মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? মুগ ডাল খেলে কি গ্যাস হয়? জানতে হলে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এক্ষুনি একবার পড়ে নিন। আজকে আমরা আলোচনা করবো মুগ ডালের নানাবিধ উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এই ডাল খেলে গ্যাস হয় কিনা সে সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা
- মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা
- সবুজ মুগ ডালের উপকারিতা
- মুগ ডালের ক্ষতিকর দিক
- মুগ ডাল খাওয়ার নিয়ম
- মুগ ডাল খেলে কি গ্যাস হয়
- অঙ্কুরিত মুগ ডালের উপকারিতা
- মুগ ডাল রেসিপি
- মুগ ডাল ভিজিয়ে খেলে কি হয়
- কোন ডাল ভালো
- মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা
বাঙালির খাদ্য তালিকায় অন্যতম পরিচিত একটি খাবার হল ডাল। ভাতের সাথে ডাল না হলে যেন বাঙালির খাবারই জমে না। ডাল খেতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বাঙালির খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন মুগ ডাল, অড়হর ডাল, মাসকালাই ডাল, ছোলার ডাল, মসুর ডাল বিভিন্ন ধরনের ডাল স্থান পায়। আর এর মধ্যে অন্যতম হলো মুগ ডাল।
আরো পড়ুনঃ চিড়া খাওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা
এই ডালের স্বাদ ও গন্ধ বেশ আকর্ষণীয় হয়। তাছাড়া এই গরমে মুগ ডাল খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাও কিন্তু কম নয়। প্রচন্ড তীব্র গরমে চিকিৎসকরাও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মুগ ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এই ডালে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফলেট এবং ফাইবার।
শুধু
তাই নয়, সুস্বাদু মুগ ডালে পুষ্টিগুণের পাশাপাশি রয়েছে খুব তাড়াতাড়ি
হজম হওয়ার ক্ষমতা। সম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করতে
চলেছি মুগ ডালের বিভিন্ন ধরনের উপকারী ও অপকারি দিক সম্পর্কে। তাহলে চলুন
আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন।
সবুজ মুগ ডালের উপকারিতা
সবুজ মুগ ডালের উপকারিতা অনেক। সবুজ মুগ ডাল যা শুধু মুগ ডাল নামেই পরিচিত। আজকে আলোচনার শুরুতেই আপনাকে জানিয়ে দিব সবুজ মুগ ডালের উপকারিতা সম্পর্কে--
আরো পড়ুনঃ মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন
- পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎসঃ মুগ ডালকে পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎস বলা যেতে পারে। কারণ, এই ডালে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ২, ভিটামিন বি ৩, ভিটামিন বি ৫, ভিটামিন বি ৬, সেলেনিয়াম, ফসফরাস ম্যাঙ্গানিজ, কপার আয়রন সহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। বিশেষ করে ভেজিটেরিয়ান যারা তাদের জন্য মুগ ডাল প্রোটিনের একটি দুর্দান্ত উৎস।
- হৃদযন্ত্র ভালো রাখতেঃ মুগ ডাল এই ডালে বিদ্যমান ফাইবার পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম আমাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাছাড়া সবুজ মুগ ডালে ফ্যাট নেই বললেই চলে। ফলে নিয়মিত মুগ ডাল খেলে এটি রক্তচাপ কমাতে যেমন সাহায্য করে তেমনি হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায়।
- হজম ক্ষমতা বাড়ায়ঃ সবুজ মুগ ডাল উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে এটি আমাদের পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে কাজ করে। তাছাড়া এই ডালে রয়েছে পেকটিন যা খাবার খুব সহজেই হজম করে। সুতরাং আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন তাহলে আজ থেকেই খাবার পাতে মুগের ডাল খাওয়া শুরু করুন।
- রক্তচাপ কমায়ঃ ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার এবং পটাশিয়ামের দুর্দান্ত উৎস হলো মুগ ডাল। মুগ ডালে থাকা এই উপাদান গুলো রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। ফলে আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে রক্তচাপ কমাতে আপনি নিশ্চিন্তে মুগ ডাল খেতে পারেন। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতিদিন একবার মুগের ডাল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ মুগ ডালে উচ্চমাত্রার ফাইবার ও প্রোটিন রয়েছে। ওজন কমাতে আপনি মুগ ডালের স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন। মুগ ডালের এই স্যুপ আপনার পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা রাখতে পারে এবং অন্যান্য খাবার খাওয়ার প্রতি চাহিদা কমায়। এতে আপনার ওজনও প্রাকৃতিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে থাকে। সুতরাং যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য মুখ ডাল একটি উপাদেয় খাদ্য।
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেঃ আপনি কি জানেন আমাদের শরীরে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে মুগ ডাল। নিয়মিত মুগ ডাল খেলে এটি রক্তে শর্করার স্তর স্থিতিশীল রাখে। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এই ডাল একটি ভালো খাদ্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
- শক্তি বৃদ্ধিতেঃ মুগ ডাল খাওয়ার ফলে এটি শরীরের শারীরিক শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরে সরবরাহ করতে থাকে। এতে করে শরীরের শক্তি আরও দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে যায়। ফলে আপনি শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করলে আজ থেকেই নিয়ম করে মুগ ডাল খাওয়া শুরু করুন।
- ত্বকের জেল্লা বাড়ায়ঃ মুগ ডাল রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বক ভালো রাখতে ম্যাজিক এর মত কাজ করে। এর জন্য আপনি মুগ ডাল গুড়ো করে ফেসপ্যাক হিসেবে আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল, সজীব ও প্রাণবন্ত। সাথে ত্বকের ব্রণ, একজিমার সমস্যাও দূর হবে।
- আন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যঃ মুগ ডালের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং সেইসাথে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ জনিত রোগের ঝুঁকিও কমায়।
- হাড় ভালো রাখেঃ মুগ ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। ফলে মুগ ডাল খাওয়ার ফলে হাড় মজবুত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং হাড়ের ঘনত্বও বৃদ্ধি পায়।
- প্রাকৃতিক ডিটোক্সিফায়ারঃ মুগ ডাল খাওয়ার ফলে এটি শরীরে প্রাকৃতিক ডিটোক্সিফয়ার হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে কাজ করে মুগের ডাল। এতে করে ভেতর থেকে আপনার শরীর আরো সতেজ হয়ে ওঠে।
- গরমে উপকারীঃ গরমের সময় নিয়মিত মুগ ডাল খাওয়া আমাদের সকলেরই স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ উপকারী। কারণ প্রচন্ড গরমে মুখের ডাল খেলে এই ডাল শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এতে করে অত্যধিক গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
- রক্তশূন্যতা দূর করেঃ আপনারা যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তারা আজ থেকেই নিয়মিত মুগ ডাল খাওয়া শুরু করুন। কারণ, মাত্র এক কাপ মুগ ডালে রয়েছে ১৬ ভাগ আয়রন। আর এই আয়রন আপনার শরীরে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি করে রক্তশূন্যতা দূর করতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ ডাল গর্ভাবস্থায় সাধারণত চিকিৎসকরা একজন গর্ভবতী নারীকে ফলেট যুক্ত জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। আর রান্না করে এক কাপ মুগ ডালে প্রায় ৮০ শতাংশই ফোলেট থাকে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনার গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য মুগ ডাল ঠিক কতটা উপকারী!
- দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখেঃ মুগ ডাল যেমন শরীর ঠান্ডা রাখে, বিপাক ক্রিয়া সহজ করে ঠিক তেমনি দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে আপনি মুগ ডাল খেতেই পারেন।
- ছত্রাক দূর করেঃ মুগ ডালে থাকা পলিফেনোলে রয়েছে আন্টি এন্টি ব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল এবং আন্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য। এই উপাদানগুলো ছত্রাক দূর করার পাশাপাশি নানান ধরনের সংক্রমণ দূর করতেও সক্ষম।
- চুলের যত্নে মুগ ডালঃ শুধুমাত্র ত্বকের জন্যই নয় বরং চুলও ভালো রাখে এই মুগের ডাল। মুগডালে থাকা ভিটামিন সি এবং একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের হারানো জেল্লা ফেরাতে কাজ করে। এর জন্য আপনি মুগ ডালের পেস্ট স্ক্যাল্পে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার চুল হবে শক্তপোক্ত, চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে এবং সেই সাথে চুলের খুশকিও দূর হবে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও সবুজ মুগ ডাল অত্যন্ত উপকারী। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদেরকে সাধারণত অন্যান্য ডালের থেকে তুলনামূলকভাবে মুগ ডাল বেশি খেতে বলা হয়। কারন কি জানেন? এর কারণ হল, মুগ ডাল শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ মুগ ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভালো কাজ করে। শুধু তাই নয় মুগ ডালে ভিটামিন বি ১৭ নামক একটি বিশেষ উপাদান রয়েছে। যা শরীরে ক্যান্সারের কোষ পুরোপুরি ভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে। বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে মুগ ডাল দারুন কার্যকরী।
- বাতের ব্যথা কমায়ঃ আপনাদের যাদের বাতের ব্যথা রয়েছে তারা বাত ব্যথা কমাতে খেতে পারেন মুগের ডাল। কারন, মুগ ডালে পাওয়া যায় ভিটেক্সিন, গেলিক অ্যাসিড এবং আইসোভিটেক্সিন। যা বাতের ব্যথা কমাতে কাজ করে।
- রক্ত সঞ্চালনে কাজ করেঃ নিয়মিত মুগ ডাল খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে সঠিকভাবে পৌঁছে দেয় এবং সেই সাথে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াও ত্বরান্বিত করে।
মুগ ডালের ক্ষতিকর দিক
মুগ ডালের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও আমাদের অবগত থাকা উচিত। উপকারী দিকের পাশাপাশি মুগ ডালের কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এবার চলুন মুগ ডালের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিন--
আরো পড়ুনঃ সাদা তিলের ২০ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- অতিরিক্ত মুগ ডাল খাওয়ার ফলে আপনার এলার্জির ভাব দেখা দিতে পারে। এলার্জির উপসর্গ হিসেবে চুলকানি, ফুসকুড়ি, লালচে ভাব, চোখ দিয়ে পানি পড়া, জিব্বা ফুলে যাওয়া, গলায় চুলকানি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে মুগ ডাল খেলে এতে থাকা উপাদান গুলি শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে আপনার গাউট রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- অনেকেই আছেন যারা কাঁচা মুগ ডাল খেতে পছন্দ করেন। ভুলেও রান্না ছাড়া শুধুমাত্র কাঁচা মুগ ডাল খাবেন না। কারণ, কাঁচা মুগ ডালে ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা থেকে আপনার শরীরে যে কোন ধরনের সংক্রমণ হতে পারে।
- মুগ ডাল ভালো করে রান্না করে না খেলে তাতে অনেকের পেট ফোলা, পেট ফাঁপা এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- মুগ ডালে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। আর অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ অনেক সময় আপনার পেটে গ্যাস বা অম্বলের সৃষ্টি করতে পারে।
- একটানা দীর্ঘদিন ধরে অধিক পরিমাণে মুগ ডাল খাওয়ার ফলে আপনার বীর্য শক্তি কমতে পারে এবং অন্যান্য যৌন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আপনার যদি কিডনি কিংবা লিভারের কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে মুগ ডাল সীমিত পরিমানে খাওয়াটাই ভালো। কেননা অত্যধিক পরিমাণে মুগ ডাল খেলে এটি আপনার কিডনি ও লিভারের সমস্যা আরো জটিল করে তুলতে পারে।
- মুগ ডালে বিদ্যমান কিছু ফাইট্রোজেন আপনার হরমোন এর ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে হরমোনাল সমস্যা বা সাইকেল সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- ঠিকমতো রান্না না করে মুগ ডাল অধিক পরিমাণে খেলে এতে আপনার ঘুম ঘুম ভাব বা ঝিমুনির কারণ হতে পারে।
- মুগ ডালের নিউট্রিয়েন্ট এবং ফাইটোস্টেরলস আপনার শরীরের জন্য খুব একটা উপকারী নাও হতে পারে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে মুগ ডাল না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খান।
- আপনার ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের কারণও হতে পারে এই মুগ ডাল। তাছাড়া অতিরিক্ত ফাইবার থাকার কারণে অন্তঃসত্তাদেরও এই ডাল এড়িয়ে চলা ভালো।
- আপনাদের যাদের হাই ইউরিক অ্যাসিড, লো ব্লাড প্রেসার, লো ব্লাড সুগার এবং কিডনি স্টোন রয়েছে তাদের মুগ ডাল থেকে দূরে থাকাটাই ভালো। বিশেষ করে নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের মুগ ডাল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণই ক্ষতিকর। কারণ, মুগ ডালে এমন সব উপাদান রয়েছে যা খেলে আপনার ব্লাড সুগার আরো কমে যেতে পারে।
মুগ
ডালের এই সমস্যাগুলো তখনই দেখা দিবে যখন আপনি প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত
পরিমাণে খাবেন। তাই বলবো শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়ম করে পরিমিত পরিমাণে মুগ
ডাল খান যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
মুগ ডাল খাওয়ার নিয়ম
মুগ
ডালের উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনাকে নিয়ম মেনে মুগ ডাল খেতে
হবে। মুগ ডাল খাওয়ারও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে তা কি জানেন? এবার চলুন আপনি
মুগ ডাল খেতে কোন নিয়ম গুলো মেনে চলবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন ---
- মুগ ডাল খাওয়ার আগে আপনি এটি অন্তত ৪-৬ ঘন্টা বা এক রাত ভিজিয়ে রাখুন। কেননা ভিজিয়ে রাখলে এই ডালের পুষ্টিগুণ আরো বেড়ে যায় এবং এটি আপনার হজমে সাহায্য করবে। তাছাড়া মুগ ডাল ভিজিয়ে রাখলে এতে ফাইট্রিক এসিডের পরিমাণ কমে যায়। যা পুষ্টি শোষণে বাধা দেয়।
- আপনি মুগ ডাল রান্নার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিয়ে খুব ভালো করে সেদ্ধ করুন। সাধারণত এক কাপ মুগ ডাল সেদ্ধ করতে তিন কাপ পর্যন্ত পানি প্রয়োজন পড়ে। তবে ডাল যদি বেশি হয় সেক্ষেত্রে পানি আরো যোগ করতে হতে পারে।
- মুগ ডাল আধা সিদ্ধ বা কম সিদ্ধ করে কখনোই খাবেন না। একে পরিপূর্ণরূপে সিদ্ধ করে তবেই খাবেন, যাতে ডালের পুষ্টি সম্পূর্ণরূপে অক্ষুন্ন থাকে।
- মুগ ডাল দিয়ে সেদ্ধ বা ঝোল সব পদ রান্না করে আপনি খেতে পারেন। তবে পুষ্টির দিক থেকে সেদ্ধ করে মুগ ডাল খাওয়া সবচেয়ে বেশি উপকারী। কারণ, এতে তেল মশলা কম ব্যবহৃত হয়।
- মুগ ডাল খাওয়ার সময় আপনি অন্যান্য শাকসবজি যেমন ধরুন- পালং শাক, টমেটো ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন। এতে ডালের পুষ্টিগুণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
- মুগ ডাল খাওয়ার সময় আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার হজম সহজ হবে এবং শরীরও সুস্থ থাকবে।
- আপনার শিশুর জন্য মুগ ডালের পিউরি খুবই পুষ্টিকর একটি খাবার। এটি শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সাহায্য করে। পিউরি তৈরির ক্ষেত্রে আপনি মুগ ডাল সেদ্ধ করে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নেবেন।
- মুগ ডাল খাওয়ার পর খুব ঠান্ডা বা ভারি খাবার খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এতে আপনার হজমে সমস্যা হতে পারে। যদি ভারী খাবার খেতেই হয় তাহলে কিছুটা সময় অপেক্ষা করে তবেই খাবেন।
- মুগ ডাল রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল মশলার ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কারণ, মুগ ডাল এমনি সুস্বাদু। আপনি চাইলে এই ডালের সাথে আরো বিভিন্ন ধরনের মসলা যেমন- হলুদ, জিরা, ধনিয়া, ঘি ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। এতে ডালের স্বাদ আরো দ্বিগুণ পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
- আপনি মুগ ডাল কেনার সময় অবশ্যই সতেজ এবং তাজা মুগ ডাল কিনুন। পুরনো মুগ ডালে অনেক সময় পুষ্টির পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং ভালোভাবে সিদ্ধ নাও হতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে মুগডাল ফেলে আপনি থেকে সর্বাধিক উপকারিতাই পাবেন এতটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি।
মুগ ডাল খেলে কি গ্যাস হয়
মুগ ডাল খেলে গ্যাস হয় কিনা এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেখুন, মুগ ডাল একটি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাদ্য উপাদান হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি আপনার পেটের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাছাড়া মুগ ডালে প্রাকৃতিকভাবে কিছু ফাইবার ও শর্করা থাকে। যা আপনার গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমে গ্যাস সৃষ্টির জন্য দায়ী হতে পারে।
বিশেষ করে মুগ ডালে উচ্চমাত্রায় রাফিনোজ এবং স্টাচিওজ নামক দুটি শর্করা উপাদান থাকে। যা স্বাভাবিকভাবে হজম হতে চায় না এবং হজম হতে বেশ কিছুটা সময় নেয়। আর এই শর্করা গুলি লসিকল ফ্লোরা দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয় যা আপনার পেটে গ্যাস বা অম্বলের সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং অতিরিক্ত পরিমাণে মুগ ডাল খাওয়ার ফলে এর অতিরিক্ত ফাইবার ও আপনার পেটের অস্বস্তি ভাব এবং পেট ফোলা ভাবের কারণ হতে পারে।
মুগ
ডাল খেয়ে এই সমস্যা গুলো তখনই বেশি দেখা দেবে যদি আপনি সঠিকভাবে রান্না
করে না খান, কিংবা অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করে মুগ ডাল খান। তবে সঠিকভাবে
ভিজিয়ে রেখে রান্না করে খেলে মুগ ডালের তেমন একটা ক্ষতিকর প্রভাব শরীরের
উপর পড়ে না। মুগ ডাল খেলে গ্যাস হতে পারে কি পারে না আশা করছি এর উত্তর
আপনি পেয়ে গেছেন।
অঙ্কুরিত মুগ ডালের উপকারিতা
মুগ
ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা আপনাকে ইতিমধ্যেই আমরা জানিয়ে দিয়েছি। এবার
আপনাকে জানাবো অঙ্কুরিত মুগ ডালের উপকারিতা সম্পর্কে। তো চলুন অঙ্কুরিত মুগ
ডাল খেলে এর থেকে আপনি কি কি উপকার পাবেন তা জেনে নিন-
- অঙ্কুরিত মুগ ডাল প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং এনজাইনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২, ভিটামিন বি ৩ এবং বিভিন্ন ধরনের মিনারেল যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, ভিটামিন এ, কপার, ফসফরাস, ভিটামিন ই এবং ফাইবার থাকে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
- অঙ্কুরিত মুগ ডালে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকার কারণে এবং অতিরিক্ত ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি রক্তে গ্লুকোজের স্তর স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এমনকি টাইপ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে এই অঙ্কুরিত মুগের ডাল।
- সাধারণত ডালে যে প্রোটিন থাকে তার সহজে হজম হতে চায় না। কিন্তু সেই ডাল থেকে যদি অঙ্কুর বেরিয়ে যায় তাহলে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট খুবই সহজপ্রাচ্য হয়ে যায়। ফলে গ্যাস, অম্বল, পেট ফাঁপা এবং পেটে হজমের সমস্যা দূর হয়। তাছাড়া "জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল এন্ড ফুড কেমিস্ট্রি"র একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অঙ্কুরিত মুগের ডাল খেলে হজম সহায়ক উৎসেচক গুলির ক্ষরণ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই বলবো আপনার যদি হজমের কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আজ এখন থেকেই চোখ বন্ধ নিশ্চিন্তে অঙ্কুরিত মুগের ডাল খেতে পারেন।
- অতিরিক্ত ফাইবার এবং প্রোটিন থাকার কারণে অঙ্কুরিত মুগ ডাল খেলে এটি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত আপনার পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে আপনাকে বিরত রাখে। এতে করে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাছাড়া "আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন" এর একটি গবেষণায় স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, যে কোন ধরনের ফাইবার যুক্ত খাবার অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং তাতে বিপাক ক্রিয়াও ভালো হয়।
- অঙ্কুরিত মুগ ডালে এন্টিঅক্সিডেন্টস যেমন- ভিটামিন সি এবং অন্যান্য ফেনোলিক যৌগ রয়েছে যা আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিক্যালস এর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এবং সেই সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে চাইলে আপনি খেতে পারেন অঙ্কুরিত মুখের ডাল। কারণ, অঙ্কুরিত মুগ ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য আঁশ এবং ফোলেট থাকে। যা আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগ ঠেকাতে কাজ করে।
- প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গরমকালে হিট স্ট্রোক থেকে নিজেকে বাঁচাতে আপনি খেতে পারেন অঙ্কুরিত সবুজ মুগের ডাল। কারণ, অঙ্কুরিত মুগ ডালে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। ফলে গরমে অঙ্কুরিত মুগের ডাল খেলে এটি শরীরকে যেমন আদ্র রাখে তেমনি অতিরিক্ত তাপমাত্রার হাত থেকেও শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
- আবার "জার্নাল অফ ফুড সাইন্স এন্ড টেকনোলজি"-তে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অঙ্কুরিত মুগ ডাল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে। শুধু তাই নয়, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং কার্ডিওভাসকুলার এর মত রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম অঙ্কুরিত মুগ ডাল।
- অঙ্কুরিত মুগ ডাল রক্তাল্পতা দূর করতে পারে। জেনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! হ্যাঁ সম্মানিত পাঠক, অঙ্কুরিত মুগ ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন এবং ফলিক এসিড থাকে। যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। ফলে প্রতিদিন এক মুঠো অঙ্কুরিত কাঁচা মুগের ডাল খেলে আপনি রক্তাল্পতা থেকেও রেহাই পেতে পারেন।
- শুধু কি তাই! হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতেও কাজ করে অঙ্কুরিত মুগের ডাল। অঙ্কুরিত মুগের ডাল খেলে এটি হাড়ের টিস্যু গুলোকে ভালো রাখে। ফলে নিয়মিত অঙ্কুরিত মুগ ডাল খেলে এটি আপনার হাড়ের ঘনত্ব বাড়াবে, হাড় মজবুত করবে এবং সেই সাথে হাড়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা দূর করবে।
- অঙ্কুরিত মুগ ডালে প্রোটিন রয়েছে। যা মাংসপেশির জন্য ভালো এবং পেশী মজবুত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া নিয়মিত নিয়ম করে অঙ্কুরিত মুগ ডাল খেলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতিও দূর হয়।
- চোখের জন্যও উপকারী অঙ্কুরিত মুগ। কারণ, অঙ্কুরিত মুগ ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের সকল সমস্যা দূর করে।
- অঙ্কুরিত মুগ ডালে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্লাভোনোয়েডস এবং পলিফেনাল এর মত যৌগ রয়েছে। যা কিনা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নিয়মিত অঙ্কুরিত মুগ ডাল খেলে এটি আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনবে এবং সেই সাথে ত্বক থেকে বয়সের ছাপও দূর করবে।
প্রিয় পাঠক, অঙ্কুরিত মুগ ডালের এতসব উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনি আজ
থেকেই নিয়ম করে অঙ্কুরিত মুগ ডাল খাওয়া শুরু করুন। এতে আপনার শরীর থাকবে
সুস্থ ও চনমনে।
মুগ ডাল রেসিপি
মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা তো জেনেছেন। এবার আপনি নিশ্চয়ই এই ডালের রেসিপি সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে চলুন মুগ ডাল দিয়ে তৈরি কিছু রেসিপি সম্পর্কে জেনে নিন-
নিরামিষ মুগ ডাল রেসিপিপ্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- মুগের ডাল- ১ কাপ
- কুচানো সবজি- ১ কাপ
- আদা বাটা- ১/৪ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো- ১/৪ চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়ো- ১/২ চা চামচ
- কাঁচামরিচ বাটা- ১/২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো- ১/৪ চা চামচ
- তেজপাতা- ১টি
- লবণ ও চিনি- স্বাদমতো
- তেল- পরিমাণ মতো।
- নিরামিষ মুগের ডাল রান্না করতে আপনি প্রথমেই একটি শুকনো খোলাতে মুগের ডাল গুলো ভেজে নিন।
- এবার একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে জিরা, তেজপাতার ফোড়ন দিয়ে সবজি গুলো ভালো করে খানিকটা ভেজে নিন। এরপর একে একে আপনি লবণ, হলুদ, আদা, কাঁচামরিচ বাটা, ধনে গুঁড়ো যোগ করুন।
- এই পর্যায়ে সবজিগুলো ভাজা হয়ে এলে তাতে মুগ ডাল দিয়ে দিন এবং পরিমাণ মতো পানি দিয়ে সেদ্ধ করতে দিন।
- ডাল সেদ্ধ হয়ে এলে স্বাদমতো সামান্য পরিমাণে চিনি মিশিয়ে নামিয়ে ফেলুন এবং গরম গরম পরিবেশন করুন।
- মুরগি- ১টি
- মুগের ডাল- ১.৫ কাপ পরিমাণ
- কুচানো পেঁয়াজ- ৪ টেবিল চামচ
- আদা রসুন বাটা- ১ টেবিল চামচ
- ধনে গুঁড়ো - ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়ো- ১.৫ চা চামচ
- লংকা গুঁড়ো- ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো- আধা চা চামচ
- দারুচিনি- ২ টুকরো
- তেজপাতা- ২টি
- তেল- আধা কাপ পরিমাণ
- লবণ- পরিমাণ মতো
- চিনি- ১ চা চামচ
- কাঁচা মরিচ- ৭-৮ টি
- বাগারের জন্য পেঁয়াজকুচি- একটি
- তেল - ২ চা চামচ
- মুরগি মুগডাল রান্নার শুরুতেই আপনি মুগ ডাল গুলো হালকা ভেজে পানিতে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
- এরপর একটি ফ্রাই প্যানে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ কুচি, তেজপাতা, দারুচিনি ও এলাচ দিয়ে ভেজে নিন। পরপর সব বাটা এবং গুড়ো মসলা দিয়ে ভেজে সামান্য পানি, লবণ দিয়ে খুব ভালো করে কষিয়ে নিন।
- এরপর আরো আধা কাপ পরিমাণ পানি দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে মসলার মধ্যে মুরগির মাংস দিয়ে দিন। মুরগির মাংস ৫ মিনিটের মতো কষিয়ে ঢেকে ঢেকে রান্না করতে থাকুন।
- মাংস প্রায় 70 ভাগ সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে মুগ ডাল দিয়ে কষিয়ে নিন এবং পরিমাণ মতো জল দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে আবারো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন।
- এক দুইবার জল ফুটে উঠলে তাতে স্বাদমতো অল্প পরিমাণে চিনি ও কাঁচা মরিচ দিয়ে আরও পাঁচ মিনিট ঢেকে রাখুন। খেয়াল রাখবেন, জলের পরিমাণ যেন অতিরিক্ত না শুকিয়ে যায়।
- এবার একটি প্যানে তেল গরম করে বাগারের জন্য পেঁয়াজ ভেজে মুগ ডাল ও মুরগিতে দিয়ে দিন।
- ব্যাস মুগ ডাল মুরগি রেসিপি কমপ্লিট। সবশেষে উপরে ছিটিয়ে দিন টেলে রাখা জিরের গুঁড়ো। এরপর কিছুক্ষণ চুলা বন্ধ করে দিন এবং মিনিট দশেক পর গরম গরম ভাত বা পোলাও এর সাথে এটি পরিবেশন করুন।
মুগ ডাল ভিজিয়ে খেলে কি হয়
মুগ
ডাল ভিজিয়ে খেলে কি হয় জানেন কি? হয়তো জানেন না। মুগ ডাল ভিজিয়ে
খাওয়ারও বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা জানলে আপনি নিজেও চমকে
যাবেন। তো চলুন জেনে নিন মুগ ডাল ভিজিয়ে গেলে আপনি কি কি উপকার পেতে
পারেন--
- মুগ ডাল ভিজিয়ে রাখলে এতে থাকা ফাইটিক এসিডের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। এই ফাইটিক এসিড খাদ্যের পুষ্টিগুণ শোষণে বাধা দিতে পারে।
- মুগ ডাল ভিজিয়ে রেখে ফেলে এতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন এবং মিনারেলস আপনার শরীরে খুব সহজেই শোষিত হতে পারে।
- ভেজানো মুগ ডাল ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি এবং আয়রনের ভালো উৎস। ফলে শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে কাজ করে এই ডাল।
- তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে ভেজানো মুগ ডাল।
- মুগের ডাল ভিজিয়ে রেখে খেলে এটি অনেকটাই নরম হয়ে যায়। যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। ফলে আপনার পেট ফাঁপা, গ্যাস, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি কমতে পারে।
- মুগ ডাল ভিজিয়ে রেখে রান্না করলে এতে থাকা এন্টি নিউট্রিয়েন্টস গুলো কমে যায়। ফলে খাওয়ার পর গ্যাসের সমস্যা কম হয়।
- মুগ ডাল ভিজিয়ে রাখলে ভিজানোর পর ডালে প্রাকৃতিক এনজাইম সক্রিয় হয়ে ওঠে। যা ডাল কে আরো সুস্বাদু ও পুষ্টিকর করে তোলে।
- ভেজানো মুগ ডালে দ্রবণীয় ফাইবার থাকে যা আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। ফলে সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত ভেজানো মুগ ডাল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- ভেজানো মুগ ডাল কম ক্যালোরি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি অতিরিক্ত ক্ষুধা নিবারনে কাজ করে। সুতরাং, ভেজানো মুগ ডাল খাওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার বাড়তি ওজনও ঝরিয়ে ফেলতে পারেন খুব সহজেই।
সম্মানিত
পাঠক, জানিয়ে দিলাম মুগ ডাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। মুগ ডাল
খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে কি হবে না যারা এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে
থাকেন, তারা মুগ ডাল ভিজিয়ে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। এতে এসিডিটির সমস্যা
হয় না বললেই চলে।
কোন ডাল ভালো
কোন ডাল ভালো বলুন তো! মুগ নাকি মসুর কোন ডাল খেলে আপনার শরীরের পুষ্টি ঘাটতি মিটবে। স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাদ্য তালিকায় ডাল একটি অপরিহার্য খাদ্য উপাদান একথা আমরা সকলেই জানি। তাছাড়া যে কোনো ধরনের ডালে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। অতি দ্রুত আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চার করে।
সাধারণত সব ডাল ই আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তাছাড়া রুটি ভাত সব কিছুর সাথেই আমরা ডাল খেতে বেশ অভ্যস্ত। তবে ঋতু অনুযায়ী ডাল বেছে খেলে এর থেকে উপকার বেশি পাওয়া যায়। যেমন ধরুন- অতিরিক্ত গরমে আপনি মুগ এবং মসুর ডাল একসাথে মিশিয়ে খেলেন। এতে করে আপনার পেট ঠান্ডা থাকবে।
শুধু তাই নয়, মুগ এবং মসুর ডাল একসাথে মিশিয়ে খেলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হয়। এমনকি এলডিএল কোলেস্টেরল কমাতেও দারুন কাজ করে মুগ এবং মসুর ডালের মিশ্রণ। তাছাড়া এই দুটি ডালে ফ্যাটের পরিমাণ নেই বললেই চলে। সুতরাং আপনার ওজন কমানোর খাদ্য তালিকায় মুগ এবং মসুর ডাল অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন।
যদিও মসুর এবং মুগ ডাল সব ঋতুতেই খাওয়া যায়, কিন্তু গরমে খাওয়া বেশি উপকারী। আবার অত্যধিক গরমে কিছু ডাল আপনার এড়িয়ে চলা উচিত যেমন ধরুন- অড়হর ডাল। কারণ, এই ডালটি খুব ভারী। বিধায় সহজে হজম হতে চায় না। আবার অনেক সময় গরমে এই ডাল খেলে আপনার পেটও খারাপ হতে পারে। আর তাই গ্রীষ্মের মৌসুমে এই ডাল কম খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
অড়হর
ডালের মত চানা ও মটর ডালও কম খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ, এই ডাল গুলি অনেক
সময় পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। একটি কথা মনে রাখবেন, শুধুমাত্র ডাল
খেলেই যে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দূর হবে তা কিন্তু নয়। বরং শরীরকে সুস্থ
রাখতে হলে আপনার ডাল খাওয়ার পাশাপাশি মাছ-মাংস, ডিম, দুধ সহ অন্যান্য
প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।
মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
মুগ ডালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন। প্রোটিনের অন্যতম প্রধান উৎস হল ডাল। শুধু প্রোটিন নয়, প্রোটিন ছাড়াও ডালে রয়েছে আরও অনেক পুষ্টিগুণ। তাছাড়া আমরা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পেয়ে থাকি কিন্তু এই ডাল থেকেই।
সাধারণত ছোলা, মসুর, মুগ, অরহর এবং বিউলির ডাল এই প্রত্যেকটি ডালের স্বাদের ভিন্নতা একেক রকম এবং পুষ্টিগুণেও ভরপুর। ডালের এতসব পুষ্টিগুণের কথা ভেবে আপনি আজ থেকেই আপনার খাবার পাতে যোগ করে নিন আপনার পছন্দমত যেকোনো একটি ডাল। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url