লাউ শাকের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
লাউ শাকের উপকারিতা জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন? গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। তাহলে বলবো চট করে আর্টিকেলটি একবার পড়ে নিন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লাউ শাকের উপকারিতা
- লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
- লাউ শাকের উপকারিতা
- লাউ শাকের অপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা
- লাউ শাকে কি এলার্জি আছে
- কোন কোন শাকে এলার্জি আছে
- লাউ পাতার বৈশিষ্ট্য
- লাউ শাকের রেসিপি
- লাউ শাকের পুষ্টি উপাদান
- লাউ শাকের ইংরেজি
- লেখকের মন্তব্য
লাউ শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা অনেক। লাউ শাক দিয়ে ভর্তা, লাউ শাকের ঝোল, মাছ দিয়ে লাউ শাকের পাতুরি, অনেকে অনেক ভাবেই এই শাক খেয়ে থাকেন। এই স্বাদ খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি প্রচুর পুষ্টিগুনেও ভরপুর। লাউ শাকে রয়েছে ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, আইরন, ক্যালসিয়াম, বিভিন্ন ধরনের খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এবং ফাইবার।
আরো পড়ুনঃ কচু শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন
এই প্রত্যেকটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত লাউ শাক খেলে এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, লাউ শাকে উচ্চমাত্রার আয়রন থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরের হাড় মজবুত করতে ও রক্ত তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আবার ওজন কমাতেও খুব ভালো কাজ করে লাউ শাক।
তবে
অতিরিক্ত পরিমাণ লাউ শাক খেলে আবার আপনার পেট ফাঁপা, গ্যাস, অম্বল ও বদ
হজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে।
তবে পরিমাণ মতো সঠিক নিয়মে লাউ শাক খেলে আপনি এর অপকারিতার থেকে উপকারিতাই
বেশি পাবেন এ কথা হলফ করে বলতে পারি।
লাউ শাকের উপকারিতা
লাউ শাক খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। লাউ শাক খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। সম্মানিত পাঠক, আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি সহজলভ্য এই শাকের কিছু উপকারিতা সম্পর্কে-
আরো পড়ুনঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
- লাউ শাক হল একাধিক পুষ্টির আধার। কারণ, এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে।
- আপনি কি হজমের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে বলবো নিয়মিত লাউ শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ লাউ শাকে রয়েছে উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট যা হজমের সমস্যা দূর করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
- নিয়মিত লাউ শাক খেলে লাউ শাকে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যা কিনা সর্দি-কাশি সহ বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।
- আপনি কি চোখে ঝাপসা দেখেন? বা কাছের জিনিস দূরে দেখেন দূরের জিনিস কাছে দেখেন এমনটা হয়। তাহলে বলব আজ এখন থেকেই লাউ শাক খান। ভিটামিন এ রয়েছে যা রাতকানা রোগ সহ আপনার চোখের সকল সমস্যা দূর করবে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও লাউশাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে নিয়মিত লাউ শাক খেলে আপনি হৃদরোগের ঝুকি থেকেও খুব সহজেই রক্ষা পাবেন।
- অনেকেই আছেন যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। এই রক্তস্বল্পতা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে লাউ শাক।
- লাউ শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা আপনার ত্বক ভালো রাখে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
- যারা অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তারা লাউ শাক খেতে পারেন। কারণ লাউশাকে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে এবং ক্যালরি কম থাকে। যা খেলে দীর্ঘ সময় আপনার পেট ভরে থাকে। ফলে আপনার ওজনও কমতে থাকে।
- লাউ শাকের এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে কাজ করে। শুধু তাই নয়, এটি আপনার আর্থাইটিস রোগের উপশম ঘটাতে পারে।
- নিয়মিত লাউ সাপ খেলে এটি আপনার শরীরে মূত্র গর্ধব হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়।
- লাউ শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে। আপনি যদি শরীরের ব্যথা বা হাড়ের ব্যথায় ভুগতে থাকেন তাহলে নিয়ম করে লাউ শাক খান। লাউ শাক খেলে এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়।
- গলা ব্যথা, সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে লাল শাকের রস।
- নিয়মিত লাউ শাক খাওয়ার ফলে এতে থাকা পটাশিয়াম ও আয়রন আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
- শুধু তাই নয়, লাউ শাক ফলিক এসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় গর্ভাবস্থায় এই শাক একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর জন্যও অত্যন্ত উপকারী।
- নিয়মিত লাউ শাক খাওয়ার ফলে এটি আপনার অনিদ্রা রোগ দূর করে এবং মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখে।
- আপনি প্রচন্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে খেতে পারেন লাউ শাক। কারণ, এই শাক শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও লাউ শাক উপকারী। কারণ, লাউ শাকে কম থাকার কারণে এটি রক্তের শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণ করে।
- নিয়মিত লাউ শাক খাওয়ার ফলে এটি আপনার কিডনির সকল সমস্যা দূর করে এবং সেইসাথে কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়।
লাউ শাকের অপকারিতা
লাউ শাকের উপকারী দিক যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি এই শাকের অপকারিতাও রয়েছে। শুধু লাউ শাক না বরং যে কোন খাদ্য উপাদানই অতিরিক্ত খেলে তার কিছু শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এবারে চলুন অতিরিক্ত লাউ শাক খেলে আপনার শরীরে কি ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে রাখুন-
আরো পড়ুনঃ ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- পেটের সমস্যাঃ অতিরিক্ত পরিমাণে লাউ শাক খেলে আপনার হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
- ক্যালসিয়াম শোষণে বিঘ্ন ঘটায়ঃ লাউ শাকে রয়েছে অক্সালেট। যা অতিরিক্ত খেলে এটি আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণকে বিঘ্নিত করতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে।
- রক্তচাপ জনিত সমস্যাঃ লাউ শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম। ফলে অতিরিক্ত লাউ শাক খেলে এটি আপনার রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের রক্তচাপ এমনিতেই কম তাদের লাউ শাক সীমিত পরিমানে খাওয়া উচিত।
- এলার্জির সমস্যাঃ কিছু কিছু মানুষের শাক সবজির প্রতি একটু বেশি অ্যালার্জি থাকে। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরে এলার্জির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- গ্যাস অম্বল সৃষ্টি করেঃ একসাথে প্রচুর পরিমাণে লাউ শাক খেলে এটি আপনার পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি পেট ব্যথার কারণও হতে পারে।
- কিডনি জনিত জটিলতাঃ আপনার যদি কিডনির সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অতিরিক্ত লাউ শাক না খেয়ে আপনি নিয়ম মেনে পরিমান মত খান। কারণ অতিরিক্ত খেলে এটি আপনার কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে আপনার কিডনি জনিত জটিলতা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- হরমোনের ভারসাম্যতা নষ্ট করেঃ অতিরিক্ত পরিমাণে লাউ শাক দীর্ঘদিন ধরে খেতে থাকলে এটি আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে করে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
- শারীরিক দুর্বলতাঃ আপনি যদি অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান ছেড়ে শুধুমাত্র লাউ শাক খেতে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার শরীরে ভিটামিন ও খনিজের অভাব দেখা দেবে এবং সেই সাথে শারীরিক দুর্বলতার সৃষ্টি হবে।
সম্মানিত
পাঠক, উপরিউক্ত অপকারিতা গুলো এড়াতে আপনি নিয়ম করে অন্যান্য পুষ্টিকর
খাদ্য উপাদানের সাথে পরিমাণ মতো লাউ শাক খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাতে উপকারই
বেশি পাবেন।
গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভকালীন সময়ে লাউ শাক খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খেলে এটি একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভের ভ্রূণ উভয়েরই উপকারে আসে। যেমন-
আরো পড়ুনঃ কাঁচা পেঁপের ১০ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশেঃ গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য মিনারেলস। আর এই সকল পুষ্টি উপাদান আপনি পেতে পারেন লাউ শাক খেয়ে।
- পাচন সমস্যা দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য গর্ভকালীন সময়ে খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন লাউ শাক। কেননা লাউ শাকে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আপনার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ গর্ভাবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টি ও শক্তির প্রয়োজন পড়ে। ফলে এই সময় লাউ শাক খেলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টির চাহিদা যেমন মেটে, তেমনি এই শাক আপনার শরীরে অতিরিক্ত শক্তির যোগান দিয়ে থাকে।
- শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ লাউ শাকে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভকালীন সময়ে আপনার ইমিউন সিস্টেম অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ থেকে আপনি খুব সহজেই সুরক্ষা পেতে পারেন।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় নিয়মিত লাউ শাক খেলে এটি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে গর্ভকালীন হৃদরোগের ঝুঁকি থেকে আপনি খুব সহজেই রক্ষা পেতে পারেন।
- অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করেঃ গর্ভকালীন সময়ে অধিকাংশ মা বোনরাই রক্তস্বল্পতায় ভগতে থাকেন। এই রক্তস্বল্পতা দূর করতে আপনি খেতে পারেন লাউ শাক। কারণ, গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খেলে এটি আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
- মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ লাউ শাকে রয়েছে ফোলেট। যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। অর্থাৎ গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো ধরনের মানসিক উদ্বেগ ও ডিপ্রেশন কমাতে আপনি লাউ শাক খেতে পারেন।
- টক্সিন অপসারণঃ গর্ভাবস্থায় লাউ শাক খেলে এটি আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত টক্সিন অপসারণ করতে পারে। ফলে আপনার শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার থাকে।
সম্মানিত
পাঠক, উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন
গর্ভকালীন সময়ে লাউ শাক খাওয়াটা কতটা উপকারী হতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায়
আপনি যদি লাউশাক প্রথম খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের
পরামর্শ নিয়ে তবেই খাবেন। কেননা গর্ভাবস্থায় যে কোন খাদ্য প্রথম গ্রহণের
পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী
লাউ শাকে কি এলার্জি আছে
লাউ শাকের উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। আবার আপনারা অনেকেই জানতে চান লাউশাকে এলার্জি থাকে কিনা। দেখুন, লাউ শাক সাধারণভাবে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু কিছু কিছু মানুষের জন্য এটি এলার্জির কারণও হতে পারে। শরীরে সাধারণত ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফলে এলার্জির সৃষ্টি হয়।
সে হিসেবে লাউ শাকের মধ্যে কিছু বিশেষ প্রোটিন বা রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। যা কিছু মানুষের জন্য এলার্জির মতো অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। আর এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে আপনার চামড়াতে রেশ, হাঁপানির সমস্যা, গলায় জ্বালাপোড়া, ত্বকে ফুসকুড়ি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। আর এই সমস্যা গুলো তখনই দেখা দেবে,
যখন
আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে দীর্ঘদিন ধরে লাউশাক খাবেন। ফলে লাউ শাক খাওয়ার
পরে আপনার যদি এলার্জির সমস্যা দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে বলবো একজন চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে নিয়ম মেনে পরিমান মত লাউ শাক খেলে তাতে
অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা থাকে না। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
কোন কোন শাকে এলার্জি আছে
কোন
কোন শাকে এলার্জি আছে জানেন কি? অনেকেই মনে করেন শুধুমাত্র মাছ কিংবা
মাংসে এলার্জি থাকে। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। শুধুমাত্র মাছ-মাংস নয়
বরং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজিতেও এলার্জি থাকে। এবার চলুন কোন কোন শাক
অতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরে এলার্জির সমস্যা হতে পারে সেই শাকের নাম গুলো
জেনে রাখুন-
- পালং শাক
- বাঁধাকপি
- মেথি শাক
- ধনেপাতা
- ব্রকলি
- সিরকা শাক
- মিষ্টি আলুর শাক
- তিলের শাক
- ঝিঙ্গে শাক
- সিমলা মরিচ শাক
- পুদিনা পাতা
- পুঁইশাক
- কলমি শাক
- ফুলকপির পাতা
- টমেটো শাক
- মিষ্টি কুমড়া শাক এবং
- সরিষা পাতা বা সরিষার শাক ।
সম্মানিত
পাঠক, জানিয়ে দিলাম কোন কোন শাকে এলার্জির পরিমাণ বেশি থাকে। তবে এই
প্রত্যেকটি শাক আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে যদি আপনি নিয়ম মেনে
আপনার স্বাস্থ্য বুঝে পরিমান মত খান। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
লাউ পাতার বৈশিষ্ট্য
লাউ
শাকের উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনায় জেনেছেন। এবার আপনাকে
জানাবো লাউ পাতার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। অনেকেই আছেন যারা লাউ
পাতার এবং কুমড়ো পাতার মধ্যে তফাৎ খুব একটা বুঝতে পারেন না। ফলে বাজারে
লাউ শাক কিনতে যেয়ে কিনে ফেলেন কুমড়ো শাক। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে
চলুন লাউ পাতার কিছু বৈশিষ্ট্য জেনে নিন-
- আকার ও আকৃতিঃ লাউ পাতার সাধারণত বড় ত্রিভুজাকৃতির হয়ে থাকে। লাউ পাতার সাধারণত ৫-৭টি লোব নিয়ে গঠিত এবং লোব গুলো সমান পরিমাণে বিস্তৃত থাকে। একটি পূর্ণ বয়স্ক লাউ পাতার সাইজ ১৫-২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
- লাউ পাতার রংঃ লাউ পাতার রং সাধারণত উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের হয় এবং সূর্যের আলোতে এটি চকচক করে। এই পাতার উপরিভাগ খুবই মসৃণ থাকে এবং পাতার নীচের পৃষ্ঠে হালকা সাদাটে রং থাকে।
- পাতার কিনারাঃ লাউ পাতার ধার কিছুটা কামরাঙ্গার মত হয় দেখতে এবং পাতার কিনারা সামান্য খাঁজ কাটা থাকে। লাউ পাতার বিশেষ এই বৈশিষ্ট্য জল ধারণ করতে সাহায্য করে।
- গন্ধঃ লাউ পাতার একটি নির্দিষ্ট সুগন্ধ রয়েছে, যা কুমড়ো পাতায় থাকে না এবং রান্নার পর এর স্বাদ আরো বেড়ে যায়।
- জলীয় অংশঃ লাউ পাতায় প্রচুর পরিমাণে জল থাকে যা তাজা ভাব সৃষ্টি করে।
সম্মানিত
পাঠক, জানিয়ে দিলাম লাউ পাতার বৈশিষ্ট্য। আশা করছি এই বৈশিষ্ট্য গুলো
মাথায় রাত্রে আপনার লাউ পাতা বা লাউ শাক চিনতে অসুবিধে হবে না।
লাউ শাকের রেসিপি
লাউ শাকের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা আপনারা এতক্ষণ জেনেছেন। এবার আপনাদের জানাবো লাউ শাকের কিছু রেসিপি সম্পর্কে। অনেকেই মনে করেন লাউ শাক শুধুমাত্র ভাজি করেই খাওয়া যায়। কিন্তু না, আপনি লাউ শাক ভাজি ছাড়াও আরো বিভিন্ন উপায়ে রান্না করে খেতে পারেন। তো চলুন লাউ শাকের রেসিপি গুলো দেখে নিন-
লাউ শাক পোস্ত রেসিপিপ্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- লাউশাক- ১ আটি
- পোস্ত দানা- ৩ চা চামচ
- কাঁচা মরিচ বাটা - ২-৩ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো- ১-২ চা চামচ
- তেল- পরিমাণ মতো
- লবণ- স্বাদ মত
- আদা বাটা- ১ চা চামচ
- গোটা জিরে- ১ চা চামচ
- চিনি - হাফ চা চামচ
- লাউ শাক পোস্ত রান্নার শুরুতেই আপনি শাক গুলো ছোট ছোট করে কেটে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এবার একটি প্রেসার কুকারে লাউ শাক, সামান্য জল ও লবণ দিয়ে ২-৩ টি সিটি দিয়ে সেদ্ধ করে নিন। লাউশাক সেদ্ধ হওয়ার এই ফাঁকে আপনি ব্লেন্ডারে পোস্ত দানাগুলো ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন।
- এবার একটি পরিষ্কার প্যানে তেল গরম করে তাতে জিরে ও শুকনো লঙ্কার ফোড়ন দিন। এই ফোড়নে পোস্ত বাটা দিয়ে খুব ভালো করে ভেজে নিন।
- পোস্ত ভাজা হয়ে এলে তাতে সেদ্ধ করা লাউ শাক দিয়ে একে একে লবণ, কাঁচা মরিচ বাটা,আদা বাটা, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে অল্প আচে রান্না করতে থাকুন। যেহেতু আপনি লাউ শাক আগেই সেদ্ধ করে নিয়েছেন তাই আর বেশি জল দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।
- রান্না প্রায় শেষ হয়ে এলে তাতে সামান্য চিনি ও আটা ছড়িয়ে দিয়ে খুব ভালো করে নাড়িয়ে নিন। সবশেষে ১ চা চামচ সরষের তেল শাকের উপর ছড়িয়ে দিন এবং নামিয়ে ফেলুন।
- ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার লাউ শাক পোস্ত রেসিপি। এবার আপনি গরম গরম ভাতে এই লাউ শাক পোস্ত খেতে পারেন। এটি খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- লাউ শাক- ২ আটি
- বেগুন- ১-২ টি
- বড়ি- ২-৪ টি
- আলু- ২ টি
- শুকনো মরিচ- ২-৩ টি
- তেজপাতা- ২টি
- পাঁচফোড়ন- ১ চা চামচ
- আদাবাটা- ১ চা চামচ
- কাঁচামরিচ- ৪-৫ টি
- তেল- পরিমাণমতো
- লবণ- স্বাদ অনুযায়ী এবং
- হলুদ গুঁড়ো- ১ চা চামচ।
- নিরামিষ লাউ শাক রান্নার শুরুতেই আপনি সবজিগুলো অর্থাৎ আলু বেগুন এবং লাউশাক কেটে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- এরপর আলুগুলো সেদ্ধ করে নিন এবং আলু সেদ্ধ হওয়ার ফাঁকে কড়াইতে তেল গরম করে বড়িগুলো ভেজে তুলুন।
- এবার একটি পরিষ্কার কড়াইতে তেল গরম করে তাতে পাঁচফোড়ন, তেজপাতা ও শুকনো লঙ্কা দিয়ে ফোড়ন দিন। এই ফোড়ন এর সাথে আপনি লাউ ডাটা একটু ভেজে নিন। কারণ, লাউ ডাটা সেদ্ধ হতে সময় লাগে।
- এরপর লাউ ডাটার সাথে আলু, বেগুন দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভেজে নিন।
- অতঃপর লবণ আদাবাটা, কাঁচামরিচ বাটা, হলুদ গুঁড়ো একে একে যোগ করে পাঁচ মিনিটের মতো রান্না করুন।
- ডাটা এবং আলু সিদ্ধ হয়ে এলে তাতে আপনি লাউ পাতা দিয়ে পরিমাণ মতো জল দিন এবং একটি ঢাকনা দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন।
- রান্নার সবশেষে ভেজে রাখা বড়ি গুলো আপনি গুঁড়ো করে সবজির সাথে মিশিয়ে দিন।
- ব্যাস তৈরি হয়ে গেল লাউ শাকের নিরামিষ রেসিপি। আপনারা যারা নিরামিষাসী তারা এই রেসিপিটি তৈরি করে খেয়ে দেখতে পারেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- লাউ শাক- ১ আটি
- বেসন- ১ কাপ
- রসুন- ৩-৪ কোয়া
- মরিচ গুঁড়ো- ১-২ চা চামচ
- লবণ- স্বাদ মত এবং
- তেল- পরিমাণ মতো
- লাউ শাকের পাকোড়া তৈরির পূর্বে আপনি লাউ শাক ভালো করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিন।
- এবার একটি বাটিতে আপনি বেসন, রসুন, মরিচ গুঁড়ো, লবণ হলুদ এবং লাউ শাকের কুচি একসাথে মিশিয়ে ভালো করে চটকে মেখে নিন। এতে আপনি প্রয়োজনমতো পানি যোগ করতে পারেন।
- এই পর্যায়ে একটি পরিষ্কার কড়াইতে তেল গরম করে পাকোড়ার শেপ দিয়ে ভেজে নিন। বাঁকুড়াগুলো যতক্ষণ না বাদামী রঙের না হয় ঠিক ততক্ষণ ভাজতে থাকুন।
- ব্যাস, এবার গরম গরম লাউ শকের পাকোড়া আপনি চাটনি বা সসের সাথে পরিবেশন করুন।
লাউ শাকের পুষ্টি উপাদান
লাউ শাকের এতসব উপকারী দিক জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই এই শাকের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তো চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম লাউ শাকে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান থাকে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন-
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরি | ২৩ |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১.৫ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২০০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৫০ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ৭০০ IU |
ফাইবার | ১.২ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৭ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.২ গ্রাম |
প্রোটিন | ২.৬ গ্রাম |
পটাসিয়াম | ৫৫৮ মিলিগ্রাম |
সুগার | ০.৪ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৭৯ মিলিগ্রাম |
লাউ শাকের ইংরেজি
লাউ
শাক এর ইংরেজি নাম 'Bottle Gourd Leaves' এবং বৈজ্ঞানিক নাম 'Lagenaria
siceraria'. লাউ গাছ সাধারণত বারোমাসি জন্মে থাকে। তবে শীতকালে এর ফলন
অন্যান্য সময়ের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। লাউ গাছের পাতা যা লাউ শাক
হিসেবে পরিচিত। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি
অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।
লেখকের মন্তব্য
লাউ শাকের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই লাউ শাক সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পেরেছেন। তাছাড়া সব ধরনের শাক সবজির মধ্যে লাউ শাক সবচেয়ে সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। লাউ শাক বাজারে সারা বছরই প্রায় কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালে এর ফলন ভালো হয় এবং শীত মৌসুমে এই শাক খেতেও সুস্বাদু হয়। তাছাড়া শীতকালীন যে কোন সবজির মধ্যে লাউশাক অন্যতম।
লাউ গাছের শুধু লাউ নয়, বরং এর পাতা, ডাটা সবটাই প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। তাই বলবো উপকারী সহজলভ্য এই শাকটি আপনি আজ থেকেই আপনার খাবার পাতে যোগ করে নিন। তাতে আপনারই উপকার হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url