ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম বিস্তারিত জানুন
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম জানতে আপনি নিশ্চয়ই আজকে আমাদের ওয়েবসাইটে এসেছেন। কিন্তু দিনে কতবার গ্রিন টি খাওয়া যায় জানেন কি? জানতে হলে পুরো আর্টিকেলটি এক্ষুনি একবার পড়ে নিন।
কারণ,
আজ আমরা আলোচনা করতে চলেছি ওজন কমাতে আপনি গ্রিন টি কোন নিয়মে, কিভাবে
এবং দিনে কয়বার খাবেন সে সম্পর্কে। সাথে আরো আলোচনা করব আসল গ্রিন টি
চেনার উপায় সম্পর্কে। তো চলুন আলোচনা শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
- ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
- দিনে কতবার গ্রিন টি খাওয়া যায়
- গ্রিন টি কখন খেলে ওজন কমে
- সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা
- গ্রিন টি খেলে কি ওজন কমে
- ওজন কমাতে কোন গ্রিন টি ভালো
- ওজন কমাতে গ্রিন টি বানানোর নিয়ম
- আসল গ্রিন টি চেনার উপায়
- গ্রিন টি দাম কত
- ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আবার যারা স্বাস্থ্য সচেতন রয়েছেন তারা অনেকেই ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি বা সবুজ চা পান করে থাকেন। এটি একটি প্রাকৃতিক পানীয় যা দেহে মেটাবলিজম বাড়াতে এবং ফ্যাটের মাত্রা কমাতে খুব ভালো কাজ করে। তবে ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার বেশ কিছু কার্যকরী নিয়ম রয়েছে। যে নিয়ম আপনি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে খুব সহজেই আপনার বাড়তি ওজন কমতে শুরু করবে। তো চলুন আলোচনা শুরুতে প্রথমেই জেনে নেই গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-- গ্রিন টি খাওয়ার সব থেকে উত্তম সময় হলো সকাল বেলা। তবে খালি পেটে নয় বরং সকালের নাস্তার পরে খাবেন। কারণ, সকাল বেলা গ্রিন টি খেলে এটি শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং দিনের শুরুতে এটি আপনাকে সারাদিন ভর শক্তি সরবরাহ করতে থাকে।
- সকালে গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস না থাকলে আপনি দুপুরে বা রাতেও খেতে পারেন। তবে রাতে গ্রিন টি খেলে এতে ক্যাফেইন থাকার কারণে আপনার অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি দুবার ভারী খাবারের মাঝে গ্রিন টি খেতে পারেন।
- অনেকেই মনে করেন খালি পেটে গ্রিন টি খেলে হয়তো ওজন কমে। কিন্তু এই ধারণা একেবারেই ভুল। আপনি ভুলেও খালি পেটে গ্রিন টি খাবেন না। কারণ, গ্রিন টিতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও পলিফেনাল। ফলে খালি পেটে গ্রিন টি খেলে এটি আপনার পাকস্থলীতে এসিডিটির সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে আপনার স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন খালি পেটে গ্রিন টি না খেয়ে খাবার খাওয়ার পর গ্রিন টি খেতে।
- আবার খাবার খাওয়ার সাথে সাথে গ্রীন টি খাওয়া উচিত নয়। কারণ খাওয়ার পরপর গ্রিন টি খেলে এটি খাবারের পুষ্টি উপাদান শোষণে বাধা দিতে পারে। তাই যেকোনো খাবার খাওয়ার পর অন্তত ৩০-৬০ মিনিট বিরতি দিয়ে তবেই গ্রিন টি পান করবেন। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে এবং হজমেও সহায়ক হবে।
- ওজন কমানোর জন্য আপনি দিনে ২-৩ কাপ গ্রিন টি পান করতে পারেন। তবে দিনে সর্বোচ্চ ৩-৪ কাপের বেশি গ্রিন টি ভুলেও খাবেন না। কারণ, অধিক গ্রিন টি খাওয়া আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে করে আপনার শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রবেশ করতে পারে।
- গ্রিন টি খেয়ে ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে গ্রিন টি এর সাথে চিনি বা দুধ পরিহার করতে হবে। কারণ, গ্রিন টি এর সাথে চিনি ও দুধ যোগ করে খেলে তাতে ক্যালরি বেড়ে যেতে পারে। এতে করে গ্রিন টি এর কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যায়।
- অনেকেই গ্রিন টি এর সাথে নোনতা কিংবা ক্যালোরিযুক্ত বিস্কিট খেতে পছন্দ করেন। আর এই ভুলের কারণেই আপনার ওজন কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ফলে গ্রীনটির সাথে যেকোনো ধরনের নোনতা কিংবা ক্যালরিযুক্ত বিস্কুট খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- শুধু গ্রিন টি খেতে অসুবিধা হলে আপনি স্বাদ মতো মধু বা লেবু ব্যবহার করতে পারেন। এতে গ্রিন টি এর স্বাদ বৃদ্ধি পাবে। তবে তা খুব অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন।
- অনেকেই গ্রিন টি এর সাথে মধু যোগ করতে ফুটন্ত গরম পানিতেই গ্রিন টি এবং মধু যোগ করেন। এই ভুল কাজ কখনোই করবেন না। কারণ, অতিরিক্ত তাপে মধু এবং গ্রিন টি উভয়েরই পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। এর জন্য আপনি পানি ফুটানোর পর অতিরিক্ত তাপ কমতি দিন এবং তারপর তাতে মধু যোগ করুন।
- কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রীন টির সাথে লেবু বা আদা যোগ করলে তা শরীরের জন্য আরো কার্যকরী হয়ে ওঠে। তাছাড়া লেবুতে থাকা ভিটামিন সি এবং আদার এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য গ্রিন টি এর কার্যকারিতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়।
- আপনি চাইলে গ্রীন টির সাথে দারুচিনি, এলাচ গুঁড়ো, আমলা গুঁড়ো মিশিয়েও খেতে পারেন। কারণ, মেদ ঝরাতে দারু চিনি, এলাচ এবং আমলা গুড়ো খুব ভালো কাজ করে। সাথে আপনি পুদিনা পাতার রসও যোগ করতে পারেন। এতে গ্রিন টির স্বাদ আরো বেড়ে যাবে।
- গ্রিন টি খাওয়ার সময় প্রাকৃতিকভাবে এর স্বাদ বৃদ্ধি করতে আপনি গ্রিন টি এর পাতা ফুটন্ত পানিতে বেশ কিছুক্ষণ ফুদিয়ে নিতে পারেন যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি গাঢ় রংয়ের হচ্ছে। এতে গ্রীন টি এর স্বাদ বৃদ্ধি পায়।
- অনেকে আছেন যারা অফিস যাওয়ার সময় দ্রুত তাড়াহুড়ো করে এক কাপ গ্রিন টি খেয়ে ফেলেন। এই ভুল কাজ কখনোই করবেন না। কারণ, বিশ্রামের সময় গ্রিন টি খেলে তা অন্যান্য সময়ের থেকে এটি শরীরের পক্ষে অধিক কার্যকরী হয়।
- আবার আমরা অনেকেই মনে করি, এক কাপ ফুটন্ত পানিতে দুইটি গ্রিন টি ব্যাগ যোগ করে খেলে তাতে দ্রুত ওজন কমবে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ ভুল। আপনারও যদি এই অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে আজ থেকেই তা পরিহার করুন। কারণ, দুইটি গ্রীন টি ব্যাগ যোগ করলে তাতে এসিডিটির সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে এবং সেই সাথে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- আপনি গ্রিন টি ঠান্ডা অথবা গরম উভয় অবস্থাতেই খেতে পারেন। সাধারণত ঠান্ডা গ্রিন টিতে ক্যাফেইনের পরিমাণ অল্প থাকে এবং এটি পেটের সমস্যা কমাতে কাজ করে। অপরদিকে গরম গ্রিন টি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় এবং দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- গ্রিন টি পান করার পর আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। কারণ, গ্রিন টি খাওয়ার পর পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে আপনার শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং গ্রিন টি খুব সহজেই আপনার শরীরে অতি দ্রুত শোষিত হয়ে যাবে।
- গ্রিন টি শুধুমাত্র ওজন কমানোর পানীয় হিসেবে নয় বরং এটি আপনি আপনার স্নাক্স এর অংশ হিসেবেও খেতে পারেন। এতে করে আপনার ক্ষুধা প্রাকৃতিকভাবে কমবে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রতি চাহিদাও কমবে।
গ্রিন টি খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন ধরুন-
- গ্রিন টিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি না খেয়ে আপনি পরিমাণ মতো খাওয়ার চেষ্টা করুন। কেননা অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলস্বরূপ আপনার অনিদ্রা, মাথা ব্যথা বা শারীরিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি খেলে এটি আপনার পেটের অস্বস্তির কারণ হয়েও দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অনেকেই আছেন যারা না জেনে গ্রিন টি দিয়ে ঔষধ বা ট্যাবলেট সেবন করে থাকেন। এতে করে ঔষধের রাসায়নিক যৌগ গ্রীন টি এর সাথে মিশে একসাথে এসিডিটির সৃষ্টি করে। তাই এসিডিটি থেকে রেহাই পেতে আপনি গ্রিন টি দিয়ে ঔষধ সেবন এড়িয়ে চলুন।
- অতিরিক্ত গরম থাকা অবস্থায় আপনি গ্রিন টি কখনোই খাবেন না। তাতে আপনার জিব্বা, ঠোঁট কিংবা পাকস্থলীর ক্ষতি হতে পারে।
- আবার অন্তঃসত্ত্বকালীন সময়েও গ্রিন টি খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ এই সময় গ্রিন টি খেলে এতে থাকা শরীরে আয়রন শোষণে বাধা প্রদান করে।
- গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদান কালীন সময়ে অতিরিক্ত গ্রিন টি খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এটি আপনার গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
দিনে কতবার গ্রিন টি খাওয়া যায়
দিনে কতবার গ্রিন টি খাওয়া উচিত তা আমরা অনেকেই জানিনা। আবার আমরা অনেকেই না জেনে না বুঝে সারা দিন রাত মিলিয়ে ৬-৭ কাপ গ্রিন টি খেয়ে ফেলি। যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে গ্রীন টি এর উপকারিতা নয় বরং আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাবে। বিশেষ করে গ্রীন টিতে রয়েছে ক্যাফেইন। আর অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন সেবন করলে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।আরো পড়ুনঃ লেবু দিয়ে ওজন কমানোর কার্যকরী ৭টি উপায়
যার
ফলস্বরূপ অনেকটা উদ্বেগ বা পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বলবো সারা
দিনে ৩-৫ কাপের বেশি গ্রিন টি না খাওয়াটাই ভালো। এই পরিমাণে গ্রিন টি খেলে
গ্রিন টিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য
শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে কাজ করে। তবে আপনার যদি ক্যাফেইন বা অন্যান্য
ক্যাফিন যুক্ত পানীয় পানের অভ্যাস থেকে থাকে,
তাহলে
দিনে ৩ কাপ গ্রিন টি খাওয়াই আপনার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। আর যদি আপনার
পেট বা কিডনিজনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনি গ্রীন টি খাওয়ার পরিমাণ আরও
কমিয়ে দিতে পারেন। আরেকটি কথা না বললেই না, গ্রিন টিতে এমন কিছু উপাদান
রয়েছে যা শরীরের আয়রন শোষণ ক্ষমতা বাধাগ্রস্থ করতে পারে।
সুতরাং
স্বাভাবিকভাবেই আপনি যখন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাবেন ঠিক তখন আয়রন সমৃদ্ধ
খাবারের সাথে গ্রিন টি খাওয়া এড়িয়ে চলবেন। তাতে আয়রন শোষণ ক্ষমতা ব্যাহত
হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম হবে। তাছাড়া ওজন কমাতে আপনি কোন নিয়মে গ্রিন
টি খাবেন তা খানিক আগেই জেনেছেন।
গ্রিন টি কখন খেলে ওজন কমে
গ্রিন টি কখন খেলে ওজন কমে জানেন কি? গ্রিন টি মূলত একটি স্বাস্থ্যকর পানীয়, যা ওজন কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে এতে থাকা ক্যাফেইন নামক উপাদান গুলো মেটাবলিজম বাড়াতে এবং শরীরের ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। তবে ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে সঠিক সময়ে এবং নিয়ম মেনে গ্রিন টি পান করতে হবে। এবারে চলুন কোন সময় গ্রিন টি খেলে ওজন কমবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-- সকাল বেলাঃ গ্রিন টি খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকাল বেলা। কিন্তু ভুলেও আপনি খালি পেটে গ্রিন টি খাবেন না। বরং সকালে নাস্তার পরে আপনি এক কাপ গ্রিন টি পান করতে পারেন। এতে করে সারা দিনের জন্য আপনার শরীর হাইড্রেটেট থাকবে এবং রাতে ঘুমের পর শরীরে যে ডিহাইড্রেট থাকে তা দূর হবে। শুধু তাই নয় প্রাতঃকালে গ্রিন টি খেলে এটি শরীরের ফ্যাট ঝরাতে কাজ করে এবং খাবার খাওয়ার প্রতি চাহিদা কমায়। যা ওজন কমাতে সহায়ক।
- খাবারের পরঃ খাবারের পর বিশেষ করে দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা আগে অথবা পরে গ্রিন টি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ, খাবারের পরে গ্রিন টি খেলে তাতে হজম প্রক্রিয়া অনেকটাই সহজ হয়। এতে থাকা ক্যাফেইন হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তবে খাওয়ার পর অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রিন টি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এতে পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
- ব্যায়াম করার আগেঃ আপনি যদি নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করেন সে ক্ষেত্রে ব্যায়াম করার আগে এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। এটি আপনার শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে এবং ফ্যাট ঝরাতেও কাজ করবে। তাছাড়া এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ব্যায়ামের আগে গ্রিন টি খান তাদের শরীরে সর্বাধিক পরিমাণ ফ্যাট ঝরানো সম্ভব হয়।
- বিকেলবেলা বা সন্ধ্যার নাস্তায়ঃ আপনি চাইলে বিকেলে কিংবা সন্ধ্যা বেলার নাস্তার সাথেও গ্রিন টি খেতে পারেন। সারা দিনের কাজের শেষে বিকেলবেলা এক কাপ গ্রিন টি পান করলে এটি আপনার শরীরকে যেমন চাঙ্গা করবে তেমনি শারীরিক ক্লান্তিও দূর করবে। তাই বলবো বিকেলে চা বা কফির পরিবর্তে আপনি এক কাপ গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার ওজন কমবে এবং সেইসাথে শরীরের শক্তিও বাড়বে।
সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। যা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেলস ও পলিফেনলস রয়েছে যা আমাদের শরীরের কার্যকারিতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এবার চলুন সকালে গ্রিন টি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই -- ওজন কমাতেঃ সাহায্য করে সকালে নাস্তার পরে এক কাপ গ্রিন টি খেলে এটি ওজন কমাতে দারুন কাজ করে। কারণ, গ্রিন টিতে বিভিন্ন উপাদান যেমন ধরুন- ক্যাটেচিন ও ক্যাফিন রয়েছে যা মেটাবলিজম বাড়াতে কাজ করে এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেঃ হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও খুব ভালো কাজ করে গ্রিন টি। কারণ, গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, নিয়মিত নিয়ম মেনে গ্রিন টি খেলে এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, রক্তনালী পরিষ্কার রাখে এবং হৃদপিণ্ডও সুস্থ থাকে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গ্রিন টি অত্যন্ত উপকারী। কারণ, গ্রিন টি ইনসুলিনের প্রতি শরীরের সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেঃ হজমের জন্য গ্রিনটি খুবই ভালো। ফলে খাবার খাওয়ার পর আপনি এক কাপ গ্রিন টি পান করতেই পারেন। এতে আপনার হজম প্রক্রিয়া যেমন সহজ হবে তেমনি পেটে গ্যাস ও এসিডিটির সমস্যা দূর হবে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যঃ নিয়মিত নিয়ম মেনে গ্রিন টি খেলে এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস অপসারণ কাজ করে। শুধু তাই নয়, এটি কোষের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত শরীর সুস্থ রাখে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতেঃ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করতেও গ্রিন টি বেশ কার্যকরী। এতে থাকা ক্যাফিন এবং এল-থিয়ানিন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
- ত্বক ভালো রাখতেঃ গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে বিশেষ করে ত্বকে ব্রনের দাগ, কালো দাগছোপ, রোদে পোড়া দাগ ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, ত্বক পরিষ্কার রাখতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও কাজ করে গ্রিন টি।
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ সকালে এক কাপ গ্রিন টি আপনাকে ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে পারে। কারণ, এতে রয়েছে পলিফেনলস ও ক্যাটেচিন যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও বিস্তার রোধ করে। বিশেষ করে ফুসফুস ও স্তন ক্যান্সারে প্রতিরোধে গ্রিন টি খুবই উপকারী।
- দাঁত ভালো রাখেঃ সকালে গ্রিন টি খেলে এটি মুখের যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়া, দাঁতের সমস্যা ও প্রদাহ কমাতে কাজ করে। এছাড়া গ্রীন টিতে থাকা ফ্লোরাইড দাঁত পরিষ্কার ও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ অনেকেই আছেন যারা পেস্ট ব্যবহার করে ব্রাশ করার পরেও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে পারেন না। ফলে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি খেতে পারেন সকালবেলা এক কাপ গ্রিন টি। কারণ, মুখের গন্ধ দূর করতে গ্রিন টি খুবই কার্যকরী।
- হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করেঃ শরীরে হরমোনের ভারসাম্যতা রক্ষায় গ্রিন টি এর ভূমিকা অনবদ্য। বিশেষ করে মা-বোনদের পিরিয়ড জনিত সমস্যা এবং মেনোপজ জনিত সমস্যায় গ্রিন টি ওষুধের মত কাজ করে।
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতেঃ সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে অনেকেই মানসিক চাপ অনুভব করেন। এই মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে আপনি রাতে খাবার খাওয়ার পর খেতে পারেন এক কাপ গ্রিন টি। কারণ গ্রিন টি তে থাকা এল এথিয়ানিন নামক অ্যামিনো এসিড মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এটি মস্তিষ্ক শান্ত রাখে ফলে ঘুম ভালো হয়।
- মেটাবলিজম বাড়ায়ঃ নিয়মিত সকাল বেলা গ্রিন টি খেলে প্রাকৃতিকভাবে এটি শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। এতে করে শরীরের চর্বি ও ক্যালরি দ্রুত ঝরতে থাকে। যা ওজন কমাতে সহায়ক।
- শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতেঃ অনেক সময় আমরা শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করি। ফলে রোজকার কাজে-কর্মে এনার্জি পাই না। শারীরিক এই দুর্বলতা কাটাতে আপনি নিয়মিত সকালবেলা এক কাপ গ্রিন টি খেতে পারেন। এতে আপনার শরীরে অতিরিক্ত এনার্জির সঞ্চার হবে। অনেকেই আছেন যারা সকালে কফি খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু কফির তুলনায় গ্রিন টি অতিরিক্ত এনার্জি দেয় যা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করেঃ যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য গ্রিনটি হতে পারে একটি মহৌষধ। সকালে নিয়মিত গ্রীন টি খাওয়ার ফলে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
- ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করেঃ লিভারের জন্যও সকালে গ্রিন টি খাওয়া উপকারী। সকালে গ্রিন টি খেলে এটি লিভারের সঞ্চিত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। যা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমাতে সহায়ক।
গ্রিন টি খেলে কি ওজন কমে
গ্রিন টি খেলে কি ওজন কমে? এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই রয়েছে। দেখুন, গ্রিন টি প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি কেবলমাত্র একক কোন সমাধান কখনোই হতে পারে না। তবে গ্রীন টির মধ্যে ক্যাটেচিন রয়েছে যা শরীফের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বাড়াতে কাজ করে।সেই
সাথে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরাতেও সাহায্য করে এই ক্যাটেচিন। এ
গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি তে থাকা ক্যাটেচিন এবং ক্যাফিন এর মিশ্রণ
শরীরে চর্বি পড়াতে সাহায্য করতে পারে। যদি এটি আপনি ব্যায়াম করার আগে
কিংবা পরে পান করেন। এটি শরীরের চর্বি ধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং শক্তির
স্তর বাড়াতে সাহায্য করে।
যা
ওজন কমাতে বিশেষভাবে সহায়ক। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও
আমাদের ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, গ্রিন টিতে রয়েছে
থিয়ানিন নামক উপাদান যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। আর মানসিক চাপ
কমলে স্বাভাবিকভাবেই ওজনও কমতে থাকবে।
তবে
একটি কথা না বললেই না শুধুমাত্র গ্রিন টি খেলেই ওজন কমবে বিষয়টি এমন না।
বরং ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন আপনার সুস্থ জীবন যাপন,
সুষম খাদ্যাভাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা।pmm৩৩ তাছাড়া ওজন কমানোর জন্য আপনি
গ্রিন টি কোন নিয়মে কিভাবে খাবেন তা আজকের আলোচনার শুরুতেই জেনেছেন।
ওজন কমাতে কোন গ্রিন টি ভালো
ওজন কমাতে কোন গ্রিন টি ভালো এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। গ্রিন টি মূলত চায়ের পাতা থেকে তৈরি করা হয় এবং এর মধ্যে রয়েছে ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মেটাবলিজম বাড়ানোর জন্য সহায়ক। তবে গ্রিন টির বিভিন্ন ধরন এবং ব্র্যান্ড বাজারে পাওয়া যায় যেগুলো ওজন কমানোর জন্য বেশ কার্যকরী। সম্মানিত পাঠক, আসুন এবার বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি গ্রিন টি আপনার ওজন কমানোর জন্য সহায়ক হতে পারে-- ক্যামেলিয়া সাইনেনসিসঃ এটি হলো সাধারণ গ্রিন টি। যা সরাসরি গ্রীন টি পাতা থেকে প্রস্তুত করা হয়। এই গ্রীন টিতে থাকে প্রাকৃতিক ক্যাটেচিন এবং কফি চিনের মত প্রাকৃতিক উপাদান যা মেটাবলিজম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এই গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে তা ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতেও সাহায্য করে। যা কিনা ওজন কমাতে সহায়ক।
- মাচা গ্রিন টিঃ মাচা গ্রিন টি এক বিশেষ ধরনের গ্রিন টি। যা সাধারণত পাউডার আকারে পাওয়া যায়। সাধারণ গ্রিন টি থেকে এটি অনেক পুষ্টিমান সম্পন্ন। কারণ, মাচার পাতা সম্পূর্ণরূপে খাওয়া হয়। তাছাড়া এতে উপাদানগুলির পরিমাণ বেশি থাকে।
- লেমন গ্রিন টিঃ লেমন গ্রিন টি হল লেবু এবং গ্রিন টি এর সংমিশ্রণ। লেমন ও গ্রিন টি একসাথে পান করলে তা ওজন কমাতে আরো কার্যকরী হয়ে ওঠে। গ্রিন টির সাথে লেবু যোগ করলে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং পেকটিন শরীরের ফ্যাট কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- জেঞ্জার গ্রিন টিঃ জেন্ডার গ্রিনটি মূলত গ্রিন টি এবং আদার সংমিশ্রণ। অন্যান সাধারণত হজমে সহায়ক এবং দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কাজ করে। তার থেকেও বেশি কাজ করে শরীরের ক্যালোরি পোড়াতে।
- টেটলি গ্রিন টিঃ বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি ব্রান্ড এবং এটি বিভিন্ন স্বাদে পাওয়া যায়। এই টেটলি গ্রিন টি ফ্যাট বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে উপকারী হতে পারে। কারণ, এতে উচ্চ মানের ক্যাটেচিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
- লিপটন গ্রিন টিঃ এটিও গ্রিন টির একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেচিন ধারণ করে। ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আপনি লিপটন গ্রিন টিও সেবন করতে পারেন।
- অর্গানিক ইন্ডিয়া তুলসী গ্রিন টিঃ এটি একটি বায়ো ডায়নামিক গ্রিন টি যার সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে তুলসীপাতার উপস্থিতি। যা ওজন কমানোর জন্য উপকারী হতে পারে। তুলসী পাতা শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে কাজ করে। শুধু তাই নয়, এই গ্রিন টি ওজন কমানোর পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতেও কার্যকরী।
- আপনি যদি ক্যাফেইন সংবেদনশীল হন তবে চেষ্টা করবেন ক্যাফিন মুক্ত গ্রিন টি বেছে নিতে।
- আপনি চেষ্টা করবেন অর্গানিক ও বায়োডায়নামিক গ্রিন টি নির্বাচন করতে। কারণ, অর্গানিক গ্রিন টি সাধারণত প্রাকৃতিক এবং রাসায়নিক উপাদান ছাড়াই তৈরি করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- বাজারে সাধারণত অনেক ধরনের গ্রীন টি পাওয়া যায় যেগুলো বিভিন্ন ফ্লেভার বা অতিরিক্ত উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। ওজন কমাতে ভালো ফল পেতে আপনি কেবলমাত্র তাজা গ্রিন টি বেছে নিন।
- গ্রিন টি সাধারণত বিভিন্ন স্বাদের পাওয়া যায় যেমন- লেমন, মেথি কিংবা আদা স্বাদ যুক্ত।
ওজন কমাতে গ্রিন টি বানানোর নিয়ম
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই ওজন কমাতে গ্রিন টি বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এবার জেনে নেই আপনি গ্রিন টি কিভাবে বানাবেন-- গ্রিন টি নির্বাচনঃ ওজন কমাতে প্রথমেই আপনাকে একটি ভালো মানের গ্রিন টি নির্বাচন করতে হবে। সে হিসেবে আপনি সেরা গ্রিন টি হিসেবে অর্গানিক বা ন্যাচারাল গ্রিন টি বেছে নিতে পারেন। এতে ক্যাটেচিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট ঝরাতে কাজ করে।
- গ্রিন টি পাতা বা টি ব্য্যাক ব্যবহারঃ গ্রিনটি তৈরি করতে আপনি গ্রিন টি পাতা বাটি প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, টি ব্যাগ ব্যবহার সহজ হলেও পাতা ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রিন টি খাওয়া অধিক স্বাস্থ্যকর। সাধারণত এক কাপ গ্রিন টির জন্য ১-২ চা চামচ গ্রিন টি পাতাই যথেষ্ট।
- পানি গরম করাঃ গ্রিন টি তৈরির জন্য পানি খুব বেশি গরম না করাই ভালো। আপনি চেষ্টা করবেন ৭০- ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি গরম করতে। কারণ অতিরিক্ত গরম পানিতে গ্রিন টি পাতার পুষ্টিগুণ অনেকটা কমে যায়। এমনকি পাতা পুড়েও যেতে পারে।
- পানি ফুটানোঃ পানি গরম করার পর আপনি এক মিনিটের মত পানি খুব ভালো মতো ফুটিয়ে নিন। অতঃপর গরম পানিতে গ্রিন টি পাতা অথবা টি ব্যাগ যোগ করুন।
- গ্রিন টি পাতা পানিতে দীর্ঘ সময় না ভিজিয়ে রাখাঃ গ্রিন টি পাতা পানিতে দীর্ঘ সময় ভিজে রাখা একেবারেই উচিত নয়। কারণ, বেশি সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখে এর স্বাদ যেমন তীব্র হয়ে যায় তেমনি তিক্ত ভাবও বেড়ে যেতে পারে। চেষ্টা করবেন ২-৩ মিনিটের জন্য গ্রিন টি পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে। যাতে করে গ্রিন টি পাতার স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ ঠিকমত বেরিয়ে আসে।
- লেবু বা মধু যোগ করাঃ গ্রিন টি এর তিক্ত ভাব কমাতে কিংবা ৭ বাড়াতে আপনি চাইলে এর সাথে কয় ফোটা লেবুর রস কিংবা মধু যোগ করতে পারেন। তবে মধু ব্যবহারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মধু ব্যবহার না করে পরিমিত পরিমাণ মধু ব্যবহার করুন।
- গ্রিন টি পান করুনঃ সবশেষে গ্রিন টি তৈরি হয়ে গেলে এটি সাথে সাথে পান করার চেষ্টা করুন। কারণ, গ্রিন টি তৈরীর পর দেরিতে পান করলে এর কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যায়। তবে মনে রাখবেন, খালি পেটে গ্রিন টি খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ, এতে আপনার এসিডিটিক সমস্যা কিংবা পেটের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
আসল গ্রিন টি চেনার উপায়
আসল গ্রিন টি চেনার বেশ কিছু উপায় রয়েছে। বর্তমান সময়ে গ্রিন টি খুবই জনপ্রিয় হলেও বাজারে নকল বা নিম্নমানের গ্রীন টি হরহামেশাই পাওয়া যাচ্ছে। তাই আসল গ্রিন টি চেনাটা ভীষণই জরুরী। এবারে চলুন আপনি আসল গ্রিন টি কিভাবে চিনবেন তার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে জেনে নিন-- রংঃ আসল গ্রিন টির রং হবে হালকা সবুজ এবং যখন পান করবেন তখন সেটি পরিষ্কার ও সতেজ রঙের দেখাবে। এর রং একেবারে ডার্ক হবে না। যদি গ্রিন টি ডার্ক কিংবা বাদামী রঙের হয় তাহলে বুঝতে হবে এটি নকল গ্রিন টি, অরিজিনাল নয়।
- সুগন্ধঃ আসল গ্রিন টির গন্ধ খুবই সতেজ, প্রাকৃতিক হবে এতে চায়ের পাতার মতো একটা স্নিগ্ধ ভাব থাকবে। অপরদিকে নকল গ্রিন টিতে আপনি এই ধরনের গন্ধের অভাব বুঝতে পারবেন।
- চায়ের পাতাঃ আসল গ্রিন টি চায়ের পাতা অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং তরতাজা হবে। এর পাতা সোজা বা অল্প ভাঁজ যুক্ত হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, পাতাগুলো ছোট থেকে মাঝারি আকারের হয় এবং কিছুটা নরম প্রকৃতির হয়। তবে চায়ের পাতা যদি শুকনো ভাঙ্গা কিংবা পাতলা হয় সেক্ষেত্রে আপনি বুঝে নিবেন এটি নকল বা নিম্নমানের গ্রিন টি।
- গ্রিন টির স্বাদঃ আসল গ্রীন টি এক ধরনের মসৃণ, তাজা এবং সজীব স্বাদ দেয়। এতে কোন ধরনের তীব্র তেতো ভাব বা অতিরিক্ত মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায় না। অপরদিকে নকল বা নিম্নমানের গ্রিন টির স্বাদ বেশ তেতো এবং শুষ্ক স্বাদ যুক্ত হতে পারে।
- গ্রিন টি প্রস্তুতির সময়ঃ আসল গ্রিন টি তৈরি করতে খুব একটা বেশি সময় লাগে না সাধারণত এক কাপ গ্রিন টি তৈরীর জন্য ২-৩ মিনিটই যথেষ্ট। আবার গ্রিন টির পাতাগুলিকে আপনি যদি অতিরিক্ত সময় পানিতে রেখে দেন তবে তার স্বাদ পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিন্তু গ্রিন টি দীর্ঘ সময় পানিতে ফুটানোর পরেও যদি এর সঠিক স্বাদ ও গন্ধ না আসে তাহলে বুঝে নেবেন এটি আসল গ্রীন টি নয়।
- পানির তাপমাত্রাঃ আসল গ্রিন টি তৈরির জন্য পানির তাপমাত্রা সাধারণত ৭০-৮০ টি সেলসিয়াস থাকতে হবে। খুব বেশি গরম পানিতে গ্রিন টির পাতা ছাড়লে এটি পুড়ে যেতে পারে কিংবা এরশাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে নকল গ্রিন টি গরম পানিতে সঠিকভাবে মেশে না এবং এর গন্ধ ও স্বাদ বেশিক্ষণ থাকে না।
- চায়ের পাতার আকার আকৃতিঃ আসল গ্রিন টি চেনার আরেকটি উপায় হল এর পাতা। আসল গ্রিন টির পাতাগুলো সাধারণত সোজা বা অল্প ভাঁজ যুক্ত হয় এবং পাতাগুলো একেবারে ধবধবে থাকে। অন্যদিকে নকল গ্রিন টির পাতা প্রায় ভাঙ্গা কিংবা শুষ্ক হতে পারে।
গ্রিন টি দাম কত
গ্রিন টি দাম কত? দেখুন ব্র্যান্ড অনুযায়ী গ্রিন টির দামের ভিন্নতা রয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গ্রিন টি পাওয়া যায় এবং তাদের দাম ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট এর মান, প্যাকেজিং এবং বাজারের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়। Pmm৫৫ ওজন কমাতে আপনি গ্রিন টি কোন নিয়মে কিভাবে খাবেন তা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন। এবার চলুন বেশ কিছু জনপ্রিয় গ্রিন টি ব্র্যান্ড এর দাম সম্পর্কে জেনে নিই-- চাইনীজ গ্রিন টিঃ ওজন কমাতে চাইনিজ গ্রিন টি এর জুড়ি মেলা ভার। শুধু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নয় বরং কিডনি রোগ, হার্ট অ্যাটাক, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে, ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে, দাঁতের ক্ষয় রোধে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে এই গ্রিন টি অত্যন্ত উপকারী। চাইনীজ গ্রিন টি ১০০ গ্রাম আপনি বাজারে ১৩০০-১৪৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন।
- ইস্পাহানি গ্রিন টি ব্যাগঃ ইস্পাহানি গ্রিন টিও বেশ ও জনপ্রিয়। ইস্পাহানি গ্রীন টি আপনি টি ব্যাগ হিসেবে খুব সহজেই আপনার নিকটস্থ যে কোন সুপার শপে পেয়ে যাবেন। ইস্পাহানি গ্রীন টি ব্যাগ আপনি ৫০ পিস পেয়ে যাবেন ১৯০-২০০ টাকার মধ্যে।
- লিপটন গ্রিন টিঃ লিপটন গ্রিন টি একটি বিশ্ব বিখ্যাত ব্যান্ড। এটি খুব সহজে পাওয়া যায় এবং এটি সাধারণত লেমন স্বাদ যুক্ত। এটি ওজন কমাতে এবং হজমে খুব ভালো কাজ করে। লিপটন গ্রিন টির ১৫০ গ্রামের একটি প্যাকেটে ১০০ টি ব্যাগ থাকে। যার দাম পড়বে ৬০০-৭৫০ টাকার মধ্যে।
- তাজা গ্রিন টিঃ তাজা ব্র্যান্ডের গ্রিন টি অনেক ভালো মানের এবং এটি খুবই ফ্রেশ। সাধারণত হালকা সুগন্ধ যুক্ত হয়। প্রতি ৫০ গ্রাম প্যাকেট এর জন্য তাজা গ্রিন টির দাম পড়বে ৩৫০- ৪৫০ টাকা।
- প্রিমিয়াম গ্রিন টিঃ প্রিমিয়াম গ্রিন টি বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভার যুক্ত হয় যেমন মেনটা, লেবু, মধু ইত্যাদি। প্রতি ৫০ গ্রাম প্রিমিয়াম গ্রিন টি প্যাকেট আপনি সাড়ে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।
- অর্গানিক গ্রিন টিঃ অর্গানিক গ্রীন টি একেবারে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয়। অর্গানিক গ্রীন টির মধ্যে বেশকিছু ব্র্যান্ড রয়েছে যেমন- অর্গানিক সিক্রেট, কেমবার ল্যান্ড। অর্গানিক গ্রীন টি আপনি ৫০ গ্রাম ১৩০ টাকায়, ১০০ গ্রাম ২৫০ টাকায়, ৫০০ গ্রাম ১২৫০ টাকায় এবং এক কেজি ২৫০০ টাকায় পেয়ে যাবেন।
- সি গ্রিন টিঃ সি গ্রিন টি প্রিমিয়াম দিন হিসেবে পরিচিত এবং এর দাম তুলনামূলকভাবে অন্যান্য গ্রিন টির থেকে খানিকটা বেশি। এই গ্রিনটিতে অধিক পরিমাণে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। সি গ্রিন টির প্রতি ৫০ গ্রাম প্যাকেটের জন্য দাম পড়বে ৩০০-৫০০ টাকা।
- ব্রুক বন্ড গ্রিন টিঃ ব্রুক বন্ড গ্রিন টি দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম। তবে এটিও বেশ শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। প্রতি ৫০ গ্রাম ব্রুক বন্ড গ্রিন টি আপনি পেয়ে যাবেন ১৫০-২৫০ টাকার মধ্যে।
- ডাবর গ্রিন টিঃ ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে এবং কোলেস্টেরল কমাতে ডাবর গ্রীন টি বেশ উপকারী। বিশেষ করে যারা স্বাস্থ্য সচেতন রয়েছেন তারা ডাবর গ্রিন টি বেশি ব্যবহার করে থাকেন। ডাবর গ্রিন টি প্রতি ৫০ গ্রাম প্যাকেট এর জন্য দাম পড়বে ৩০০-৫০০ টাকা।
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
ওজন কমাতে গ্রিন টি খাওয়ার নিয়ম আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনি নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। গ্রিন টি ওজন কমানোর সহায়ক উপাদান হিসেবে বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় একটি পানীয়। কারণ এটি মেটাবলিজম বাড়াতে এবং শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ঝরাতে খুব ভালো কাজ করে। তবে গ্রিন টি সবার জন্য কার্যকরী নয়।বিশেষত
যারা অতিরিক্ত কফি, চা পান করেন বা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন
তাদের সীমিত পরিমানে গ্রীন টি পান করা উচিত। মনে রাখবেন, ওজন কমানোর জন্য
গ্রিন টি একটি সহায়ক উপাদান মাত্র। তা বলে ওজন কমাতে শুধুমাত্র গ্রিন টির
উপর নির্ভরশীল হলেই চলবে না। বরং গ্রিন টির পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং
ব্যায়ামও জরুরী। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে
আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url