লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে বিস্তারিত পড়ুন

লাল শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন? গর্ভাবস্থায় লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্ক আপনি কি অবগত আছেন? যদি না থাকেন তাহলে সঠিক জায়গায় এসেছেন।

লাল-শাকের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
কারণ, আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি জেনে নিতে পারবেন লাল শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা  এবং সেই সাথে গর্ভকালীন সময়ে লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা সহ লাল শাক সম্পর্কিত যাবতীয় খুঁটিনাটি সকল তথ্য। তাহলে চলুন ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা

লাল শাকের উপকারিতা

লাল শাকের উপকারিতা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর লাল শাক খাওয়ার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন। তাছাড়া লালশাক টকটকে লাল হওয়ার কারনে শিশুরাও এই শাক খেতে বেশ পছন্দ করে। প্রিয় পাঠক, আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই লাল শাক খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন সে সম্পর্কে-

আরো পড়ুনঃ  সজনে ডাটার ১০ টি কার্যকরী উপকারিতা ও  অপকারিতা

  • পুষ্টিগুণে ভরপুরঃ লাল শাক লাল শাকে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬ এবং ফলিক এসিড সহ আরো অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যা আপনার শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক।
  • রক্তস্বল্পতা থেকে মুক্তি দেয়ঃ যারা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন লাল শাক তাদের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ খাদ্য উপাদান। কারণ, লালশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্তর বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে লাল শাক খেলে খুব সহজেই আপনি অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
  • হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ বয়সজনিত কারণে আপনাদের যাদের হাড়ের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয় বা যাদের হাড় ক্ষয়ে গেছে তারা আজ থেকেই নিয়মিত লাল শাক খাওয়া শুরু করুন। কেননা লাল শাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে যা আপনার হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নতিতে সহায়ক।
  • হজমের সহায়ক হিসেবেঃ লাল শাক প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বা আপনার হজম জনিত কোন সমস্যা থাকলে লাল শাক খেতেই পারেন। এতে করে আপনার হজম ক্রিয়া সহজ হবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হবে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে লাল শাকঃ আপনার কি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে? কোনভাবেই রক্তচাপ নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারছেন না। তাহলে বলব আপনি নিয়মিত লাল শাক খান। কারণ লাল শাকের পটাশিয়াম আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করবে এবং সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করবে।
  • চোখ ভালো রাখতে লাল শাকঃ বর্তমান ডিজিটাল সময়ে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে ছোট শিশু বলুন আর বড় মানুষ বলুন প্রায় কম বেশি সকলেরই চোখের সমস্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে? এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন লাল শাক। কারণ, লাল শাকে থাকা লুটেইন এবং জেক্সথিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার চোখ ভালো রাখে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ত্বক ভালো রাখেঃ নিয়মিত লাল শাক খেলে এতে থাকা ভিটামিন সি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। এতে করে আপনার ত্বক সজীব প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পায়।
  • বার্ধক্য জনিত বয়সের ছাপ কমাতেঃ লাল শাক প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা আপনাকে খুব সহজেই বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে। ফলে নিয়মিত লাল শাক খেলে এটি আপনার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
  • বিষাক্ত পদার্থ অপসারণঃ লাল শাক রয়েছে ডিটক্সিফায়িং বৈশিষ্ট্য যা আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে আপনার শরীর ভেতর থেকে সতেজ এবং চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
  • গর্ভাবস্থায় লালশাকঃ গর্ভাবস্থায় লালশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, লাল শাকে যে ফলিক এসিড রয়েছে তা একজন গর্ভবতী মা এবং গর্ভস্থ ভ্রূণের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে লাল শাকঃ লাল শাকে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আপনার শরীরের মেটাবলিজমকে দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয় এবং মেটাবলিক ফাংশন গুলোকে সক্রিয় রাখতে কাজ করে।
  • রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায়ঃ নিয়মিত লাল খাওয়ার ফলে এটি আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে পুষ্টি এবং অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে।
  • এসিডিটি কমাতেঃ যাদের অতিরিক্ত পরিমাণ গ্যাস অম্বলের সমস্যা রয়েছে তারা এসিডিটি কমাতে নিশ্চিন্তে লাল শাক খেতে পারেন। কেননা, এই শাকের খনিজ উপাদানগুলি এসিডিটি কমাতে বেশ সহায়ক।
  • মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ লাল শাকে বিদ্যমান ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে এবং স্মৃতিশক্তি বর্ধক হিসেবে কাজ করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ লাল শাকের গ্লাইসেমিক সূচক কম থাকে। যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বিশেষভাবে কার্যকরী। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাল শাক অত্যন্ত উপকারী একটি শাক।

লাল-শাকের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • পানি শূন্যতা দূর করেঃ লাল শাকে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ জলীয় অংশ যা আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে। সুতরাং শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে আপনি আজ থেকেই আপনার খাদ্য তালিকায় লালশাক অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন।
  • শক্তি বৃদ্ধি করেঃ লাল শাকের পুষ্টিগুণ এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন আপনার শরীরে অতিরিক্ত শক্তি যোগায় যা কিনা দৈনন্দিন কাদের জন্য আপনাকে সক্রিয় রাখে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেঃ লাল শাকে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা আপনার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে দেয়।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ লালশাকে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ সহ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক। কারণ, লাল শাক খেলে এটি শরীর থেকে টক্সিন অপসারণ করে এবং শরীরে ক্যান্সার উৎপাদনের কোষ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে।  ফলে নিয়মিত লাল শাক খেলে আপনি দুরারোগ্য ক্যান্সার থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। 
  • ওজন কমায়ঃ যারা ওজন কমাতে চান তারা আজ থেকেই লাল শাক খাওয়া শুরু করে দিন। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। যা শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে কাজ করে।
  • দাঁত ভালো রাখেঃ লাল শাকে রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু খনিজ পদার্থ। যা আমাদের দেহের অস্থি গঠনে, দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • কিডনি ভালো রাখেঃ আপনাদের যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তারা কিডনি ভালো রাখতে লাল শাক খেতে পারেন। কারণ, নিয়মিত লাল শাক খেলে এটি কিডনির অতিরিক্ত সল্ট এবং টক্সিন বের করে দেয়। সেই সাথে কিডনির কার্যকারিতাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
  • শারীরিক জটিলতা দূর করেঃ অনেক সময় আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম জমে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। এগুলো খুব সহজে প্রতিরোধ করতে পারে লাল শাক।
সম্মানিত পাঠক, লাল শাক ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাই বলবো লাল শাকের এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা গুলোপেতে আপনি আজ এখন থেকেই নিয়মিত লাল শাক খাওয়া শুরু করুন।

লাল শাকের অপকারিতা

লাল শাকের উপকারী দিকের সাথে এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। আর খাদ্য উপাদান হিসেবে এটি থাকবেই। কেননা প্রত্যেকটি খাদ্য উপাদানেরই উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা থাকে। ফলে একটি খাদ্য উপাদান যতই পুষ্টি গুণ সম্পূর্ণ হোক না কেন আপনাকে নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। এবার চলুন অতিরিক্ত লাল শাক খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-

আরো পড়ুনঃ  পাট শাকের ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দানঃ লাল শাকের মধ্যে অক্সালেট নামক একটি যৌগ রয়েছে যা আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। এই অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে একটি বন্ধন তৈরি করে, যা আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা পূরণে বাধার সৃষ্টি করে। এতে করে আপনার হাড়ের সমস্যা এবং হাড়ের দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
  • থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা প্রভাবিত করেঃ অতিরিক্ত পরিমাণে লাল শাক খেলে এই শাকের গোজেনিক্স উপাদান আপনার থাইরয়েড গ্রন্থের কার্যকারিতা কে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে যারা হাইপো থাইরয়েডিজমের রোগী তাদের জন্য এটি মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • কিডনিতে পাথর সৃষ্টিঃ আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে লাল শাক খেতে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে। কারণ, লাল শাকের উচ্চ অক্সালেট আপনার কিডনিতে পাথর তৈরিতে সহায়ক। তাই যাদের কিডনি পাথর এর সমস্যা রয়েছে তারা পরিমিত পরিমাণে লাল শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • হজমের সমস্যাঃ লাল শাক অত্যধিক পরিমাণে খেলে এর উচ্চ ফাইবার আপনার পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং পেট ব্যথার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে আপনার স্বাভাবিক হজম ক্রিয়া বাধগ্রস্থ হতে পারে।
  • দাঁতের এনামেল নষ্ট করেঃ লাল শাকের অক্সালেট নামক যৌগ আপনের দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে এবং দাঁতের অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি তখনই হবে যখন আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে লাল শাক খাবেন।
  • ডায়াবেটিস ঔষধের সাথে বিক্রিয়াঃ যারা ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত ঔষধ সেবন করেন তাদের লাল খুবই অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। কেননা এই শাকের গ্লাইসেমিক সূচক এবং পুষ্টিগুণের প্রভাবে আপনার ঔষধের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর লাল শাকঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে লাল শাক হওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। শুধু তাই নয়, লাল শাকে থাকা উচ্চ ভিটামিন কে স্তন্যদায়ী মায়েদের রক্তপাতের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • রক্তচাপ কমিয়ে দেয়ঃ লাল শাকে নাইট্রেটের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। ফলে যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা অত্যধিক পরিমাণে লালশাক না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খান।
  • প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়ঃ লালশাক সাধারণত প্রাকৃতিক মুত্র বর্ধক হিসেবে কাজ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত পরিমাণে লাল শাক খেলে আপনার বারবার সমস্যা হতে পারে।
  • মূত্র রং পরিবর্তনঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে লাল শাক খেতেই থাকলে আপনার মূত্রের রং লাল কিংবা গোলাপী হতে পারে। এটি সাধারণত হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতির কারণে হয়ে থাকে। যদিও এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, কিন্তু অনেক সময় মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ আপনি কি জানেন লাল শাক হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করতে পারে? হ্যাঁ লাল শাকের রয়েছে বিটাইন নামক একটি উপাদান যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। বিশেষ করে থাইরয়েড এর কার্যকারিতার ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 
  • রক্তে আয়রন বৃদ্ধির সমস্যাঃ লাল শাকের উচ্চ মাত্রার আয়রন থাকে এ কথা আমরা সকলেই জানি। তবে অতিরিক্ত আয়রন শরীরে জমা হলে এটির কারণে আপনার হেমোক্রোমাটোসিস এর মত সমস্যা হতে পারে।
  • এলার্জির সমস্যাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে লাল শাক খেলে কখনো কখনো এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার ত্বকে রেস, চুলকানি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়ঃ লাল শাক খেলে এটি মরণঘাতী ক্যান্সার রোগ থেকে রক্ষা করে এ কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বর্তমান সময়ে  এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত যে সকল শাকসবজি এবং ফলমূলে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভারী ধাতুর সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে লাল শাক একটি।
  • শরীরের মেটাবলিজমের প্রভাবঃ অত্যধিক পরিমাণে লাল শাকে খেলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যা সাধারণভাবে শরীরে শক্তির অভাব সৃষ্টি করতে পারে এবং আপনার পুষ্টির ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে।

সম্মানিত পাঠক, লাল শাকের এতসব পুষ্টিগুণ থাকা সত্ত্বেও উপরিউক্ত এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোও অস্বীকার করার মত নয়। তাই বলবো অতিরিক্ত পরিমাণে লাল খাওয়ার আগে এর অপকারিতা গুলোও আপনার বিবেচনায় রাখা উচিত।

লাল নটে শাকের উপকারিতা

লাল নোটে শাকের উপকারিতাও কম নয়। লাল নটে শাক যা সাধারণত লাল শাক বা বিট শাক নামেও পরিচিত। এবার আসুন লাল নটে শাক খেলে আপনি এর থেকে কি কি উপকারিতা পেতে পারেন তা জেনে নিন-

আরো পড়ুনঃ  তুলসী পাতার ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা

  • লাল নটে শাক অত্যন্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি শাক। যাতে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ফলিক এসিড বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান যেমন- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি রয়েছে। আর এইসব উপাদান আমাদের সকলেরই সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অত্যন্ত জরুরী।
  • লাল নটে শাক খাওয়ার ফলে এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্তর বাড়াতে পারে। যার ফলে আপনার অ্যানিমিয়া সমস্যা দূর হতে পারে।
  • নিয়মিত লাল নটে শাক খেলে এটি আপনার হাড়ের দুর্বলতা বা অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাছাড়া এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে তা আপনার হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সহায়ক।
  • লাল নটে শাক ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি আপনার পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং সেই সাথে আপনার পেটের স্বাস্থ্য অর্থাৎ বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করে।
  • লাল নটে শাকে রয়েছে বিটালেইন্স নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে ফ্রি রেডিক্যালস এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারে এবং বয়সজনিত রোগ গুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
  • নিয়মিত লাল নটে শাক খাওয়ার ফলে এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কারণ এই শাকের পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • লাল নোটে শাকে খুব কম ক্যালরি থাকে এবং উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এর ফলে আপনার অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি চাহিদা কমে এবং প্রাকৃতিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রিত হয়।
  • শুধু তাই নয়, লাল নটে শাকে থাকা ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনয়েড দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে এবং বয়সজনিত চোখের সমস্যা প্রতিরোধে খুব ভালো কাজ করে।
  • ত্বক এবং চুলের জন্যও উপকারী লাল নটে শাক। কারণ, এই শাকে থাকা ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ যা ত্বক ও চুল ভালো রাখে। ফলে নিয়মিত লাল নটে শাক খেলে এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং অতিরিক্ত চুল পড়ার প্রবণতা কমায়।
  • আবার লাল নটে শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন কে রয়েছে যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং সেই সাথে হাড়ের ঘনত্ব বাড়িয়ে হাড় মজবুত করে।
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে লাল নটে শাক পাচনতন্ত্রে এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে এই শাক খাওয়ার পর এটি আপনার শরীরের পুষ্টি শোষণ বৃদ্ধির মাধ্যমে শরীরকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।
  • হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে লাল নোটে শাক। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য যাদের হরমোন জনিত সমস্যা বা মেনোপেজের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য লাল নটে শাক খুবই উপকারী একটি শাক।
  • লাল নটে শাক খেলে এটি মূত্রনালী পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি মূত্রথলির যেকোনো ধরনের সংক্রমণ কমাতেও কাজ করে।
  • লাল নটে শাকে থাকা ভিটামিন মিনারেল খনিজ উপাদান আপনার শরীরের বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।

লাল শাকে কি ভিটামিন আছে

লাল শাকে কি ভিটামিন আছে জানতে চান?। লাল শাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন রয়েছে যা আপনার শরীরের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার জন্য অত্যন্ত উপকারী। এবার চলুন লাল শাকে কি কি ভিটামিন রয়েছে এবং এদের কাজ কি সে সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি--

  • ভিটামিন এঃ লাল শাকের ভিটামিন এ আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রেটিনার স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখে।
  • ভিটামিন সিঃ লাল শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি, যা আপনার শরীরে অ্যান্ট অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম কি শক্তিশালী করে তোলে।
  • ভিটামিন কেঃ লাল শাকের ভিটামিন কে আপনার রক্ত ক্লোটিং এর প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন কে আপনার হাড়ের মেটাবলিজম এবং ক্যালসিয়াম শোষণের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিটামিন বি৬ঃ লাল শাকে রয়েছে ভিটামিন বী৬ যা কিনা আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
  • ফলিক এসিডঃ লাল শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিডে রয়েছে। আর এই ফলিক অ্যাসিড গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সহায়ক।
  • ভিটামিন ইঃ লাল শাকে ভিটামিন ই পাওয়া যায় যা আমাদের সকলের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং সেই সাথে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • ভিটামিন বি১২ঃ লাল শাকে ভিটামিন বি এর পরিমাণ যদিও কম পরিমাণে থাকে, তবু এটি আমাদের শরীরের নিউরোনাল ফাংশন এবং রক্ত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

লাল শাকের এই ভিটামিন গুলি আমাদের শরীরের বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ফলে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান হিসেবে আপনি আপনার খাদ্য তালিকায় লাল শাক অন্তর্ভুক্ত করতেই পারেন।

লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম

লাল শাকের বৈজ্ঞানিক নাম Amaranthus gangeticus এবং ইংরেজি নাম Red Amaranth Red Spinach. এটি একটি এক বর্ষজীবী উদ্ভিদ। যা সাধারণত ২-২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে এর উচ্চতা সাধারণত নির্ভর করে মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশের ওপর। এই গাছ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠে এবং এর শিকড় গুল্ম জাতীয় হয়।

এর পাতাগুলো হালকা কালচে লাল বা টকটকে লাল কিংবা উজ্জ্বল সবুজ রঙের হয়। কিছু কিছু জাতের লাল শাকের পাতা আবার সবুজ বা রক্তচক্ষু মিশ্রিত রংয়েরও হয়ে থাকে। লাল শাকের পাতা আয়তকার দিক থেকে চ্যাপ্টা হয় এবং এর পাতা মসৃণ তেল তেলে। লাল শাক গাছের ফুল সাধারণত ছোট লাল-সবুজাভ রঙের হয়। তবে এই গাছের মূল আকর্ষণ হল এর রঙিন পাতা। 

লাল শাক সাধারণত উষ্ণ জলবায়ুতে অর্থাৎ যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোক এবং জলের সরবরাহ থাকে সেখানে ভালো জন্মে। সাধারণত গরম, আদ্র এবং সূর্যতপ্ত অঞ্চলে এটি খুব ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। লাল শাক গাছ এমন মাটিতে ভালো জন্মে যেখানে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকে এবং মাটি হালকা বা মাঝারি দো-আঁশ মাটি হয়।

সাধারণত লাল শাকের জন্য মাটির পিএইচ এর মাত্রা ৬-৭ এর মধ্যে থাকলে ভালো হয়। লাল শাক কিছুদিন আগেও শুধুমাত্র শীতকালে পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে এটি সারা বছরই পাওয়া যায়। শীতকাল ছাড়াও লাল শাক গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালেও ভালো জন্মে। লাল শাক  অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং ভিটামিন, মিনারেলস, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি শাক যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী।

টবে লাল শাক চাষ পদ্ধতি

টবে লাল শাক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। যদিও বাজার থেকে আপনি সরাসরি লাল শাক কিনেই খেতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় এই শাক টাটকা সতেজ হয় না। ঠিক সে কারণেই আপনি আপনার বাড়ির ছাদে টবে করে খুব সহজ পদ্ধতিতে লাল শাক চাষ করতে পারেন। এবার চলুন আপনি টবে কিভাবে লাল শাক চাষ করবেন সে উপায় সম্পর্কে জেনে নিন-
টব ও মাটি নির্বাচন

  • টব নির্বাচনঃ ছাদে লাল শাক চাষের জন্য আপনি এমন একটি টব নির্বাচন করুন যা অন্তত ১২-১৮ ইঞ্চি পরিমাণ গভীর ও প্রশস্ত হয়। সাথে টবের তলায় অবশ্যই কিছু ছিদ্র করে নেবেন যাতে করে অতিরিক্ত জল খুব সহজেই নিষ্কাশিত হতে পারে এবং টবে অতিরিক্ত জল না জমে।
  • মাটি নির্বাচনঃ লাল শাক চাষের জন্য হালকা উর্বর মাটি নির্বাচন করুন। এক্ষেত্রে আপনি গার্ডেনিং মাটি, কম্পোস্ট, গোবর সার এবং কিছু বালু মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন মাটির ph এর মাত্রা যেন ৬-৭ এর মধ্যে থাকে।

সার প্রয়োগ

  • চাষের আগেঃ লাল শাক চাষের আগে আপনি মাটিতে ১০-২০ গ্রাম সার মিশিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন। যাতে করে সারের পুষ্টি উপাদান মাটির সাথে ভালোমতো মিশে যায়।
  • চাষের পরেঃ লাল শাক চাষের জন্য আপনাকে নিয়মিত সার দিতে হবে এবং এর জন্য আপনি প্রতি ২-৩ সপ্তাহ অন্তর দানাদার সার প্রয়োগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে কম্পোস্ট বা জলীয় সার ব্যবহার করা ভালো।

বীজ বপন ও রোপন

  • বীজ বপনঃ টবের মাটির উপর আপনি বীজ সমান ভাবে ছড়িয়ে দিন এবং হালকা ভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন। মনে রাখবেন, লালশাকের বীজ বপনের ক্ষেত্রে কোন গর্ত করার প্রয়োজন পড়ে না। শুধুমাত্র বীজ মাটির ওপর ছিটিয়ে দিলেই হবে। আরেকটি কথা, বীজ বপনের পূর্বে আপনি অবশ্যই ভালো মানের লাল শাকের বীজ সংগ্রহ করুন। কেননা বাজারে বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন মানের লাল শাকের বীজ পাওয়া যায়। তাই ভালো মানের বীজ বপন করলে তাতে ফলনও ভালো হবে।
  • চারা রোপনঃ আপনি যদি বীজ ছাড়া লাল শাকের চারা লাগাতে চান, সেক্ষেত্রে প্রথম টবের মাঝখানে এক বা দুইটি গর্ত করে প্রতিটি গর্তে একটি করে চারা লাগান এবং দুটি চারার মধ্যে ১০-১৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব বজায় রাখুন।

আলো ও তাপমাত্রা

  • রোদঃ লাল শাক চাষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোকের প্রয়োজন পড়ে। তাই আপনি টবটি এমন স্থানে রাখুন যেখানে দিনে কমপক্ষে ৪-৬ ঘন্টা সরাসরি সূর্যের আলো পড়বে। তবে অতিরিক্ত গরমে আবার গাছের পাতাগুলো ঝলসে যেতে পারে তাই কিছুটা ছায়ারও প্রয়োজন আছে।

পানির সেচ দেওয়া

  • লাল শাকের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সেচের প্রয়োজন পড়ে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন মাটি যেন সবসময় ভিজে বা স্যাতসেতে থাকে কিন্তু জলবদ্ধতা যেন না হয়। কারণ, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে তাতে গাছের শিকড় পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং কোনভাবেই জলবদ্ধতা যেন না হয় তার জন্য আপনি টবের নিচে কয়েকটি ছিদ্র করে নিন। আপনি সপ্তাহে ২-৩ বার পানি দেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং গরমের দিনে আরো বেশি পানির সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

লাল শাক সংগ্রহ

  • শাক সংগ্রহঃ লাল শাক সাধারণত চাষের ৪-৬ সপ্তাহ বা ২৫-৩০ দিনের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়। পাতাগুলো যখন বেশ বড় এবং লাল বা সবুজ রংয়ের হবে আপনি তখন শাক খাওয়ার জন্য কাটতে পারেন। শাক কাটার সময় খেয়াল রাখবেন গাছের শিকড়ের যেন কোন ক্ষতি না হয়। এতে পরবর্তী সময় নতুন পাতা গজাতে সহজ হবে।
  • শাকের যত্নঃ পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই থেকে রক্ষা করতে আপনি নিয়মিত আপনার লাল শাকের টব পর্যবেক্ষণ করুন। অনেক সময় লাল শাকের পাতা পচে যায় বা হলদি বর্ণ ধারণ করে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান কেটে ফেলে দিন। আবার অনেক সময় লাল শাকের পাতা পোকামাকড়ের আক্রমণে মাঝে মাঝে ছিদ্র হয়ে যায়।
  • এর জন্য আপনি ইকো সিস্টেম ফ্রেন্ডলি পেস্টিসাইড ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখবেন খুব বেশি আদ্র পরিবেশে কিন্তু লাল শাক গাছে ফাঙ্গাস হতে পারে। তাই মাটির পানি সরবরাহের ব্যবস্থার দিকে সর্বদা খেয়াল রাখুন এবং প্রয়োজনে প্রাকৃতিক ফাঙ্গিসাইড প্রয়োগ করতে পারেন।

সম্মানিত পাঠক, টবে লাল শাক চাষ করা খুবই সহজ এবং লাভজনক। উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে খুব সহজেই আপনি আপনার বাড়ির ছোট্ট ছাদে টবে করে পুষ্টিকর লাল শাক চাষ করতে পারেন  এবং সারা বছর খেতে থাকুন টাটকা সতেজ পুষ্টিগুণে ঠাসা লালশাক।

লাল শাকের পুষ্টি উপাদান

লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই লাল শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে চান। লাল শাক একটি পুষ্টিকর সবজি এবং অনেক ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এবার চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম লাল শাকে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন--

পুষ্টি উপাদানপরিমাণ
ক্যালরি২৩ কিলোক্যালরি
প্রোটিন২.৯ গ্রাম
ফ্যাট০.৮ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট৩.৭ গ্রাম
ফাইবার১.৯ গ্রাম
ভিটামিন এ১৪৮৯ IU
ভিটামিন সি৩৪.২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে০.৯ মিলিগ্রাম
ফোলিক এসিড৪০ মাইক্রোগ্রাম
ক্যালসিয়াম৮০ মিলিগ্রাম
আয়রন১.৯ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম৮০ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম৩৭০ মিলিগ্রাম

গর্ভাবস্থায় লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা অনেক। লাল শাক খাওয়ার উপকারিতা পেতে আপনি আপনার গর্ভকালীন সময়েও লাল শাক খেতে পারেন। কারণ, লাল শাকে যে ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে তা একজন গর্ভবতী মায়ের এবং তার অনাগত শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবার চলুন গর্ভাবস্থায় লালশাক খেলে আপনি কি কি উপকারিতা পেতে পারেন সে সম্পর্কে জেনে নিন--

লাল-শাকের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-জানতে-বিস্তারিত-পড়ুন
  • ফোলেটের উৎস হিসেবেঃ লাল শাক ফোলেট অর্থাৎ ভিটামিন বি৯ সমৃদ্ধ। আর এই ফোলেট গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সিস্টেমের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
  • আয়রন সমৃদ্ধঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে আয়রনের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। অনেকেই আবার গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগতে থাকেন। অ্যানিমিয়ার এই সমস্যা দূর করতে আপনি লাল শাক খেতেই পারেন। কারণ, লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা গর্ভকালীন সময়ে শরীরের রক্তকণিকা উৎপাদন এবং অক্সিজেন পরিবহন করতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন কে এর উৎসঃ ভিটামিন কে এর ভালো উৎস হলো লাল শাক। আর এই ভিটামিন কে আপনার হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া সুগম করতে বেশ সহায়ক। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ভিটামিন কে মা ও শিশুর হাড়ের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
  • গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ লাল শাক ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস। এই ভিটামিন সি গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দেহে আয়রন শোষণ বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নয়, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রোগ সংক্রমণ বা সর্দি কাশি থেকেও রক্ষা পেতেও আপনি লাল শাক খেতে পারেন।
  • গর্ভাবস্থার কোষ্ঠকাঠিন্য রোধেঃ লাল শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার বা খাদ্য আঁশ রয়েছে। এই ফাইবার গর্ভকালীন সময়ে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজেই দূর করতে পারে। শুধু কোষ্ঠকাঠিন্য নয় বরং আপনার পেটের অন্যান্য সমস্যাগুলোর ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে লাল শাকঃ লাল শাকে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে। যা একজন গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য এবং তার অনাগত সন্তানকে সুস্থ রাখতে অতি প্রয়োজন।
  • সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করেঃ গর্ভাবস্থায় লাল শাক খেলে এটি মা এবং শিশুর রক্তে সুগারের স্তর নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এমনকি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে লাল শাক।
  • প্রাকৃতিক ডিটোক্সিফায়ারঃ লাল শাক একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে প্রাকৃতিক ডিটক্সিফাযার হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এটি শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে পারে। গর্ভাবস্থায় শরীরে যে কোন অপ্রয়োজনীয় টক্সিন জমে থাকতে পারে। যা অপসারণ এর সাহায্য করে লাল শাক। 
  • পানি শূন্যতা দূর করেঃ লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ থাকে। যা গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেলে এতে শরীরের পানি শূন্যতা দূর হয়।
  • পটাশিয়াম এর উৎসঃ লাল শাক পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস। যা গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়ক এবং উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকি কমায়। 
  • চোখ ভালো রাখেঃ লাল শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ থাকায় এটি গর্ভাবস্থায় চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • ক্যালসিয়ামের উৎসঃ লাল শাক ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস যা হাড় এবং দাঁতের গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ে ক্যালসিয়াম একজন গর্ভবতী মায়ের শরীর এবং তার শিশুর হাড় শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং সেই সাথে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।
এই সমস্ত উপকারিতার কথা ভেবে আপনি গর্ভাবস্থায় নিয়মিত লাল খেতে পারেন। তবে সব সময় পরিমিত পরিমানে খাবেন। কখনই অতিরিক্ত পরিমাণে খাবেন না। কারণ, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে তাতে উপকারের পরিবর্তে হিতে বিপরীত হতে পারে।

লাল শাকের জাতের নাম

লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর এবার আপনাকে লাল শাকের বিভিন্ন ধরনের জাত সম্পর্কে জানিয়ে দিব। লাল শাকের বিভিন্ন ধরনের জাত রয়েছে। যেমন আলতাপাতি, রক্ত লাল শাক, বারি লাল শাক-১, ললিতা লাল শাক, রক্তরাঙা লাল শাক, পিংকি কুইন, রক্ত জবা লাল শাক। এবার চলুন লাল শাকের এই জাতগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু তথ্য জেনে নিন--

  • আলতা পাতি লাল শাকঃ এটি এক বিশেষ ধরনের লাল শাক যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। এই শাকের পাতা টকটকে লাল বর্ণের হয়। আমাদের দেশে বেশিরভাগ আলতা পাতি লাল শাকের চাষ বেশি হয়ে থাকে। কারণ, এর চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে।
  • রক্ত লাল শাকঃ রক্ত লাল শাকের পাতা গুলি গাঢ় লাল এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু হয়। রক্ত লাল শাক শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ, এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং আয়রন ও অন্যান্য ভিটামিনের ভালো উৎস হল রক্ত লাল শাক।
  • বারি লাল শাক-১ঃ এটি বাংলাদেশের একটি উন্নত জাতের অধিক ফলনশীল লাল শাক। এতে লাল পিগমেন্টের পাশাপাশি ভালো পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে।
  • ললিতা লাল শাকঃ ললিতা লাল শাকের পাতাগুলি সাধারণত ছোট ও রং টকটকে লাল হয়। ললিতা লাল শাকের পাতা অন্যান্য লালশাকের থেকে তুলনামূলকভাবে নরম ও মসৃণ হয়। ললিতা লাল শাক  বিভিন্ন তরকারি বা রান্নাতেও ব্যবহার করা হয়।
  • রক্তরাঙা লাল শাকঃ রক্তরঙা লাল শাকের পাতাগুলো উজ্জ্বল লাল বর্ণের হয়। এই শাকের স্বাদ অন্যান্য লাল শাকের মতোই সুস্বাদু। রক্তরাঙা লাল শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকে। যা ত্বক ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  •  পিংকি কুইনঃ এটি একটি বিশেষ ধরনের লাল শাক যার পাতা সাধারণত গোলাপি বা লালচে গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। পিংকি কুইন লাল শাক হজমের জন্য উপকারী এবং সেইসাথে শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই শাক বিভিন্ন ধরনের সালাদের সাথে ব্যবহার করে খাওয়া হয়।
  • রক্ত জবা লাল শাকঃ রক্তের রক্ত জবা লাল শাক দেখতে ঠিক জবা ফুলের মতো রক্তবর্ণ। পাতাগুলি গাড়ো লাল বর্ণের হয়। রক্ত জবা লাল শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন সি থাকে।

লাল শাকের এই বিভিন্ন ধরনের জাতের মধ্যে কেবলমাত্র আলতাপাতি লাল শাকের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে এবং এই শাকের উপকারিতাও বেশি। আকর্ষণীয় গাড়ো লাল বর্ণের হওয়ায় এই শাক ছোট বড় সকলেই খেতেও খুব পছন্দ করে।

লাল শাকের বীজের দাম

লাল শাকের উপকারিতা অনেক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। লাল শাকের বীজের দাম এর জাত অনুযায়ী একেক রকম হয়ে থাকে। বাজারে বিভিন্ন জাতের লাল শাকের বীজ পাওয়া যায়। এবার আপনাকে জানিয়ে দিব কোন জাতের লাল শাকের বীজের দাম কত--

  • আলতা পাতি লাল শাকঃ আলতা পাতি লাল শাকের বীজ প্রতি ১০০ গ্রাম প্যাকেট আপনি পেয়ে যাবেন ৩০-৫০০ টাকায়।
  • রক্ত লাল শাকঃ রক্ত লাল শাকের প্রতি ১০০ গ্রাম প্যাকেট আপনি পাবেন ৩৫০-৬০০ টাকার মধ্যে।
  • বারি লাল শাক১ঃ উন্নত জাতের এই লাল শাক অধিক ফলনশীল এবং এর প্রতি ১০০ গ্রাম প্যাকেটের দাম পড়বে ৪০০-৭০০ টাকা।
  • ললিতা লাল শাকঃ বর্তমান সময়ে ললিতা লাল শাকের প্রতি ১০০ গ্রাম প্যাকেট আপনি ৩৫০-৬০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
  • রক্তরাঙা লাল শাকঃ বর্তমান বাজারে রক্তরাঙা লাল শাক বীজের প্রতি ১০০ গ্রাম প্যাকেট পাওয়া যায় ৩০০-৫০০ টাকার মধ্যে।
  • পিংকি কুইনঃ পিংকি কুইন লাল শাকের প্রতি ১০০ গ্রাম প্যাকেট সচরাচর ৩৫০-৫৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
  • রক্ত জবা লাল শাকঃ গারো লাল পাতার রক্ত জেবা লাল শাকের প্রতি ১০০ গ্রাম প্যাকেট ৩৫০-৫৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

তবে লাল শাকের বীজের দাম স্থান ভেদে, বাজার ভেদে কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। আপনি যদি নির্দিষ্ট দাম জানতে চান সে ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষি বাজার, কোন বীজের দোকান অথবা অনলাইন মার্কেটপ্লেস যেমন আমাজন বা ফেসবুকের কৃষি পণ্যের গ্রুপগুলোও দেখতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আশা করছি বিস্তারিতভাবে আজকের এই আর্টিকেল থেকে আপনি জানতে পেরেছেন। লাল শাক যেমন পুষ্টিগুণে ঠাসা, তেমনি খেতেও অত্যন্ত সুস্বাদু। শুধুমাত্র পুষ্টিগুণ নয় বরং এর টকটকে লাল সৌন্দর্যের কারণে অন্য যেকোন শাকসবজিকেও টেক্কা দিতে পারে এই লাল শাক। তাছাড়া এই শাকে নানান ধরনের ঔষধি গুণাগুণও রয়েছে।

তাই বলবো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আপনি শুধুমাত্র ঔষধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে ভরসা রাখতে পারেন লাল শাকের উপর। সুতরাং আজ থেকেই আপনি এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্য তালিকায় যোগ করে নিন লাল শাক। আর পেতে থাকুন এর বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী পোস্ট পেতে চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url