আতা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
আতা ফলের উপকারিতা জানলে আপনি হয়তো আজ থেকেই আতা ফল খাওয়া শুরু করে দেবেন। কিন্তু আতা ফল খাওয়ার নিয়ম জানেন কি? না জেনে থাকলে চটজলদি আজকের আর্টিকেলটি একবার পড়ে নিন।
কারণ,
আজকের এই আর্টিকেল পড়েই আপনি জেনে নিতে পারবেন আতা ফলের উপকারী দিক এবং এই
ফল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায়
ফিরে যাওয়া যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আতা ফলের উপকারিতা
- আতা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
- আতা ফলের উপকারিতা
- আতা ফলের অপকারিতা
- আতা ফল খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা
- আতা ফল ইংরেজি নাম
- শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য
- আতা ফলের পাতার উপকারিতা
- আতা ফলের দাম
- আতা ফলের পুষ্টিগুণ
- লেখকের মন্তব্য
আতা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
আতা ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই অবগত নই। অথচ প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং খেতে অতি সুস্বাদু এই আতা ফল। আতা ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম, অ্যাান্টি অক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে। যা কিনা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।শুধু
তাই নয়, কোষ্ঠ পরিস্কার করা, মুখের অরুচি দূর করা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানো,
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করা, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, কোলেস্টেরল কমাতে, হজম শক্তি বাড়াতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং চুলের স্বাস্থ্য
ভালো রাখতেও আতা ফল দারুণ কার্যকরী। আবার আতা ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে
ভিটামিন এ।
যা আমাদের চোখের কর্নিয়া ও রেটিনা সুরক্ষিত রাখতে মুখ্য ভূমিকা
পালন করে থাকে। আতা
ফল সাধারণত লালচে এবং সবুজ দু ধরনের হয়ে থাকে। তবে, লালচে রঙের আতা ফলে
সবুজ রঙের আতার থেকে আয়রন এবং ক্যালরি উভয়ই বেশি পরিমাণে থাকে। কিন্তু
অতিরিক্ত আতা ফল খেলে এটি আবার আপনার শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষ করে আতা ফলের মধ্যে শর্করা এবং চিনি বেশি থাকার কারণে অতিরিক্ত খেলে
এটি রক্তে শর্করার স্তর বাড়িয়ে দিতে পারে। যা
কিনা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, আতা ফলের
বীজের মধ্যে সাইক্লোন বা বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। যা অতিরিক্ত
খেলে পেটে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।
শুধু তাই নয়, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে আতা ফল খেলে আপনার হজমে সমস্যা বা পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাথে বমি বমি ভাব কিংবা ডাইরিয়াও হতে পারে। কারো কারো আবার এলার্জির সমস্যাও হয়ে থাকে। এমনকি গর্ভাবস্থায় আতা ফল অতিরিক্ত খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এতে গর্ভপাত ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তাই বলবো শারীরিক সুস্থতার কথা
বিবেচনায় রেখে সঠিক পরিমাণে নিয়ম মেনে আতা ফল খাওয়া উচিত।
আতা ফলের উপকারিতা
আতা ফলের উপকারিতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক। শুধুমাত্র উপকারের দিক থেকে নয় বরং দেশীয় এই ফলটি খেতেও খুব সুস্বাদু। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি আতা ফলের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আতা ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি আমাদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে। বিশেষ করে শীতকালে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। ঠিক এই সময় আতা ফল খেলে এটি ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।
- পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস দেশীয় ফল গুলির মধ্যে আতাফল পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে কাজ করে। কারণ এ ফলে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, প্যান্টোথেণিক অ্যাসিড, থায়ামিন, ফসফরাস কার্বোহাইড্রেট এবং রাইবোফ্লাভিন। এই প্রত্যেকটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী।
- কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে আতা ফলঃ আতা ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ বা ফাইবার। ফলে এই ফল খেলে এটি পেটে খাবারের গতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষ্ঠকাঠিনের মত সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারে।
- পেটের অস্বস্তি দূর করেঃ আপনি কি বদহজমের মতো পেটের অস্বস্তিতে ভুগছেন? আপনার এই বদহজমের সমস্যা দূর করতে পারে আতা ফল। শুধু তাই নয়, আতা ফল খেলে এটি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দূর করবে।
- হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়ঃ আপনি কি জানেন আতা ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদান দুটি রক্তনালীর প্রসারণে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। ফলে আতা ফল খেলে এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং সেই সাথে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
- বাড়তি ওজন কমায়ঃ ওজন কমাতেও আতা ফল বেশ উপকারী। আপনারা যারা ওজন কমাতে চান তারা আজ থেকেই আতা ফল খাওয়া শুরু করুন। কারণ এই ফলে রয়েছে ফাইবার এবং সবচেয়ে কম ক্যালোরি। যা ওজন কমাতে সহায়ক।
- শরীরের প্রদাহ কমাতে আতা ফলঃ আমাদের শরীরে জয়েন্টে ব্যথা, বাতের ব্যথা, গেটে বাতের ব্যথা অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের উপশম ঘটাতে পারে এই আতা ফল। কারণ, এই ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে খুব ভালো কাজ করে। সুতরাং শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে আপনি আতা ফল খেতেই পারেন।
- ত্বক ভালো রাখেঃ নিয়মিত পরিমিত মাত্রায় আতা ফল খেলে এতে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। শুধু তাই নয়, আতা ফল ত্বক থেকে বয়সের ছাপ, রিংকেল, ব্রণ ইত্যাদি দূর করতেও সহায়ক।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ আতা ফলের ফোনের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অন্যান্য ফলের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম থাকার কারণে এটি রক্তের শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের আতা ফল অতি সাবধানতার সাথে খাওয়া উচিত।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে আতা ফলঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের অনেকেরই স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। কিন্তু আতা ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কাজ করে। সুতরাং মস্তিষ্ক ভালো রাখতে এবং স্মরণশক্তি বাড়াতে আপনি আতা ফল খেতেই পারেন।
- মানসিক অবসাদ দূর করেঃ আতা ফলে রয়েছে ভিটামিন বি-৬। যা খেলে এটি আমাদের শরীরে সেরোটোনিন ও নরেপিনেফ্রীন নামক রাসায়নিক এর উৎপাদন অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। এতে করে মানসিক উদ্বেগ এবং চাপ কমতে থাকে।
- স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ শুধুমাত্র আকার ফলই নয়, বরং আতা গাছের পাতাও বেশ উপকারী। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আতা গাছের পাতার নির্যাস অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। কারণ, এর পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা স্তনের ভেতর থেকে বিষাক্ত টক্সিন অপসারণ করতে সাহায্য করে। ফলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কম।
- ওজন কমায়ঃ বর্তমান সময়ে আমরা অনেকেই ওজন কমাতে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু আপনি কি জানেন, ওজন কমানোর জন্য আপনাকে প্রথমেই বিপাক হার উন্নত করতে হবে। আর এই বিপাক হার উন্নত করতে পারে কেবলমাত্র আতা ফল। কারণ, এই ফলে রয়েছে অ্যাসটোজেনিন নামক এক প্রকার বিশেষ উপাদান। তাছাড়া একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অ্যাসটোজেনিন উপাদানটি বিপাক হার উন্নত করে অর্থাৎ ক্যালরির ওপর প্রভাব পড়ে।
- পিত্ত জনিত সমস্যা প্রতিরোধেঃ আপনার শরীরে যদি পিত্তজনিত কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি নিয়মিত আতা ফলের শাসের রস খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাতে আরাম পাবেন।
- হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়ঃ যদি স্বাভাবিকের থেকে আপনার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে সেক্ষেত্রে বলবো আতাফল খান। কারণ, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতেও দারুন কাজ করে আতাফল।
- ডায়রিয়া সারাতেঃ ডায়রিয়া সারাতে আপনি খেতে পারেন আপনার ফলের গুঁড়ো। শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! হ্যাঁ, প্রিয় পাঠক ডাইরিয়া সারাতে আপনি এক গ্লাস পানিতে আতা ফলের গুঁড়ো মিশিয়ে খেয়ে নিন। তাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে আপনার ডায়রিয়া রোগ সেরে যাবে।
- দাঁত পরিষ্কার রাখেঃ দাঁত পরিষ্কার রাখতে আতা ফলের খোসার জুড়ি মেলা ভার। শুধু তাই নয়, আতা ফলের খোসা দাঁতে ব্যবহার করলে এতে আপনার দাঁতের ক্ষয় রোধ হবে এবং সেই সাথে দাঁতের মাড়ি শক্তিশালী হবে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে আতা ফলঃ নিয়মিত আতা ফল খেলে আপনি ক্যান্সার নামক মরণব্যাধি থেকেও বাঁচতে পারেন। কারণ, এই ফলের এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। তাছাড়া আতা ফলের বীজে কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
- শ্বাসকষ্ট কমায়ঃ আতা ফলে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান শ্বাসনালীর প্রদাহ রোধ করে। ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থেকেও আপনাকে মুক্তি দিতে পারে এই আতা ফল। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে হাঁপানি থেকে বাঁচতে হলে আজ থেকেই আপনি আতা ফল খাওয়া শুরু করুন।
- এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যঃ আতা ফলের বীজ ও পাতা থেকে এক ধরনের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করে। এটি ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন কমাতেও বেশ কার্যকরী।
- শরীরের বিষাক্ত টক্সিন দূর করেঃ নিয়মিত আতা ফল খেলে এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন খুব সহজেই বের করে দিতে পারে। ফলে কিডনি ও লিভার সুস্থ থাকে। এতে করে লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। সেই সাথে শরীরও ভেতর থেকে তরতাজা থাকে।
- কোলেস্টেরল কমাতে আতা ফলঃ কারণে অকারণে শরীরে কোলেস্টেরনের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। আপনার যদি কোলেস্টেরলের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি আতা ফল খেতে পারেন। কারণ, এই ফলে রয়েছে নিয়াসিন। যা শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখে।
- রক্তাল্পতা প্রতিরোধে আতা ফলঃ আমাদের শরীরে কখনো কখনো ফলেটের অভাব হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। আর রক্তশূন্যতার কারণে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়। রক্তশূন্যতা দূর করতে আপনি খেতে পারেন ফোলেট সমৃদ্ধ আতা ফল।
- চোখ ভালো রাখতে আতা ফলঃ আতা ফলে রয়েছে লুটেইন ও রিবোফ্ল্যাভিন নামক ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাছাড়া আতা ফল খেলে এই উপাদানগুলি আমাদের চোখকে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিকেলের ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে। ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং চোখ ভালো রাখতে আপনি নিয়মিত আতা ফল খেতেই পারেন।
- হাড় ভালো রাখেঃ আতা ফল যেহেতু পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ একটি দেশীয় ফল। বিধায় হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে এবং হাড় মজবুত করতেও সাহায্য করে। বিশেষ করে শীতকালে আপনার হাড়কে কে মজবুত ও শক্তিশালী করতে দারুন কাজ করে আতা ফল।
- ফুসফুস ভালো রাখেঃ ফুসফুসের যেকোনো ধরনের প্রদাহ এবং এলার্জি কমাতে চমৎকার কাজ করে আতাফল।
- হরমোন তৈরিতেঃ ভিটামিন বি-৬ এর একটি দুর্দান্ত উৎস হল আতা। শুধু তাই নয়, ভিটামিন বি-৬, ডোপামিন ও সেরোটোনি এই উপাদান গুলো শরীরের হরমোন তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ফলে আতা ফল খেলে মানসিক অবসাদ যেমন দূর হয় ঠিক তেমনি মন মেজাজ ফুরফুরে থাকে।
- দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধেঃ আতা ফলে পলি ফেনলিক যৌগ রয়েছে। যা আমাদের শরীরে কার্ডিওভাসকুলার ও নিউরো ডিজেনারেটিভ সহ বেশ কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম।
- সর্দি-কাশি থেকে দূরে রাখেঃ অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের সর্দি কাশি ঠান্ডা লাগার লেগেই থাকে। ঠিক এই সময় আতা ফল খেলে এটি আমাদের ঠান্ডা লাগা জনিত যে কোন সমস্যা এবং ফ্লু থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে।
- চুলের জন্য উপকারীঃ চুলের বৃদ্ধির জন্যও আতা ফল উপকারী। কারণ, আতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি চুলের গোড়া মজবুত ও শক্তিশালী করে। ফলে চুল পড়া রোধ হয়। সাথে চুলের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায়।
- চুলের উকুন দূর করেঃ চুলের উকুন দূর করতেও আতা দারুন কার্যকরী একটি ফল। অনেক সময় উকুন দূর করতে আমরা বিভিন্ন ধরনের উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকি। তাতে কাজের কাজ কিছুতো হয়ই না বরং চুলের ক্ষতি হয়। চুলের ক্ষতি এড়াতে আপনি উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন আতা ফলের পেস্ট। কারণ, আতাতে থাকা এনজাইম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট চুলের উকুন দূর করতে ম্যাজিকের মত কাজ করে
- গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ গর্ভকালীন সময়ে আতা ফল খাওয়া একজন গর্ভবতী মা এবং তার গল্পের শিশুর জন্য ভীষণই উপকারী। বিশেষ করে এই সময় আতাফল খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি তো কমেই, সেই সাথে গর্ভাবস্থার সকালের শারীরিক দুর্বলতাও কেটে যায়। তাছাড়া নিয়মিত আতাফল খেলে গর্ভ পরবর্তী সময়ে মায়ের বুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ দুধ তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই ফলটি।
- চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ আতা ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। শুধু তাই নয়, আতা ফলের নরম মাংসল অংশ ত্বক ও চুলের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
আতা ফলের অপকারিতা
আতা ফলের শুধু উপকারিতাই নয়, বরং এর কিছু স্বাস্থ্য অপকারিতাও রয়েছে। আতা ফলের এই অপকারিতা গুলো আপনি তখনই পাবেন যখন অতিরিক্ত পরিমাণে আতা ফল খাবেন। তো চলুন এবারে আমরা আতা ফলের অপকারিতা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই-- অতিরিক্ত পরিমাণে আতা ফল খেলে আপনার পেটে গ্যাস, পেট ফাঁপা, বদহজম, পেট ব্যথা, এমনকি ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে আপনার পেট যদি অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণে অভ্যস্ত না হয় সেক্ষেত্রে এই সমস্যা গুলো বেশি হবে।
- আতা ফল ওজন কমাতে যেমন কাজ করে, ঠিক তেমনি এতে অতিরিক্ত ক্যালরি থাকার কারণে অতিরিক্ত আতা ফল খাওয়া আপনার ওজন বাড়ার কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। ফলে যারা ওজন কমাতে চান তারা অতিরিক্ত আতা ফল না খেয়ে সীমিত পরিমানে খান।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আতা ফল খাওয়া খুব একটা সুখকর নয়। কারণ, আতা ফলে স্বাভাবিকভাবে চিনির মাত্রা বেশি থাকে। ফলে অতিরিক্ত খেলে আপনার রক্তে শর্করার স্তর বেড়ে যেতে পারে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
- প্রতিদিন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে আতা ফল খেলে আপনার শরীরে এলার্জিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- আপনাদের ইতিমধ্যেই যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা সীমিত পরিমাণে আতা ফল খান। কেননা এই ফলে পটাশিয়ামের উপস্থিতি যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। যা অতিরিক্ত খেলে আপনার কিডনি সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
- কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অত্যধিক মাত্রায় আতা ফল খেলে শরীরের পেশীতে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। আর এই সমস্যা বেশি হবে যাদের আগে থেকেই পেশির সমস্যা রয়েছে তাদের।
- আপনি যদি প্রতিদিন অধিক পরিমাণে আতা ফল খান সেক্ষেত্রে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ও হতে পারে। তাই সপ্তাহে ১-২ দিনের বেশি আতা ফল খাওয়া মোটেও উচিত নয়।
- আতা ফলের খোসা ও বীজে এক ধরনের বিষাক্ত যৌগ থাকে। যা আমাদের ত্বক এবং চোখের জন্য ক্ষতিকর।
- অতিরিক্ত আতা খাওয়ার ফলে অনেক সময় আপনার অন্ত্রে টান করার মত সমস্যাও হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়া উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাবার একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। তাছাড়া গর্ভকালীন সময়ে অতিমাত্রায় এই ফল খেলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
- আবার আপনার যদি ঠান্ডা জনিত সমস্যা থাকে তাহলে বলব আপনি সীমিত পরিমাণে আতা ফল খান। কেননা আধাফল এমনিতেই ঠান্ডা জাতীয় ফল।
আতা ফল খাওয়ার নিয়ম
আতা ফল খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যে নিয়ম মেনে আতা ফল খেলে আপনি এই ফলের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে খুব সহজেই নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন। তাহলে চলুন সুস্বাদু এই ফল খাওয়ার নিয়ম গুলো কি কি তা জেনে নিন-- প্রথমেই বলি, আতা ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনি খুব ভালোভাবে পাকা আতা ফল নির্বাচন করুন। কারণ, পাকা ফল খেতে বেশি সুস্বাদু হয়। মনে রাখবেন, আধা পাকা বা কাঁচা আতা ফল মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়।
- এই ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই এর বাহ্যিক অংশ পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিবেন। কেননা ফলের বাইরের অংশে অনেক সময় রাসায়নিক পদার্থ, নোংরা থাকতে পারে।
- আতা ফল খুব পুষ্টিকর কিন্তু এতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন ১-২ টির বেশি আতা ফল ফল খাওয়া মোটেও উচিত নয়।
- আতা ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই এর খোসা আলাদা করে ফেলুন। কারণ, এই খোসা খাওয়ার উপযুক্ত নয় এবং খোসাটি অত্যন্ত রুক্ষ হয়ে থাকে। যা খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্রে হজমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
- শুধু খোসা নয় বরং এই ফলের বীজও খাওয়ার সময় ফেলে দিন। যদিও আতা ফলের বীজ দেখতে বেশ লোভনীয় কিন্তু ভুল করেও এই ফলের বীজ কখনোই খাবেন না। কেননা এই বীজে কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- আতা ফল খাওয়ার উপযুক্ত সময় হল সকালবেলা বা দুপুরে খাবারের পর। কারণ, এই দুটি সময়ে আমাদের শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে।
- আতা ফল খাওয়ার পর পরই পানি খাওয়া থেকে আপনি বিরত থাকুন। কারণ, আতা ফল খাওয়ার পর সাথে সাথেই পানি খেলে আপনার পেট ফেপে যেতে পারে। সাথে হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এই ফল খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি পান করুন।
- শুধুমাত্র পানি নয় বরং আতা ফল খাওয়ার পর অন্যান্য খাবারও কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে তবেই খাবেন। এতে আপনার হজমের সমস্যা হবে না।
- প্রচন্ড গরমে কিংবা খুব ঠান্ডায় আতা খাওয়া উচিত নয়। এর থেকে সাধারণ তাপমাত্রায় আতা ফল খেলে আপনি বেশি উপকার পাবেন। কারন কি জানেন? এর কারণ হলো খুব ঠান্ডা অবস্থায় আতা ফল খেলে তাতে আপনার হজমে সমস্যা দেখা দেবে এবং খুব গরম তাপমাত্রায় এই ফলের পুষ্টিগুণ অনেকটাই কমে যায়।
- আপনি অন্যান্য বিভিন্ন ফলের সাথে আতা ফল মিক্স করে মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে।
গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় আতা ফল খাওয়ার উপকারিতাও কম নয়। গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর জন্য এই ফলটি অত্যন্ত উপকারী। যা হয়তো আপনি নিজেও জানেন না। এবার আপনাকে জানাবো গর্ভাবস্থায় এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে--- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আতা ফলঃ ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস হলো আতা ফল। আর গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি এর চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ, ভিটামিন সি একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরের আয়রন শোষণ ক্ষমতাাা বাড়ায় এবং গর্ভকালীন রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধেঃ গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় প্রায় সকলেই ভুগতে থাকেন। এই সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে আতা ফল। কেননা এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- শরীরের শক্তি বাড়ায়ঃ আপনি কি জানেন কার্বোহাইড্রেট এবং শর্করার সবথেকে ভালো উৎস হলো আতা ফল। সাধারণত গর্ভাবস্থায় মা এবং শিশুর জন্য অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন পড়ে। যা আপনি আতা ফল খেয়ে পেতে পারেন। এতে একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক দুর্বলতাও দূর হয়।
- গর্ভাবস্থায় মানসিক উদ্বেগ কমায়ঃ আতা ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এটি গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের মানসিক স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমাতে কাজ করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মা-বোনদের রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এটি করে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। রক্তচাপের এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে আপনি খেতে পারেন আতা ফল। কারণ, আতা ফল রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
- মা ও শিশুর হাড়ের সুরক্ষায়ঃ গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়ামের অভাবে একজন গর্ভবতী মায়ের হাড়ের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাড়ের এই সমস্যা দূর করতে আপনি ফল হিসেবে বেছে নিতে পারেন আতা ফলকে। গর্ভাবস্থায় আতা ফল খেলে এটি মা এবং শিশু উভয়েরই হাড়ের শক্তি ধরে রাখে।
- প্রসবে সাহায্য করেঃ আতা ফলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে বিশেষ করে এর এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা প্রসব কালীন জটিলতা দূর করে।
- উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধঃ আতা ফলে উচ্চমানের প্রোটিন থাকায় এটি একজন গর্ভবতী মায়ের পেশী শক্তি বাড়াতে কাজ করে এবং সেই সাথে ভ্রুনের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠনেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
- গর্ভাবস্থায় হার্ট ভালো রাখেঃ গর্ভকালীন সময়ে নিয়ম করে একদিন পরপর আতা ফল খেলে এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল(LDL) এর মাত্রা কমায়। ফলে হার্ট ভালো থাকে।
- মা ও শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আতা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে এটি গর্ভকালীন সময়ে শরীর থেকে রক্ত ডিটক্সিফাই করে ফেলে। যার ফলে মা এবং তার গর্ভস্থ শিশু উভয়নে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশেঃ আতা ফলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আপনার গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।
গর্ভকালীন সময়ে আতা ফল খাওয়া নিঃসন্দেহে উপকারী। তবুও কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন ধরুন-
- আপনি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আতাফল একেবারে খাবেন না। কারণ, অতিরিক্ত আতা ফল খেলে এটি প্রসবের সময় আপনার হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- আপনার যদি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আতা ফল না খাওয়াটাই ভালো। কেননা আতা ফলে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে অতিরিক্ত আতা ফল খেলে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
আতা ফল ইংরেজি নাম
আতা ফল খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। এবার আপনাকে এই ফল সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য জানাবো। আমরা কমবেশি সকলেই আতা ফল খেতে পছন্দ করি। কিন্তু আপনি কি জানেন এই ফলের ইংরেজি নাম কি? আতা ফলের ইংরেজি নাম হল Custard-apple, sugar-apple, sugar-pineapple এবং sweetsop.ইংরেজিতে
এই প্রত্যেকটি নামেই আতা ফল পরিচিত। আতা মূলত অ্যানোনেসি পরিবারের
অন্তর্গত এক ধরনের যৌগিক ফল। তবে অঞ্চল ভেদে একেক জায়গায় আতা ফল বিভিন্ন
নামে পরিচিত যেমন- আতা, শরিফা, নোনা। যদিও আতা এবং শরিফা এ দুটো ফল দেখতে
প্রায় একই রকম। কিন্তু আতা ও শরিফার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য
শরিফা ও আতা ফলের পার্থক্য অনেকেই বুঝতে পারেন না। এর কারণ একটাই টা হলো শরিফা এবং আতা ফল দেখতে প্রায় একই রকমের। তা সত্ত্বেও এই দুটি ফলের মধ্যে কিছু তফাৎ রয়েছে। এই দুই ফলের স্বাদ, গন্ধ, রং একই রকম হলেও বাস্তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যা আপনার জানা একান্তই জরুরী। তো চলুন শরিফা ও আতা ফলের মধ্যে কি কি পার্থক্য রয়েছে সে সম্পর্কে এবার জেনে নিন---- বৈজ্ঞানিক নামঃ শরিফার বৈজ্ঞানিক নাম Annona cherimola এবং আতাফল এর বৈজ্ঞানিক নাম Annonna squamosa. মজার বিষয় হল এদের বৈজ্ঞানিক নাম আলাদা হলেও এ দুটি ফল একই annona গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।
- আকার ও গঠনঃ শরিফা সাধারণত দেখতে গোলাকার হয়ে থাকে। এর গায়ের রং সবুজ বা হালকা সাদা রঙের কিংবা কিছুটা ধূসর মসৃণ হয়ে থাকে। অপরদিকে আতাফল এর গা কখনই মসৃণ হবে না বরং এটি পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে।
- শরিফা ও আতা ফলের খোসাঃ শরিফার খোসা সাধারণত মসৃণ নরম ও পাতলা হয়। অন্যদিকে আতাফল এর খোসা শরিফার থেকে তুলনামূলক বেশি শক্ত এবং খোঁচানো হয়ে থাকে।
- গন্ধঃ শরিফা ফলের গন্ধ খুবই মিষ্টি হয়। এর গন্ধ কিছুটা পাকা ফলের সোঁদা গন্ধের মত। অন্যদিকে আতা ফলের গন্ধ এবং মিষ্টতা শরীফ থেকে কিছুটা কম হয়। বিশেষ করে আতা ফলের গন্ধ শরিফার মত খুব একটা ছড়ায় না।
- আতা ও শরিফা ফলের স্বাদঃ শরিফা ফলের ভেতরের অংশ খুবই মুশকুন এবং খেতে অত্যন্ত মিষ্টি হয়। এর ভেতরের মাংসের অংশ একেবারে রসালো আঠালো হয়ে থাকে। অন্যদিকে আতা ফলের ভেতরের অংশ শরীফার তুলনায় কিছুটা খসখসে হয় এবং এর স্বাদও খানিকটা ভিন্ন।
- বীজঃ শরিফা ফলে অনেক ছোট ছোট কালো বীজ থাকে এবং বীজগুলো বেশিরভাগ শক্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে আতা ফলেও বীজ থাকে। কিন্তু আতা ফলের বীজ শরীফার তুলনায় কিছুটা বড় হয় এবং আকৃতিতেও আলাদা হয়।
- দুই ফলের পুষ্টিগুণঃ শরিফা ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ভিটামিন বি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফাইবার খনিজ উপাদান থাকে। আতা ফলেও ভিটামিন সি, খনিজ এবং ফাইবার রয়েছে। তবে আতা ফলের তুলনায় শরিফা ফলে ভিটামিন সি ও শক্তির উৎস তুলনামূলক ভাবে বেশি থাকে।
- বিশেষ বৈশিষ্ট্যঃ শরিফা কিছুটা নরম প্রকৃতির এবং এর খোসা পাতলা হওয়ার কারণে এটি সংরক্ষণে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। অন্যদিকে আতাফলের খোসা খানিকটা শক্ত হওয়ার কারণে এটি কিছুটা সময় এমনিই সুরক্ষিত থাকে। তবে অনেকদিন রাখলে দ্রুত পচে যেতে পারে।
আতা ফলের পাতার উপকারিতা
শুধুমাত্র আতা ফল আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী তা নয়। বরং আতা ফলের পাতারও রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্য গুণ। শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন তাইতো! তাহলে চলুন এবার আতা ফলের পাতার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-- আতা ফলের পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে।
- আতা ফলের পাতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি হজমের জন্য খুবই উপকারী। আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে আতা পাতার গুঁড়ো কিংবা আতা পাতা ছেঁচে এর রস খেতে পারেন। এতে করে আপনার পেটের সকল সমস্যা দূর হবে।
- আতা ফলের পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী। এই পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে নিয়মিত আতা পাতা খেলে আপনার রক্তে শর্করার পরিমাণ কম থাকবে এবং ডায়াবেটিসও আপনা আপনি নিয়ন্ত্রিত হবে।
- আতা পাতার রস বা পেস্ট আপনার ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ যেমন ধরুন- ব্রণ, দাগ-ছোপ, ত্বকের শুষ্কতা, ব্রণের কালো দাগ ইত্যাদি খুব সহজেই দূর করতে পারে। তাছাড়া নিয়মিত আতা পাতার রস ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
- শুধু ত্বকের জন্যই নয়, আতা পাতার পেস্ট আপনার চুলের জন্যও উপকারী। নিয়মিত আতা পাতা চুলে ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়, চুলে খুশকির সমস্যা দূর হয় এবং চুল ঝলমলে হয়।
- আতা ফলের পাতা উকুন নাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ আপনি চুলের উকুন দূর করতে শ্যাম্পু ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন আতা ফলের পাতার পেস্ট।
- অনেক সময় আমাদের শরীরে ফোড়া ওঠে। ফোড়ার যন্ত্রণা বেশ কষ্টদায়ক। কখনো কখনো ফোঁড়া সহজেই পেকে ফেটে বের হতে চায় না আবার বসতেও চায় না। এই সময় আপনি আতা গাছের পাতা বা বীজ ব্লেন্ড করে তাতে সামান্য লবণ মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে প্রলেপ দিন। দেখবেন তাতে ফোঁড়া ফেটে যাবে এবং অতিরিক্ত ব্যথা লাঘব হবে।
- আতা পাতায় থাকা এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে খুব ভালো কাজ করে। বিশেষ করে গাটের ব্যথার ক্ষেত্রে।
আতা ফলের দাম
আতা ফলের দাম সাধারণত মৌসুমের উপর নির্ভর করে কম বেশি হয়ে থাকে। অত ফলের মৌসুম হল মে-জুলাই। গ্রীষ্মকালের এই সময়ে আতাফল এর মৌসুম হাওয়ায় ফলের সরবরাহ বেশি থাকে এবং দামও অনেকটাই কম থাকে। এই মৌসুমের সময় আপনি প্রতি কেজি আতা ফল ১৫০-২০০ বাজারে পেয়ে যাবেন।কিন্তু
মৌসুমের বাইরে অর্থাৎ অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে আতা ফলের সরবরাহ কম
থাকে। যার ফলে। এই সময়টায় ফলের দাম অনেকটা বেড়ে যায়। অর্থাৎ মৌসুম
ছাড়া আপনি প্রতি কেজি আতা ফল পাবেন ২৫০-৩০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও অনেক সময়
আতা ফল এর দাম এর গুণগত মানের উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে বড় এবং পাকা আতা
ফলের দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়।
আতা ফলের পুষ্টিগুণ
আতা ফলের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা এতক্ষণ জেনেছেন। এবার আপনাকে জানাবো আতা ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। প্রতি ১০০ গ্রাম আতা ফলে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আপনার সুবিধার্থে নিচে একটি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করছি--পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরি | ৯৪ কিলোক্যালরি |
ফসফরাস | ২১ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১৯ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩৮২ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ২২ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন বি-৬ | ০.৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ১৯২ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ৪.৫ মিলিগ্রাম |
শর্করা |
২৫.৬ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.৭ গ্রাম |
আয়রন | ০.৭ মিলিগ্রাম |
লেখকের মন্তব্য
আতা ফলের উপকারিতা আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। বর্তমানে বাজারে নানা ফলের ভিড়ে আতা ফল হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে। যা কিছুদিন আগেও পাওয়া যেত না। এর কারণ কি জানেন? এর কারণ হলো বর্তমান সময়ে আতা ফলের পুষ্টি উপকারিতার কথা বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভাবে আতা ফলের চাষাবাদ হচ্ছে।এই
ফলটি যেমন প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর তেমনি খেতেও অত্যন্ত রসালো এবং
সুস্বাদু। তাই বলবো
আপনি নিজের সুস্থতার কথা ভেবে দিনে একটি হলেও আতা ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং
পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url