কাঁচা পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা হয়তো অনেকেই জানেন। কিন্তু কাঁচা পেঁপে খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি জানেন না। কাঁচা পেঁপে উপকারী, তবে নিয়ম মেনে সময় মত না খেলেই ঘনিয়ে আসতে পারে বিপদ। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

কাঁচা-পেঁপের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
সম্মানিত পাঠক, আজকে আমরা আলোচনা করবো কাঁচা পেঁপের উপকারী দিক এবং এই পেঁপে আপনি কখন খাবেন সে সময় সম্পর্কে। যে সময় মেনে খেলে পেঁপের নানান ক্ষতিকর দিক আপনি খুব সহজেই এড়াতে পারবেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে এক্ষুনি আর্টিকেলটি পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কাঁচা পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা ও অপকারিতা

কাঁচা পেঁপের রয়েছে অবাক করা কিছু গুনাগুন। আপনার শরীর সুস্থ রাখতে এবং শরীর থেকে নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে কাঁচা পেঁপে কিন্তু দারুন কাজ করে। তাছাড়া কাঁচা পেঁপে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, প্রোটিন, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, প্যাপেইন এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। 
শুধু তাই নয়, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করার পাশাপাশি এটি আপনার হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। সাথে আপনার পেটের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে এই কাঁচা পেঁপের ভূমিকা অনন্য। একটি কথা প্রচলিত আছে, আপনি যদি আপনার শরীরের ভেতরের সৌন্দর্যের যত্ন নেন, তাহলে তা আপনা আপনি আপনার বাহ্যিক চেহারায় সৌন্দর্য হিসেবে ফুটে উঠবে। 
 
আর একজন মানুষের শরীরকে ভেতর থেকে পরিপূর্ণরূপে পরিষ্কার রাখার এমনই একটি দুর্দান্ত উপাদান হল কাঁচা পেঁপে। সে হিসেবে কাঁচা পেঁপেকে সুপারফুড বললেও ভুল হবেনা। তবে শুধু উপকারিতাই নয়, অতিরিক্ত কাঁচা পেঁপে খেলে এর আবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। যা আজকে আমাদের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়বস্ত। সম্মানিত পাঠক তাহলে চলুন এবার আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা

পেঁপে কাঁচা এবং পাকা দুভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় সাধারণত পেঁপে সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। সেই সাথে কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই পেঁপে খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। আবার দামেও বেশ সহজলভ্য এই পেঁপে। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি সহজলভ্য এই ফলটির গুণাগুণ সম্পর্কে--
  • পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎসঃ হিসেবে ব্রিটিশ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, টমেটো এবং গাজরের থেকে অনেক বেশি ক্যারটিনয়েডস পাওয়া যায় কাঁচা পেঁপেতে। ফলে এটি আমাদের শরীরে ক্যারটিনয়েড ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে পুষ্টি সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে কাজ করে।
  • হজমে উপকারীঃ কাঁচা পেঁপে আপনার পেটের হজমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ কাঁচা পেঁপেতে প্যাপেইন নামক একপ্রকার এনজাইম থাকে যা প্রোটিন কে ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে কাঁচা পেঁপে খেলে আপনি পেট ফাঁপা গ্যাস্ট্রাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
  • প্রাকৃতিক এন্টি ইনফ্লামেটরিঃ কাঁচা পেঁপে তে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রতারক আমাতে সাহায্য করে।
  • ক্যান্সার রোধ করেঃ নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে আপনার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। কারণ, পেঁপের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন ফ্লাভোনয়েড ইত্যাদি আপনার ফুসফুস সহ অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং চোখ ভালো রাখতে আজ থেকে কাঁচা পেঁপে খাওয়া শুরু করুন। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে,  কাঁচা পেঁপে দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
  • ভিটামিন সি-এর উৎস হিসেবেঃ ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস হলো কাঁচা পেঁপে। হলে নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে কি আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ধরনের ফ্রি রেডিকেল এর হাত থেকে রক্ষা করে।
  • ত্বক ভালো রাখেঃ পেঁপে কাঁচা পেঁপে তে থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি আপনার ত্বক ভালো রাখে। এটি ত্বকের শুষ্কতা, দাগ ছোপ, বলি রখা ইত্যাদি খুব সহজেই দূর করতে পারে।
  • ওজন কমায় পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে সব থেকে কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবার। খেলে দীর্ঘক্ষন আপনার পেট ভরে থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রতি চাহিদা কমে। আর ঠিক এই কারণে আপনার ওজন ও প্রাকৃতিক ভাবে কমতে থাকে।
  • হার্ট ভালো রাখেঃ পেঁপে কাঁচা পেঁপে পটাশিয়াম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। হলে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটাই কমে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ কাঁচা পেঁপের বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি আপনার শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
  • মেটাবলিজম বৃদ্ধিতেঃ পেঁপে নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে কাঁচা পেঁপের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে পারে।
  • প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ারঃ নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার শরীরে প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়। এতে করে আপনার শরীর ভেতর থেকে সতেজ থাকে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পেঁপেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা পেঁপে উপকারী। কারণ, কাঁচা পেঁপে তে কম শর্করা এবং ফাইবার থাকার কারণে এটি আপনার রক্তে শর্করের স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যা কিনা ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
  • পিরিয়ডের অস্বস্তি কমাতেঃ মা বোনদের পিরিয়ড জনিত বিভিন্ন উপসর্গ কমাতে, বিশেষ করে পিরিয়ডের অস্বস্তি কমাতে কাঁচা পেঁপে খুব ভালো কাজ করে।
  • এলার্জি কমাতে পেঁপেঃ কাঁচা পেঁপের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আপনার শরীরে এলার্জির লক্ষণ কমিয়ে দিতে পারে।
  • মানসিক চাপ কমাতেঃ কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সি। যা আপনার মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
কাঁচা-পেঁপের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
  • উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি দেয়ঃ কাঁচা পেঁপে দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে। ফলে নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে।
  • এনজাইমের ঘাটতি পূরণ করেঃ যেসব মায়েরা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাদের শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন পড়ে। আবার চিকিৎসকও তাদের কাঁচা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, কাঁচা পেপে শরীরের সমস্ত পূরণ করে বুকে দুধের প্রবাহ বাড়াতে কাজ করে।
  • জয়েন্ট এর ব্যথা দূর করেঃ আপনার শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি সারাতে কাঁচা পেঁপে বেশ উপকারী। এর জন্য গ্রীন টি এর সাথে কাঁচা পেঁপে ফুটিয়ে চা তৈরি করে খেলে বাতের সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
  • অবাঞ্ছিত লোম থেকে পরিত্রাণ দেয়ঃ আপনি চাইলে আপনার শরীরে অবাঞ্ছিত লোম কাঁচা পেঁপে ব্যবহার করেও দূর করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা পেঁপেতে যে প্যাপেইন এনজাইম রয়েছে তা আপনার শরীরের অবাঞ্ছিত লোমের ফলিকল গুলিকে দুর্বল করে এবং তাদের কোন বৃদ্ধি রোধ করে।
  • ডেঙ্গু রোগ নিরাময়েঃ কাঁচা পেঁপে ডেঙ্গু রোগ হলে সাধারণত রক্তের প্লাটিলেট কমে যায় এবং প্রচন্ড জ্বর হয়। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু রোগ থেকে সেরে উঠতে আপনি খেতে পারেন কাঁচা পেঁপে। আবার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অনেক সময় পেপে পাতা রস খেতে বলা হয়। কারণ, এটি শ্বেত রক্তকণিকার প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।

কাঁচা পেঁপে খাওয়ার অপকারিতা

কাঁচা পেঁপের শুধু উপকারিতাই নয় বরং এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আর এই অপকারিতা গুলো আপনি তখনই পাবেন যখন অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁপে খাবেন। এবার চলুন কাঁচা পেঁপে খাওয়ার কিছু অপকারিতা জেনে রাখুন--
  • কাঁচা পেঁপে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার পেট ফাঁপা, পেটে গ্যাস কিংবা পেট ব্যথার সমস্যা হতে পারে। এর একমাত্র কারণ হলো কাঁচা পেঁপে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে।
  • কাঁচা পেঁপে হৃদ রোগের রোগীদের জন্য ভালো। কিন্তু আপনি যদি এরই মধ্যে হৃদ স্পন্দনের সমস্যায় ভুগতে থাকেন তাহলে কাঁচা পেঁপে এড়িয়ে চলুন।
  • কাছে পেতে যতই উপকারী হোক না কেন শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং গর্ভকালীন সময়ে এটি না খাওয়াই ভালো। কারণ পেঁপেতে যে প্যাপেইন রয়েছে তা আপনার ঝিল্লিকে দুর্বল করে দিতে পারে। শুধু তাই নয় পেঁপের পাতা বীজ শেখর আপনার গর্ভে শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
  • অত্যধিক পরিমাণে পেপে খেলে অনেক সময় কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এলার্জির লক্ষণ হিসেবে আপনার হাঁচি, কাশি, চোখে পানি আসা, শ্বাসকষ্ট, ফুসকুড়ি, চুলকানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা পেঁপে খেতে থাকলে এটি আপনার প্রজনন ক্ষমতার উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা পেঁপে পুরুষের টেস্টোস্টেরন স্তর কমিয়ে দেয় এবং প্রজনন ক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • কাঁচা পেঁপে যদিও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযুক্ত একটি সবজি। কিন্তু অনেক সময় কাঁচা পেঁপে অতিরিক্ত খেলে এটি আপনার রক্তে শর্করার স্তর বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • কাঁচা পেঁপে সাধারণত আপনার শরীরে প্রাকৃতিক রক্ত পরিষ্কার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অধিক পরিমাণে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার শরীরে রক্তের প্রবাহকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে আপনারা যারা রক্ত পাতলা করার জন্য ঔষধ সেবন করছেন।
  • কাঁচা পেঁপে থাইরয়েডের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যেতে পারে। 
  • মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার গলা চুলকানো, জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
  • কাঁচা পেঁপেতে শোষিত ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকার কারণে অনেক সময় কাঁচা পেঁপে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা পেঁপে খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, কাঁচা পেঁপে সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। ফলে নিম্ন রক্তচাপের রোগীরা কাঁচা পেঁপে খেলে রক্তচাপ আরও নিচে নেমে যেতে পারে।
  • কাঁচা পেঁপে বাচ্চাদের খাওয়ানো উচিত নয়। এতে থাকা প্যাপেইন বাচ্চাদের হজম সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং পেট ব্যথা ও ডায়রিয়ার উদ্রেক ঘটায়।
  • কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তা আমরা সকলেই জানি। আর অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণের ফলে ক্যালসিয়াম অক্সালেট আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। হলে যারে কিডনি পাথর জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা কাঁচা পেঁপে সীমিত পরিমাণ এখানে।
সম্মানিত পাঠক, কাঁচা পেঁপের উপরিউক্ত এই অপকারিতা গুলো এড়িয়ে চলতে আপনি নিয়ম মেনে সীমিত পরিমানে তাজা পেঁপে ধর অভ্যাস করুন।

কাঁচা পেঁপে খাওয়ার সঠিক সময়

কাঁচা পেঁপে শুধু খেলেই হবে না বরং আপনাকে সঠিক সময় মেনে খেতে হবে। তবেই এর থেকে আপনি সর্বাধিক উপকারিতা পাবেন। সাধারণত সকালে কাঁচা পেঁপে খাওয়া সব থেকে ভালো। কারণ, সকালে কাঁচা পেপে খেলে এটি সারা দিনের জন্য আপনার শরীরে পুষ্টি ও শক্তির যোগান দিতে থাকে। সেই সাথে সকালে একেবারে পেট ভর্তি করেও কাঁচা পেঁপে খাওয়া হয় না। 
 
আবার যারা সকালে কাঁচা পেঁপে খেতে চান না। তারা মধ্যাহ্নভোজের পর বা বিকেলের স্ন্যাকস হিসেবে কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। অনেকে আছেন যারা আবার রাতের খাবারের পর দুই ফালি কাঁচা পেঁপে খেতে পছন্দ করেন। রাতে খাবারের পর পেপে খাওয়াটা উপকারী। কারণ, রাতে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার হজমে সাহায্য করে।
 
তবে একটি কথা, খাবার খাওয়ার পরপরই কখনোই কাঁচা পেঁপে খাবেন না। কারণ, খাওয়ার পরপর কাঁচা পেঁপে খেলে এতে আপনার স্বাভাবিক হজম ক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। সম্মানিত পাঠক,  উপরিউক্ত দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে আপনি কাঁচা পেঁপে খেলে এর থেকে উপকারিতাই বেশি পাবেন এ কথা হলফ করে বলতে পারি।

কাঁচা পেঁপে খাওয়ার নিয়ম

কাঁচা পেঁপে খাওয়ার নিয়ম আমাদের অনেকেরই অজানা। এবার জানাবো আপনি কাঁচা পেঁপে কোন নিয়মে কি কি উপায়ে খেতে খাবেন। তো চলুন জেনে নিন কাঁচা পেঁপে খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে--
কাঁচা পেঁপে খাওয়ার নিয়ম
  • প্রথমেই বলি, আপনি কাঁচা পেতে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না। আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝে সবসময়ই পরিমিত পরিমাণে খাবার চেষ্টা করবেন।
  • কাঁচা পেঁপে খাওয়ার আগে খুব ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। কারণ, অনেক সময় মাটির সংস্পর্শে থাকার কারণে এতে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
  • কাঁচা পেঁপে খাওয়ার আগে এর খোসা ভালো করে একটি চাকু বা বটির সাহায্যে ছাড়িয়ে নিন। খোসা ছাড়ানোর সময় খেয়াল পেঁপের সাদা অংশে যেন খোসার সবুজ অংশটি না লেগে থাকে।
  • কাঁচা পেঁপে খাবার আগে আপনি ছোট ছোট টুকরো করে কাটুন বা লম্বা ফালি করে কেটে নিন। এতে খেতে সুবিধা হবে।
কাঁচা পেঁপে যেভাবে আপনি খাবেন
  • সালাদ হিসেবেঃ আপনি কাঁচা পেঁপে সালাদ হিসেবে খেতে পারেন। এর জন্য পেঁপের খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এরপর পেঁপের টুকরো শসা, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে একটি সালাদ তৈরি করে ফেলুন। সালাদের স্বাদ বাড়াতে আপনি সাথে অলিভ অয়েল কিংবা লেবুর রসও যোগ করতে পারেন।
  • জুস হিসেবেঃ আপনি চাইলে কাঁচা পেঁপের জুস তৈরি করেও খেতে পারেন। এর জন্য কাঁচা পেঁপে টুকরো করে কেটে একটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে রস তৈরি করে নিন। রস তৈরি হয়ে গেলে এতে স্বাদমতো মধু এবং লেবুর রস যোগ করে খেয়ে নিন।
  • সবজি হিসেবেঃ সালাদ এবং জুস ছাড়াও আপনি কাঁচা পেঁপে রান্না করে কিংবা ভর্তা করেও খেতে পারেন। তাছাড়া সবজি হিসেবে রান্না পেঁপে পেটের পক্ষে ভীষণ উপকারী।
  • পেঁপের রায়তাঃ আপনি কাঁচা পেঁপে টুকরো করে কেটে দইয়ের সাথে মিশিয়ে রাইতা তৈরি করে ফেলুন। রায়তা তৈরিতে আপনি অতিরিক্ত কিছু মসলা যেমন- জিরা পাউডার, ধনেপাতা যোগ করতে পারেন।
  • পেঁপের চাট হিসেবেঃ কাঁচা পেঁপে দিয়ে আপনি পেঁপের চাট তৈরি করেও খেতে পারেন। এর জন্য কাঁচা পেঁপে টুকরো করে কেটে এর সাথে লেবুর রস, বিটনুন, কাঁচা লঙ্কা, কুচানো ধনেপাতা, তেতুলের আচার একসাথে মিশিয়ে একটি মজাদার চাট তৈরি করে ফেলুন। পেঁপের এই চাট খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়।
  • পেঁপের হালুয়াঃ পেঁপের হালুয়া খেতে কম বেশি সকলেই পছন্দ করেন এবং এটি অতি পরিচিত একটি খাদ্য উপাদান। আপনি চাইলে এই কাঁচা পেঁপে দিয়ে হালুয়া তৈরি করেও খেতে পারেন।
  • স্মুদির সাথেঃ স্মুদির সাথে অন্যান্য ফলমূলের সাথে আপনি পেঁপেও যোগ করে খেতে পারেন। স্মুদি হিসেবে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনাকে অতি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।

সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা পেঁপে কোন সময়ে খেলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে তা ইতিমধ্যেই জেনেছেন। এবার চলুন সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানবেন--
  • সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খেলে পেঁপেতে থাকা প্যাপেইন এনজাইম আপনার হজম ক্রিয়া সহজ করে। ফলে আপনার পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে।
  • কাঁচা পেঁপে সকালে খাওয়ার ফলে আপনার মেটাবলিজম বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি আপনার শরীরের শক্তি উৎপাদনে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরাতে সাহায্য করে। এতে করে আপনার ওজন কমতে থাকে।
  • নিয়মিত সকালে কাঁচা পেঁপে খেলে কি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • সকালে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি সারা দিনের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দিয়ে থাকে।
  • সকালে এক ফালি কাঁচা পেঁপে খেলে এতে থাকা ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিনয়েড ত্বককে মোলায়েম ও মসৃণ করে। সেই সাথে ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমিয়ে ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। 
  • কাঁচা পেঁপে অত্যন্ত কম ক্যালরিযুক্ত এবং প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার ফলে সকালে একফালি কাঁচা পেঁপে খেলে এটি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত আপনার পেট ভরা রাখে। এতে করে অন্যান্য খাবার খাওয়ার প্রতি আপনার চাহিদা কমে এবং ওজনও ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
  • কাঁচা পেঁপে মা-বোনদের মিন্সট্রুয়াল সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং পিরিয়ডের সময় ব্যাথা এবং অস্বস্তি কমাতে আপনি সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খেতেই পারেন। 
  • সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কারণ, পেঁপে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। 
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনয়েড। যা কিনা চোখের জন্য উপকারী। ফলে সকালে কাঁচা পেঁপে খেলে আপনি খুব স্বাভাবিকভাবেই রাতকানা এবং চোখের অন্যান্য রোগ থেকে রেহাই পেতে পারেন।
  • খালি পেটে কাঁচা পেটে খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। এতে করে আপনার লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
  • সকালবেলা কাঁচা পেঁপে পরিমাণ মতো খেলে পেঁপের ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বককে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করে এবং ত্বক সজীব রাখে।
  • আপনি যদি নিয়মিত সকালে পেটে খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে আপনার হার্টও সুস্থ থাকবে। কারণ, সকালে খালি পেটে পেঁপে খেলে এটি শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে। এতে আপনার স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
সম্মানিত পাঠক, কাঁচা পেঁপের উপরিউক্ত উপকারিতা পেতে আপনি আজ থেকেই সকালে খালি পেটে কাঁচা পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করুন। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।

কাঁচা পেঁপে রান্না করে খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা পেঁপে সাধারণত সবজি হিসেবে রান্না করেই বেশি খাওয়া হয়। কাঁচা পেঁপে রান্না করে খাওয়ারও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
  • কাঁচা পেঁপে সাধারণত রান্না করলে পেঁপের কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কমে যায়। কিন্তু এতে থাকা অন্যান্য উপাদান যেমন ভিটামিন এ, পটাশিয়াম এবং ফাইবার আপনার শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।
  • যারা দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যায় ভুগছেন তারা কাঁচা পেঁপে রান্না করেও খেতে পারেন। কাঁচা পেঁপেতে প্যাপেইন নামক একটি এনজাইম রয়েছে যা প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে। এটি পেটের যেকোনো ধরনের অস্বস্তি গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  • কাঁচা পেঁপে ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ। ফলে সবজি হিসেবে কাঁচা পেঁপে রান্না করে খেলে এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করে।
  • কাঁচা পেঁপে রান্না করে খেলে পেঁপের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্লাভোনোয়েডস খুব সহজেই আপনার শরীরে শোষিত হতে পারে। আর এই সমস্ত উপাদান আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
  • রান্না করে পেঁপে খেলে এটি আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। আপনার কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর ভেতর থেকে সুস্থ থাকে।
  • প্রচন্ড গরমে কাঁচা পেঁপে রান্না করে খেলে এটি আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং পেট ঠান্ডা রাখে।
  • আপনার পেটের যে কোন ক্ষত সারাতে বিশেষ করে পাকস্থলীতে ঘা বা ক্ষত সারাতে আজ থেকেই কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে খাওয়া শুরু করুন। কারণ, কাঁচা পেঁপে ক্ষত সারাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • কাঁচা পেঁপে মায়েদের বুকের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি গর্ভাবস্থায় পুষ্টি উপাদানের যোগান দেয় এবং প্রসবের পরে শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
  • রান্না করা কাঁচা পেঁপে খেলে  এটি শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে।
  • কাঁচা পেঁপে বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খাওয়া যায়। এটি খাবারের যেমন স্বাদ বৃদ্ধি করে তেমনি আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকা কে আরো সুস্বাদু করে তোলে।
সম্মানিত পাঠক, কাঁচা পেঁপের এই উপকারিতা গুলো পেতে আপনি বিভিন্ন শাক সবজির সাথে, মাছ কিংবা মাংসের সাথে, পেঁপে ভাজি করে এবং ডালের সাথেও রান্না করে খেতে পারেন।

কাঁচা পেঁপে খেলে কি গ্যাস হয়

আপনারা অনেকেই জানতে চান কাঁচা পেঁপে খেলে গ্যাস হয় কিনা। তাহলে জেনে রাখুন, কাঁচা পেঁপে খেলে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে খান। কারণ, কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রাকৃতিক এনজাইম প্যাপেইন থাকে। যা কখনো কখনো আপনার পাচনতন্ত্রের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়েও  দাঁড়াতে পারে।
 
তাছাড়া পেপেতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকে। আর অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ করার ফলে আপনার পেট ফাঁপা, পেটে গ্যাস এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের অতিরিক্ত অ্যাসিডিক বা তিক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস নেই। তাছাড়া আপনাদের যাদের আগে থেকেই পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন ধরুন-
 
গ্যাস্ট্রাইটিস, আলসার বা আন্ত্রিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের অতিরিক্ত কাঁচা পেঁপে না খাওয়াটাই ভালো। তাই বলবো কাঁচা পেঁপে খাওয়ার সময় আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন। যা আপনার শরীর সহ্য করতে পারে। এতে করে আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে না এবং হজমও সহজ হবে।

গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় সাধারণত কাঁচা পেঁপে খেতে বারণ করা হয়। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কাঁচা পেঁপে সার্বিকভাবে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও গর্ভাবস্থায় এটি না খাওয়াই ভালো। তো চলুন গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে কি হতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন-
কাঁচা-পেঁপের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-বিস্তারিত-জেনে-নিন
  • মিসক্যারেজের ঝুঁকিঃ কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে প্যাপেইন এনজাইম থাকে। ফলে গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে এটি আপনার গর্ভের পেশীতে সংকোচনের সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে না খাওয়াটাই উত্তম।
  • পেটের সমস্যাঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে অনেক সময় পেট ফাঁপা পেটে গ্যাস কিংবা আপনার পাচনতন্ত্রেও সমস্যা হতে পারে। যা গর্ভাবস্থায় আপনার পেটে অস্বস্তির কারণ হতে পারে এবং সেই সাথে গর্ভস্থ শিশুর জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • এলার্জির প্রতিক্রিয়াঃ কাঁচা পেঁপেতে ল্যাটিক্স নামক একটি উপাদান থাকে। যা মানুষের শরীরে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। আর গর্ভবতী মায়ের এলার্জির সমস্যা থাকলে এই সময় কাঁচা পেঁপে খেলে এলার্জির প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।
  • রক্তচাপের প্রভাবঃ কাঁচা পেঁপে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আপনার রক্তচাপে প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় রক্তচাপের অতিরিক্ত ওঠানামা একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ ভ্রুনের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।
  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করেঃ কাঁচা পেঁপে কিছুটা উষ্ণ প্রকৃতির। ফলে গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
  • পুষ্টির অভাবঃ গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে রান্না করে খেলে পেঁপের কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন সি এবং এনজাইনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। এতে করে আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।

কাঁচা পেঁপে খেলে কি ওজন কমে

কাঁচা পেঁপে খেলে কি ওজন কমে এই প্রশ্ন অনেকেরই। দেখুন কাঁচা পেঁপে আপনার ওজন কমাতে কিছুটা সহায়ক হতে পারে। কিন্তু ওজন কমাতে কাঁচা পেঁপেই একমাত্র সমাধান নয়। কাঁচা পেঁপেতে সাধারণত কম ক্যালোরি, উচ্চ ফাইবার এবং জলীয় অংশ বেশি থাকে। ফলে কাঁচা পেঁপে খেলে এটি দীর্ঘ সময় আপনার পেট পরিপূর্ণ রাখে এবং অন্যান্য খাবারের প্রতি চাহিদা কমায়। এছাড়াও কাঁচা পেঁপে আপনার হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। 
 
যা আপনার শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরাতে সহায়ক হতে পারে। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই খানিকটা আপনার ওজন কমলেও কমতে পারে। তাই ওজন কমাতে শুধুমাত্র কাঁচা পেঁপের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। বরং আপনি আপনার দৈনন্দিন সুষম খাদ্য ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়ামের সাথে কাঁচা পেঁপে যোগ করতে পারেন। তবেই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

পেঁপের কষ খেলে কি হয়

কাঁচা পেঁপে আপনি কোন সময় খাবেন তা আজকের আলোচনা থেকে ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন। পেঁপের কষ খাওয়া সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। তবে অতিরিক্ত না খেয়ে সীমিত পরিমানে খাওয়াটাই ভালো। পেঁপের কষে ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রোটিন থাকে। যা কিনা আপনার হজমে সহায়ক এবং শরীরের নানা ধরনের উপকারে আসে। 
 
তবে অতিরিক্ত পরিমাণে পেঁপের কষ খেলে এর উচ্চ ফাইবার আপনার পেটে গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যা আপনার পেটের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া কাঁচা পেঁপের কষ খুবই তিক্ত স্বাদের হয়ে থাকে। যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খুব সহজেই পাকস্থলীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই পেঁপের কষ অতিরিক্ত না খেয়ে আপনি পরিমাণ মত খাওয়ার অভ্যাস করুন। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

কাঁচা পেঁপের পুষ্টিগুণ

কাঁচা পেঁপের এতসব উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই কাঁচা পেঁপের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চান। সম্মানিত পাঠক,  এবার আপনাকে জানাবো কাঁচা পেঁপের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। তো চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা পেতে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন---
পুষ্টি উপাদান পরিমাণ
খাদ্য শক্তি ৩৯ কিলো ক্যালরি
প্রোটিন ০.৫ গ্রাম
শর্করা ৯.৮ গ্রাম
ফ্যাট ০.১ গ্রাম
ফাইবার ১.৭ গ্রাম
ভিটামিন এ ৪৭৩ IU
ভিটামিন সি ৬০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম ২৬৪ মিলিগ্রাম
ফোলেট ৩৯ মাইক্রোগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

কাঁচা পেঁপের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এই পেঁপের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক প্রশ্ন উপাদান রয়েছে যা আপনার বহু জটিল রোগও সারিয়ে তুলতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কাঁচা পেঁপে শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয় বরং আপনার ত্বক এবং চুলের জন্যও বিশেষভাবে উপকারী। পেঁপের এতসব গুণাবলির জন্য পুষ্টিবিদরা পেঁপেকে সুপারফুড বলে আখ্যায়িত করেন। 
 
তাছাড়া পেঁপে দামে সহজলভ্য এবং সারা বছর জুড়েই বাজারে খুব সহজেই পাওয়া যায়। তাহলে আপনি পেঁপে কেন খাবেন না বলুন তো!! আপনার নিজের শারীরিক সুস্থতা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সুস্থতার কথা ভেবে হলেও আজ থেকেই খাদ্য তালিকায় কাঁচা অথবা পাকা পেঁপে যোগ করে নিন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url