আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? প্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয় জানেন কি? হয়তো জানেন না। তাহলে আর দেরি না করে আজকের আর্টিকেলটি এক্ষুনি পড়ে নিন।
কারণ,
আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জেনে নিতে পারবেন আমলকি খাওয়ার উপকারী ও অপকারি দিক এবং এই ফল খেলে আসলে কি হয় সে সম্পর্কে। সাথে আরো জানবেন কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আজকের মত আলোচনা শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা
- আমলকির উপকারিতা
- আমলকির ক্ষতিকর দিক
- আমলকি খাওয়ার নিয়ম
- আমলকির ঔষধি গুনাগুন
- কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
- রাতে আমলকি খেলে কি হয়?
- খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
- সকালে খালি পেটে আমলকির রস খেলে কি হয়?
- আমলকির রস কখন ও কতটা পরিমাণ পান করবেন
- প্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয়?
- গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
- প্রতিদিন কয়টি আমলকি খাওয়া উচিত
- চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা
- আমলকি খেলে ত্বকের যেসব উপকার হয়
- যাদের আমলকি খাওয়া উচিত নয়
- আমলকির প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
- আমলকির দাম কত ২০২৪
- আমলকি সংরক্ষণ পদ্ধতি
- লেখকের মন্তব্য
আমলকির উপকারিতা
আমলকির
উপকারিতা অনেক। আমাদের শরীরের সবচেয়ে উপকারী
ভেষজের মধ্যে আমলকি একটি। ছোট্ট এই ফলটি আপনার দেহের করবে দারুন উপকার। কিভাবে
জানতে চান? তাহলে আসুন জেনে নিই আমলকির জাদুকরী সব স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস হলো আমলকি। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সেইসাথে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
- এন্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎসঃ আমলকি আমাদের শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং
বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল এর হাত থেকে খুব সহজেই শরীরকে রক্ষাকরতে পারে।
- হজম ক্রিয়া উন্নত করেঃ নিয়মিত আমলকি খেলে এটি আপনার পেটের হজম ক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেঃ আমলকি শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- ত্বক ভালো রাখেঃ আমলকির এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ব্রণ ও বলিরেখা সহ ত্বকের যাবতীয় দাগ দূর করে।
- চুলের যত্নে আমলকিঃ আমলকির ব্যবহার আপনার চুলকে গোড়া থেকে মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলে, চুল পড়া কমায় এবং চুলের স্নিগ্ধতা বজায় রাখে। শুধু তাই নয়, এটি আপনার চুলকে অকালপক্কতার হাত থেকেও রক্ষা করতে পারে।
- লিভার ভালো রাখেঃ আপনি আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে চাইলে আজ থেকে আমলকি খাওয়া শুরু করুন। কারণ, আমলকি লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং লিভারে থাকা সকল টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। ফলে লিভার সুস্থ থাকে।
- ওজন কমাতে আমলকিঃ প্রতিদিন নিয়ম করে আমলকি খেলে এটি আপনার শরীরের মেটাবালিজম বৃদ্ধি করবে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতেও সাহায্য করবে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই আপনার ওজনও কমতে থাকবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমলকিকে মহা ঔষধ হিসেবে ধরা হয়। কারণ, এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিঃ আমলকি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে এবং সেই সাথে স্মৃতিশক্তিও বাড়াতেও খুব ভাল কাজ করে।
- মুত্রনালীর ইনফেকশন কমায়ঃ মূত্রনালীর ইনফেকশন কমাতেও আমলকি দারুন কার্যকরী। শুধু তাই নয়, এটি প্রসাবের মাধ্যমেও শরীরের সকল টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
- বার্ধক্যের ছাপ কমাতেঃ আমলকির এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রাকৃতিকভাবে আপনার শরীরে বার্ধক্যের লক্ষণ দেরিতে আসতে সাহায্য করে। সুতরাং, শরীরকে বার্ধক্য থেকে দূরে রাখতে আপনি আমলকি খেতেই পারেন।
- রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করেঃ আপনি কি রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন? তাহলে প্রতিদিন একটি করে আমলকি খান কেননা আমলকি আয়রনের একটি ভালো উৎস যা আপনার রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সক্ষম।
- এজমা ও শ্বাসকষ্ট কমাতেঃ আপনাদের যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বা এজমা রয়েছে তারা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আজ থেকেই আমলকি খাওয়া শুরু করুন। কারন, আমলকি আপনার শ্বাসযন্ত্র ভালো রাখে এবং অ্যাজমার উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
- ব্যথা কমাতেঃ আমলকির এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ শরীরের ব্যথা, গাঁটের ব্যথা এবং শারীরিক যেকোনো ধরনের অস্বস্তি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- দাঁতের সুরক্ষায়ঃ আপনি কি দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে বলব আমলকি খান। কারণ, আমলকির পুষ্টি উপাদান দাঁত মজবুত করে এবং দাঁতের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।
- পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে আমলকি মহিলাদের পিরিয়ড চক্র স্বাভাবিক রাখে এবং শরীরের হরমোনাল সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
- স্ট্রেস দূর করেঃ আপনি সকল প্রকার মানসিক চাপ কমাতেও আমলকি খেতে পারেন। কারণ, ভেষজ এই ফল মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ আমলকির রস চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া দৃষ্টিশক্তি ছাড়াও চোখের যেকোনো ধরনের সমস্যা যেমন- চোখের প্রদাহ, চোখ চুলকানি, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি সমস্যা থেকেও আপনাকে মুক্তি দিতে পারে এই আমলকি।
- নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধঃ অনেকেরই নিঃশ্বাস থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। বিভিন্ন ধরনের পেস্ট ব্যবহার করার পরেও এই দুর্গন্ধ দূর হতেই চায় না। প্রতিদিন আমলকির রস খেলে আপনার এ নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ অতি সহজেই দূর হবে।
- খাবারের রুচি বাড়াতেঃ আমলকির তেতো এবং অম্ল স্বাদ মুখের রুচি ও স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে। যারা অরুচিতে ভোগেন তারা মুখের রুচি বাড়াতে এই আমলকি খেতে পারেন।
- দাঁত ও নখ ভালো রাখেঃ নিয়মিত আমলকি খেলে এটি শরীরের রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে এবং সেই সাথে দাঁত ও নখ ভালো রাখে।
- এনার্জি স্তর বৃদ্ধি করেঃ প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে খালি পেটে আমলকি খেলে শরীরের এনার্জি যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি সারা দিনের জন্য আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে থাকে। শুধু তাই নয়, শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করতে কাজ করে আমলকি।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম আমলকির উপকারিতা সম্পর্কে। আমলকির এতসব উপকারিতা পেতে আপনি আজ থেকে নিয়ম করে আমলকি খাওয়া শুরু করুন। তাতে ভালো ফল পাবেন।
আমলকির ক্ষতিকর দিক
আমলকির
যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে এবং এটা থাকবেই। কারণ,
প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদানেরই উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা থাকে। ঠিক সে কারণেই আপনাকে প্রতিটি খাদ্য উপাদান অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত
পরিমাণে খেতে হবে। তবেই এর উপকারিতা পরিপূর্ণ রূপে পাবেন। এবার চলুন, অতিরিক্ত আমলকি
খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে
সম্পর্কে জেনে নিন-
- অনেক সময় অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার ফলে আপনার পেটের সমস্যা যেমন- পেট ব্যথা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- আপনাদের যাদের অতিরিক্ত এসিডিটি সমস্যা রয়েছে আমলকি খেলে তাদের এসিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আমলকি সাধারণত রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আপনার রক্তচাপকে আরো কমিয়ে দিতে পারে। ফলে যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- আবার আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলেও আমলকি সীমিত পরিমাণে খেতে হবে। কেননা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আমলকি খেলে এটি রক্তচাপের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আমলকিকে মহা ঔষধ হিসেবে ধরা হয় ঠিকই, কিন্তু অনেক সময় আমলকি আপনার ব্যবহৃত ওষুধের সঙ্গে বিক্রিয়া করতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
- যারা অতিরিক্ত এলার্জি প্রবণ তাদের আমলকি খাওয়ার ফলে ত্বকে চুলকানি বা এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তবে এটি খুবই বিরল।
- মাত্রাতিরিক্ত আমলকি খাওয়া এটি আপনার শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।
- আপনি যদি আমলকি এবং আদা একসাথে খান তাহলে এটি আপনার লিভারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আমলকি এবং আদা একসাথে খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত পরিমাণে আমলকি খেলে আপনার স্বাভাবিক হজম ক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।
- আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সালেট থাকার কারণে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ এই ফলটি খেলে আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টির সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়।
- আমলকিতে অতিমাত্রায় অম্লভাব থাকার কারণে এটি দাঁতের এনামেলের ক্ষতি করে। ফলে অতিরিক্ত আমলকি খেলে অনেক সময় ক্যাভিটি কিংবা টুথ সেনসিভিটির মতো দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি কাঁচা আমলকি না খেয়ে শুকনো আমলকি খেতে পারেন। কারণ, শুকনো আমলকিতে অম্ল ভাব কম থাকে।
- আমলকিতে থাকা এন্টিপ্লেটলেট বৈশিষ্ট্য রক্ত পাতলা করতে কাজ করে। ফলে আপনাদের যাদের রক্ত পাতলা হওয়ার সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকি না খাওয়াটাই ভালো।
- কিডনির সমস্যার ক্ষেত্রেও আমলকি বেশি খাওয়া উচিত নয়। কারণ, অতিরিক্ত আমলকি খেলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে করে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
- আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে অনেক সময় প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হতে পারে। এমনকি প্রস্রাব থেকে দুর্গন্ধও বের হতে পারে।
- শুধু কি তাই, প্রচুর পরিমাণে আমলকি খেলে শরীরের আর্দ্রতাও কমে যায়। এতে করে আপনার ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত আমলকি খাওয়ার পূর্বে সচেতন থাকা জরুরী।
- সাধারণত হাইপার গ্লাইসেমিক রোগীদের বীজ যুক্ত ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। কারণ, এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আমলকি যেহেতু বীজ যুক্ত একটি ফল তাই আপনার হাইপার গ্লাইসেমিক এর সমস্যা থাকলে এই ফল খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- গর্ভকালীন সময়ে কিংবা স্তন্যদানকারী মায়েদেরও অতিরিক্ত আমলকি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
- শরীরের তাপমাত্রা খুব সহজেই কমিয়ে দিতে পারে আমলকি। ফলে অত্যধিক আমলকি খেলে আপনার জ্বর, সর্দি, কাশি হতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আমলকির এই অপকারিতা গুলো তখনই দেখা দেবে যখন আপনি প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন। তাই বলবো, আমলকির ক্ষতিকর দিক এড়াতে আপনি নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম
আমলকির
উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা আপনাকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছি। আমলকি খাওয়ার
সাধারণ কতকগুলো নিয়ম রয়েছে। আমরা সাধারণত কাঁচা আমলকি চিবিয়ে খেতেই বেশি
অভ্যস্ত। কিন্তু কাঁচা আমলকি ছাড়াও আরো নানান উপায়ে আপনি আমলকি খেতে
পারেন। এবার চলুন আপনাকে জানিয়ে দেই আমলকি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-
- প্রথমেই বলি, আপনি একটি গোটা আমলকি কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি বেশ কটু বা তিক্ত স্বাদের হতে পারে। তবে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। খাওয়ার সাথে সাথে জল না খেয়ে খাওয়ার প্রায় মিনিট দশেক পর পানি পান করবেন।
- আমলকি খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো খালি পেটে সকাল বেলা। সকাল বেলা খালি পেটে আমলকি খেলে তাতে সর্দি-কাশির হওয়ার প্রবণতা কমে এবং সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
- আপনি কয়েকটি গোটা আমলকি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিয়ে সামান্য উষ্ণ জলে এর নির্যাস তৈরি করেও খেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন, আমলকির এই নির্যাস এর পরিমাণ অবশ্যই যেন ১০ মিলিগ্রামের বেশি না হয়। চাইলে স্বাদের জন্য এর সাথে সামান্য মিষ্টি যোগ করেও খেতে পারেন। তবে, এক চামচের বেশি অবশ্যই খাবেন না।
- আমলকির আচার বা চাটনি অত্যন্ত লোভনীয় একটি খাবার। আপনি আমলকি দিয়ে আচার তৈরি করে সারা বছর ধরে খেতে পারেন।
- আপনি আমলকি রোদে শুকিয়েও খেতে পারেন। এর জন্য আমলকি স্লাইস করে কেটে তাতে লবণ এবং গোলমরিচের গুঁড়ো মাখিয়ে রোদে খুব ভালো করে শুকিয়ে নিন। এই শুকনো আমলকি আপনি প্রতিদিন রাতে শোবার আগে খেতে পারেন। তবে যাদের ব্লাড প্রেসার এবং কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের শুকনো লবণযুক্ত আমলকি না খাওয়াই ভালো। কারণ, এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাছাড়া শুকনো আমলকিতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়।
- আবার আপনি একটি আমলকি কেটে রাতের বেলায় এক গ্লাস জলে রেখে দিন এবং প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সকালে আমলকি ভেজানো জলটি খেয়ে ফেলুন। তাতেও ভালো উপকার পাওয়া যায়।
- আপনি কি জানেন আমলকি পাউডারও পাওয়া যায়। আপনারা যারা কাঁচা কিংবা শুকনো আমলকি খেতে অভ্যস্ত নন তারা আমলকি পাউডার খেতে পারেন। এর জন্য আপনি ১ চামচ আমলকি পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে সকালে খেতে পারেন। এতে আপনার ত্বক ভালো থাকবে এবং হজমও সহজ হবে।
- আপনি চাইলে আমলকি স্মুদি বা জুসের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে স্বাদ যেমন ভালো হয় এবং তেমনি অন্যান্য ফলের পুষ্টিগণও পাওয়া যায়।
- এসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে আপনি ১ গ্লাস দুধ বা পানির সাথে আমলকি গুড়া মিশিয়ে দিনে দুবার খান। এতে আপনার অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকটাই কম হবে।
- মুখে রুচি এবং ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য আপনি আমলকি গুড়ার সঙ্গে সামান্য মধু এবং মাখন মিশিয়েও খাওয়ার আগে খেতে পারেন।
- ত্বকের দাগ দূর করতে প্রতিদিন সকালে আপনি আমলকি রসের সাথে মধু মিশিয়ে খান। এতে করে আপনার ত্বকের কালো দাগ, ব্রণের দাগ ইত্যাদি দূর হবে।
- আরেকটি কথা, আমলকি খাওয়ার পর আপনি অবশ্যইপর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন। যাতে আপনার হজম ক্রিয়া সহজ হয় এবং শরীর থেকে টক্সিন অপসারিত হয়।
উপরিউক্ত নিয়ম গুলো মেনে আপনি আমলকি খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাতে আমলকির সর্বোচ্চ উপকারিতা পাবেন এতটুকু বলতে পারি।
আমলকির ঔষধি গুনাগুন
আমলকির
উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন। এবার আপনাকে জানাবো এর ঔষধি গুন
সম্পর্কে। আমলকি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ একটি ফল। এটি
প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদিক ঔষধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং সেই সাথে বিভিন্ন
ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় ভীষণই কার্যকরী। এবার চলুন আমলকির ঔষধি
গুনাগুন সম্পর্কে জানবেন -
- আমলকি আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে ম্যাজিকের মত কাজ করে।
- অনেক সময় আমাদের শরীরে বমি বমি ভাব এর উদ্রেগ হয়। এই বমি বন্ধে আমলকি খুব দ্রুত কাজ করতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদি সর্দি কাশি থেকে আপনি মুক্তি পেতে চান? তাহলে আজ থেকেই আমলকির নির্যাস সেবন শুরু করে দিন। কেননা দীর্ঘমেয়াদি সর্দি কাশি সারাতে আমলকির নির্যাস অত্যন্ত উপকারী।
- আমলকি হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধক রূপে কাজ করে।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও আমলকি খাওয়া ভালো। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকি খেলে এটি চোখের ভেতরের চাপ কমায়। ফলে দূরের জিনিস খুব সহজে দেখা যায় এবং চোখে ছানিও পড়েনা। তাছাড়া আমলকিতে থাকা ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনিক মেলাননিক দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। শুধু তাই নয়, রাতকানা থেকেও মুক্তি দেয়।
- পেট ফাঁপা এবং বদহজমের সমস্যা দূর করতে আপনি শুকনো আমলকি ফল পানিতে ভিজিয়ে খেতে পারেন। তাছাড়া খাবারের সাথে আমলকির আচার খেলে তাতেও পেটের হজম সহজ হয়।
- আমলকি আমাদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ফুসকুড়ি, রিংকেল কমাতে, ব্রণের দাগ দূর করতে বেশ সহায়ক। তাছাড়া চর্ম রোগের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি প্রতিদিন সকালে মধুর সাথে আমলকির নির্যাস মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়বে।
- চুলের জন্যও আমলকি খুবই উপকারী। চুলের জন্য আমলকি মূলত সেরা টনিক হিসেবে কাজ করে। কারণ, এটি চুল পড়া রোধ করে, চুলের খুশকি দূর করে এবং চুলকে গোড়া থেকে মজবুত করে তোলে।
- আপনি কি পেটের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আমলকি, হরিতকি এবং বহেড়া এই তিনটি ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে খালি পেটে শরবত হিসেবে পান করুন। এতে আপনার পেটের সকল সমস্যা দূর হবে।
- আপনার নিয়মিত ঘুম হয় না! ঘুমের জন্য আপনি কাঁচা বা শুকনো আমলকি পাটায় বেটে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে এর সাথে সামান্য মাখন মিশিয়ে এই মিশ্রণটি আপনার মাথায় লাগান। দেখবেন তাতে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে।
- দাঁতের মাড়ির স্কার্ভি রোগ দূর করতে আমলকি দারুণ কার্যকরী। স্কার্ভি রোগ সাধারণত ভিটামিন সি এর অভাবে হয়ে থাকে। স্কার্ভি রোগ হলে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে, মাড়িতে ঘা হয়, আবার কখনোও বা শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। দাঁতের এই স্কার্ভি রোগ থেকে মুক্তি পেতে আপনি প্রতিদিন ১-২ টি কাঁচা আমলকি খেতে পারেন।
- কাঁচা আমলকি বেটে এর রস বাপির প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে ২-৩ ঘন্টা রেখে দিন। এভাবে এক মাস ব্যবহার করলে আপনার চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুলের অকালপক্কতাও দূর হবে।
কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
কাঁচা
আমলকি খাওয়ারও অনেকগুলো উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। কাঁচা আমলকির পুষ্টি
এবং ভেষজ গুনাগুনে আপনার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর হতে পারে। তো চলুন কাঁচা
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিন--
- কাঁচা আমলকি ভিটামিন সি এর অন্যতম প্রধান উৎস। কাঁচা আমলকি খেলে এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে এবং সর্দি-কাশি ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- নিয়মিত কাঁচা আমলকি খেলে এটি আপনার ত্বক, চোখ ভালো রাখে। এমনকি শরীরের কোষের স্বাস্থ্যের জন্যও কাঁচা আমলকি ভীষণই উপকারী।
- কাঁচা আমলকি হজম ক্রিয়াকে সহজ থেকে সহজতর করে তোলে। কারণ, এতে থাকা ফাইবার অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং পাঁচন সিস্টেমকে সুস্থ রাখে।
- আপনি আপনার লিভার কে সুস্থ রাখতে চান! তাহলে আজ থেকেই কাঁচা আমলকি খাওয়া শুরু করুন। কারণ, কাঁচা আমলকি লিভারের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে লিভারকে পরিষ্কার রাখে।
- কাঁচা আমলকি ত্বকের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। কাঁচা আমলকি খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, রিংকেল কমে, এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- সানবার্ন , দীর্ঘদিনের পুরনো কালো দাগছোপ ইত্যাদি দূর করে।
- শুধু ত্বক নয়, এই কাঁচা আমলকি চুলের জন্যও উপকারী। নিয়মিত কাঁচা আমলকি খেলে চুলের জেল্লা বৃদ্ধি পায়, রুক্ষতা দূর হয়, চুল পড়া বন্ধ করে, এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।
- কাঁচা আমলকি হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা আমলকি একটি মহা ঔষধ। কারণ, কাঁচা আমলকি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে।
- আপনি কাঁচা আমলকি সরাসরি চিবিয়ে খেতে পারেন।
- কাঁচা আমলকি খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে খাবেন। যাতে এতে কোন ময়লা বা বিষাক্ত উপাদান না থাকে। কারন আমলকি গাছ থেকে পাড়ার সময় মাটিতে পড়ে।
- কাঁচা আমলকি আপনি চাটনি, সালাদ বা অন্যান্য রান্নায় ব্যবহার করেও খেতে পারেন।
আশা
করছি কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনি অবগত হয়েছেন। যদিও
কাঁচা আমলকির এই উপকারিতা অনেক, তবে আপনার যদি বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে তবে আমলকি
খাওয়ার আগে আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খেতে পারেন।
রাতে আমলকি খেলে কি হয়?
রাতে
আমলকি খেলে কি হয় জানেন কি? রাতে
আমলকি খেলে এটি আপনার শরীরের ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। রাতে
আমলকি খাওয়ার প্রধান উপকারিতা হলো এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যকর বৈশিষ্ট্য
গুলো আপনার শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় কাজ করে। রাতে আমলকি খাওয়া
আপনার শরীরের মেরামতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ, এটি কোলাজেন তৈরিতে
সহায়ক এবং আপনার ত্বক, চুল সহ শরীরের অন্যান্য অংশের কার্যকারিতা
বাড়িয়ে দেয়। শুধু
তাই নয়, রাতে আমলকি খাওয়ার ফলে সারা রাতভর আপনার হজম ক্রিয়াকে সহজ করে। যা পরের দিন সকালে আপনার পেটের হজম সংক্রান্ত সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য
করে।
তবে কাঁচা আমলকি তিক্ত স্বাদের কারণে
রাতে খাওয়ার পরে আপনার পেটের অস্বস্তি হতে পারে। বিশেষ করে যদি এসিডিটি বা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে। তাই
রাতে আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক পরিমাণে খাওয়া এবং আপনার
স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটি কথা, রাতে আমলকি খাওয়ার
পর অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন। যাতে হজমক্রিয়া
সহজ হয়।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকির
উপকারিতা ও অপকারিতা পেতে আপনি খালি পেটেও আমলকি খেতে পারেন। খালি পেটে
আমলকি খাওয়ার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন।
কারণ, খালি পেটে আমলকি খেলে এটি সারা দিনের জন্য আপনার শরীরে পুষ্টি উপাদান
সরবরাহ করতে থাকে। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন জেনে নিন খালি পেটে আমলকি
খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন-
- আমলকি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় খালি পেটে খেলে আপনার শরীর সম্পূর্ণরূপে এর পুষ্টি শোষণ করতে পারে।
- খালি পেটে আমলকি খেলে হজম সহজ হয়। যা আমাদের পেটের পক্ষে ভালো।
- লিভার সুস্থ রাখতে চাইলে নিয়মিত খালি পেটে আমলকি খান। কারণ, খালি পেটে আমলকি খেলে এটি লিভারের ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে। ফলে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
- খালি পেটে আমলকি খেলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতেও সাহায্য করে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- আপনি প্রতিদিন খালি পেটে আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ, খালি পেটে আমলকি খাওয়া আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
- নিয়মিত খালি পেটে আমলকি খেলে এটি যেমন আপনার হৃদরোগের ঝুকি কমায় তেমনি অন্যদিকে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।
- খালি পেটে আমলকি খাওয়ার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এতে করে ইনসুলিন এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ডায়াবেটিসের লক্ষণ কমাতে থাকে।
- নিয়মিত সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে শরীরের সকল টক্সিন অপসারিত হয়। ফলে আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান অপসারিত হয় এবং শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় করে।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আমলকি খাওয়ার ফলে শরীরে একটা প্রাকৃতিক এনার্জির সঞ্চার হয়। যা আমাদের শরীরকে সারাদিনের প্রাত্যাহিক কাজকর্মের জন্য প্রস্তুত করে তোলে এবং সেই সাথে শরীরের ক্লান্তি ভাব অনেকটাই কমিয়ে আনে।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার কিছু টিপস
- প্রতিদিন আপনি খালি পেটে ১-২ টি আমলকি কুচি কুচি করে কেটে চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- আমলকি খাওয়ার পর আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। যাতে আপনার হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।
সকালে খালি পেটে আমলকির রস খেলে কি হয়?
আমলকির
উপকারিতা ও অপকারিতা পরিপূর্ণ রূপে পেতে আপনি সকালে খালি পেটে আমলকির রসও
খেতে পারেন। আমলকির রস খাওয়ার উপকারিতা জানলে আপনি আজ থেকেই হয়তো এই রস খাওয়া
শুরু করবেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমলকির রস খাওয়ার জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে
বেড়েছে শুধুমাত্র এর স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য। চলুন তাহলে এবার জেনে নিই সকালে খালি পেটে আমলকির
রস খাওয়ার উপকারিতা-
- আমলকির রস যা ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভেষজ গুণাগুণে পরিপূর্ণ। এই রস খালি পেটে খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম দ্রুত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
- সকালে খালি পেটে আমলকি রস খাওয়ার মধ্য দিয়ে দিন শুরু করলে এটি সারাদিনে আপনার শরীরে পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
- আমলকির রস পেটের যাবতীয় সমস্যা যেমন- পেট ফাঁপা, বদহজম, পেটের গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি ইত্যাদি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তবে এই রস খালি পেটে খেতে হবে।
- নিয়মিত নিয়ম করে খালি পেটে আমলকি রস খেলে এটি লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে। ফলে লিভার ভালো থাকে।
- আপনি যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আমলকির রস পান করেন, তাহলে আপনার শরীরের সকল দূষিত পদার্থ খুব সহজেই শরীর থেকে অপসারিত হবে।
- খালি পেটে আমলকির জুস পান করলে এটি শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীর অতি দক্ষতার সাথে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলতে পারে। এতে করে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- আমলকি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ হয় খালি পেটে এর জুস পান করলে দীর্ঘক্ষণ আপনার পেট ভরা থাকে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস কমে আসে।
- নিয়মিত খালি পেটে আমলকি রস খাওয়া দীর্ঘদিনের সর্দি-কাশি এবং অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- খালি পেটে আমলকির জুস খাওয়ার ফলে শরীরে শক্তি তৈরি হয়, যা কিনা সারা দিনের জন্য শরীরকে সতেজ এবং প্রফুল্ল রাখে।
- আমলকির রস আন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ায় এটি আপনার শরীরের যে কোন প্রদাহ কমাতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, এটি আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহ জনিত রোগেরও উপশম করতে পারে।
- আমলকির রস অতিরিক্ত তিক্ত স্বাদযুক্ত হওয়ায় অনেক সময় আপনার পেটে অস্বস্তি ভাব সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমলকির জুস অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ খান।
- অতিরিক্ত তিতা হওয়ার কারণে আমলকির জুসের সাথে আপনি সামান্য পানি মিশিয়ে পাতলা করে খেতে পারেন। এতে আপনার পেটের অস্বস্তি ভাব অনেকটাই কম হবে।
- আপনার যদি অতিরিক্ত গ্যাসট্রাইটিস, আলসার বা অন্যান্য পেটের সমস্যা থেকে থাকে সেক্ষেত্রে খালি পেটে আমলকির রস না খাওয়াটাই উত্তম।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তের শর্করার মাত্রা কমানোর জন্য আমলকি কাজ করে। ফলে যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাদের আমলকি রস খালি পেটে খাওয়ার পূর্বে রক্তে শর্করার পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করে নেওয়া উচিত।
কিছু
কিছু ব্যক্তির আমলকির রসের প্রতি এলার্জি থাকতে পারে। তাই প্রথমবার আমলকির
রস সেবনের পূর্বে আপনি অল্প পরিমাণে পান করে পরীক্ষা করুন। যদি এলার্জির
প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে এটি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আমলকির রস কখন ও কতটা পরিমাণ পান করবেন
আমলকির
রস কখন ও কতটা পরিমান পান করবেন তার পরিমাণের উপর ভিত্তি করে আপনি এর থেকে সর্বাধিক
উপকারিতা পেতে পারেন। এবার চলুন, জেনে নিন আমলকি রস আপনি কখন খাবেন এবং কি পরিমান
খাবেন-
কখন খাবেন আমলকির জুস
- সকালে খালি পেটে আমলকি রস পান করা সবচেয়ে বেশি উপকারী। কারণ, এই সময়ে আপনার শরীর আমলকি রসের পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণভাবে শোষণ করে নিতে পারে।
- যদি সকালে খালি পেটে আমলকি রস পান করতে না পারেন, তাহলে খাবারের ৩০ মিনিট আগে পান করতে পারেন।
- আপনি চাইলে দুপুরের খাবারের পরেও আমলকি রস পান করতে পারেন। খাবারের পর পর আমলকি রস খেলে এটি আপনার শরীরের ক্ষয়িষ্ণু উপাদান পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং শরীরে অতিরিক্ত শক্তি যোগায়।
- আপনি রাতের খাবারের পরেও আমলকি রস খেতে পারেন। রাতে খাবারের পর আমলকি রস খেলে এটি আপনার শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তবেে রাতে খাওয়ার পর সঠিক পরিমাণে আমলকি রস পান করা উচিত। কারণ, রাতে অতিরিক্ত তরল পান করলে আপনার ঘুমের সমস্যা এমনকি এসিডিটির সমস্যাও হতে পারে।
- শারীরিক ব্যায়াম বা যোগের পরে আপনি আমলকির রস পান করতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে এবং পুষ্টি শোষণের প্রক্রিয়া আরো উন্নত হতে পারে।
আমলকির জুস কতটা পরিমাণে পান করবেন
- আপনি যদি প্রথমবারের মতো আমলকির জুস পান করে থাকেন সেক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে শুরু করুন। যেমন ধরুন, ১ চামচ বা ১০-১৫ মিলিমিটার পর্যন্ত। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে এই পরিমাণ আপনি বাড়াতে পারেন।
- যারা আমলকির রস খেতে সচরাচর অভ্যস্ত তারা প্রতিদিন সকাল সকাল ২-৩ চামচ অর্থাৎ ২০-৩০ মিলিলিটার আমলকি রস পান করবেন। একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য আমলকি রসের এই পরিমাণই যথেষ্ট।
- গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী নারীদের জন্য আমলকি রস পান করার পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত এবং এটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত। আপনি গর্ভাবস্থায় একান্তই যদি আমলকি রস খেতে চান তাহলে ১ চামচ অর্থাৎ ১০ মিলিমিটার করে খেতে পারেন। এটি আপনার জন্য নিরাপদ হবে
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত নিয়ম মেনে আমলকির রস খেলে আপনি আমলকির ক্ষতিকর দিক গুলো খুব সহজেi এড়াতে পারবেন এবং উপকারিতা পাবেন।
প্রতিদিন আমলকি খেলে কি হয়?
প্রতিদিন আমলকি খেলে কি কি হতে পারে এ প্রশ্ন আমাদের অনেকেরই। আমলকি সাধারণত তিতা
স্বাদ যুক্ত হওয়ায় অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু এই তিক্ত স্বাদের আমলার গুনাগুন সম্পর্কে জানলে চমকে যাবেন। আপনি কি জানেন, প্রতিদিন আমলকি খেলে আপনি এর থেকে অন্যান্য ফলের তুলনায় একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন।
কারণ, ভিটামিন সি এর একটি প্রধান উৎস হল এই আমলা।
ফলে
প্রতিদিন আমলকি খেলে এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে।
তাছাড়া আমলকিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনাকে বিভিন্ন ধরনের
সংক্রামক রোগ বালাই থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন
আমলকি খেলে এটি আপনার হজম ক্রিয়া, পেটের গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং এসিডিটি
কমাতেও সাহায্য করে।
এটি
আপনার লিভার ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ
অপসারণে সাহায্য করে। শুধু লিভার নয়, এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এবং ওজন
নিয়ন্ত্রণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়ম করে আমলকি খাওয়ার ফলে
এটি আপনার ত্বকের দাগ দূর করে ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনে।
ত্বকের
পাশাপাশি আমলকি আপনার চুল পড়া বন্ধ করে, চুলের ফোলিকলে পুষ্টি জুগিয়ে চুলের গোড়া মজবুত ও শক্তিশালী
করে তোলে। আমলকির এতসব উপকারিতা জানার পরে
আপনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! তাহলে আর দেরি কেন? আপনি আজ থেকেই আপনার
সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমলকি খাওয়া শুরু করুন। একটানা
একমাস খেয়ে দেখুন। এর ফলাফল আপনি নিজেই টের পাবেন।
গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আমলকি
খাওয়ার উপকারিতাও অনেক। কিন্তু এই সময় এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে আপনি কি কি উপকার পাবেন চলুন তা জেনে নিন-
- প্রথমেই বলি, আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এটি গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
- গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সাধারণ একটি সমস্যা। আর এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে আমলকি। কেননা গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে এটি আপনার পেটের হজম ক্রিয়া সহজ করে তোলে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিমিষেই দূর হয়।
- গর্ভাবস্থায় অনেকেই আছেন যাদের হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হজমের সমস্যার সম্মুখীন হন, আমলকি আপনাকে এই সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্য করতে পারে।
- আমলকি যেহেতু লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে, সেহেতু এটি গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অনেকেই পানিশূন্যতায় ভুগতে থাকেন। পানি শূন্যতার অভাবে হাত পায়ের পাতা ফুলে যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি আমলকি খেতে পারেন। কারণ, আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকায় এটি শরীর হাইড্রেটেড রাখে।
- গর্ভাবস্থায় আমলকির জুস খেলে এটি একজন গর্ভবতী মায়ের প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে।
- অন্তঃসত্তাকালীন সময়ে অনেকেরই দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে এবং নিঃশ্বাসের সাথে দুর্গন্ধ বের হয়। এই দুটি সমস্যা সমাধানে আমলকি দারুণ কাজ করে।
- আবার ডায়াবেটিসের সমস্যা না থাকলেও গর্ভকালীন সময়ে অনেকেরই ডায়াবেটিস দেখা দেয়। কারণ, গর্ভাবস্থায় শরীরের হরমোন গুলো ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে তাতে ডায়াবেটিস হয়। ঠিক এই সময় আমলকি খেলে আমলকিতে থাকা অ্যান্টি ডায়াবেটিক উপাদান অন্তঃসত্তাকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
- আমলকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় অনেকের রক্তে গ্লুকোজের স্তর বৃদ্ধি পায়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে এটি আপনার গ্লুকোজের স্তর সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
- আমলকি শরীরে প্রাকৃতিক শক্তি যোগায় এবং শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে একদিন গর্ভবতী মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- আমলকি যেহেতু বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের দুর্দান্ত উৎস ঠিক সে কারণেই এটি গর্ভাবস্থায় একজন মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রূণের পুষ্টির চাহিদা পূরণে পুরোপুরি সক্ষম।
- আমলকিতে প্রদাহ কমানোর বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের শারীরিক প্রদাহ জনিত সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে।
- আমলকির জুস গর্ভস্থ শিশুর স্মৃতিশক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে। ফলে এই সময় একজন গর্ভবতী মাকে আমলকি খেতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
- গর্ভাবস্থায় আমলকি খেলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে, যা কিনা গর্ভাবস্থায় শরীরের পুষ্টি শোষণের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
- গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার আগে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। কারণ, একজন চিকিৎসকই আপনার শরীরের অবস্থা বুঝে প্রতিদিন কি পরিমান আমলকি আপনার খাওয়া উচিত তার পরিমাণ সঠিকভাবে বলে দিতে পারবে।
- গর্ভাবস্থায় আপনি কাঁচা আমলকি টুকরো করে চিবিয়ে কিংবা আমলকির জুস করেও খেতে পারেন। তবে আমলকির আচার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তাতে যেন অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি কিংবা লবণ না থাকে।
- যদি আপনি গর্ভাবস্থায় পেটের গ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা অনুভব করেন সেক্ষেত্রে আমলকি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
- গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার জন্য আপনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেছে নিন। যেমন ধরুন, সকালে খালি পেটে এটি আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী হতে পারে।
প্রতিদিন কয়টি আমলকি খাওয়া উচিত
আমলকির
উপকারিতা ও অপকারিতা পেতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২-৩
টি আমলকি খাওয়া উচিত। এই পরিমাণে আমলকি খেলে আপনি এর বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ফাইবার ইত্যাদি
পরিপূর্ণরূপে পাবেন। এতে করে আপনার ইমিউন সিস্টেম সহ সামগ্রিক স্বাস্থ্যের
উন্নতি হবে।
তবে,
একটি কথা মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া ভালো নয়। তাই অতিরিক্ত
পরিমাণে আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এতে আপনার পেটে অস্বস্তি দেখা
দিতে পারে। আর আপনার যদি বিশেষ কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে
সেক্ষেত্রে, এর পরিমাণ বাড়ানো বা কমানোর জন্য একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ
করতে পারেন।
চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা
আমলকির
শুধু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতাই নয় বরং চুলের জন্যও আমলকির
উপকারিতাও অনেক। এবারে জেনে নিন চুলের জন্য আমলকির উপকারিতা গুলো কি কি হতে
পারে-
- চুলের বৃদ্ধিতে সহায়কঃ আমলকিতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের চুলের গঠন এবং বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আমলকি স্ক্যাল্পের রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। ফলে চুলের ফলিকল ভালোভাবে পুষ্টি পায় এবং নতুন করে চুল গজাতে থাকে।
- চুলের উজ্জ্বলতা রক্ষায়ঃ আমলকি মেলানিনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা চুলের প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে সক্ষম। এছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চুলকে চকচকে ও ঝলমলে গড়ে তোলে।
- খুশকি প্রতিরোধেঃ আমলকির এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য স্ক্যাল্পের খুশকি ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি স্ক্যাল্পকে পরিষ্কার রাখে এবং চিরতরে খুশকি দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- চুল পড়া রোধ করেঃ আমলকিতে থাকা ট্যানিন এবং ক্যালসিয়াম চুলের ফলিকলসকে শক্তিশালী করে এবং সেই সাথে অতিরিক্ত তাপ থেকে আমাদের চুলকে রক্ষা করে। ফলে চুল পড়ার হারও কমে যায়।
- চুলের ঘনত্ব বাড়াতেঃ আমলকি চুলের ঘনত্ব বাড়াতেও সহায়ক। আপনাদের যাদের একেবারে পাতলা চুল তারা আমলকির পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে।
- চুলের ময়েশ্চারাইজিংঃ আমলকি চুলের ময়েশ্চারাইজ হিসেবেও কাজ করে। কারণ, এর পুষ্টি উপাদান চুলকে আদ্রতা যোগায় এবং চুলের রুক্ষতা দূর করে। ফলে চুলের মসৃণতা বৃদ্ধি পায়।
- কন্ডিশনের হিসেবে কাজ করে আমলকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে। ফলে চুল শ্যাম্পু করার পরে আমলকি চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের মতো কাজ করে।
- চুলের অকালপক্বতা রোধেঃ আমলোকি চুলের পিগমেন্টেশন বজায় রাখে। ফলে চুল অকালপক্কতার হাত থেকে রক্ষা পায়। তাছাড়া সপ্তাহে ২-৩ দিন আমলকির রস দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে তাতে অতিরিক্ত চুল পড়াও বন্ধ হয়।
চুলের
এই উপকারিতা গুলো পেতে আপনি আমলকি বিভিন্নভাবে যেমন- আমলকির রস, আমলকি তেল কিংবা আমলকির পেস্ট ব্যবহার
করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে আমলকির পুষ্টি উপাদান আপনার চুলকে
প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ও ঝলমলে করে তুলবে।
আমলকি খেলে ত্বকের যেসব উপকার হয়
আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। আমলকির
ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বকের
জন্য উপকারী। আমলকি খেলে এটি আপনার ত্বকের জন্য কি কি উপকারিতা বয়ে আনতে
পারে সেগুলো জেনে নিন-
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ আমলকির উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ, ভিটামিন সি ত্বকের কোষগুলিকে নতুন করে পুনঃনির্মাণ করে। ফলে ত্বকের স্বাভাবিক লুক ফিরে আসে।
- বয়সের ছাপ কমাতেঃ আমলকিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- ভিটামিন সি এবং পলিফেনাল। এই দুটি উপাদান আমাদের ত্বকের কোষগুলিকে ফ্রি রেডিক্যালসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। ফলে নিয়মিত আমলকি খেলে আপনার চেহারায় বয়সের ছাপ কমতে থাকে।
- ত্বকের শুষ্কতা কমাতেঃ আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আমলকি ত্বকে ময়েশ্চারাইজেশন হিসেবেও কাজ করে। কারণ, এটি ত্বক আদ্র রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে।
- ব্রনের দাগ দূর করতেঃ ত্বকে ব্রনের দাগ কিভাবে যায় দূর করতে বলুন তো! আপনি হয়তো অনেক চেষ্টা করেও ব্রনের দাগ দূর করতে পারছেন না। কিন্তু আমাদের হাতের নাগালে থাকা সহজলভ্য ছোট্ট এই ফলটির গুণেই ত্বকে ব্রনের দাগ দূর হতে পারে। কারণ, আমলকির এন্টি-ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বকে ব্রণ এবং ব্রনের কালো দাগ ইত্যাদি খুব সহজেই দূর করতে পারে
- ত্বকের টোন সমতাকরণঃ আমলকির নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বকের টোন সমতল করতে সাহায্য করে। আপনার ত্বকের অমসৃণতা দূর করে এবং ত্বককে আরো মসৃণ করে তোলে।
- রিংকেল কমাতেঃ আমলকি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। ফলে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং এটি রিংকেল কমাতে কাজ করে। এই কোলাজেন আপনার ত্বকের নমনীয়তা বজায় রাখতেও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রেঃ যাদের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক তারা আজ থেকেই আমলকির ব্যবহার শুরু করতে পারেন। কারণ, আমলকির অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য ত্বকের অতিরিক্ত তেল বা তৈলাক্ত ভাব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ত্বকের তৈলাক্ততা কমানোর পাশাপাশি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখে।
ত্বকের
ক্ষেত্রে এই উপকারিতা গুলো পাওয়ার জন্য আপনি আমলকি খাওয়া ছাড়াও আরো
বিভিন্ন উপায়ে আমলকি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ধরুন- মাক্স বা স্ক্রাব
আকারে।
যাদের আমলকি খাওয়া উচিত নয়
আমলকি
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী একটি ফল হলেও, বিশেষ স্বাস্থ্য বিবেচনায়
এটি অনেকেরই খাওয়া উচিত নয়। এবার চলুন জেনে নিন কোন ব্যক্তিদের আমলকি
খাওয়া উচিত নয় বা আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত-
- আমলকি অত্যন্ত তীব্র তিক্ত এবং অম্ল স্বাদ যুক্ত একটি ফল। ফলে যাদের অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের মতো সমস্যা রয়েছে তারা আমলকি খাবেন না।
- ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে আমলকি খাওয়াটা উপকারী হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ এটি আপনার ডায়াবেটিক ঔষধের সাথে মিশে রক্তে গ্লুকোজের স্তর অত্যধিক কমিয়ে দিতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই খাবেন। তা না হলে গর্ভাবস্থায় আপনার শারীরিক জটিলতা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- আপনার যদি কিডনি জনিত কোন সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে আমলকি পরিহার করুন। কেননা আপনার কিডনি ফাংশন কম হলে আমলকি উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম সরবরাহ করতে পারে, যা আপনার কিডনির সমস্যা কে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- আপনাদের যাদের ডিহাইড্রেশনের সমস্যা রয়েছে তারা আমলকি পরিহার করে চলুন।
- যারা অতিরিক্ত এলার্জি প্রবণ তারা আমলকি খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। কারণ, অনেক সময় আমলকি খেলে ত্বকে চুলকানি, রেশ এলার্জি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- আমলকি অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান হওয়ায় এটি আপনার শরীরের উপর অতিরিক্ত প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কেউ যদি অনেক বেশি শারীরিক দুর্বলতা বা অস্থিরতা অনুভব করেন সেক্ষেত্রে আমলকির ব্যবহার কমিয়ে দিন।
- কিছু ওষুধের সাথে আমলকি প্রতিক্রিয়া করতে পারে যেমন- ব্লাড থিনার বা অন্যান্য চিকিৎসা। তাই আপনি যদি ঔষধ সেবনের মধ্যে থাকেন তাহলে আমলকি খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
উপরিউক্ত
এই সতর্কতা গুলি মাথায় রেখে আপনার আমলকি খাওয়া উচিত। কেননা যে কোন নতুন
খাদ্য উপাদান আপনার স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতেই পারে।
আমলকির প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ
তাবলুকি
অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল যা বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য
গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এবার চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে কি
পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা জেনে নিন--
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শক্তি | ৪৪ ক্যালরি |
প্রোটিন | ০.৬ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১ গ্রাম |
কার্বোহবড্রেট | ১১ গ্রাম |
ফাইবার | ৬.৪গ্রাম |
সুগার | ২.৩ গ্রাম |
ভিটামিন সি | ৬০০-৭০০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ০.২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১ (থায়ামিন) | ০.০৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্লাভিন) | ০.০৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) | ০.৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৫ (প্যান্ট থেনিক এসিড) | ০.২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ (পাইরিডক্সিন) | ০.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৭ (বায়োটিন) | - |
ভিটামিন বি৯ (ফোলেট) | ০.০২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি১২ | - |
আয়রন | ১.২ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৫ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১২ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ২৭ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১৯৮ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৩ মিলিগ্রাম |
জিংক | ০.২ মিলিগ্রাম |
মাঙ্গানিজ | ০.১ মিলিগ্রা |
বিভিন্ন উৎস এবং আমলকির প্রকারভেদ অনুসারে এই মান কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে।
আমলকির দাম কত ২০২৪
আপনারা
অনেকেই আমলকির দাম সম্পর্কে জানতে চান। এক্ষেত্রে একটি কথা জানিয়ে
দেই, আপনি কাঁচা আমলকি, শুকনো আমলকি এবং আমলকি গুড়ো বা পাউডার উভয়ই কিনতে পারেন। আমলকির দাম
সাধারণত প্রতি গ্রাম হিসেবে খুব কম পাওয়া যায়। আপনি কাঁচা আমলকি প্রতি
কিলোগ্রাম ২৫০-৩০০ টাকায় পেয়ে যাবেন। যার গ্রাম প্রতি এর দাম পড়ে ৮০-১৫০
পয়সা। আবার অনেকে আছেন যারা কাঁচা আমলকি খেতে অভ্যস্ত নন।
তারা চাইলে শুকনো আমলকি কিনেও খেতে পারেন। শুকনো আমলকি প্রতি কেজি সাড়ে ৪৫০-৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আবার,
আপনি যদি আমলকির পাউডার বা আমলা গুঁড়ো কিনতে চান সেক্ষেত্রে দামটা একটু বেশি হতে পারে।
আপনি আমলকি পাউডারের ১০০ গ্রামের একটি প্যাকেট পেয়ে যাবেন ২০০-৪০০ টাকায়।
তবে স্থান ভেদে, মৌসুম এবং সরবরাহের ভিত্তিতে এই দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে
পারে।
আমলকি সংরক্ষণ পদ্ধতি
আমলকি সংরক্ষন পদ্ধতি জানতে চান? আমলকি
একটি মৌসুমী ফল হওয়ার কারণে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে কেবল পর্যাপ্ত
পরিমাণ পাওয়া যায়। ফলে আপনার সারা বছরের জন্য আমলকি সংরক্ষণ করার
প্রয়োজন হতে পারে। এবার চলুন আপনি কোন পদ্ধতিতে কিভাবে আমলকি সংরক্ষন
করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন-
কাঁচা আমলকি সংরক্ষণ পদ্ধতি
- ফ্রিজে সংরক্ষণঃ কাঁচা আমলকি আপনি একসাথে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। এর জন্য আমলকি গুলো ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন এবং একটি এয়ারটাইট ব্যাগ বা কনটেইনার এ রাখুন। এভাবে ফ্রিজে রাখা হলে কাঁচা আমলকি প্রায় ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত টাটকা এবং সতেজ থাকবে।
- ফ্রিজার সংরক্ষণঃ দীর্ঘসময় আমলকি সংরক্ষণ করার জন্য আপনি কাঁচা আমলকি গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে ফ্রিজারে রেখে দিন। এভাবে ছয় মাস পর্যন্ত আপনি আমলকি সংরক্ষণ করে খেতে পারবেন।
শুকনো আমলকি সংরক্ষণ পদ্ধতি
- সূর্যের আলোতেঃ কাঁচা আমলকি রোদে দিয়ে এর মধ্যকার জলীয় অংশ কমিয়ে নিন। একবার শুকিয়ে গেলে আমলকি দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায়। এবার এই শুকনো আমলকি আপনি একটি এয়ার টাইট কন্টেইনারে বা কাচের জারে সংরক্ষণ করুন।
- ডিহাইড্রেটর ব্যবহারঃ আমলকি শুকাতে আপনি ডিহাইড্রেটেরও ব্যবহার করতে পারেন। এতে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমলকির জলীয় অংশ অপসারিত হবে।
আমলকি পাউডার করে সংরক্ষণ
- পাউডার প্রস্তুতকরণঃ শুকনো আমলকি আপনি পিষে বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পাউডার বানিয়ে নিতে পারেন। এই পাউডার একটি এয়ার টাইট কন্টেইনারে প্রায় ৬-১২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বলে রাখি, পাউডার তৈরির আগে আমলকি খুব ভালো করে শুকিয়ে নেবেন।
- ফ্রিজে সংরক্ষণঃ আমলকির রস তৈরি করে আপনি একটি কন্টেইনারে বা জারে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এই রস সাধারণত ১-২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে দীর্ঘ সময় আমলকির রস সংরক্ষণের জন্য আপনি ফ্রিজারের মধ্যে রাখতে পারেন, যেখানে এটি প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সতেজ থাকবে।
- ক্যানিংঃ আমলকি রস আপনি ক্যানিং করেও সংরক্ষণ করতে পারেন। এর জন্য একটি এয়ারটাইট ক্যানিং জারে এর রস ঢেলে ভালোভাবে সিল করে রাখুন। ক্যানিং পদ্ধতিতে প্রায় ১ বছর পর্যন্ত আমলকি রস আপনি অনায়াসেই সংরক্ষণ করতে পারবেন।
আমলকির আচার
- আমলকি দিয়ে আচার তৈরি করে তাতে তেল ভিনেগার এবং সমস্ত মশলার মিশ্রণ দিয়ে সারা বছরের জন্য আপনি সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। এই আচার খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম আমলকি সংরক্ষণের বেশ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে। উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে আপনি সারা বছরের জন্য আমলকি সংরক্ষন করতে পারেন।
সুতরাং আমলকি সংরক্ষণের জন্য আপনার সুবিধা অনুযায়ী উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
লেখকের মন্তব্য
আমলকির
উপকারিতা ও অপকারিতা পেতে আপনাকে নিয়ম মেনে সঠিক পরিমাণে প্রতিদিন আমলকি
খেতে হবে। তবেই আপনি এই ফলের উপকারিতা পাবেন। যারা আমলকি খেতে
একেবারেই পছন্দ করেন না, তারা প্রতিদিন একটি করে আমলকি খাওয়ার চেষ্টা
করুন। কারণ, সাদে তিক্ত বা কটু হলেও এই ফলটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
আমলকি শুধুমাত্র ভিটামিন আর খনিজ উপাদানেই ভরপুর নয়, বরং বিভিন্ন রোগব্যাধি
দূর করতেও রয়েছে এর অসাধারণ সব গুন। তাই দেরি না করে আজ থেকেই আপনার খাদ্য
তালিকায় ডায়েটে যোগ করে ফেলুন সহজলভ্য আমলকি। যার ফলাফল হিসেবে ছোট্ট এই ফলটি
আপনাকে দেবে একাধারে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার নিশ্চয়তা। ভালো
থাকুন,সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url