জয়তুন তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
জয়তুন তেলের উপকারিতা আমাদের অনেকেরই জানা। কিন্তু জয়তুন তেল মুখে ব্যবহারের নিয়ম কি তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। আর তাই আজকে আমরা আলোচনা করব জয়তুন তেলের নানান উপকারিতা এবং এই তেল মুখে ব্যবহার করার নিয়ম সম্পর্কে।
সাথে আরো আলোচনা করবো চুলে জয়তুন তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে চলুন জয়তুন তেল সম্পর্কিত সকল তথ্য সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় জানতে আর্টিকেলটি এক্ষুনি একবার পড়ে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ জয়তুন তেলের উপকারিতা
- জয়তুন তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
- জয়তুন তেলের উপকারিতা
- জয়তুন তেলের অপকারিতা
- জয়তুন তেল মুখে ব্যবহারের নিয়ম
- জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
- জয়তুন তেল খেলে কি হয়
- জয়তুন তেলের চুলের উপকারিতা
- জয়তুন তেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
- জয়তুন তেল চেনার উপায়
- পরিশেষে জয়তুন তেলের উপকারিতা
জয়তুন তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা
জয়তুন তেলের উপকারিতা অনেক। মূলত মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের প্রধান উৎস হলো জয়তুন তেল। যা কিনা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। জয়তুন তেলে থাকা পলিফেলনস ও আন্টিঅক্সিডেন্টস শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।শুধু
তাই নয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতেও
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জয়তুনের তেল। আবার আমাদের ত্বক ও চুলের
জন্যও বিশেষ ভাবে উপকারী এই জয়তুন তেল। নিয়মিত জয়তুন তেল ব্যবহারে এটি
ত্বকে হাইড্রেশন বজায় রাখে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে। সেই সাথে চুলের
স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
তবে
অতিরিক্ত পরিমাণে জয়তুন তেল ব্যবহারে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা
দিতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে জয়তুন তেল ব্যবহারে আপনার ক্যালরি
গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যা আপনার স্বাভাবিক ওজন বাড়িয়ে দিতে
পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে জয়তুন তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার ত্বকে অ্যালার্জির
সৃষ্টি করে। তাই সঠিকভাবে এবং সঠিক পরিমাণে জয়তুন তেল ব্যবহার করা উচিত।
যাতে করে এসব উপকারিতা পাওয়া যায়।
জয়তুন তেলের উপকারিতা
জয়তুন তেলের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। প্রাচীন কাল থেকেই স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য জয়তুন তেলের বেশ পরিচিতি রয়েছে। আজ আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি জয়তুন তেলের বেশ কিছু গুণের কথা-- পুষ্টির উৎসঃ পুষ্টির একটি দুর্দান্ত উৎস হল জয়তুনের তেল। যা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ এবং আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ করেঃ জয়তুন তেলে রয়েছে মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- প্রদাহ কমাতেঃ যেকোনো ধরনের শারীরিক প্রদাহ কমাতে কাজ করে জয়তুন তেল। কারণ, এই তেলে থাকা প্রাকৃতিক এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ রোধে বেশ কার্যকর। তাছাড়া এটি অটোইমিউইন রোগের ঝুঁকিও হ্রাস করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেঃ আপনার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে আপনি নিয়মিত জয়তুন তেল ব্যবহার করে উপকার পেতে পারেন। কারণ এতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট এবং পলিফেনলস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
- হজমে সাহায্য করেঃ জয়তুন তেল খেলে এটি পিত্ত রস উৎপাদনে সাহায্য করে। যা হজম প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করে। তাছাড়া পেটের যেকোনো সমস্যা যেমন- গ্যাস, এসিডিটি, পেট ফাঁপা ইত্যাদি দূর করতে পারে জয়তুন তেল।
- অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণাবলীঃ জয়তুন তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি মেডিকেল থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারেন। এতে করে আমাদের ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত জয়তুনের তেল ব্যবহারে এটি স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা দ্বিগুণ পরিমানে বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, অ্যালঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমাতেও কাজ করে জয়তুন তেল।
- ডায়াবেটিসে উপকারীঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও জয়তুন তেল বেশ উপকারী। কারণ, জয়তুন তেল শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে যা কিনা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ জয়তুন তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান শরীরে ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করে। নিয়মিত জয়তুন তেল ব্যবহারে আপনি ক্যান্সার থেকেও রেহাই পেতে পারেন।
- লিভার ভালো রাখেঃ লিভারের সঠিক কার্যক্ষমতা ধরে রাখে জয়তুন তেল। সুতরাং আপনার লিভারজনিত কোন সমস্যা থেকে থাকলে আজ থেকেই জয়তুন তেল খাওয়া শুরু করুন।
- মাইক্রোবায়াল প্রতিরোধেঃ আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধে খুব ভালো কাজ করে জয়তুন তেল।
- মানসিক উদ্বেগ কমায়ঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক উদ্বেগ ও বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করে জয়তুন তেল। কারণ, নিয়মিত জয়তুন তেল ব্যবহারে এটি মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে। আর মস্তিষ্ক সুস্থ থাকলে মানসিক দুশ্চিন্তা এমনিতেই দূর হবে।
- ত্বক ভালো রাখেঃ ত্বক ভালো রাখতে জয়তুন তেলের জুড়ি মেলা ভার। ত্বকের জন্য জয়তুন তেল মূলত প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এটি ত্বক হাইড্রেটেড রাখে এবং ত্বকে মৃত কোষের নিঃসরণ কমিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- চুলের যত্নে জয়তুন তেলঃ চুলের জন্যও জয়তুন তেল ভীষণই উপকারী। এটি চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে অতিরিক্ত চুল পড়া রোধ করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- বিপাকক্রিয়া বাড়াতেঃ জয়তুন তেল খেলে এটি শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
জয়তুন তেলের অপকারিতা
জয়তুন তেলের যেমন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। আর প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে জয়তুন তেল ব্যবহারে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো আমাদের শরীরে দেখা দিতে পারে। এবার চলুন জেনে নিই জয়তুন তেলের অপকারিতা সম্পর্কে-- প্রথমেই বলি, জয়তুন তেল উচ্চ ক্যালোরি সমৃদ্ধ তেল। ফলে জয়তুন তেলের অতিরিক্ত ব্যবহারে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। সুতরাং যারা ওজন কমাতে চান তাদের অতিরিক্ত জয়তুন তেল সেবন করা উচিত নয়।
- মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণে জয়তুন তেল ব্যবহারে আপনার শরীরে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে চুলকানি এবং লালচে দাগ হতে পারে।
- আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে একটানা জয়তুন তেল খেতেই থাকেন তাহলে আপনার পেটের সমস্যা বিশেষ করে গ্যাস বা ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
- অন্যান্য তেলের মত জয়তুন তেল উচ্চ তাপমাত্রায় রান্নার জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। কারণ, অতিরিক্ততা তাপে এই তেলের গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়।
- অনেকেই আছেন যারা জয়তুন তেলের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। ফলে জয়তুন তেল ব্যবহারে অনেক সময় অস্বস্তি দেখা দেয়।
- জয়তুন তেল অতিরিক্ত ব্যবহার করলে এটি আপনার রক্তের কোএগুলেশন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আপনারা যারা এন্টিকোয়াগুলেন্টস ব্যবহার করছেন তাদের জন্য জয়তুন তেল ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত জয়তুন তেল ব্যবহারে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
জয়তুন তেল মুখে ব্যবহারের নিয়ম
জয়তুন তেল মুখে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। যে নিয়ম মেনে মুখে জয়তুন তেল ব্যবহার করলে আপনার ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। তাহলে চলুন এবার জেনে নিন জয়তুন তেল আপনি মুখে কিভাবে ব্যবহার করবেন সে উপায় সম্পর্কে-- আমাদের ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ হিসেবে কাজ করে। সে হিসেবে রাতে শোয়ার আগে জয়তুন তেল হাতের তালুতে নিয়ে খুব ভালো করে মুখে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে আপনার ত্বক সারারাত হাইড্রেটেড থাকবে।
- আপনি মেকআপ রিমুভার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন জয়তুন তেল। এর জন্য একটি তুলোর সাহায্যে কিছুটা জয়তুন তেল নিয়ে আপনার মুখে মেকাপের উপর ম্যাসাজ করুন। তারপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- ত্বক উজ্জ্বল ও নমনীয় করতে আপনি জয়তুন তেল, মধু এবং দই একসাথে মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে ফেলুন। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন এবং ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
- জয়তুন তেল এবং চিনি একসাথে মিশিয়ে আপনি ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক স্ক্রাব তৈরি করতে পারেন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ম্যাসাজ করে তারপর পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
- শীতকালে বিশেষ করে ঠোঁট শুষ্ক রুক্ষ হয়ে ওঠে। ঠোঁটের এই শুষ্কতা আপনি দূর করতে পারেন জয়তুন তেল ব্যবহার করে। এর জন্য রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক ফোটা তেল ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন।
- ত্বকের বলিরেখা, ট্যান পড়া ইত্যাদি দূর করতে নিয়মিত জয়তুন তেল ত্বকে ম্যাসাজ করুন। এতে করে আপনার ত্বকের আভাব বৃদ্ধি পাবে এবং রিংকেল ভাব কমবে।
- আপনার ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন জয়তুন তেল ও মধুর মিশ্রণ। নিয়মিত এই মিশ্রণ ব্যবহারে এটি আপনার ত্বক টানটান করবে এবং ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমাবে।
ত্বকের জন্য জয়তুন তেল উপকারী কিন্তু তার সত্ত্বেও এই তেল ব্যবহারে আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। যেমন ধরুন-
- আপনার যদি এলার্জির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে জয়তুন তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করিয়ে তবেই তেল ব্যবহার করবেন।
- আপনি কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে জয়তুন তেল ব্যবহার করবেন না। কারণ, অতিরিক্ত জয়তুনের তেল ব্যবহার করলে তাতে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব বেড়ে যেতে পারে।
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
জয়তুন তেলের নানান উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। এবার আমরা জানবো জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে। জয়তুন তেল আপনি রান্না থেকে শুরু করে স্কিন কেয়ার এবং হেয়ার কেয়ার পর্যন্ত বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারেন। তো চলুন জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম গুলো কি কি তা জেনে নিন-- আপনি যেকোনো ধরনের শাক ভাজি, মাংস রান্না এবং সবজি রান্না করার জন্য আপনি জয়তুন তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করার জন্য আপনাকে এক্সট্রা ভার্জিন জয়তুন তেল ব্যবহার করতে হবে।
- যেকোনো ধরনের মাংস মেরিনেটেড করতে আপনি জয়তুন তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে মাংসের স্বাদ আরো বেড়ে যাবে।
- আপনি সালাদের সাথে ড্রেসিং হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন জয়তুন তেল। এতে সালাদের স্বাদ বৃদ্ধি বৃদ্ধি তো পাবেই সেই সাথে মাংস অনেক নরম হয়।
- আপনি চাইলে টোস্ট বা রুটির সাথেও জয়তুন তেল মাখিয়ে খেতে পারেন। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য এর সাথে আপনি খানিকটা লবণ এবং মরিচ যোগ করে নিতে পারেন।
- আপনি পপকর্ন তৈরির সময় সাধারণ তেলের পরিবর্তে জয়তুন তেল ব্যবহার করুন। এতে পপকর্ন আরো স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু হবে।
- আপনি রান্নার ক্ষেত্রে সাধারণত ৩-৪ টেবিল চামচ জয়তুন তেল অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারবেন।
- মুখ, হাত এবং শরীরের ত্বকে আপনি জয়তুন তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, ত্বক ভালো রাখতে জয়তুন তেল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজ হিসেবে কাজ করে।
- চুলের জন্য সবচেয়ে ভালো কন্ডিশনার হলো জয়তুন তেল। তোরে চুলের যত্নেও আপনি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন জয়তুন তেল। এটি চুল মসৃণ করে, চুলের খুশকি দূর করে এবং ঝলমলে করে।
- আপনার শরীরের যেকোনো স্থানে ব্যথা হলে জয়তুন তেল দিয়ে মেসেজ করলে আরাম পাবেন। কারন, এই তেল কমাতে কার্যকরী।
জয়তুন তেল খেলে কি হয়
জয়তুন তেলের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনায় জেনেছেন। অনেকেই আবার জানতে চান জয়তুন তেল খেলে কি হয়? তাহলে জেনে রাখুন, জয়তুন তেল খেলে এটি আমাদের শরীরের জন্য বেশ কিছু উপকারিতা বয়ে আনে। বিশেষ করে আমাদের শরীরের পাচনতন্ত্রের জন্য জয়তুন তেল ভীষণই উপকারী। নিয়মিত জয়তুন তেল খাওয়ার ফলে এটি হার্ট ভালো রাখে।কারণ,
জয়তুন তেল আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের
মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই তেলের আন্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি
বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীরের কোষকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে খুব
সহজেই রক্ষা করতে পারে। শুধু কি তাই! নিয়মিত জয়তুন তেল খেলে এটি যেমন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে তেমনি ওজন কমাতেও খুব ভালো কাজ করে।
তবে
অতিরিক্ত জয়তুন তেল খেলে আবার ওজনও বেড়ে জেতে পারে।সেদিকেও খেয়াল রাখা
উচিৎ। এ তো গেল স্বাস্থ্যের কথা। চুল এবং ত্বকের যত্নেও জয়তুন তেল অত্যন্ত
উপকারী একটি তেল। জয়তুন তেল খাওয়ার ফলে চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো
থাকে। জয়তুন তেল খেলে কি হয় আশা করছি আপনি বুঝতে পেরেছেন।
জয়তুন তেলের চুলের উপকারিতা
জয়তুন তেলের বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনি খানিক আগেই জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন চুলের যত্নেও এই তেলের উপকারিতা কম নয়। এবার চলুন জেনে নিই জয়তুন তেলের চুলের উপকারিতা সম্পর্কে-- জয়তুন তেল ব্যবহারে এটি চুলের ময়েশ্চারাইজ সঠিকভাবে বজায় রাখে। অর্থাৎ আপনার রুক্ষ শুষ্ক চুলকেও মসৃণ ও ঝলমলে করে তোলে।
- জয়তুন তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। যা ব্যবহারে এটি আপনার চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে। এতে করে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল শক্তিশালী হয়।
- আপনি কি চুলের আগাফাটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন? তাহলে বলবো আজ থেকেই চুলে জয়তুন তেলের ব্যবহার শুরু করুন। কারণ, এই তেলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান চুলের আগা ফাটা রোধ করে।
- জয়তুন তেলের এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আপনার মাথার ত্বকের খুশকি কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী। ফলে প্রাকৃতিক উপায়ে খুশকি দূর করতে আপনি জয়তুন তেল ব্যবহার করতেই পারেন।
- রুক্ষ এবং নিস্তেজ চুলের জন্য জয়তুন তেল অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত ব্যবহারে এটি আপনার প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল করে তোলে।
- জয়তুন তেল ব্যবহার করলে এটি আপনার চুলকে সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে। ফলে আপনার চুলের রং রোদের তাপে ফিকে হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।
- যেকোনো রাসায়নিক শ্যাম্পুর তুলনায় চুল এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার করতে জয়তুন তেল অনেক নিরাপদ।
জয়তুন তেল চুলে ব্যবহারের নিয়ম
জয়তুন তেল তুলে ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। কিন্তু চুলের জন্য এই তেল ভীষণই উপকারী। সম্মানিত পাঠক, এবার আমরা জেনে নিই জয়তুন তেল আপনি তুলে কিভাবে ব্যবহার করবেন-- প্রথমেই বলে রাখি, চুলে জয়তুন তেল ব্যবহারের আগে আপনি ভালো মানের শুদ্ধ জয়তুন তেল কিনুন।
- ব্যবহারের জন্য আপনি পরিমাণ মতো তেল নিন এবং হাতের তালুতে তেল খানিকটা গরম করে নিন। এবারে এই তেল আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে আপনার মাথার ত্বকে খুব ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়বে।
- আপনার মাথার পুরো ত্বকে বিশেষ করে যে স্থানগুলো শুষ্ক থাকে সে অংশগুলোতে খুব ভালো করে লাগান।
- আপনার চুল যদি অতিরিক্ত শুষ্ক এবং রুক্ষ হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি চুলের জয়তুন তেল লাগিয়ে এক ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এই সময় আপনি একটি শাওয়ার ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। প্রায় এক ঘন্টা পর হালকা শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুলের রুক্ষ ও শুষ্কভাব অনেকটাই দূর হবে।
- আপনাদের যাদের চুল অতিরিক্ত তৈলাক্ত তারা জয়তুন তেল সপ্তাহে ১-২ বার জয়তুন তেল ব্যবহার করতে পারেন। তেল ব্যবহার করার পর চুল শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- আপনি চাইলে হেয়ারমাস্ক হিসেবেও চুলে জয়তুন তেল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য আপনি একটি ডিম ফাটিয়ে ডিমের সাদা অংশের সাথে ২-৩ চা চামচ জয়তুন তেল মিশিয়ে আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন। হেয়ারমাস্ক লাগানোর ঠিক ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- চুলকে ঝলমলে এবং মসৃন করতে আপনি ২ চা চামচ জয়তুন তেলের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে চুলে এবং মাথার ত্বকে খুব ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল মসৃণ হবে।
- আপনি চুল শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার হিসেবেও সামান্য জয়তুন তেল ব্যবহার করতে পারেন।
জয়তুন তেল চেনার উপায়
জয়তুন তেল চেনার উপায় কি জানতে চান? বর্তমান সময়ে বাজারে জয়তুন তেলের নামে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী নকল জয়তুন তেল বিক্রি করে থাকেন। এই তেল ব্যবহারে আপনার উপকার তো হবেই না বরং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। এর জন্য আপনাকে আসল জয়তুন তেল চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে হবে। এবার চলুন আপনি জয়তুন তেল কিভাবে চিনবেন এটি আসল না নকল তার কিছু উপায় আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি-- জয়তুন তেল কেনার সময় আপনি খেয়াল রাখবেন বোতলের গায়ে "এক্সট্রা ভার্জিন" কথাটি লিখা আছে কিনা। কারণ এক্সট্রা ভার্জিন নিশ্চিত করে তেলটি প্রথম প্রেসিং থেকে এসেছে এবং এতে কোন প্রকার অ্যালকোহল বা রাসায়নিক উপাদান মেশানো নেই।
- আসল জয়তুন তেলে তাজা এবং বিভিন্ন রকম ফলমূলের গন্ধ থাকে। তেলে যদি ফলমূলের মত গন্ধ না পান তাহলে বুঝবেন এটি আসল জয়তুন তেল নয়।
- আসল জয়তুন তেলের স্বাদ সাধারণত একটু তিক্ত এবং মরিচের মতো হয়ে থাকে।
- আসল জয়তুন তেল চেনার আরেকটি কার্যকরী উপায় হল এর রং। আসল জয়তুন তেলের রং হবে গাঢ় সবুজ থেকে হালকা হলুদ রঙের। যদি তেল খুব পরিষ্কার অথবা কালো রঙের হয় তাহলে বুঝবেন এটি কৃত্রিম জয়তুন তেল।
- আসুন জয়তুন তেল বোঝার জন্য জয়তুন তেলের বোতল আপনি কিছুক্ষণ ফ্রিজে রাখুন। যদি দেখেন তেল ঠান্ডায় কিছুটা ঘন হয়ে গেছে তাহলে বুঝে নেবেন এটি আসল জয়তুন তেল। কারণ, কৃত্রিম জয়তুন তেল কখনোই ঠান্ডায় জমাট বাঁধবে না।
- স্বাভাবিকভাবে আসল জয়তুন তেলের দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। আপনি যদি খুব সস্তার মধ্যে জয়তুন তেল পেয়ে যান তাহলে বুঝে নিবেন এটি আসল জয়তুন তেল নাও হতে পারে।
জয়তুন তেলের দাম
জয়তুন তেলের এতসব উপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এই তেলের দাম সম্পর্কে জানতে চান। জয়তুন তেলের দাম সাধারণত বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে বিশেষ করে তেলের মান, ব্র্যান্ড এবং প্যাকেজিং এর ওপর। আপনি সাধারণভাবে ২৫০ মিলিলিটার জয়তুন তেল পেয়ে যাবেন ২০০-৪০০ টাকার মধ্যে।সে
হিসেবে ৫০০ মিলিলিটার জয়তুন তেলের দাম পড়বে ৪০০-৮০০ টাকা। আবার আপনি যদি
এক লিটার বোতলের জয়তুন তেল কিনতে যান সে ক্ষেত্রে এর দাম পড়বে ৮০০-১৫০০
টাকার মধ্যে। তবে ব্র্যান্ড অনুযায়ী এই দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে। তাই
বলবো জয়তুন তেল কেনার সময় অবশ্যই আপনি ব্র্যান্ড এবং তেলের মান যাচাই করে
তবেই কিনবেন
পরিশেষে জয়তুন তেলের উপকারিতা
জয়তুন তেল এর উপকারিতা আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জয়তুন তেল সম্পর্কিত সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন। জয়তুন তেল প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান যা বিভিন্ন দিক থেকে আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। জয়তুন তেল বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিনের একটি দুর্দান্ত উৎস।যা
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো থেকে শুরু করে আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ
প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাই বলবো নিজেকে সুস্থ রাখতে আপনি আজ থেকেই নিয়ম করে
জয়তুন তেল ব্যবহারের অভ্যাস করুন। আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে।
ভালো, থাকুন সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের
সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url