পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
পেয়ারা পাতার উপকারিতা আমরা অনেকেই জানিনা? পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম কি? জানতে চান! পেয়ারা প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন পেয়ারার পাতায় রয়েছে অনেক গুণ?
পোস্ট সূচিপত্রঃ পেয়ারা পাতার উপকারিতা
- পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- পেয়ারা পাতার উপকারিতা
- পেয়ারা পাতার অপকারিতা
- পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম
- খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা
- পেয়ারা পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম
- চুল পড়া রোধে পেয়ারা পাতার ব্যবহার
- পেয়ারা পাতা খেলে কি সুগার কমে
- পেয়ারা পাতার রসের উপকারিতা
- পেয়ারা পাতা দিয়ে রূপচর্চা
- পেয়ারা পাতার তেল বানানোর নিয়ম
- লেখকের মন্তব্য
পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
পেয়ারা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আমাদের অনেকেরই অজানা। পেয়ারার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা কমবেশি সকলেরই জানা। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই পেয়ারা পাতায় রয়েছে বিশেষ কিছু ঔষধি উপাদান। যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাজ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে পেয়ারা পাতা আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুনঃ তুলসী পাতার ২০টি কার্যকরী স্বাস্থ্য উপকারিতা
কারণ, এই পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং আন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। যা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। এই পেয়ারা পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে হজম ক্ষমতা বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও দারুন কাজ করে। তাছাড়া পেয়ারা পাতার চা পানের মাধ্যমেও আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদও ঝরিয়ে ফেলতে পারেন।
শুধু
কি তাই, এই পাতায় রয়েছে পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েড, ফ্লাভনয়েড এবং
ট্যানিন। যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী। তবে পেয়ারা পাতার
আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা পাতা খেলে আপনার
অ্যালার্জির সম্ভাবনা কিংবা পেটের গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। তাই পেয়ারা
পাতা ব্যবহারের সময় এর পরিমাণ এবং স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা খুবই
জরুরী।
পেয়ারা পাতার উপকারিতা
পেয়ারা পাতার নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যা জানলে আপনি নিজেই আজ থেকে হয়তো পেয়ার পাতার ব্যবহার শুরু করে দেবেন। সম্মানিত পাঠক, আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে আসি উপকারী এই পাতার কিছু গুণের কথা-
আরো পড়ুনঃ বরই পাতার ১০ উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
- আপনি কি পেটের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে বলব পেয়ারা পাতা খেতে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার হজম প্রক্রিয়াকে অনেকটাই সহজ করে। ফলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পেটের অন্যান্য সকল সমস্যা দূর হয়।
- পেট পরিষ্কার রাখতে আপনি সেবন করতে পারেন পেয়ারা পাতার নির্যাস। এর জন্য ৬ কেজি জলে ৮-১০ টি পেয়ারা পাতা ভালো করে সেদ্ধ করে নিন। পেয়ারা পাতার এই জল দিনে ৩ বার পান করুন।
- ওজন কমাতে পেয়ারা পাতার চা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পানীয়। নিয়মিত পেয়ারা পাতার চা পান করলে এতে আপনার মেটাবলিজম বাড়বে এবং শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরবে।
- পেয়ারা পাতায় থাকা এন্টি বায়োটিক বৈশিষ্ট্য শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। যা রক্তে গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী।
- পেয়ারা পাতা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রী রেডিক্যাল থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে।
- পেয়ারা পাতায় রয়েছে হাইপোলিপিডেমিক বৈশিষ্ট্য। যা নিয়মিত সেবনে এটি আপনার শরীরে লিপিডের পরিমাণ কমাতে পারে।
- আপনি কি জানেন পেয়ারা পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও বেশ কার্যকরী। পেয়ারা পাতা সেবনে এটি রক্তের কোলেস্টেরলের লেভেল কমাতে কাজ করে। যা হৃদরোগের ঝুকি কমায় এবং সেইসাথে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- পেয়ারা পাতার এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আপনার শরীরে বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
- পেয়ারা পাতা নির্জার সেবনে আপনি মরণঘাতী ক্যান্সার থেকেও বাঁচতে পারেন। কারন, একটি টেস্ট টিউব গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতার নির্যাস শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। বিশেষ করে পেয়ারা পাতার ক্বাথ ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার রোধে কার্যকরী একটি উপাদান।
- পেয়ারা পাতা আমাদের ত্বকে অনেকটা টনিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পেয়ারা পাতায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা দূর করার পাশাপাশি বার্ধক্যের ছাপ কমায়।
- আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত টক্সিন দূর করতেও সাহায্য করে পেয়ারা পাতা।
- শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা লাগা, সর্দি, কাশি ইত্যাদির উপশমে পেয়ারা পাতা খুব ভালো কাজ করে। কারণ, এই পাতার ইনহেলেশন শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে।
- পেয়ারা পাতা আপনার ত্বকের জন্যও উপকারী। কারণ, ত্বকে ব্রণের সমস্যা, ব্রনের দাগ এবং ত্বকের অন্যান্য প্রদাহ কমাতে ও ত্বক উজ্জ্বল করতে পেয়ারা পাতা খুব ভালো কাজ করে।
- আবার চুল পড়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে পেয়ারা পাতার জুড়ি মেলা ভার। পেয়ারা পাতার ব্যবহারে এটি অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করে এবং সেই সাথে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
- শুধু কি তাই, নতুন চুল গজাতেও পেয়ারা পাতার রসের জুড়ি মেলা ভার। পেয়ারা পাতা দিয়ে ফোটানো জল চুলে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের ফলিকল গুলি পুষ্টি পায়। ফলে নতুন করে চুল গজায়।
- আপনার পেটে কি মাঝেমধ্যেই ব্যথা হয়? তাহলে আপনি আজ থেকেই নিয়ম করে পেয়ারা পাতার চা পান শুরু করুন। কারণ, পেয়ারা পাতার চা পেটের ব্যাথা এবং অস্বস্তি কমাতে কাজ করে।
- পেয়ারা পাতায় রয়েছে ডায়রিয়া প্রতিরোধী গুণ। ফলে ডায়রিয়ার সময় পেয়ারা পাতা খেলে আপনি ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- মহিলাদের পিরিয়ড জনিত ব্যথা ও অস্বস্তি কমাতে পেয়ারা পাতা মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
- আপনি কি জানেন, পেয়ারা পাতা পুরুষের স্পার্ম কাউন্টও বৃদ্ধি করে। জেনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, পেয়ারা পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য পুরুষের শুক্রানুর বিষাক্ততার ওপর প্রভাব ফেলে। যা কিনা স্পার্ম বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- পেয়ারা পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
- নিয়ম করে নিয়মিত পেয়ারা পাতার রস খেলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়। ফলে শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে আপনি নিয়ম মেনে পেয়ারা পাতার রস খেতে পারেন।
- আপনার যদি মাথা ব্যথার সমস্যা থেকে থাকে তাহলে বলব পেয়ারা পাতার চা খেতে। কারণ, পেয়ারা পাতার চা খেলে এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় এবং মাথাব্যথার উপশম ঘটায়।
- শুধু তাই নয়, ব্রংকাইটিস এবং বুকে জমা কফ দূর করতেও পেয়ারা পাতার চা দারুন কার্যকরী।
- শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে এবং ক্ষতস্থানে পেয়ারা পাতার নির্যাস ব্যবহার করলে সেখান থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
- পেয়ারা পাতায় বিভিন্ন ধরনের বায়ো একটিভ যৌগ থাকার কারণে এটি আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণ রোধে খুব ভালো কাজ করে।
- নিয়মিত পেয়ারা পাতার নির্যাস সেবনে এটি মানসিক স্ট্রেস দূর করে এবং সেই সাথে শরীরের স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
- পেয়ারা পাতার নির্যাস আমাদের শরীরে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। যা বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- আপনারা যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তারা পেয়ারা পাতা সেবন করতে পারেন। কারণ, পেয়ারা পাতায় ভিটামিন সি এর মত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। পেয়ারা পাতা খেলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং রক্তাল্পতা দূর হয়।
- মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও খুব ভালো কাজ করে পেয়ারা পাতা। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি কয়েকটি পেয়ারা পাতা পিষে বা ব্লেন্ড করে তার সাথে শিলা লবণ এবং লবঙ্গ একসাথে মিশিয়ে জলে ফুটিয়ে নিন। এবার ফোটানো জল দিয়ে হালকাভাবে গার্গল করুন। কিছুদিন ব্যবহারে খেয়াল করবেন আপনার নিঃশ্বাসের বাজে গন্ধ আর থাকবে না।
- দাঁত ও দাঁতের মাড়ি ভালো রাখতেও পেয়ারা পাতা বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। কারণ, পেয়ারা পাতার অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য দাঁত এবং দাঁতের মাড়ির জন্য উপকারী।
পেয়ারা পাতার অপকারিতা
পেয়ারা পাতার অপকারিতাও রয়েছে। তবে উপকারিতার থেকে এর অপকারিতা গুলো একেবারেই নগণ্য। এবার চলুন অতিরিক্ত পেয়ারা পাতা খাওয়ার ফলে আপনার কি কি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন-
আরো পড়ুনঃ পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জেনে নিন
- পেয়ারা পাতা শরীরের উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। ফলে আপনাদের যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের পেয়ারা পাতা না খাওয়াটাই ভালো। তাতে রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা পাতার সেবন করলে এটি আপনার পেটের অস্বস্তি এবং পেট ব্যথার কারণ হতে পারে।
- ডায়রিয়া সারাতে পেয়ারা পাতা উপকারি এ কথা ঠিক। কিন্তু পেয়ারা পাতা অতিরিক্ত সেবন করলে ডায়রিয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- অত্যধিক পরিমাণে পেয়ারা পাতা খেলে আপনার গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস্ট্রাইটিস এর সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করলে আপনার অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। বিশেষ করে যাদের শরীর অত্যন্ত এলার্জি প্রবণ।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পেয়ারা পাতা সেবন একেবারেই উচিত নয়। কারণ, গর্ভকালীন সময়ে পেয়ারা পাতার সেবন করলে এটি আপনার ইউটেরাসের সংকোচন ঘটাতে পারে। তাতে আপনার গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা পাতা খাওয়া আপনার শরীরে অপর্যাপ্ত পুষ্টির কারণ হতে পারে। যা কিনা এনার্জির ঘাটতি তৈরি করতে পারে।
সম্মানিত
পাঠক, পেয়ারা পাতার স্বাস্থ্যকর হলেও এর অতিরিক্ত সেবন উপরিউক্ত ঝুঁকি
গুলো বয়ে আনতে পারে। তাই বলবো সুস্থ থাকতে নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে পেয়ারা
পাতা সেবন করা উচিত।
পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম
পেয়ারা পাতা খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। যা হয়তো অনেকেই জানেন না। আর নিয়ম মেনে খেলে তবেই এই পাতার উপকারিতা আপনি ঠিকঠাক পাবেন। তো এবার চলুন উপকারী এই পাতা আপনি কোন নিয়মে কিভাবে খাবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-
আরো পড়ুনঃ সজনে পাতার অবাক করা ২০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
- পেয়ারা পাতা খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো সকালে খালি পেটে বা দুপুরের খাবারের সাথে। এতে করে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়।
- সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি টাটকা কচি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি স্বাস্থ্যের জন্য সবথেকে বেশি উপকারী। কাঁচা পেয়ারা পাতা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই পাতা ভালো করে পানিতে ধুয়ে নেবেন।
- পেয়ারা পাতা খাওয়ার সময় আপনি অবশ্যই এর পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখবেন। সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ২-৩ টি পেয়ারা পাতা খাওয়াই যথেষ্ট। কারণ, অতিরিক্ত খেলে এটি আপনার পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- যারা কাঁচা পেয়ারা পাতা খেতে অভ্যস্ত নন, তারা পেয়ারা পাতার চা তৈরি করেও খেতে পারেন। পেয়ারা পাতার চা ওজন নিয়ন্ত্রণে, হজমে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপকারী।
- আপনি বিভিন্ন রকম সালাদের সাথে কুচি কুচি করে মিশিয়ে পেয়ারা পাতা খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই কচি পেয়ারা পাতা ব্যবহার করবেন।
- অনেকেই আছেন যারা পেয়ারা পাতার গুঁড়ো দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পছন্দ করেন। সুতরাং দইয়ের সাথে পেয়ারা পাতার গুড়ো মিশিয়েও আপনি খেতে পারেন।
- আবার আপনি চাইলে তাজা পেয়ারা পাতা দিয়ে ব্লেন্ডারে জুস তৈরি করেও খেতে পারেন। পেয়ারা পাতার এই জুস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চমৎকার কাজ করে।
- আপনি পেয়ারা পাতা রোদে শুকিয়ে সেটি গুঁড়ো করে রান্নার সাথে মসলা হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। এতে রান্নার স্বাদ আরো বেড়ে যাবে।
- আপনি চাইলে পেয়ারা পাতা দিয়ে ভর্তা তৈরি করেও খেতে পারেন। এর জন্য কয়েকটি পেয়ারা পাতা জলে সিদ্ধ করে তাতে আদা লেবুর রস মিশিয়ে একটি ভর্তা তৈরি করে ফেলুন এবং গরম গরম ভাতে পরিবেশন করুন।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত নিয়মে আপনি থেকেই নিয়ম করে পেয়ারা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাতে আপনারই উপকার হবে।
খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। পেয়ারা পাতা খাওয়ার উত্তম সময় হলো সকাল বেলা খালি পেটে। এবার চলুন খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে আপনি এর থেকে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
আরো পড়ুনঃ লজ্জাবতী গাছের অবাক করা ১০টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
- প্রথমেই বলি, পেয়ারা পাতা ফাইবার সমৃদ্ধ। ফলে খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এটি পেটের সকল অস্বস্তি দূর করে এবং হজমে সাহায্য করে। সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।
- অনেক সময় মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পেটে জ্বালাপোড়া কিংবা এসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। পেটের জ্বালাপোড়া রোধে আপনি খালি পেটে খেতে পারেন পেয়ারা পাতা। পেটে পেট যেমন পরিষ্কার হয় তেমনি আরাম পাওয়া যায়।
- খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এটি শরীরে অতিরিক্ত চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখেন।
- আপনি কি জানেন পেয়ারা পাতা ওজন নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে। খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এতে আপনার শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি পায়। ফলে আপনার ওজনও প্রাকৃতিকভাবে হ্রাস পেতে থাকে।
- দিনের শুরুতে খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এটি সারা দিনভর আপনার শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও শক্তির সঞ্চার করে।
- নিয়মিত সকালে খালি পেটে আপনি যদি পেয়ারা পাতার চা পান করেন তাহলে আপনার শ্বাসকষ্টের সমস্যা এবং ঠান্ডা লাগার সমস্যা দূর হবে।
- সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতেহৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
- সকালবেলা পেয়ারা পাতা খাওয়ার ফলে পেয়ারা পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বককে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে।
- পেয়ারার মতো পেয়ারার পাতাতেও রয়েছে পটাশিয়াম এবং ফাইবার। ফলে নিয়মিত খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- নিয়মিত নিয়ম মেনে সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা খেলে এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ জনিত সমস্যা যেমন- আর্থাইটিস কমাতে সাহায্য করে।
সম্মানিত
পাঠক, জানিয়ে দিলাম খালি পেটে পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
আপনি সকালে খালি পেটে না খেতে পারলে দুপুরে খাবারের সাথে বা খাওয়ার পরেও
খেতে পারেন। দুপুরে খাবারের সাথে খেলে এতে আপনার হজম প্রক্রিয়া সহজ হবে।
পেয়ারা পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম
পেয়ারা
পাতা চুলে দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। চুলের যত্নেও পেয়ারা
পাতা বেশ উপকারী। শুনে নিশ্চয়ই অবাক রয়েছেন তাইতো! তাহলে চলুন এবার আপনি
আপনার চুলে পেয়ারা পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে নিয়ম গুলো ভালো করে
জেনে রাখুন-
- পেয়ারা পাতা ও পেঁয়াজের পেস্টঃ পেয়ারা পাতার সাথে পেঁয়াজ মিশিয়ে আপনি একটি পেস্ট তৈরি করে এর নির্যাস টুকু বের করে নিন। এবার এই নির্যাসের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে আপনার মাথার চুলে লাগান এবং আধাঘন্টা পরে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
- পেয়ারা পাতার তেলঃ পেয়ারা পাতার তেল চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই তেল তৈরিতে আপনি নারিকেল তেলে বেশকিছু পেয়ারা পাতা নিয়ে ভাজতে থাকুন। ভাজা শেষ হলে তেল ঠান্ডা করে নিন। এবার এই তেল রাতে ঘুমানোর আগে চুলে লাগিয়ে রাখুন এবং পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন ফেলুন।
- পেয়ারা পাতার পেস্টঃ চুলে পেয়ারা পাতা ব্যবহার করতে আপনি ১৫-২০টি পেয়ারা পাতা নিয়ে ভালো করে ধুয়ে পেস্ট করে ফেলুন। এবার এই পেস্ট আপনার মাথায় ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রাখার পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। আশা করছি এতে আপনার চুল ভালো থাকবে।
- পেয়ারা পাতা এবং অ্যালোভেরাঃ পেয়ারা পাতার পেস্টের সাথে এলোভেরা জেল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এ পেস্ট আপনার চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগান এবং লাগিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিন। অতঃপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- পেয়ারা পাতার জলঃ এক মুঠো পেয়ারা পাতা ভালো করে পানিতে ২০ মিনিটের মত ফুটিয়ে নিন। এবার এই পানি ঠান্ডা হলে শ্যাম্পু করার পর পরিষ্কার চুলে মাথায় স্প্রে করুন। তারপর মাথা ম্যাসাজ করুন। তাতে চুলের উপকার মিলবে। বিশেষ করে চুল পড়া রোধে এবং চুল লম্বা হতে এই পেয়ারা পাতার জল ভীষণই উপকারী। রাতে ঘুমানোর আগেও আপনি চুুলে পেয়ারা পাতার এই জল ব্যবহার করতে পারেন।
- পেয়ারা পাতা এবং হলুদ এর মিশ্রণঃ পেয়ারা পাতার পেস্টের সাথে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। আপনার চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের মতো রেখে দিন। প্রায় ৩০ মিনিট পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এই পেস্ট ব্যবহারে আপনার চুলের ঘনত্ব বাড়বে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম আপনি চুলে পেয়ারা পাতা কিভাবে ব্যবহার
করবেন। চুলের যত্নে শুধু পেয়ারা পাতা ব্যবহার না করে সব থেকে ভালো হয় যদি
এর সাথে কয়েকটি উপাদান মিশিয়ে আপনি ব্যবহার করেন। তাতে আপনার চুল ভালো
থাকবে।
চুল পড়া রোধে পেয়ারা পাতার ব্যবহার
পেয়ারা
পাতার উপকারিতা শুধু স্বাস্থ্যগত নয়। বরং চুল পড়া রোধেও পেয়ারা পাতার
বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। চুল পড়া সমস্যা কমবেশি সকলেরই আছে। এই চুল পড়া
রোধে পেয়ারা পাতার একটি ঘরোয়া উপায় আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তো
চলুন এবার পেয়ারা পাতার হেয়ার টনিকটি জেনে নিন--
পেয়ারা পাতার জল
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পেয়ারা পাতা- ১০-১২ টি এবং
- পানির পরিমাণ- ১ লিটার।
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার
- পেয়ারা পাতার জল তৈরিতে আপনি এক লিটার পানিতে ১০-১২টি পেয়ারা পাতা ২০ মিনিটের মত ভালো করে ফুটিয়ে নিন। পেয়ারা পাতার এই জল যতক্ষণ না পর্যন্ত লালচে হবে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি ফুটিয়ে নেবেন।
- ফুটানো শেষে পানি ছেকে পাতা ফেলে দিন এবং ঘরের তাপমাত্রায় ঠান্ডা হতে রেখে দিন।
- আপনি অবশ্যই গোসলের পরে পরিষ্কার চুলে এই পেয়ারা জল ব্যবহার করবেন।
- পেয়ারা পাতার এই জল আপনার মাথার ত্বকে কমপক্ষে দশ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। এতে আপনার মাথার স্ক্যাল্পের রক্তচাপ উন্নত হবে। এতে ফলিকলগুলো আরো বেশি পুষ্টি পাবে।
- পেয়ারা পাতার জল লাগানো শেষে আপনি দুই ঘন্টা পর্যন্ত রেখে দিন। চাইলে মাথায় একটি তোয়ালে মুড়িয়েও রাখতে পারেন।
- প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর হালকা কুসুম গরম পানিতে আপনার চুল ধুয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়।
সম্মানিত
পাঠক, চুল পড়া রোধ করতে পেয়ারা পাতার মিশ্রণটি আপনি সপ্তাহে তিনবার
ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে আপনার অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ হবে। পাশাপাশি
চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন চুল গজাবে।
পেয়ারা পাতা খেলে কি সুগার কমে
পেয়ারা পাতা খেলে কি সুগার কমে অনেকেই জানতে চান। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা প্রায়শই এই প্রশ্নটি করে থাকেন পেয়ারা পাতা খেলে সুগার কমবে কিনা। সম্মানিত পাঠক, হ্যাঁ পেয়ারা পাতা আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে কিছুটা সহায়ক হতে পারে। কারণ, পেয়ারা পাতায় রয়েছে বিশেষ পলিফেনল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
যা খেলে এটি আপনার শরীরে গ্লুকোজের স্তর কমাতে পারে। তাছাড়া এক গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারা পাতা দিয়ে তৈরি চা খেলেও আপনার শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে খুব ভালো কাজ করে। এতে আপনার সুগার হয়তো কিছুতা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। কিন্তু তা বলে সুগার নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধুমাত্র
এককভাবে
পেয়ারা পাতার ওপর নির্ভরশীল হওয়া মোটেও সুগার নিয়ন্ত্রণের কোন সমাধান
হতে পারে না। বরং সুগার নিয়ন্ত্রণে পেয়ারা পাতা সেবনের পাশাপাশি
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং চিকিৎসকের পরামর্শও
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেয়ারা পাতায় সুগার কমে কিনা আশা করছি বুঝতে
পেরেছেন।
পেয়ারা পাতার রসের উপকারিতা
পেয়ারা পাতার নানান রকম উপকারিতা আপনি ইতিমধ্যে আজকের আলোচনায় জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন পেয়ারা পাতার রসেরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। তো চলুন পেয়ারা পাতার রস খেলে আপনি এর থেকে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে পারেন তা জেনে রাখুন-
- রক্তে সুগারের লেভেল কমাতেঃ পেয়ারা পাতার নির্যাস খেলে এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে রক্তে গ্লুকোজ এর স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাছাড়া এতে থাকা পলিফেনল এবং ফ্লাভিনয়েড গুলি রক্তের সুগারের লেভেল কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করেঃ পেয়ারা পাতার রস আপনার পাচনতন্ত্রের জন্যও উপকারী। পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকায় আপনার কোষ্ঠকাঠিনের সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ নিয়মিত পেয়ারা পাতার রস খেলে এটি আপনার শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়। যা কিনা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করেঃ গলা ব্যথা ঠান্ডা লাগা এবং কাশি কমাতে পেয়ারা পাতার রস বিশেষভাবে কার্যকরী। তাছাড়া পেয়ারা পাতার এন্টি ইনফ্লেমেটরি গুণের কারণে এটি শ্বাসযন্ত্রের যেকোনো ধরনের সংক্রমণ খুব সহজে প্রতিরোধ করতে পারে।
- ত্বকের যত্নেঃ পেয়ারা পাতার রস ত্বকে ব্যবহারে ত্বকে ব্রণের দাগ এবং প্রদাহ দূর হয়। কারণ, এই পাতায় রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল এবং আন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- হার্ট ভালো রাখেঃ পেয়ারা পাতাই পটাশিয়াম রয়েছে। যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি আপনার হার্টের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতেঃ পেয়ারা পাতা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ফলে পেয়ারা পাতার রস খেলে এটি আপনার শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে তোলে এবং সেই সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়।
পেয়ারা পাতা দিয়ে রূপচর্চা
পেয়ারা
পাতা দিয়ে রূপচর্চা শতভাগ প্রাকৃতিক একটি উপায়। যার কোন পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া নেই। রূপচর্চায় পেয়ারা পাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা
হয়তো অনেকেই জানেন না। কিন্তু আপনার ত্বকের ব্রণের সমস্যা থেকে শুরু করে
যে কোন ধরনের প্রদাহ কমাতে পেয়ারা পাতা বেশ কার্যকরী। এবার চলুন
রূপচর্চায় পেয়ারা পাতা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-
- ত্বকের ব্রণ দূর করতেঃ ত্বকে ব্রণের সমস্যা এবং ব্রনের কালো দাগ দূর করতে আপনি কয়েকটি পেয়ারা পাতা ধুয়ে ভালো করে থেঁতো করে নিন। এবার ধৃত করা পেয়ারা পাতার নির্যাস আপনার ব্রণের ক্ষতস্থানে লাগান। কয়েক মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছুদিন ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে ব্রণের সমস্যা দূর হবে।
- ত্বকের ব্ল্যাকহেডস দূর করতেঃ ত্বকে ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা কমবেশি সকলেরই থাকে। বিশেষ করে নাকের দু'পাশে ব্ল্যাকহেডস এর সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পেয়ারা পাতা সামান্য জলে মিশিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করুন এবং নাকের দুপাশে লাগিয়ে নিন। কিছুদিন ব্যবহারই দেখবেন আপনার ব্ল্যাকহেডস অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।
- ত্বকের বলিরেখা দূর করতেঃ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে কয়েকটি টাটকা সতেজ পেয়ারা পাতা পেস্ট করে আপনার ত্বকে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। অতঃপর ঠান্ডা পানিতে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত পেয়ারা পাতার এই পেস্ট ব্যবহারে আপনার ত্বক টানটান থাকবে, ত্বকের বলিরেখা দূর হবে এবং ত্বক থেকে বার্ধক্যের ছাপ দূর হবে।
- এলার্জি কমাতেঃ শীতকালে সাধারণত ত্বক শুষ্ক থাকায় এলার্জিজনিতে সমস্যা বা চুলকানির মতো সমস্যা বেড়ে যায়। এই চুলকানি থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন পেয়ারা পাতা। কারণ, পেয়ারা পাতায় রয়েছে এলার্জি ব্লকিং কম্পাউন্ড। চুলকানি এবং ত্বকের লালচে ভাব কমাতে পারে
- ত্বক পরিষ্কার রাখতেঃ সারাদিনের ধুলোবালি থেকে আপনার ত্বক পরিষ্কার রাখতে পেয়ারা পাতা গুঁড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে আপনি ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার হবে এবং ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার থাকবে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ আপনি পেয়ারা পাতা গুঁড়ো করে এর সাথে সামান্য চিনি মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করুন। নিয়মিত পেয়ারা পাতার এই স্ক্রাব ব্যবহারে আপনার ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে হবে এবং সেই সাথে ত্বকের উজ্জলতাও বৃদ্ধি পাবে।
পেয়ারা পাতার তেল বানানোর নিয়ম
পেয়ারা
পাতার তেল বানানোর নিয়ম জানতে চান? পেয়ারা পাতা দিয়ে কিন্তু
তেলও তৈরি করা যায়। জেনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! হ্যাঁ এই তেল আমাদের চুলের জন্যও ভীষণই উপকারী। পেয়ারা পাতার তেল
চুল পড়া রোধ থেকে শুরু করে চুলের বৃদ্ধি এবং উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবার চলুন পেয়ারা পাতার তেল বানানোর নিয়ম আমরা জেনে নিই-
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- পেয়ারা পাতা- ১০-১২ টি
- নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল- ১ কাপ পরিমাণ এবং
- একটি পরিষ্কার কাজের বোতল।
প্রস্তুত প্রণালী
- পেয়ারা পাতার তেল তৈরিতে প্রথমেই পেয়ারা পাতাগুলো পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিন। যাতে এতে কোন ধুলাবালি ময়লা না থাকে।
- পেয়ারা পাতা জলে ধোয়ার পরে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন বা টিস্যু দিয়ে মুছে নিন। কারণ, সেতসেতে পাতা তেলে মেশালে তাতে ছিটকে আসার সম্ভাবনা থাকে।
- নারিকেলের তেল অথবা অলিভ অয়েল নিয়ে হালকা আঁচে গরম করুন। খেয়াল রাখবেন খুব বেশি গরম যেন না হয়।
- তেল গরম হয়ে এলে তাতে ধুয়ে রাখা শুকনো পেয়ারা পাতা গুলি যোগ করুন। আপনি চাইলে পেয়ারা পাতা রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করেও তেলের সাথে ব্যবহার করতে পারেন।
- এবার চুলার আঁচ মাঝারি রেখে পেয়ারা পাতাগুলো প্রায় ১৫-২০ মিনিট তেলে ভালো করে ভেজে নিন।
- তেল যখন হালকা কালচে রঙের হয়ে যাবে এবং পাতাগুলো মুচমুচে হয়ে আসবে তখন বন্ধ করে দিন।
- এবারে একটি পরিষ্কার থাকুন এর সাহায্যে পাতা থেকে তেলগুলো ছেকে আলাদা করে নিন এবং পাতাগুলি ফেলে দিন।
- ব্যাস, আপনার পেয়ারা পাতার তেল তৈরি। এবার এই তেল আপনি একটি কাঁচের বোতলে ঠান্ডা ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করুন। এই তেল প্রায় ৪-৫ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
পেয়ারা পাতার তেলের ব্যবহার বিধি
- পেয়ারা পাতার তেল আপনি আপনার চুলে নিয়মিত ব্যবহার করুন। এতে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে, চুলের ঘনত্ব বাড়বে এবং চুলের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে।
- চুলের পাশাপাশি আপনি এই পেয়ারা পাতার তেল আপনার ত্বকেও ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ, ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে পেয়ারা পাতার তেল বেশ কার্যকরী।
লেখকের মন্তব্য
পেয়ারা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে পেয়ারা ফলের পাশাপাশি এর খোসা, বীজ সবটাই স্বাস্থ্যগুনে ভরপুর। আবার পেয়ারা পাতার নির্যাস বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঐতিহ্য গত ঔষধের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। তাছাড়া শরীরের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ যে কোন সমস্যা প্রতিরোধে পেয়ারা পাতা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন পেয়ারা পাতার গুণ কতখানি। পেয়ারা পাতার এতসব গুণের কথা ভেবে আপনি আজ থেকেই নিয়ম করে পেয়ারা পাতা সেবন শুরু করুন। যা আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। আর্টিকেলটি এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url