বলবো অস্ত্র পাচার পরবর্তী সময়ে অর্জুন ছাল আপনার ব্যবহার না করাটাই ভালো। আর ব্যবহার করলেও অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ব্যবহার করবেন।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও অর্জুন গাছের ছাল অতি সাবধানতার সাথে সেবন করা উচিত।
সম্মানিত পাঠক, অর্জুন গাছের ছালের উপরিউক্ত অপকারিতা এড়াতে আপনি সঠিক নিয়ম মেনে এই ছাল ব্যবহার করুন। আবার আমাদের প্রত্যেকেরই শারীরিক অবস্থা যেহেতু ভিন্ন তাই এটি ব্যবহারের আগে এর সঠিক পরিমাণ এবং সময় সম্পর্কেও একজন চিকিৎসকের থেকে জেনে নেওয়া উচিত।

অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম

অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে কিভাবে খেতে হয় সেই নিয়ম আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু এই ছাল ভিজিয়ে খাওয়া খুবই কার্যকরী। বিশেষ করে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য। অর্জুনের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার বেশ কিছু প্রথাগত উপায় রয়েছে। চলুন তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক-
  • অর্জুনের ছাল সংগ্রহঃ প্রথমেই বলি অর্জুন গাছের ছাল সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই শক্ত এবং পরিপক্ক ছাল সংগ্রহ করবেন। চেষ্টা করবেন অর্জুন গাছের মূল এবং ডালের কাছ থেকে ছাল সংগ্রহ করার। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি গ্রীষ্মকালে অর্জুন গাছের ছাল সংগ্রহ করতে পারেন। কারণ, তখন ছাল বেশ তরতাজা থাকে। তবে খেয়াল রাখবেন ছাল সংগ্রহ করার সময় গাছের যেন কোন প্রকার ক্ষতি না হয়।
  • অর্জুন ছাল পরিষ্কার এবং শুকানোঃ ছাল সংগ্রহের পর আপনি ছাল গুলো পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নেবেন। এক্ষেত্রে বলে রাখি, ছাল শুকানোর জন্য আপনি সরাসরি রোদে না রেখে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখবেন। যাতে করে তাপ এবং সূর্যালোকের তাপ সরাসরি ছালের গায়ে না লাগে। এতে ছালের পুষ্টিগুণ অপরিবর্তিত থাকবে। তবে আপনি যদি ছাল শুকাতে না চান সেক্ষেত্রে অর্জুনের তাজা ছালও ব্যবহার করতে পারেন।
  • ছাল কাটার প্রক্রিয়াঃ পানিতে ভিজিয়ে রাখার জন্য অর্জুন গাছের ছালটিকে আপনি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। চেষ্টা করুন প্রতিটি টুকরো ২-৩ ইঞ্চি করে কাটার। এতে করে খুব সহজেই ছাল গুলো পানিতে ভিজে যাবে এবং খেতেও অসুবিধা হবে।
  • ছাল ভিজিয়ে রাখার নিয়মঃ কাটা ছাল গুলোকে আপনি একটি পরিষ্কার পাত্রে রাখুন এবং তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি যোগ করুন। মনে রাখবেন, ১৫-২০ গ্রাম ছাল ভিজিয়ে রাখার জন্য এক কাপ পানিই যথেষ্ট হবে। এবারে ছাল গুলো আপনি টানা ৮-১২ ঘন্টা অথবা এক রাত ভিজিয়ে রাখুন। ধরুন আপনি আজ সন্ধ্যায় ছাল গুলো ভিজিয়ে রাখলেন তাহলে পরদিন সকালে খেতে পারবেন।
  • অর্জুন ছালের পানি ছাকার প্রক্রিয়াঃ সারা রাতভর ছাল গুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর পরদিন সকালে একটি ছাকুনি বা পরিষ্কার সুতি কাপড়ের সাহায্যে পানি ছেকে নিন। আপনি চাইলে ছালগুলো পানির সাথে মিশিয়ে চিবিয়েও খেতে পারেন। তবে ছালের পানি খাওয়াই অধিক উত্তম।
  • অর্জুন ছালের পানি খাওয়ার নিয়মঃ অর্জুন ছাল থেকে পানি ছেঁকে নেওয়ার পর ভিজানো অর্জুন সালের পানি বা কষ আপনি খেতে পারেন। মনে রাখবেন, এই পানি সকালে খালি পেটে খাওয়া সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত। আর খাওয়ার পর অন্তত ২০-৩০ মিনিট খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আপনি চাইলে চায়ের সাথে মিশিয়ে কিংবা অন্যান্য ঔষধি মসলার সাথে মিশিয়েও এই পানি পান করতে পারেন।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত নিয়মে আপনি অর্জুন ছাল খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাতে ভালো ফল পাবেন। তাছাড়া অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়া একটি সহজ প্রাকৃতিক পদ্ধতি। এই ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে আপনি হৃদরোগ সহ যেকোনো ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে নিজেকে খুব সহজেই সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

অর্জুন গাছের ছাল খেলে কি হয়

অর্জুন গাছের ছাল খেলে কি হয় এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই। দেখুন, অর্জুন গাছের ছাল খেয়ে আপনি বেশ কিছু উপকার পেতে পারেন। বিশেষ করে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে এই ছাল অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া অর্জুনের ছালে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফাইটোকেমিক্যাল যেমন- ট্যানিন সাপোনিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট।
 
এই উপাদান গুলো আপনার হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। সেই সাথে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং রক্তনালীর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাইকমে আসে এবং হৃদপিন্ডের কার্যকারিতাও বেড়ে যায়। শুধু কি তাই! অর্জুন গাছের ছাল হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য খুবই কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। 
 
আপনার পেটের জ্বালাপোড়া,গ্যাস-অম্বল, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গ্যাসের মতো সমস্যাও দূর করতে পারে এই অর্জুনের ছাল। আবার অর্জুন ছালে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল বৈশিষ্ট্য শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন খুব সহজেই বের করে দিতে পারে। ফলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আপনার শরীরে কোষ পুনর্জীবন হতে পারে।
 
এছাড়াও অর্জুন ছালের উপাদানগুলো যকৃতির সুস্থতা এবং পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করতেও সহায়ক। তবে এই ছাল খাওয়ার পূর্বে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণে নিয়ম না মেনে খেলে আপনার শরীরে উপকারের পরিবর্তে হতে বিপরীত হতে পারে।

অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনায় জেনেছি। এবার আমরা জানবো অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খেলে আপনি কি কি উপকার পেতে পারেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-
  • প্রথমেই জানিয়ে দেই, অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়া হৃদরোগের জন্য উপকারী। কারণ, এটি হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা বাড়াতে কাজ করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও আপনি অর্জুনের ছাল ভিজিয়ে খেতে পারেন। এটি রক্তনালীর সংকোচন ও প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে অর্জুন গাছের ছাল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও কাজ করে। ফলে কোলেস্টেরনের সমস্যায় ভুগলে আপনি অর্জুন গাছের ছাল নিশ্চিন্তে ভিজিয়ে খেতে পারেন। তাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক থাকবে।
  • পেটের যেকোনো ধরনের সমস্যা বিশেষ করে গ্যাস, বদহজম পেট ফোলা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে অর্জুনের ছাল ভিজিয়ে খাওয়া খুবই উপকারী।
  • কিডনি সুস্থ রাখতেও আপনি নিয়ম করে অর্জুন ছাল ভিজিয়ে খেতে পারেন। কারণ, এই ছাল কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়ক এবং কিডনির কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। তবে আপনার যদি আগে থেকে কিডনিজনিত কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সতর্কতার সাথে এই ছাল সেবন করা উচিত।
  • শুধু কি তাই! অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি মেডিকেল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং সেই সাথে কোষের ক্ষয় রোধ করে।
  • আবার অর্জুন ছালে আন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী থাকার কারণে এটি ত্বক এবং কোলোনের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

অর্জুনের ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম

অর্জুনের ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আপনি যদি অর্জুন গাছের ছাল খেতে অভ্যস্ত না হন তাহলে আপনি অর্জুন গাছের ছালের গুড়াও খেতে পারেন। অর্জুন গাছের ছালের গুড়া খাওয়ার বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে অর্জুন ছালের গুড়া খেলে আপনি এর থেকে সর্বাধিক উপকারিতা পেতে পারেন। এবার চলুন অর্জুনের ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিন-
অর্জুন-গাছের-ছালের-উপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • অর্জুন গাছের ছালের গুড়া খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা। কারণ, সকালে অর্জুন ছালের গুড়া খেলে এটি সারাদিনের জন্য আপনার শরীরকে কর্মক্ষম করে তোলে।
  • আপনি অর্জুন গাছের ছালের গুড়া পানির সাথে মিশিয়ে কিংবা দুধের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
  • আপনি চাইলে অর্জুন গাছের ছালের গুড়া চায়ের সাথে মিশিয়ে বা অন্যান্য ঔষধি মসলার সাথে মিশেয়েও পানীয় হিসেবে পান করতে পারেন।
  • আবার আপনি অর্জুন গুড়ার সাথে পরিমাণমতো মধু বা তুলসী পাতা মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে এর তিক্ত ভাব খানিকটা কম হবে এবং খেতেও ভালো লাগবে।
  • আপনি যদি অন্যান্য ঔষধ সেবন করেন সেক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা ব্যবধান রেখে তবেই অর্জুন ছালের গুড়া খাবেন।
  • প্রতিদিন ৭-৮ গ্রাম অর্জুন ছালের গুড়া খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত। তবে এই পরিমাণ নির্ভর করবে আপনার স্বাস্থ্যের উপর। আপনার শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে অর্জুন ছালের গুড়া কম বেশি খেতে পারেন।

অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুটিকতক অপকারিতা আমরা এতক্ষণ জেনেছি। এবার আমরা জানবো অর্জুন গাছের ফলের উপকারিতা সম্পর্কে। অর্জুন ছালের মত অর্জুন গাছের ফলও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এই ফল প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি ঔষধি উপাদান। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে অর্জুন ফলের উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিই -
  • অর্জুন গাছের ছালের মত অর্জুন ফলও হৃদরোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ, এই ফলে রয়েছে ফ্লাভোনয়েডস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • হাইপারটেনশন অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও কাজ করে অর্জুন ফল। এটি রক্ত নদীর প্রাচীর শিথিল করে এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে ত্বরান্বিত করে। ফলে অর্জুন ফল ব্যবহার করে আপনি আপনার উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পারেন। শুধু তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদী অর্জুন ফল ব্যবহার করে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি ও কমানো যায়।
  • আপনি কি কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আজ থেকেই অর্জুন ফল ব্যবহার শুরু করুন। কেননা অর্জুন ফলের ব্যবহার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
  • শুধু তাই নয়, পাচনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ধরুন গ্যাস্ট্রিক কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়া ইত্যাদি দূর করতেও দারুণ কাজ করে অর্জুন ফল। এই ফল খেলে পেটের এসিডিটি যেমন কমে তেমনি হজম শক্তিও বেড়ে যায়।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অর্জুন ফল ভীষণই উপকারী। কেননা এই ফল রক্তে শর্করার স্তর কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া অর্জুন ফল ব্যবহারে এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। যার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • নিয়মিত নিয়ম মেনে অর্জুন ফল খেলে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি ন্যাডিকেল থেকে রক্ষা তো করবেই, সেই সাথে বয়সের ছাপ কমাতেও কাজ করবে।
  • অনেক সময় আমরা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করি এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে শক্তি পাই না। শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে আপনি খেতে পারেন অর্জুন ফল। কারণ, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে খুব ভালো কাজ করে।
  • ত্বকের যত্নেও অর্জুন ফলের জুড়ি মেলা ভার। এতে থাকা অ্যান্টিসেপটিক গুণ ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে এবং ত্বকের নানা ধরনের সংক্রমণ বিশেষ করে বলিরেখা, ফুসকুড়ি মেছতার দাগ ইত্যাদি প্রতিরোধে সহায়ক।
  • শুধু কি তাই! নিয়মিত অর্জুন ফল খেলে এতে কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং এটি কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ খুব সহজেই অপসারণ করে দিতে পারে। ফলে কিডনি ও লিভার সুস্থ থাকে।
  • অনেকেই আছেন যারা শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি খেতে পারেন অর্জুন ফল। কারণ, শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাসকষ্টজনিত যে কোন সমস্যা কমাতে দারুন কাজ করে ঔষধি গুন সম্পূর্ণ অর্জুন ফল। বিশেষত এই ফলে থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ শ্বাসনালীকে পরিষ্কার রাখে এবং শ্বাস নিতে সহজ করে।
অর্জুন ফলের ব্যবহার 
অর্জুন ফল সাধারণত শুকিয়ে বা গুঁড়ো করে চা, পাউডার কিংবা ক্যাপসুল আকারে আপনি ব্যবহার করতে পারেন। এই ফল সাধারণত গুড়া বা টনিক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আপনি অর্জুন ফলের গুড়া ১-২ চা চামচ পরিমাণ গরম পানির সাথে কিংবা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া আপনি অর্জুন ফলের চা তৈরি করেও খেতে পারেন। এতে করে আপনার পেটের সমস্যা দূর হবে। 
 
এর পাশাপাশি আপনি অর্জুন ফলের ক্যাপসুল বা ট্যাবলেটও বাজারে পেয়ে যাবেন। কিন্তু এই ট্যাবলেট নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্যবহার করতে হয়। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই ট্যাবলেট দিনে ২-৩ বা ৫০০মিলিগ্রাম- ১গ্রাম পর্যন্ত খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, অর্জুন ফলের গুড়া কিংবা ট্যাবলেট খেতে অসুবিধা হলে আপনি অর্জুন ফলের নির্যাসও খেতে পারেন। অর্জুন ফলের নির্যাস লিকুইড ফার্মে বিক্রি করা হয়।

অর্জুন গাছের ছাল কোথায় পাওয়া যায়

অর্জুন গাছের ছাল কোথায় পাওয়া যায় তা আমরা অনেকেই জানিনা। ফলে অর্জুন ছাল সেবনের ইচ্ছা থাকলেও কোথায় পাওয়া যায় তা না জানার কারণে আমরা অর্জুন ছাল সংগ্রহও করতে পারিনা। আজ আমরা আপনাকে জানিয়ে দেবো কোথায় থেকে খুব সহজেই অর্জুন ছাল সংগ্রহ করতে পারবেন।বাজারে সাধারণত আয়ুর্বেদিক বা হারবাল ঔষধের দোকানে অর্জুন গাছের ছাল পাওয়া যায়।
 
অর্থাৎ আয়ুর্বেদিক এবং হারবাল ঔষধের দোকান যেগুলিতে হারবাল পণ্য, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঔষধ এবং ভেষজ চিকিৎসার বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায় সেই সব দোকান থেকে আপনি অর্জুন ফল খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন ওয়েবসাইট ও হারবাল স্টোর থেকেও আপনি অর্জুন গাছের ছাল অর্ডার করে সংগ্রহ করতে পারেন।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনি নিশ্চয়ই বিশদভাবে জানতে পেরেছেন। অর্জুন গাছ মূলত একটি প্রাকৃতিক ঔষধি গুন সম্পূর্ণ গাছ। যার পাতা, ফুল, ছাল এবং ফল কোনটাই ফেলনা নয়। তাছাড়া অর্জুন গাছের ছাল প্রাচীনকাল থেকেই নানানা স্বাস্থ্য সমস্যার প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
 
তবে একটি কথা, অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। তাতে এর উপকারিতা পরিপূর্ণরূপে পাবেন। প্রয়োজনে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অর্জুন ছাল ব্যবহার করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url