লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। কিন্তু লেবু খাওয়ার নিয়ম কি? জানতে চান! যে নিয়ম মেনে লেবু খেলে আপনি লেবুর অপকারিতার থেকে উপকারিতাই বেশি পাবেন।
জানতে হলে আজকের পুরো আর্টিকেলটি চট করে একবার পড়ে নিন। কারণ, আজ আমরা আলোচনা করব, লেবু খাওয়ার উপকারী ও অপকারি দিক এবং লেবু খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম সম্পর্কে।যা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। তো চলুন লেবু সম্পর্কিত আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
- লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
- লেবুর উপকারিতা
- লেবুর অপকারিতা
- লেবু খাওয়ার নিয়ম
- প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা
- রাতে লেবু খেলে কি হয়
- লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
- কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু খাওয়ার উপকারিতা
- মুখে লেবু দিলে কি ক্ষতি হয়
- ত্বকের যত্নে লেবু ও চিনি
- লেবুতে কি ভিটামিন থাকে
- লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। নিয়মিত লেবু খেলে এটি আপনাকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা দিয়ে থাকে। যদিও লেবু টক হওয়ার কারণে খালি মুখে খাওয়া যায় না। কিন্তু অন্যান্য খাবারের সাথে লেবু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস কমবেশি আমাদের সকলেরই রয়েছে। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফ্লাভনয়েডস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ফাইবার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যা শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রম সম্পাদনে
বিশেষভাবে সাহায্য করে। সেইসাথে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও লেবুর রস খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, কিডনি সুরক্ষিত থাকে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো।
বিশেষ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ব্রণের দাগ কমাতে এবং ত্বকের কোষ গুলোকে নতুন করে উদ্দীপিত করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে লেবু। আবার লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি ঠান্ডা, কাশি, সর্দি এবং ইনফেকশনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত লেবু খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতেও সাহায্য করে।
ফলে আমাদের দেহে জলীয় ভারসাম্য ঠিকঠাক বজায় থাকে। সুতরাং ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরকে ডিটোক্সিফাইং করতে লেবুর ভূমিকা অনবদ্য। লেবুর উপকারিতা রয়েছে এ কথা ঠিক। কিন্তু তা বলে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাওয়া মোটেও উচিত নয়। কারণ, অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খেলে আবার আপনার দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং দাঁতের সংবিধানশীলতা বেড়ে যেতে পারে।
আবার আপনারা যারা আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য লেবু খাওয়া খুব একটা সুখকর নাও হতে পারে। কারণ, এটি পেটে অতিরিক্ত এসিড উৎপন্ন করে যা এসিডিক সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।তাই বলবো, অতিরিক্ত না খেয়ে আপনি প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে লেবু খান। যাতে করে লেবুর উপকারিতাই বেশি পান।
লেবুর উপকারিতা
লেবুর নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুটিকত অপকারিতা রয়েছে। লেবু অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি ফল যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। আপনি কি রোজ খাবার পাতে এক টুকরো লেবু খান। তাহলে চলুন আজকে আলোচনার শুরুতেই লেবু খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো কি কি হতে পারে তা এক নজরে দেখে নিন-- শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে নিয়মিত লেবু খেলে একটি শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী সিস্টেমকে আরো শক্তিশালী করে এবং ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- হজম শক্তি উন্নত করেঃ আপনার যদি পেটে হজমের সমস্যা থাকে, তাহলে আজ থেকেই নিয়ম করে খাবার পাতে এক টুকরো করে লেবু খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড পাচনতন্ত্রকে উত্তেজিত করে এবং গ্যাস্ট্রিক এনজাইম উৎপাদন বাড়ায়। এতে করে খাবার খুব সহজেই হজম হয়ে যায়।
- ওজন কমাতে লেবুঃ আপনি কি জানেন লেবুতে থাকা পেকটিন এবং ফাইবার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তাছাড়া লেবুর রস পান করলে এতে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। যা ক্যালরি দহনে সহায়তা করে। ফলে ওজন কমাতেও লেবু বেশ কার্যকরী একটি ফল।
- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ লেবুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি ত্বক ভালো রাখে। সেই সাথে ত্বকের বলিরেখা কমায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বক থেকে বয়সের ছাপ দূর করে। শুধু তাই নয়, লেবু ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণে খুব ভালো কাজ করে। যা আপনাকে ব্রনের সমস্যা থেকে পরিত্রান দিতে পারে।
- কিডনি সুরক্ষিত রাখেঃ নিয়মিত লেবু খেলে এর সাইট্রিক এসিড আপনাকে কিডনির পাথর থেকে দূরে রাখতে পারে। এটি কিডনিতে ক্যালসিয়াম সল্ট জমা হতে বাধা প্রদান করে। ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং কিডনি সুরক্ষিত থাকে।
- হার্ট ভালো রাখতে লেবুঃ লেবুতে থাকা পটাশিয়াম যা আপনার হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নিয়মিত লেবু খেলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে।
- রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে লেবুঃ আপনি কি জানেন লেবু আপনার শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতেও খুব ভালো কাজ করে। লেবু খেলে এটি আপনার রক্তে থাকা বিষাক্ত পদার্থ গুলি বের করে দেয়। ফলে আপনার শরীরের স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পায়।
- লেবুর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যঃ নিয়মিত লেবু খেলে লেবুর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধে কাজ করে। বিশেষ করে যে কোন ধরনের ক্ষত সারাতে, ইনফেকশন, গলা ব্যথা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি সারাতে ব্যবহার করুন এক টুকরো লেবু।
- শরীর ডিটক্সিফাইং করেঃ নিয়মিত নিয়ম করে লেবু খেলে এটি আপনার শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া উন্নত করে। এতে করে আমাদের কিডনি ও লিভার সুস্থ থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়ে যায়।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ অনেক সময় অনেকেরই ভালো টুথপেস্ট ব্যবহার করার পরেও নিঃশ্বাসের সাথে একটা দুর্গন্ধ থেকেই যায়। নিঃশ্বাসের এই দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি খেতে পারেন লেবু। লেবু খেলে এর অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। ফলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও লেবু দারুন কাজ করেন। লেবু রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ফলে আপনি লেবু খেয়ে খুব সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
- মানসিক স্ট্রেস কমায় লেবুঃ শুধু লেবু নয় বরং লেবুর খোসা ও এর রসের অ্যারোমা যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে এবং শরীর সতেজ রাখে।
- মূত্রথলির ইনফেকশন প্রতিরোধেঃ লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড মূত্রথলির ইনফেকশন প্রতিরোধে খুব ভালো কাজ করে। নিয়মিত লেবু খেলে এটি মূত্রের অম্লতা বাড়ায় এবং সেই সাথে ইউরিন ট্যাক্ট ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।
- চুল ভালো রাখেঃ লেবুর রস চুলের জন্যও উপকারী। লেবুর রস ব্যবহারের এটি আপনার চুলের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে চুল। সেই সাথে চুল উজ্জ্বল ও ঝলমলে করে তোলে। এছাড়াও লেবু চুলে প্রাকৃতিক পুষ্টি সরবরাহ করে এবং খুশকির প্রাদুর্ভাব কমাতে দারুন কাজ করে।
- এসিডিটি কমায় লেবুঃ যদিও লেবু এসিডিটিক তবু এটি শরীরের অম্লতা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। নিয়মিত লেবু খেলে এটি শরীরে এককালীন একটা প্রভাব ফেলে। যা এসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি দূর করে।
- লেবুর এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণঃ লেবুতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ফ্লাভনয়েডস আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের ইনফ্লেমেশন কমাতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুঃ মাত্র এক টুকরো লেবু আপনাকে ক্যান্সার নামক প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচাতে পারে। নিয়মিত লেবু খেলে শরীরে অস্বাস্থ্যকর ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ হয়। ফলে আপনি ক্যান্সার থেকে রেহাই পেতে পারেন।
- চোখ ভালো রাখেঃ লেবুতে থাকা ভিটামিন সি আপনার চোখের জন্যও ভীষণই উপকারী। লেবু চোখের লেন্সে ক্যান্সার এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় লেবুঃ লেবু যেহেতু ভিটামিন সি তে পরিপূর্ণ, সেহেতু নিয়মিত লেবু জল খেলে এটি আপনার দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত রাখে। ফলে আপনার স্কার্ভি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
- শরীরে খনিজের সমতা বজায় রাখেঃ অনেক সময় শারীরিক পরিশ্রমের ফলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। ঠিক এই সময় আপনি এক গ্লাস পানিতে যদি লেবু মিশিয়ে পান করেন তাহলে আপনার শরীরে খনিজ লবণের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হয়ে যায়।
- মুখের রুচি বৃদ্ধি করেঃ যারা খাবার খেতে রুচি পান না বা খাবারের প্রতি অরুচি ভাব রয়েছে, তারা খাবারের সাথে এক টুকরো লেবু খেতে পারেন। এতে আপনার মুখের রুচি বাড়বে এবং খাওয়ার প্রতিও আগ্রহ জন্মাবে।
- শরীরের ব্যথা কমায় লেবুঃ আপনার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে যে ব্যথা হয়, সে ব্যথা দূর করার একটি কার্যকরী উপাদান হল লেবু। অর্থাৎ লেবু খেলে এটি আমাদের শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং জয়েন্টের ব্যথাও কমে।
- অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করতে লেবুঃ লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার পাশাপাশি রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। যা রক্তে লোহিত রক্ত কণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে রক্তের অভাব দূর হয়। ঠিক এভাবেই লেবু অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করে।
- পানি ধারণ ক্ষমতা কমায়ঃ লেবু মূলত আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ লেবু আমাদের শরীরের অতিরিক্ত পানি অপসারণ করে শরীরে পিএইচ এর ভারসাম্য ঠিক রাখে। ফলে শরীরের ফোলা ভাব অনেকটাই কমে যায়।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি প্রতিদিন লেবু খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, লেবু খেলে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে। এমনকি দীর্ঘদিনের বদহজমের সমস্যাও দূর করতে পারে এক টুকরো লেবু।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ লেবু খেলে এটি আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। তাছাড়া জার্নাল অফ চিরোপ্র্যাকটিক মেডিসিন দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, নিয়মিত ভিটামিন সি অর্থাৎ লেবু খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে।
- ডায়রিয়া সারাতেঃ অনেক সময় বদহজমের কারণে ডায়রিয়া দেখা দেয়। ডায়রিয়া লেবুর রস দারুন কার্যকরী।তাছাড়া লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড হজম শক্তি বাড়াতে কাজ করে।
- গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভস্থ শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ, হাড়ের গঠন এবং দেহকোষ গঠনে লেবু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু গর্ভস্থ শিশু নয় বরং গর্ভবতী মায়ের জন্যও লেবু জল ভীষণই উপকারী। তাই গর্ভকালীন সময়ে প্রতিদিন লেবু খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- শরীরের আদ্রতা ধরে রাখেঃ দেখুন আপনার শরীরের অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করতে প্রয়োজন বেশি পানি খাওয়ার। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আপনি যদি সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে এক গ্লাস পানিতে এক টুকরো লেবু চিপে খেয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং শরীরের শুষ্কতাও দূর হবে।
লেবুর অপকারিতা
লেবুর শুধু উপকারিতাই নয় বরং অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত লেবু খেলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে। এবার চলুন লেবুর অপকারিতা জেনে নিন -- প্রথমেই বলি, আপনি সরাসরি লেবু চিবিয়ে কিংবা লেবুর রস খাবেন না। কারণ, লেবুর রস আপনার দাঁতের এনামেল নষ্ট করতে পারে। এতে করে আপনার দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করবে এবং আপনার দাঁতে সেন্সেশন এর সমস্যা দেখা দেবে। এর জন্য লেবুর রস খাওয়ার পর জল দিয়ে মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে ফেলুন।
- দীর্ঘদিন ধরে লেবু খেলে মুখের ভেতরের নরম কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ফলে মুখের মধ্যে ফুসকুড়ির সৃষ্টি হয়। শুধু লেবু নয় বরং সাইট্রিক এসিডযুক্ত যে কোন ফল অতিরিক্ত পরিমাণে খেলেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খাওয়ার ফলে সেখান থেকে আপনার এসিডিটির সমস্যা তো হবেই। সাথে বমি বমি ভাবও হতে পারে।
- অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ম না মেনে মাত্রাতিরিক্ত সাইট্রাস জাতীয় ফল খেলে তাতে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এর কারণ হলো সাইট্রাস জাতীয় ফলে টাইরামাইন নামক একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে।
- চুলে খুশকির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমরা অনেকেই লেবুর রস ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু গবেষকদের মতে দীর্ঘদিন মাথার ত্বকে লেবুর রস ব্যবহারে মাথার ত্বক আরো শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে চুল পেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- আপনি জেনে অবাক হবেন যে, অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরে আয়রনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আয়রন আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন একথা ঠিক। কিন্তু অতিরিক্ত আয়রন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, শরীরে আয়রনের মাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে তাতে উপকারের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি সাধিত হয়।
- আপনি যদি ক্যালসিয়ামের জন্য ঔষধ সেবন করে থাকেন সেক্ষেত্রে লেবু এড়িয়ে চলবেন। কারণ, এতে বিপরীত হতে পারে।
- গরমে ডিহাইট্রেশনের সমস্যা থেকে বাঁচতে অনেকেই লেবু খান। কিন্তু আপনি কি জানেন, শুধুমাত্র লেবুর রস খাওয়ার জন্যই আপনার ডিহাইড্রেশন হতে পারে। কারণ, অতিরিক্ত লেবু খেলে প্রস্রাবের স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে যায়। যা ডিহাইডেশনের অন্যতম প্রধান কারণ।
- অনেকেই সকালবেলা খালি পেটে লেবু খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু সকালে খালি পেটে লেবু খেলে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অপরদিকে লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড পেপসিন ভেঙে শরীরের জন্য ক্ষতিকর এনজাইম তৈরি করে। ফলে খাবারও ঠিক মত হজম হতে চায় না। এতে করে পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ে।
- লেবু খেলে এলার্জির সমস্যাও দেখা দেয়। অনেকেই হয়তো তা বুঝতে পারেন না। কিন্তু লেবু খেয়ে রোদে গেলে খেয়াল করবেন ত্বকে লাল র্যাশ দেখা যায়। লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিডের সাথে সূর্যালোকের যে বিক্রিয়া হয় তাতে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
- আপনার যদি এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে সীমিত পরিমাণে লেবু খান। কারণ, লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড আপনার পেটের এসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। যার ফলে আপনার বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খেলে এটি আপনার পেটের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের এসিডিটির সমস্যা রয়েছে তারা অতিরিক্ত লেবু খেলে পাচনতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- লেবুর রসে থাকা সাইট্রিক এসিড মূত্রথলির জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত লেবু খেলে এটি আপনার মূত্রথলির অতিরিক্ত অম্লতার কারণ হতে পারে। এতে করে আপনার মূত্রথলির ইনফেকশন বা প্রদাহ জনিত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। ফলে যারা মুত্রথলির সমস্যায় ভুগছেন তারা অতিরিক্ত লেবু একেবারেই খাবেন না।
- লেবুর রসে তীব্র এসিডিক উপাদান থাকার কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আপনার গলায় অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করতে পারে। আবার অতিরিক্ত লেবু খেলে অনেক সময় আপনার গলা ব্যথা বা ইনফেকশনও হতে পারে, বিশেষত যারা গলার সমস্যায় ভুগছেন।
- লেবু কিডনির জন্য উপকারী হলেও অতিরিক্ত লেবু খেলে এটি আপনার কিডনিজনিত জটিলতা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার যদি কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে আপনি নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে লেবু খান।
- দীর্ঘদিন ধরে একটানা লেবু জল পান করতেই থাকলে আপনার প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত প্রস্রাবের ফলে কিছু খনিজ লবনও আপনার শরীর থেকে বেরিয়ে যেতেই পারে। তাই বলবো লেবুর উপকারিতা পেতে আপনি সীমিত পরিমাণে লেবু জল পান করুন।
লেবু খাওয়ার নিয়ম
লেবু খাওয়ারও বেশকিছু নিয়ম রয়েছে। যা আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু নিয়ম মেনে লেবু খেলে আপনি এর থেকে সর্বাধিক উপকারিতাই পেতে পারেন এ কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি। এবার চলুন নিয়ম গুলো কি কি তা জেনে নিন-- সতেজ তরতাজা লেবু সংগ্রহ করুনঃ লেবু খাওয়ার আগে আপনি সতেজ টাটকা দেখে লেবু সংগ্রহ করুন। খুব বেশি পেকে যাওয়া কিংবা নরম হয়ে যাওয়া লেবু খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
- পানির সাথে মিশিয়ে খানঃ আপনি লেবুর রস সরাসরি খাওয়ার পরিবর্তে পানির সাথে মিশিয়ে খান। কেননা লেবুর রস অতিরিক্ত এসিডিটিক হওয়ার কারণে সরাসরি খেলে এটি আপনার দাঁতের এনামেল এর ক্ষতি করতে পারে। আর পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে এটি আপনার শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স ঠিক রাখে এবং পাঁচন তন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
- খালি পেটে লেবু না খাওয়াঃ অনেকেই মনে করেন খালি পেটে লেবু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু না, এই ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ, খালি পেটে লেবু খেলে তা পেটে গ্যাসের সৃষ্টি করে। তাই খালি পেটে লেবু না খেয়ে আপনি বিভিন্ন খাবারের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- খাবার খাওয়ার আগে লেবু খানঃ আপনি যে কোন খাবার খাবার ঠিক আগে এক গ্লাস লেবু জল খেয়ে নিতে পারেন। খাওয়ার আগে লেবু জল খেলে তাতে যে অম্লতা থাকে সেটি খাবার হজমের জন্য আপনার পেটকে প্রস্তুত করে। এছাড়াও খাওয়ার আগে লেবু খেলে ক্ষুধা কমে। সুতরাং আপনি খাওয়ার আগেও লেবু জল খেতে পারেন।
- অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু না খাওয়াঃ লেবুর উপকারিতা আছে ভেবে আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন তা কিন্তু হবে না। কারণ, অতিরিক্ত লেবু খেলে আপনার দাঁতের ক্ষতি, বুক জ্বালাপোড়া, পেটের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত না খেয়ে দিনে ১-২টি লেবু খাওয়াই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট।
- রাতে লেবু না খাওয়াঃ অনেকেই আছেন যারা রাতের বেলা লেবু খাওয়া উপকারী বলে মনে করেন। কিন্তু না, এই ভুল কনসেপ্ট থেকে আপনি বেরিয়ে আসুন। কারণ, রাতে লেবু খেলে আপনার ঘুম কম হতে পারে এবং সেই সাথে পেটের অস্বস্তিও দেখা দিতে পারে। তাই রাতে লেবু খাওয়ার থেকে সকালে লেবু খাওয়া অধিক উত্তম।
- গরম পানির সাথে লেবুঃ সকালবেলা গরম পানির সাথে লেবু খাওয়া শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী। কেননা গরম পানিতে লেবু খেলে এতে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়, হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং শরীরও তরতাজা থাকে।
- লেবু খাওয়ার পর জল পানঃ লেবু খাওয়ার পর আপনি সাথে সাথেই পানি পান করবেন না। লেবু খাওয়ার অন্তত ১০-১৫ মিনিট পরে পানি পান করবেন। এতে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
- মধুর সাথে লেবু মিশিয়ে খানঃ আপনি নিয়মিত নিয়ম করে ১ চা চামচ মধুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে এবং পেট ভালো থাকবে।
- চিনির ব্যবহার এড়িয়ে চলুনঃ অনেকেই লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ, লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে তাতে শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে আপনার ওজন বাড়ার সম্ভবনা সম্ভাবনা থাকে।
- অন্যান্য খাবারের সাথেঃ আপনি অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের খাবার যেমন- সালাদ, স্যুপ, গ্রিলড চিকেন, ভাত, চাওমিন ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও লেবু খেতে পারেন। তাতে কোন অসুবিধা নেই।
প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন লেবু খাওয়ার উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন লেবু খেলে এটি শরীরের নানা ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এবার চলুন প্রতিদিন লেবু খেলে আপনি এর থেকে কি কি উপকারিতা পাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-- প্রতিদিন লেবু খেলে এটি আপনার শরীরে প্রাকৃতিক ডিটোক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। আপনার শরীর থেকে সব ধরনের দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে শরীর সতেজ থাকে।
- প্রতিদিন ভাতের সাথে কিংবা অন্যান্য খাবারের সাথে এক টুকরো লেবু খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই উপকারী। এতে আপনার হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
- লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে প্রতিদিন খেলে এটি আপনার শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে।
- আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে, শুষ্কতা কমাতে এবং ত্বকের আদ্রতা জোগাতে প্রতিদিন এক টুকরো লেবু খান। কারণ, প্রতিদিন লেবু খেলে ত্বকের ভিতর থেকে পুষ্টি পাওয়া যায় এবং ত্বকের মলিনতা হ্রাস পায়।
- নিয়মিত লেবু খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার বাড়তি ওজনও ঝরিয়ে ফেলতে পারেন। কারণ, লেবুতে থাকা সাইট্রাস, পেকটিন, ফাইবার ক্ষুধার অনুভূতি কমায়। যা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
- আপনি কি জানেন প্রতিদিন লেবু খেলে লেবুতে থাকা পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ফলে আপনি হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারেন।
- প্রতিদিন নিয়ম করে লেবু খেলে লেবুতে থাকা এন্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার দাঁত ভালো রাখে এবং সেই সাথে দাঁতের মাড়ি শক্ত করে।
- প্রতিদিন লেবু খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের এনার্জি স্তর অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ, লেবুর রস শরীরে পিএইচ এর স্তর ভারসাম্যপূর্ণ রাখে এবং শরীর সতেজ রাখে।
- প্রতিদিন নিয়ম মেনে লেবু খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয়।
- নিয়মিত লেবু খাওয়ার ফলে আপনার কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। কারণ, লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড কিডনিতে পাথর উৎপাদন প্রতিরোধ করে।
- ঠান্ডা লাগা, সর্দি কাশি এবং যেকোনো ধরনের ফ্লু প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে লেবু। ফলে প্রতিদিন লেবু খেলে আপনার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হবে।
- প্রতিদিন লেবু খেলে লেবুর এন্টি এজিং এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। সেই সাথে শরীরের যেকোনো ধরনের ফ্রি রেডিকেল কমাতেও সাহায্য করে।
- নিয়মিত লেবু খেলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ, লেবুতে রয়েছে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম রক্তনালীর সংকোচন কমাতে এবং সুষম রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- আপনি যদি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে নিয়মিত লেবু খান। কারণ, লেবুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
- লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি থাকার কারণে এটি হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। এতে করে হাড় ক্ষয় রোধ হয়।
- অনেক সময় লেবু খেলে এটি মাইগ্রেনের তীব্রতাও কমাতে পারে।
- বিশেষ করে গরমের সময় আপনি প্রতিদিন লেবু খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারন, গরমে লেবু খেলে কিছু শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর ঠান্ডা থাকে।
- শুধু তাই নয়, প্রতিদিন লেবু খাওয়ার ফলে আপনি আপনার শরীরের পানিশূন্যতাও দূর করতে পারেন। এতে করে শারীরিক ক্লান্তি কমে এবং কাজের প্রতিও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
রাতে লেবু খেলে কি হয়
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। কিন্তু রাতে লেবু খেলে কি হয় জানেন কি? হয়তো জানেন না। তাহলে চলুন এবারে রাতে লেবু খেলে কি হয় তা জেনে নিন -- রাতে খাওয়ার পর লেবু খেলে এটি আপনার হজম প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ করে।
- লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে আপনার শরীরের এমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তুলতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে রাতে লেবু খেতে পারেন।
- রাতে লেবু খেলে এটি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করে দিতেও সাহায্য করে। ফলে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
- লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকার কারণে রাতে খাওয়ার পর খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- আপনি রাতে খাওয়ার পর যদি মধু, জল এবং লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে পান করেন তাহলে আপনার শরীরের আর্দ্রতা ঠিকঠাক থাকবে। তাতে আপনার রাতে ভালো ঘুম হবে।
- লেবুতে অ্যান্টিসেপটিক এবং এন্টিব্যাকটেরিয়া বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে রাতে লেবু খেলে যে কোন ধরনের সংক্রমণ থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন।
- আপনার যদি সাইনাসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি লেবু ব্যবহার করতে পারেন।
- অনেকেই আছেন যাদের রাতের বেলা গলা ব্যথা করে। এই গলা ব্যাথার দুর্দান্ত এক প্রতিকার হল লেবু। গলা ব্যথা দূর করতে আপনি উষ্ণ গরম পানিতে লেবুর রস, সাথে সামান্য আদা এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে গলা ব্যথার উপশম হবে।
- শরীরের বাড়তি ওজন তরতড়িয়ে কমাতে চাইলে আপনি রাতে লেবু খাওয়ার অভ্যাস করুন। আপনি নিয়ম করে প্রতিদিন রাতের বেলা কুসুম কুসুম গরম জলে ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার ওজন অনেকাংশেই কমে গেছে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধেও লেবু দারুন কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসে ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট এবং অগ্নাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনি রাতের বেলা এক গ্লাস উষ্ণ জলে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। এতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমবে।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের কমবেশি সকলেরই দৃষ্টিশক্তিও কমে যায়। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে আপনি রাতের বেলা কুসুম গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে খান।
- রাতে লেবু জল খেয়ে ঘুমালে পরদিন সকালে শরীরে একটা তরতাজা অনুভূতি হয়। যা সারাদিনে কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
রাতে লেবু খাওয়া উপকারী কিন্তু রাতে লেবু খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্ক থাকা উচিত। যেমন ধরুন-
- আপনার যদি অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই রাতে লেবু খাবেন না। এতে গ্যাসের সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- রাতে লেবু খাওয়ার পর আপনি অবশ্যই মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন। কেননা লেবুর সাইট্রিক এসিড আপনার দাঁতের এনামেল নষ্ট করে দিতে পারে।
- রাতে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু খাবেন না। তাতে আপনার পেটের অস্বস্তি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
লেবু পানি কখন খাওয়া উচিত
লেবুর নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও গুটিকতক অপকারিতা আজকের আলোচনায় জেনেছেন। কিন্তু লেবু পানি খাওয়ারও একটি সময় রয়েছে তা কি জানেন? এবার চলুন লেবু পানি কোন সময় খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী সে সময় সম্পর্কে জেনে রাখুন-- সকালে খালি পেটেঃ সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে আপনি কিছু না খেয়ে এক গ্লাস লেবু পানি খেয়ে ফেলুন। এতে আপনার শরীরের এমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হবে।
- খাবারের আগে লেবু পানিঃ দুপুর বা রাতে যে কোন খাবারের কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিট আগে আপনি লেবু পানি খেতে পারেন। কারণ, খাবার আগে লেবু পানি খেলে এটি আপনার শরীরকে খাবার হজমে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, খাওয়ার আগে লেবু পানি খেলে এতে এসিডিটির সমস্যাও কমে।
- খাওয়ার পরঃ অনেক সময় ভারী খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের পেট ভারী হয়ে থাকে এবং অস্বস্তি বোধ হয়। পেটের এই অস্বস্তি কমাতে আপনি খেতে পারেন লেবু জল। কারণ, লেবু জল খেলে তাৎক্ষণিকভাবে পেটের অস্বস্তি অনেকাংশেই কমে যায়। শুধু তাই নয়, বদহজম কিংবা এসিডিটির সমস্যা দূর করতে লেবু জল ভীষণই উপকারী।
- বিকেল বেলাঃ সারাদিনের কর্মব্যস্ততার শেষে আমাদের শরীর অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঠিক এই সময় আপনি খেতে পারেন এক গ্লাস লেবু পানি। এতে শরীরের ক্লান্তি যেমন দূর হয় তেমনি শরীর সতেজ হয়ে ওঠে।
- ব্যায়ামের পরেঃ লেবু পানি খেলে এটি আপনার শরীরে অতিরিক্ত পানি সরবরাহ করতে থাকে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে। তাছাড়া ব্যায়ামের পর লেবু পানি খেলে এটি শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারেও কাজ করে।
কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু খাওয়ার উপকারিতা
লেবুর উপকারিতা পেতে ও অপকারিতা এড়াতে আপনি হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস এবং মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। কারণ, কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু খাওয়ারও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তো চলুন উপকারিতা গুলো কি কি তা জেনে নিই -- প্রথমেই বলি, সকালে ঘুম থেকে উঠে চা বা কফি পানে অভ্যস্ত আমরা অনেকেই। কিন্তু চা বা কফির পরিবর্তে আপনি যদি লেবু, মধু এবং পানির মিশ্রণ পান করেন তাতে বেশি শক্তি পাবেন।
- সকালে খালি পেটে কুসুম গরম পানিতে লেবু, মধু পানি পানের ফলে পেট ফোলা, বুকে ব্যথা এবং সেই সাথে পাকস্থলীতে জমে থাকা অতিরিক্ত টক্সিন অপসারিত হয়।
- পটাশিয়ামের একটি দুর্দান্ত উৎস হওয়ায় কুসুম গরম পানিতে লেবু, মধু একসাথে খেলে তাতে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।
- কুসুম গরম পানিতে লেবু এবং মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব। ফলে যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন তারা ডায়েটের তালিকায় লেবু, মধু, পানি অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন।
- লেবু ও মধু একসাথে কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে তাতে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরতে থাকে। এতে আপনার ওজন ও কমতে থাকে।
- নিয়মিত কুসুম গরম জলে লেবু ও মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে তাতে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হয়।
- লেবুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি এবং মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দুটি উপাদানই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং শরীরের কোষ গুলোকে সুরক্ষিত রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- নিয়মিত নিয়ম করে কুসুম গরম জলে লেবু ও মধু খেলে তাতে শরীরের ভেতর থেকে অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থ অপসারিত হয়। ফলে ত্বক সতেজ থাকে এবং ত্বকের আদ্রতা বজায় থাকে। সুতরাং শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা নয় বরং ত্বকের যত্নেও লেবু মধু অত্যন্ত প্রকারী।
- সর্দি,কাশি কিংবা গলার ইনফেকশন এর সবকিছুই সারাতে পারে একমাত্র লেবু জল ও মধুর মিশ্রণ। যেহেতু লেবু এবং মধু এই দুটি উপাদানই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে, সে হিসেবে ইনফেকশন দূর করতে এটি অনেকটা ম্যাজিকের মত কাজ করে।
- শুধু তাই নয়, গরম জলে লেবু ও মধুর মিশ্রণ নিয়মিত পান করলে এটি ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ ও সংক্রমণ কমাতে কাজ করে।
- কুসুম গরম জলে লেবু ও মধু মিশিয়ে খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়। ফলে শরীরের দূষণ দূর হয়।
- প্রতিদিন সকালে দিনের শুরুতে গরম জলে লেবু মধুর মিশ্রণ পান করলে এটি আপনার শরীরকে সতেজ ও চনমনে রাখে।
মুখে লেবু দিলে কি ক্ষতি হয়
মুখে লেবু দিলে কি ক্ষতি হয় তা হয়তো অনেকেরই অজানা। অনেকেই আবার মনে করেন মুখে লেবু দেওয়ার উপকারিতাই বেশি। তাছাড়া মুখের যত্নে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে আমরা অনেকেই লেবু ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু দিনের পর দিন মুখে লেবু ব্যবহার ত্বকের জন্য মোটেও ভালো নয়। দেখুন মুখে লেবু দেওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে এ কথা ঠিক।কিন্তু এর বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। বিশেষ করে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু মুখে ব্যবহার করে থাকেন। কারণ, মুখে সরাসরি লেবু ব্যবহার করলে এতে থাকা সাইট্রিক এসিড আপনার মুখের ত্বকের পিএইচ পরিবর্তন করে ফেলতে পারে। এতে করে ত্বকের শুষ্কতা, জ্বালাপোড়া বেড়ে যেতে পারে।
তাছাড়া মুখের ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে লেবু ব্যবহারে আপনার মুখের ত্বক আরও সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া লেবুর রসে রয়েছে আরেকটি উপাদান যার নাম হল নিয়াসিন। এই নিয়াসিন কেবলমাত্র ফেয়ারনস ক্রিমে বেশি ব্যবহার করা হয়। যেগুলি আপনার ত্বকের কালো দাগ দূর করে। নিয়াসিন ছাড়াও লেবুতে আরো বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে,
যেগুলি হয়তোবা ল্যাবে বাদপি রাখা হয়। কিন্তু সরাসরি লেবুর রস মুখে লাগালে এই উপাদান গুলোই আপনার ত্বকের ক্ষতি করে বসে। আবার লেবুর রসের পিএইচ এর মাত্রা সাধারণত ৩.৩ হয়। কিন্তু ত্বকের জন্য ph এর মাত্রা প্রয়োজন ৫.৫ পর্যন্ত। সুতরাং বুঝতেই পারছেন লেবুর এসিডিটিক উপাদান গুলো আপনার ত্বকের জন্য সব সময় ভালো নাও হতে পারে।
কারণ, ত্বক এতটাই কমল ও মসৃণ হয় যে তা অতিরিক্ত এসিডিটি সহ্য করতে পারে না। যার ফলস্বরূপ আপনার মুখ জ্বালাপোড়া করতে পারে, ত্বকে রেশ পড়তে পারে, এমনকি ত্বকের কিছু কিছু জায়গা লাল হয়ে উঠতে পারে। শুধু কি তাই, ত্বকের কালো দাগ দূর করতে আপনি হয়তো লেবুর রস ব্যবহার করছেন। ভাবছেন এটি বেশ উপকারী।
মুখে লেবু দিলে কি ক্ষতি হয়
কিন্তু মুখে লেবুর রস লাগিয়ে মনের অজান্তেই রোদে বেরিয়ে গেলেন। এতে ত্বকের ক্ষতি আরো বেশি হয় কারণ, লেবুর রসে লিমিনিনের এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা রোদের সংস্পর্শে আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে। ত্বকের কালো দাগ কমার পরিবর্তে আরো বেড়ে যায়। অনেকে আবার লেবুর রসের সাথে চিনি মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করেন।
চিনি ও লেবুর এই ঘরোয়া স্ক্রাব ত্বকের জন্য মোটেও সুখকর নয়। কারণ, চিনির দানা বেশ শক্তপোক্ত এবং খানিকটা ধারালো হয়ে থাকে । ফলে চিনির দানা সহ লেবুর রস আপনি যখন আপনার মুখের ত্বকে ঘষতে থাকেন, ঠিক তখন মুখের ত্বকে ঘষা লাগে এবং স্কিনর ক্ষতি হয়। কখনো কখনো স্ক্রিনে লাল দাগও পড়ে যেতে পারে।
শুধু তাই নয়, আপনার মুখে যদি কোন ক্ষতস্থান বা কাটা থাকে তবে উক্ত ক্ষতস্থানে লেবুর রস ব্যবহার করলে তাতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই বলবো মুখে সরাসরি লেবু ব্যবহার না করে আপনি লেবুর সাথে আর অন্যান্য উপাদান যেমন- মধু, চিনি, মুলতানি মাটি ইত্যাদি মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
ত্বকের যত্নে লেবু ও চিনি
লেবুর শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও অপকারিতাই নয় বরং ত্বকের যত্নেও লেবুর ভূমিকা অনবদ্য। ত্বকের যত্নে লেবু ও চিনি একত্রে ব্যবহার করলে এটি ত্বক উজ্জ্বল,মসৃণ করে এবং সেইসাথে ত্বকের ময়লা ভেতর থেকে অপসারণ করে ত্বক পরিষ্কার রাখে। তো চলুন ত্বকের যত্নে লেবু ও চিনি কিভাবে ব্যবহার করবেন সে উপায় সম্পর্কে জেনে নিন-লেবু ও চিনি দিয়ে স্ক্রাব তৈরির পদ্ধতি
প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
- লেবুর রস- ১ টেবিল চামচ এবং
- চিনি- ১ চা চামচ।
লেবু ও চিনির স্ক্রাব তৈরি করতে আপনি লেবুর রস ও চিনি একসাথে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ধীরে ধীরে আপনার মুখের ত্বকে কয়েক মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ শেষে কুসুম গরম পানিতে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। লেবু ও চিনির এই মিশ্রণ ব্যবহারে এটি আপনার ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমায়।
উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য লেবু ও চিনির স্ক্রাব
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- লেবুর রস - ১ টেবিল চামচ
- চিনি- ১ চা চামচ এবং
- মধু- ১ চা চামচ।
আপনি লেবুর রস চিনি এবং মধু এই তিনটি উপাদান একসাথে খুব ভালো করে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এবার এই পেস্ট আপনার মুখে লাগিয়ে প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মিনিট পনেরো ওপর হালকা কুসুম গরম পানিতে আপনার ত্বক ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত লেবু মধু ও চিনির এই ফেসপ্যাক ব্যবহারে এটি আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করবে। সেই সাথে ত্বক মসৃণ, টানটান এবং স্নিগ্ধ রাখে।
সতর্কতা
ত্বকে লেবুর রস ব্যবহারের সময় আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন ধরুন-
- আপনি ত্বকে লেবুর রস ব্যবহারের পর অবশ্যই রোদে যাবেন না। কারণ, লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড আপনার ত্বককে সূর্যের আলোতে আরো সেনসিটিভ করে তুলতে পারে।
- লেবু ও চিনির স্ক্রাব ব্যবহারের পর আপনি সর্বদা রোদ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। যদি রোদে একান্তই যাওয়ার প্রয়োজন পরে তাহলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- আপনাদের যাদের ত্বক অতিরিক্ত সেনসিটিভ তারা অবশ্যই অতি সতর্কতার সাথে লেবুর রস ব্যবহার করবেন। কারণ, এতে কিছু সময় আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
লেবুতে কি ভিটামিন থাকে
সম্মানিত পাঠক, এতক্ষণে লেবুর নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা জেনেছেন। এবার আপনাকে জানাবো লেবুতে কি ভিটামিন থাকে। লেবুতে সাধারণত ভিটামিন সি থাকে। যা আপনার ত্বক এবং ইমিউন সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও লেবুতে কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যেমন- ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫ এবং পটাশিয়াম রয়েছে। এবার চলুন এই প্রত্যেকটি উপাদান লেবুতে কি পরিমাণে রয়েছে তা একটি ছকের মাধ্যমে নিচে দেখে নিন-পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
ক্যালরি | ৩০ কিলো ক্যালরি |
আয়রন | ০.৬ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১৩৭ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৬ মিলিগ্রাম |
ফলিক এসিড | ৭ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৫৩ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-১ | ০.০৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-২ | ০.০২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৩ | ০.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৫ | ০.২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৬ | ০.০৮ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ২.৮ গ্রাম |
শর্করা | ৯.৩ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৩ গ্রাম |
প্রোটিন | ১.১ গ্রাম |
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছেন। এর শক্তিশালী প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে। এর পুষ্টিগুণ, স্বাদ এবং লেবুর স্বাস্থ্য উপকারিতার কথা বিবেচনা করে লেবুকে সুপারফুড হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।তাই বলবো আপনি যদি লেবু খাওয়ায় অভ্যস্ত না হন তাহলে নিজের সুস্থতার কথা ভেবে আজ থেকেই প্রতিদিন খাবার পাতে এক টুকরো লেবু যোগ করে নিন। আর পেতে থাকুন লেবুর সব উপকারিতা। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url