লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

 

লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে কি হয় জানেন কি? না জেনে থাকলে আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি তা জেনে নিতে পারবেন।

লজ্জাবতী-গাছের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
কারন, আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করব লজ্জাবতী গাছের উপকারী ও অপকারি দিক এবং এই গাছের শিকড় খেলে কি হয় সে সম্পর্কে। তাহলে চলুন লজ্জাবতী গাছ সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

পুরুষ লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা

লজ্জাবতী গাছের  নানাবিধ উপকারিতা রয়েছে। লজ্জাবতী গাছ আমরা কম বেশি সকলেই চিনি। এটি এক ধরনের কাটাযুক্ত উদ্ভিদ। কিন্তু আপনি কি জানেন লজ্জাবতী গাছ শুধুমাত্র লাজুকই নয়। এই গাছেরও রয়েছে অনেক উপকারিতা। এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে যারা জানেন না চলুন তারা জেনে নিন লজ্জাবতীর উপকারিতা সম্পর্কে--

আরো পড়ুনঃ  তুলসী পাতার ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ আপনার কি মাঝেমধ্যেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়? তাহলে লজ্জাবতী গাছের রস সেবন করতে পারেন। কারণ, লজ্জাবতী গাছের রস শ্বাসকষ্ট নিরাময় বেশ কার্যকরী। শ্বাসকষ্ট ছাড়াও এই গাছ আলসার, অর্শ বা পাইলস, পেট ফাঁপা বদহজম ইত্যাদি সারাতে পারে।
  • ক্ষত সারাতেঃ আপনার শরীরের যে কোন ক্ষতস্থান যেমন ধরুন- ঘা, কেটে যাওয়া, আগুনে পোড়া ইত্যাদি সারাতে ব্যবহার করতে পারেন লজ্জাবতী গাছের পাতার রস। এই পাতা ব্যবহার করলে আপনার ক্ষতস্থান অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেরে যাবে।
  • পেটের অস্বস্তি কমাতেঃ লজ্জাবতী গাছের পাতা আপনার পেটের অস্বস্তি যেমন- গ্যাসের সমস্যা, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া এর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ পেটের আলসারের চিকিৎসায় বেশ উপকারী।
  • ব্যথা উপশমেঃ বর্তমান সময়ে আমাদের শরীরে বা শরীরের হাড়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা নেই এমন মানুষ খুব কমই আছেন। যারা এই ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন তারা আজ থেকেই শুরু করে দিন লজ্জাবতীর ব্যবহার। কারণ, এই গাছের পাতা নিয়মিত সেবনে আপনার মাংসপেশির ব্যথা সহ শরীরের সকল ব্যথার উপসম হতে পারে।
  • ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধেঃ লজ্জাবতী গাছের পাতা ঠান্ডা ও কাশি প্রতিরোধে বেশ সহায়ক ভূমিকা রাখে। ফলে আপনাদের যাদের ঠান্ডা কাশি অনবরত লেগেই থাকে তারা এখন থেকেই লজ্জাবতীর পাতা সেবন করতে শুরু করুন।
  • মূত্রাশয়ের সমস্যা রোধ করেঃ লজ্জাবতী গাছের রস মুত্রাশয় এবং পিত্তথলির সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকরী। এটি মূত্রনালীর ইনফেকশন কমাতে এবং সেই সাথে পিত্তের সঞ্চালন উন্নত করতে খুব ভালো কাজ করে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন লজ্জাবতী পাতার রস সেবন আপনাকে মুত্র সংক্রমণ এবং অন্যান্য সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
  • পিরিয়ডের সমস্যা দূর করেঃ নিয়মিত লজ্জাবতী গাছের পাতা সেবনে এটি মা-বোনদের অনিয়মিত পিরিয়ড এবং পিরিয়ড জনিত সকল সমস্যা খুব সহজেই দূর করতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য রোধেঃ অনেকের মল গুলটে হয়ে যায় এবং প্রচন্ড রকমের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে আপনি লজ্জাবতী গাছের শিকড় সেবন করতে পারেন।
  • শরীরের দুর্গন্ধ দূর করেঃ আমাদের অনেকেরই শরীরে ঘামের কারণে মারাত্মক দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। শুধু তাই নয়, ঘাম গেঞ্জি কিংবা শার্টে লাগার ফলে হলদে দাগ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে লজ্জাবতী গাছের পাতার ক্কাথ তৈরি করে আপনার বগল এবং সারা শরীরে লাগান। তাহলে নিমেষের মধ্যেই আপনার শরীরের দুর্গন্ধ দূর হবে।
  • আমাশয় রোধেঃ আপনি কি দীর্ঘদিনের পুরনো আমশয় রোগে ভুগছেন? অনেক চিকিৎসা করেও আমাশয় সারাতে পারছেন না! তাহলে বলব আপনি আজ এখন থেকে লজ্জাবতীর ডাটা ও পাতার ব্যবহার শুরু করুন। কারণ, এর ডাটা ও পাতার ক্বাথ আমাশয় নিরাময়ে বিশেষভাবে কার্যকরী।
  • ত্বকের সমস্যায় উপকারি লজ্জাবতী গাছঃ পুরুষ লজ্জাবতী গাছের পাতার নির্যাস আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত লজ্জাবতীর ব্যবহারে আপনার ত্বকের ফুসকুড়ি, ব্রণ, ব্রনের কালো দাগ ইত্যাদি খুব সহজে দূর হতে পারে।
লজ্জাবতী-গাছের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • অন্ডকোষের সমস্যা দূর করেঃ অনেক সময় অন্ডকোষে পানি জমে। অন্ডকোষে পানি অপসারণ করতে আপনি লজ্জাবতী গাছের পাতা পেতে পেস্ট করে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ভালো ফল পাবেন।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেঃ সাদা লজ্জাবতীর কাছে পুষ্পদণ্ড এবং ফুল দেখতে অনেক সুন্দর হয়। এটি আপনি আপনার বাগানে কিংবা বাড়ির আঙিনায় সৌন্দর্য বর্ধক হিসেবেও লাগাতে পারেন।
  • প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ লজ্জাবতী গাছের নির্যাস আপনার প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শুধু তাই নয়, এটি মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধেও সক্ষম।
  • হরমোনের ব্যালেন্স ঠিক রাখেঃ পুরুষ লজ্জাবতী গাছে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরে হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখে। বিশেষ করে মহিলাদের মাসিক স্রাবের সময় এটি উপকারী হতে পারে।
  • দৃষ্টিশক্তি উন্নত করেঃ লজ্জাবতী চোখের স্বাস্থ্য ও দৃষ্টি শক্তি বাড়াতেও কাজ করে। কারণ, এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। আর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের কোষকে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে।
  • এলার্জি কমাতেঃ উপকারী এই ভেষজ কিছু উপাদান অ্যালার্জির বিভিন্ন উপসর্গ যেমন- চুলকানি, চোখে জল কিংবা শ্বাসকষ্ট কমাতে দারুন কাজ করে।
  • আলসার এবং ইনফেকশন নিরাময়েঃ লজ্জাবতী গাছে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য পেটের আলসার এবং ত্বকের যেকোনো ধরনের ইনফেকশন দূর করতে পারে। তাছাড়া এটি যে কোন ধরনের ক্ষত বা ফোস্কার চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়।
  • হৃদরোগে উপকারীঃ লজ্জাবতী গাছের পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তের সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং হৃদ যন্ত্রের কার্যকারিতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
  • অনিদ্রা দূর করেঃ অনেকে আছেন যারা অনেকটাই ঘুরতে থাকেন। সারাদিন কর্মব্যস্ততা শেষে রাতে ঘুম আসতে চাই না। তাহলে বলবো আপনি লজ্জাবতী পাতা সেবন করতে পারেন। কারণ, এটি মানসিক চাপ কমায়। ফলে ঘুমও ভালো হয়।
  • মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করেঃ পুরুষ লজ্জাবতী গাছের পাতা এবং এর রস মাথাব্যথা এবং মাইগ্রেনের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এই পাতায় রয়েছে স্নায়ু শান্ত করার মতো ক্ষমতা যা মস্তিষ্কের অতিরিক্ত চাপ খুব সহজেই কমাতে পারে। যার ফলস্বরূপ মাথাব্যথা দূর হয়।
  • এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যঃ পুরুষ লজ্জাবতী গাছের পাতা ও মূলের রস উভয়ই শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সক্ষম। বিশেষ করে আর্থাইটিস কিংবা বাতের ব্যথা কমানোর জন্য এটি খুবই উপকারী। শুধু তাই নয়, এই গাছের পাতার রস কিংবা চা শরীরের ব্যথা, মাথা ব্যথা, গাটের ব্যথা ইত্যাদি দূর করে।
সম্মানিত পাঠক, পুরুষ লজ্জাবতী গাছ অত্যন্ত কার্যকরী একটি ঔষধি গাছ। তাছাড়া বর্তমান সময়ে লজ্জাবতী গাছের চিকিৎসাগত ব্যবহার নিয়ে অনেক গবেষণা চলমান রয়েছে।

লজ্জাবতী গাছের অপকারিতা

লজ্জাবতী গাছের ভেষজ উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। এই  গাছের উপকারিতার পাশাপাশি আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যেমন ধরুন-

আরো পড়ুনঃ  আমলকির ২০টি অলৌকিক উপকারিতা ও অপকারিতা

  • অনেক সময় লজ্জাবতী গাছের পাতার রস ব্যবহারে ত্বকে এলার্জি প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে আপনার ত্বক লালচে হয়ে ফুলে যেতে পারে, ত্বকে লাল রেস হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বক অতিরিক্ত সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়।
  • অত্যধিক পরিমাণে লজ্জাবতী পাতা সেবনে আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টেইনাল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে পেটের অস্বস্তি, বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। 
  • যাদের ইমিউন সিস্টেম অতি দুর্বল তাদের জন্য লজ্জাবতী  পাতা সেবন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • লজ্জাবতী গাছে থাকা বিশেষ কিছু উপাদান যা হৃদপিণ্ডের গতি অতি দ্রুত করে দিতে পারে। এটি কার্ডিওভাসকুলার রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • সঠিক নিয়ম না জেনে লজ্জাবতীর পাতা ব্যবহার করলে তাতে আপনার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
  • আপনি যদি ঔষধ সেবনের মধ্যে থাকেন তাহলে লজ্জাবতী গাছের পাতা ব্যবহার না করাটাই ভালো। কেননা এই গাছের পাতার রস অনেক সময় অন্যান্য ঔষধের সাথে বিক্রিয়া করে আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • গর্ভকালীন সময়ে লজ্জাবতী গাছ ব্যবহার করার পূর্বে আপনার বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তা না হলে গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি গর্ভপাতও হতে পারে।
  • তাছাড়া কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, লজ্জাবতী গাছের পাতা অতিরিক্ত ব্যবহারে এর কিছু উপাদান মস্তিষ্কের কার্যক্রমে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে মানসিক বিভ্রান্তিও হতে পারে। 
প্রিয়  পাঠক, যদিও লজ্জাবতী কাজ একটি প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী নিয়ে পরিচিত কিন্তু এর স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম নয়। তাই ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা, শিশু অথবা দীর্ঘস্থায়ী রোগের রোগীদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে।

পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায়

আপনারা অনেকেই পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। পুরুষ লজ্জাবতী গাছ সাধারণত ৪০ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার বেশ কিছু সহজ উপায় রয়েছে। পুরুষ লজ্জাবতী গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর পাতার সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা। 

অর্থাৎ আপনি যখন এর পাতা বা গাছের অংশে স্পর্শ করবেন তখন এটি দ্রুত সংকুচিত হয়ে ভাঁজ হয়ে ঝুলে যায় এবং মুড়ে যায়। এমনকি আলোড়িত হলে এর গা কিছুটা নড়াচড়া করে। আরেকটি বিষয় খেয়াল করবেন, পুরুষ লজ্জাবতী গাছের পাতা সাধারণত অগভীর কুচি আকারের হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন স্তরে সাজানো থাকে। 

এই গাছের পাতা তুলনামূলকভাবে লম্বা, ছোট এবং পাতলা হয়। পাতার কিনারা গুলি আবার খানিকটা খাজ কাটা হয়ে থাকে। পুরুষ লজ্জাবতী গাছের ফুল ফোটে সাধারণত শীতকাল বা বসন্তকালে। পুরুষ লজ্জাবতীর ফুল গুলো দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়। এর ফুলগুলো গোলাপী, সাদা রঙের বা বেগুনি রংয়ের ছোট ছোট পুষ্প মঞ্জরিতে সজ্জিত থাকে এবং আকারে ছোট হয়।

এই গাছটির ডাল সাধারণত পাতলা, ঝুরঝুরে এবং সবুজ রঙের হয়। যার ওপর হালকা সাদা বর্ণের লোম থাকতে পারে। পুরুষ লজ্জাবতী গাছ চেনার আরেকটি বিশেষ উপায় হল এর ফলগুলো ছোট, ডিম্বাকৃতির এবং আঁশযুক্ত হবে। পুরুষ লজ্জাবতী গাছ সাধারণত সড়কপথে উন্মুক্ত জায়গায় কিংবা পাহাড়ি উঁচু এলাকাতে বেশি জন্মে থাকে।

লজ্জাবতী গাছ খাওয়ার নিয়ম

লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা পেতে আপনি এই গাছ খেতেও পারেন। কিন্তু এই গাছ কিভাবে খেতে হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। আপনি কি জানেন এ লজ্জাবতী গাছ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে! সম্মানিত পাঠক, এবার আপনাকে জানিয়ে দেব আপনি কোন রোগে লজ্জাবতী গাছ কিভাবে খাবেন--

আরো পড়ুনঃ অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

হাত পায়ের জ্বালাপোড়া দূর করতে
অনেকেই আছেন যাদের হাত-পা জ্বালাপোড়া করে। আবার অনেক সময় হাত-পা জ্বালাপোড়ার সাথে শরীরে জ্বরও থাকে। সমস্যা দূর করতে আপনি লজ্জাবতী গাছের পাতা ১০ গ্রাম পরিমাণ ৪ কাপ পানিতে পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে সেবন করুন। এতে আপনার হাত পায়ের জ্বালা দূর হবে।

নাড়ী সরে আসা
অনেক সময় বহু প্রসূতির সন্তান প্রসবের সময় অসাবধানতার কারণে নাড়ি সরে যায়। ফলে উঁচু হয়ে বসতে গেলে মারাত্মক রকমের অস্বস্তি বোধ হয়। এই সমস্যা দূর করতে আপনি ১০ গ্রাম পরিমাণ লজ্জাবতী পাতা ৪ কাপ পরিমাণ পানিতে সিদ্ধ করে একটা থাকতে নামিয়ে ছেকে নিন। এবার এই পানি প্রতিদিন সকাল বিকাল দুবেলা সেবন করুন। দেখবেন আপনার নাড়ী সরে আসা সমস্যা ঠিক হয়ে গেছে।

অনিদ্রা দূর করতে
যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন বা ঘুম হতে চায়না তাদের জন্য লজ্জাবতী গাছ ভীষণ উপকারী। এই অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে আপনি ১-২ চা চামচ লজ্জাবতীর শুকনো পাতার গুঁড়ো এক কাপ পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মত এবং প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে ১ কাপ করে নিয়মিত এই পানি পান করুন। কিছুদিন ব্যবহারে দেখবেন আপনার অনেকটা ভাব অনেকটাই কেটে গেছে।

পেটের সমস্যা দূর করতে
যাদের পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ধরুন পেট ফাঁপা, বদহজম, গ্যাসের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রয়েছে তারাও লজ্জাবতীর পাতা ব্যবহারের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এর জন্য আপনি লজ্জাবতী পাতার ১ চা চামচ শুকনো গুড়ো ১ কাপ গরম পানিতে ১৫ মিনিটের মত ভিজিয়ে রাখুন। এরপর দিনে এই পানি আপনি ১-২ বা পান করতে থাকুন। এ পানীয়টি আপনি হয় খাবারের পরে খাবেন, আর না হয় যখন আপনার পেটে সমস্যা দেখা দেবে ঠিক তখন খাবেন। এতে করে ভালো ফল পাবেন।

মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে
আপনার কি মাঝেমধ্যেই প্রচন্ড রকমের মাথা ব্যথা হয়। নানান ঔষধ খাওয়ার পরেও মাথাব্যথার কন্ট্রোল করতে পারছেন না। তাহলে বলব আপনি লজ্জাবতীর পাতা ব্যবহার করুন। এর জন্য আপনি লজ্জাবতী গাছের তাজা পাতা পাটায় বেটে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এবার এই পেস্ট আপনার কপালে লাগান এবং কপালে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

ব্যাস, দেখবেন আপনার মাথা ব্যথা কিছুক্ষণের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেছে। আবার আপনি এক চা চামচ লজ্জাবতী গাছের পাতার গুঁড়ো একটা গরম পানিতে ভিজিয়ে চা হিসেবে পান করতে পারেন। এতেও আপনার মাথাব্যথা দূর হবে। তবে এই গুড়া লজ্জাবতী চা আপনি দিনে ১ বার পান করবেন যখন আপনার মাথা ব্যথা হবে ঠিক তখন।

সর্দি কাশি নিরাময়ে
যাদের অনবরত সর্দি-কাশি বা ঠান্ডা জনিত ফ্লু লেগেই থাকে তাদের জন্য লজ্জাবতীর পাতা অত্যন্ত উপকারী। এই সর্দি কাশি দূর করতে আপনি লজ্জাবতী পাতার ১ চা চামচ গুড়ো নিয়ে গরম পানিতে দিন এবং ১০ মিনিট পর ছেঁকে এই পানি পান করুন। আপনার সর্দি কাশির লক্ষণ থাকলে সারাদিনে এই পানি ২-৩ বার পান করুন। কিছুদিন এইভাবে ব্যবহারে দেখবেন আপনার সর্দি কাশির প্রবণতা অনেকটাই কমে গেছে।

ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে
প্রচন্ড গরমে ঘামের কারণে শরীরে অনেক সময় দুর্গন্ধ হয়। শুধু দুর্গন্ধ নয়, এই ঘামের কারণে আপনার সালোয়ার কামিজ বলুন, শার্ট বলুন, আর গেঞ্জি বলুন তাতে হলদে দাগ পড়ে যায়। এই দাগ দূর করতে আপনাকে বেশ বেগ পড়াতে হয়। কিন্তু লজ্জাবতী গাছের ডাটা ও পাতা দিয়ে আপনি এই দাগ খুব সহজেই দূর করে ফেলতে পারবেন।

এর জন্য আপনি লজ্জাবতী গাছের ডাটা ও পাতার ক্বাথ তৈরি করে কাপড়ের দাগের স্থানে ঘষতে থাকুন। দেখবেন তাতে কাপড়ের হলদে দাগ নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে। আর শরীরের ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি এর ডাটা ও পাতার ক্বাথ আপনার বগল ও সারা শরীরে মেখে নিন। কিছুক্ষণ পর পানিতে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন আপনার শরীরের দুর্গন্ধ চলে গেছে।

আমাশয় দূর করতে
আপনার কি দীর্ঘদিনের পুরনো আমাশয় সমস্যা রয়েছে? বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করেও এই আমাশয়ের সমস্যা দূর করতে পারছেন না। তাহলে আপনার লজ্জাবতীর পাতা সেবন করা উচিত। কেননা এই পাতাই আপনাকে আপনার দীর্ঘদিনের আমশায়ের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি দিতে পারে।

এর জন্য আপনি ১০ গ্রাম পরিমাণ লজ্জাবতীর ডাটা ও পাতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে নিন। কিছুদিন নিয়ম করে এই ক্বাথ খেতে থাকুন। দেখবেন আপনার আমাশয় এর সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে।

প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে
অনেকের ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা থাকে। ফলে বার বার বাথরুম যেতে হয়। প্রস্রাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি এক চা চামচ লজ্জাবতী পাতার গুঁড়ো এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পরে এই পানি থেকে আপনি পান করুন। সারাদিনে আপনি এই পানি দুইবার পান করবেন বিশেষ করে আপনার যখন মূত্রপথে সমস্যা অনুভব করবেন ঠিক তখন। কিছুদিন এভাবে ব্যবহার করার পর দেখবেন আপনার প্রস্রাবের সমস্যা আর থাকবে না।

লজ্জাবতী গাছ ও পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা

  • লজ্জাবতী গাছের পাতা ও গাছ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম যে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে সেটি হল আপনি গাছটি একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ রাসায়নিক সার বা কীটনাশক মুক্ত স্থানে জন্মানো গাছের পাতা ব্যবহার করুন
  • লজ্জাবতী গাছের পাতা এবং গাছ ব্যবহারের পূর্বে আপনার অ্যালার্জি আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে নিন।
  • লজ্জাবতী গাছের পাতা কোন ঔষধি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার সময় অবশ্যই এর সঠিক ডোজ মেনে চলুন।নির্ধারিত মাত্রা থেকে বেশি পরিমাণে লজ্জাবতী পাতার গুঁড়ো বা পাতার পেস্ট ব্যবহার করবেন না। কারণ, অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
  • গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েরা লজ্জাবতী পাতা বা গাছ সেবনের আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন।
  • শিশুদের জন্য লজ্জাবতী গাছের পাতা বিপদজনক হতে পারে। তাই তাদের কাছ থেকে এই পাতা বা পাতার গুঁড়ো নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।

সাদা লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার

সাদা লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান? আমরা শুধুমাত্র লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার জানি। কিন্তু সাদা লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার কি আমরা আদৌ জানি!! না এটি আমরা অনেকেই জানিনা। এবার চলুন সাদা লজ্জাবতী গাছের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিই-

  • স্ত্রী যৌনাঙ্গের ক্ষত দূর করতে আপনি এই সাদা লজ্জাবতী গাছ ব্যবহার করতে পারেন। শুনে হয়তো আপনিও অবাক হচ্ছেন তাইতো!! অবাক হলেও সত্য। আপনি আপনার যৌনাঙ্গের ক্ষত দূর করতে দুধ পানির সাথে লজ্জাবতী গাছের ডাটা ও পাতা সেদ্ধ করে নিন। এবার এই পানীয়টি আপনি নিয়ম করে কয়েকদিন খেতে থাকুন। এতে করে আপনার যৌনাঙ্গের ক্ষত দূর হবে।
  • মাথা ব্যথার উপসমের জন্য আপনি সাদা লজ্জাবতী গাছের তাজা পাতা পেটে পেস্ট করুন এবং আপনার কপালে লাগান। এতে আপনার মাথা ব্যথা দূর হবে।
  • ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে আপনি লজ্জাবতীর পাতা বেটে আপনার ত্বকের আক্রান্ত স্থানে লাগান। এই টোটকা আপনার ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে।
  • সাদা লজ্জাবতী গাছের পাতা এন্টিসেপটিক ও এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হওয়ার কারণে এর পাতা মূল এবং গাছের অন্যান্য অংশ চর্ম রোগ বিশেষ করে ত্বকের ইনফেকশন, চুলকানি, একজিমা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • আপনার কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা থাকলেও আপনি সাদা লজ্জাবতী গাছের পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, এই পাতায় রয়েছে লেকটেসিভ গুণ যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, সাদা লজ্জাবতী গাছের ফলও হালকা হজমকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি থেকে রেহাই পেতেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন সাদা লজ্জাবতী গাছের পাতা বা মূল। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য শ্বাসতন্ত্রের জন্য ভীষণই উপকারী। 
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে সাদা লজ্জাবতী গাছের পাতায় প্রাকৃতিক ফলিক অ্যাসিড থাকে। যা কোষের বিভাজন এবং গর্ভকালীন সময়ে শিশুর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
  • আপনার শরীরের শারীরিক দুর্বলতা দূর করার জন্য এক দুই চামচ সাদা লজ্জাবতী গাছের শুকনো পাতার গুঁড়ো ১ কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে চা তৈরি করে খান। সারাদিনে এই চা একবার পান করুন। এতে করে আপনার শরীরে শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের উপকারিতা

লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা যেমন আছে তেমনি সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের উপকারিতাও অনেক। সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় প্রথাগত ঔষধি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি নানান ধরনের উপকারিতা পেতে পারেন। এবারে সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের কয়েকটি উপকারিতা আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি-
সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় আপনার শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে। সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় ব্যবহারে এটি আপনার শারীরিক দুর্বলতা, 

ক্লান্তি এবং শরীরের শক্তির অভাব কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

  • আপনার পেটের সমস্যায় যেমন ধরুন- কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস দূর করতে সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের ক্বাথ বা গুড়ো বেশ সহায়ক হতে পারে। এর জন্য আপনি শিকড়ের ছোট টুকরার ক্বাথ তৈরি করে পান করতে পারেন।
  • সাদা লজ্জাবতীর কাছে শিকড়ের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টি অক্সিডেন্ট গুণাবলী আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সাদা লজ্জাবতীর গাছের শিকড়ের এন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্টই যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, এটি বাতের ব্যথা আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যাও দূর করতে পারে।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে রাখে। ফলে মাটি হয়ে যাওয়া বা ভূমিধস ইত্যাদি রোধ হয়।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড় পশু খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
  • সাদা লজ্জাবতী গাছে শিকড় ব্যবহারের পদ্ধতি
  • শিকড়ের ক্বাথ আপনি সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় ছোট ছোট টুকরো করে পানিতে সিদ্ধ করে ক্বাথ তৈরি করে ফেলুন। এই ক্বাথ আপনি প্রতিদিন ১-২ কাপ পান করুন।
  • শিকড়ের পেস্ট সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় বেটে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট আপনার শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থানে, মাথা ব্যথা হলে, ত্বকের দাগ দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন।
  • সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় জ্বর কমাতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে এবং শরীরের ভেতরের প্রদাহ কমাতে কাজ করে।
  • আপনার যদি কিডনি সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কিডনির সুরক্ষা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আপনি সেবন করতে পারেন সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড়।
  • মহিলাদের জন্য সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় খুবই উপকারী। বিশেষ করে মাসিকের সমস্যা দূর করতে এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে এই শিকড় দারুন কাজ করে।
  • আপনি নিশ্চয়ই চোখের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে আর দেরি না করে আজ থেকেই সাদা লজ্জাবতী গাছের শিকড় ব্যবহার করুন। কারণ, এটি চোখের চুলকানি এবং জল বিভাজন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • আপনাদের যাদের দাঁত ও মাড়িতে ক্ষত রয়েছে তারা লজ্জাবতী গাছের শিকড় পরিষ্কার করে পানিতে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে কুলকুচি করতে পারেন। নিয়মিত এই পানি ব্যবহারে আপনার দাঁত ও মাড়ির ক্ষত নিমেষে ম্যাজিকের মতো দূর হয়ে যাবে।
সম্মানিত পাঠক, লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে কি হয় আশা করি বুঝতে পেরেছেন। লজ্জাবতীর কোন কিছুই ফেলনা নয়। এর পাতা, শিকড়, গাছ সবটাই ভেষজ গুনে ভরপুর।

লজ্জাবতী গাছের টোটকা

লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা হিসেবে এর কিছু ঘরোয়া টোটকাও রয়েছে। সেই প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এইসব টোটকা। এই লজ্জাবতী গাছের পাতা এবং শিকড় শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন- লজ্জাবতী গাছের পাতা পেটের গ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ব্যথার জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী। 

তাছাড়া লজ্জাবতী গাছের পাতার স্বাদ হিসেবে খেলে তাতে শরীরে দুর্বলতা কাটে এবং সেই সাথে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। কারণ, এর কিছু প্রাকৃতিক এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আবার আপনার ত্বকের যে কোন সমস্যা সর্দি, কাশি তাতেও লজ্জাবতীর গাছের পাতা বেশ কাজে দেয়। এছাড়াও লজ্জাবতী গাছের শিকড় এর ক্বাথ আপনার শরীরের শক্তি বৃদ্ধি

 এবং পেটের সমস্যা নিরাময় ব্যবহৃত হয়। শুধু তাই নয়, প্রসাব সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা যেমন- প্রসাবে জ্বালাপোড়া, পিচ্ছিলতা ইত্যাদি দূর করতে আপনি লজ্জাবতী পাতা সেদ্ধ করেও খেতে পারেন। তবে যে কোনো রোগের জন্য শুধুমাত্র লজ্জাবতী গাছের উপর নির্ভর হয়ে এই সমস্ত টোটকা ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয় বলে আমি মনে করি। 

কারণ, যে কোনো রোগের ক্ষেত্রে ঔষধি গাছের পাশাপাশি সঠিক চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়ে। আর এর জন্য আপনাকে একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।  যার মাধ্যমে আপনি  সুস্থ থাকার জন্য  সঠিক চিকিৎসা পাবেন। পাশাপাশি ঘরোয়া টোটকা হিসেবে ব্যাবহার করতে পারেন লজ্জাবতী। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

সাদা লজ্জাবতী গাছ কোথায় পাওয়া যায়

লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা তো জানলেন। এবার চলুন এই গাছ কোথায় পাওয়া যায় তা আপনাকে জানিয়ে দিব। সাদা লজ্জাবতী গাছ সাধারণত উষ্ণ এবং ট্রপিকাল অঞ্চলের দেশগুলোতে বেশি পাওয়া যায়। এটি মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং আফ্রিকার কিছু অংশে জন্মে থাকে। ভারতের বিভিন্ন জায়গাও এই গাছ খুব সহজেই পাওয়া যায়। 

বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়, আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু এলাকায়। তাছাড়া আপনি আপনার বাড়ির আঙিনার কোনায়, রাস্তার ধারে, উন্মুক্ত খোলা জায়গায়, পাহাড়ি এলাকায় এবং ঝোপঝাড় বা বনজ এলাকায় পেতে পারেন। সাদা লজ্জাবতী গাছ অতি বর্ধনশীল হওয়ার কারণে অল্প যত্নে এটি বেড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন ধরনের মাটিতে খুব সহজেই জন্মে থাকে।

লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে কি হয়

লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে কি হয় তা অনেকেরই অজানা। আবার অনেকেই জানেন না লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে কি হয়? লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়।তাছাড়া বিভিন্ন রোগে লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের বহুল ব্যবহার রয়েছে। সম্মানিত পাঠক,লজ্জাবতী গাছের শিকড় খাওয়ার ফলে কি হয় সে সম্পর্কে এবার জেনে নিন-

লজ্জাবতী-গাছের-শিকড়-খেলে-কি-হয়
  • লজ্জাবতীর গাছের শিকড়ে এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ব্যবহারে আপনার পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর হতে পারে। সাধারণত লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের গুড়ো বা ক্বাথ সেবন করে আপনি এই উপকার পেতে পারেন।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে এটি আপনার শরীরের শারীরিক ক্লান্তি দুর্বলতা ভাব দূর করে।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড়ে ইমিউন বুস্টিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে এর এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদান কমাতে কাজ করে। বিশেষ করে আর্থাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহ জনিত সমস্যায় এটি বেশ উপকারী।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড় কিছু প্রথাগত চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যবহার করলে এটি আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও কাজ করে।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড় খেলে এটি আপনার শরীরে রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। 
  • অনেকের স্নায়ুর কাঁপুনি সমস্যা থাকে। স্নায়ুর এই কাপুনি বা শিরশিরানি বন্ধ করতে আপনি লজ্জাবতী গাছের শিকড় সেবন করতে পারেন।
  • লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের রস ত্বকে ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের বলিরেখা, ব্রনের দাগ ইত্যাদি খুব সহজেই দূর হবে। 
  • শুধু তাই নয়, আপনার ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে আপনি লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের গুঁড়ো বা পেস্ট ব্যবহার করতে পারেন।
প্রিয় পাঠক, লজ্জাবতী গাছের শিকড়ের এইসব উপকারিতা প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে বহু বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এই উপকারিতাগলো পাওয়ার জন্য আপনাকে সঠিক নিয়মে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।

লজ্জাবতী গাছের রহস্য

লজ্জাবতী গাছের শিকড় ভক্ষন করলে কি হয় তা ইতিমধ্যেই জেনেছেন। লজ্জাবতী গাছ তার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের গুণে অনেকের কাছেই রহস্যময় উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত। এই গাছের প্রধান রহস্যময় যে বৈশিষ্ট্য, সেটি হল এর পাতা স্পর্শ করা মাত্রই অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংকুচিত হয়ে যায় এবং বন্ধ হয়ে যায়। 

এই অদ্ভুত আচরণের জন্য এই গাছের নাম "লজ্জাবতী" বা "শর্মিলী" নামকরণ করা হয়েছে। লজ্জাবতী গাছটির পাতার এই সংকোচন এবং প্রসারন মূলত স্নায়বিক সিগন্যালিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যাতে করে গাছটি পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রাকৃতিক উপাদান থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। এর পাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া মূলত সেলের মধ্যে পানির গতিবিধি পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে। 

অর্থাৎ যখন কোন বাহ্যিক শক্তি যেমন- কোন স্পর্শ বা অন্য কোন উদ্দীপক গাছটির সংস্পর্শে আসে ঠিক তখন গাছটির কোষগুলোতে পানির চাপের পরিবর্তন হয় এবং সেগুলোর আকার কিছুটা কমে যায়। ফলে পাতাগুলো নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং বন্ধ হয়ে যায়। আবার, লজ্জাবতী গাছের শিকড় এবং পাতা

বিভিন্ন প্রথাগত চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে বহুল ব্যবহৃত হয়ে  আসছে। যা এই গাছের আরো একটি রহস্যময় দিক বলতে পারেন।  লজ্জাবতী গাছের বিশেষ কিছু আচরণ এবং  বৈশিষ্ট্য বিজ্ঞানের জন্য এখনো এক ধরনের বিস্ময়। এর প্রকৃত কারণ ও কার্যকারিতা নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলমান রয়েছে।

লেখকের মন্তব্য

লজ্জাবতী গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি এতক্ষণে আজকের আর্টিকেল পড়ে নিশ্চয়ই বিস্তারিত ভাবে জানতে পেরেছেন। লজ্জাবতী গাছের বোটানিক্যাল নাম মিমোসা পুডিকা। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এই গাছের বহুবিধ উপকারিতা কথা উল্লেখ করা রয়েছে। এই লজ্জাবতী গাছের শিকড়ও ফেলনা নয়। বরং পাতা এবং শিকড় উভয়ই বিশেষ বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে উপকারী।

তবে, যে কোন চিকিৎসার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লজ্জাবতী গাছকে একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। কারণ, যেকোনো রোগ দ্রুত সারাতে ভেষজ চিকিৎসার পাশাপাশি একজন ভালো চিকিৎসকের কাছে শরণাপন্ন হওয়াটাও জরুরী। তাই বলবো আপনার যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে আপনি ভেষজ উদ্ভিদ সেবনের পাশাপাশি একজন ভালো ডাক্তারের চিকিৎসাও গ্রহণ করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের  ওয়েবসাইটে।ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url