প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

 প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫ সম্পর্কে জানতে চান? প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দেয় জানেন কি? না জেনে থাকলে এক্ষুনি আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে একবার পড়ে নিন।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক-লোন-নিয়ম-২০২৫-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
কারণ, আজ আমরা আলোচনা করব প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন নিয়ম এবং সর্বোচ্চ কত টাকা পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন দিতে পারে সে সম্পর্কে। সাথে আরো আলোচনা করব প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার এবং সুবিধা সম্পর্কে। তো আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫ সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আসলে কি? অনেকেই আছেন যাদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারণা নেই। তাহলে জেনে রাখুন, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক মূলত বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বা যারা প্রবাসে যেতে চান
কিংবা প্রবাস থেকে ফেরত এসেছেন তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের লোন সুবিধা প্রদান করে থাকে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি হল ব্যবসায়ীক লোন অর্থাৎ আপনার ব্যবসায়িক কাজে কিংবা যেকোনো ধরনের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য এই লোন প্রদান করা হয়। 
 
অপরটি হল ব্যক্তিগত লোন যা আপনার পারিবারিক প্রয়োজনে, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রদান করা হয়। তবে লোন পাওয়ার জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই প্রবাসী হতে হবে। সেই সাথে তাদের আয়, চাকরির স্থায়িত্ব এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে একজন গ্রাহক হিসেবে আপনি সর্বাধিক ২৫ লক্ষ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন পেতে পারেন। 
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক-লোন-নিয়ম-২০২৫-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
যদিও এই লোনের পরিমাণ নির্ভর করে একজন আবেদনকারীর আর্থিক পরিস্থিতি এবং আয়ের ওপর। ঋণ পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট একটি সময়সীমা ও সুদের হার থাকে যা কখনো কখনো ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোনের জন্য আবেদন করতে হলে প্রবাসীদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র লাগবে। 
 
তার মধ্যে পাসপোর্ট, আয়ের প্রমাণাদি, জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত আবেদন ফরম আবশ্যক। আবার আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও ঘরে বসে লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। লোন ছাড়াও এই ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। যাতে তারা খুব সহজেই ঋণ পেতে পারেন এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দেয়

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য সর্বোচ্চ কত টাকা ঋণ দেয় জানেন কি? হয়তো জানেন না। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অভিবাসন বা মাইগ্রেশন ঋণ, পুনর্বাসন ঋণ, বঙ্গবন্ধু অভিসারী বৃহৎ পরিবার ঋণ এবং বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ। 
এই সমস্ত ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক আপনাকে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। তবে এটি ঋণের উদ্দেশ্য এবং গ্রাহকের আর্থিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে প্রদান করা হয়। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন ঋণভেদে আপনি সর্বোচ্চ কত লক্ষ টাকা লোন কত বছর মেয়াদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে পেতে পারেন তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন-
ঋণের প্রকারভেদ ঋণের পরিমাণ ঋণের মেয়াদকাল
অভিবাসন বা মাইগ্রেসন ঋণ ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত ৩-৫ বছর
পুনর্বাসন ঋণ ৫০,০০০০০ টাকা পর্যন্ত ১০ বছর
বঙ্গবন্ধু অভিসারি বৃহৎ পরিবার ঋণ ১০,০০০০০ টাকা পর্যন্ত ৫ বছর
বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ ২০০০০০ টাঁকা পর্যন্ত ২-৩ বছর

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম

২০২৫ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে। বিশেষ করে অভিবাসন ঋণ, পুনর্বাসন ঋণ, বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ এবং বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এবার চলুন প্রত্যেকটি ঋণের জন্য আপনার কি কি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে এবং নিয়মাবলী বিস্তারিত জেনে নিন-
অভিবাসন ঋণ বা মাইগ্রেশন ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ
  • প্রথমেই জানিয়ে দেই, এই ব্যাংক থেকে লোন পেতে আপনাকে অবশ্যই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট করতে হবে।
  • ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
  • বৈধ পাসপোর্ট এর ফটোকপি।
  • বিদেশে যাওয়ার জন্য বৈধ ভিসার ফটোকপি।
  • আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের ফটোকপি।
  • আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণ হিসেবে আপনার আয় ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী।
  • ঋণের নিরাপত্তার জন্য গ্যারেন্টার বা জামানত এবং
  • জামিনদার কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত ব্যাংকের তিনটি চেকের পাতা।
ঋণ নেওয়ার নিয়মঃ
উপরিউক্ত ডকুমেন্টস সহ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ফরম যথাযথ সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে আপনি আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় জমা দিন।
প্রয়োজনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে আপনার একটি সাক্ষাৎকারেরও প্রয়োজন হতে পারে।
ডকুমেন্টস যাচাই-বাছাইয়ের পর আপনার ঋণ অনুমোদন করা হবে।
যদি সকল তথ্য সঠিক থাকে তাহলে আপনার ঋণটি অনুমোদিত হবে এবং ৭ দিনের মধ্যে নির্ধারিত পরিমাণ ঋণ আপনাকে প্রদান করা হবে।
পুনর্বাসন ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ
  • ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত আবেদন ফরম
  • বিদেশ থেকে ফিরে আসার সনদপত্র
  • জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি ৩ কপি
  • জামিনদার এর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি সহ পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি।
  • পূর্ববর্তী ঋণ পরিশোধের প্রমাণপত্র।
ঋণ নেওয়ার নিয়মঃ
  • উপরে উল্লেখিত ডকুমেন্টস সহ ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত ফরমটি পূরণ করে সেটি আপনি আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় জমা দিন।
  • একইভাবে সকল ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার পর ব্যাংক আপনার সকল তথ্য যাচাই বাছাইয়ের জন্য কিছুদিন সময় নেবে। প্রয়োজনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে আপনার একটি সাক্ষাৎকারেরও প্রয়োজন হতে পারে।
  • সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার ঋণটি অনুমতিত হবে এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আপনাকে আপনার ঋণ বুঝে দেওয়া হবে।
বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসঃ
  • ব্যাংক কর্তৃক প্রদানকৃত আবেদন ফরম।
  • আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি এবং সেই সাথে তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি সহ সকল তথ্য।
  • প্রয়োজনে জামিনপত্র যেমন ধরুন- আপনার সম্পত্তির কাগজপত্র।
  • আপনার এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের আয়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী।
ঋণ নেওয়ার নিয়মঃ
  • উপরিউক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো ব্যাংকের আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্ত করে আপনার এলাকার নিকটস্থ যেকোনো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় জমা দিন।
  • অতঃপর ব্যাংক আপনার সকল তথ্য এবং আর্থিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করবে।
  • সবশেষে ডকুমেন্টস যাচাইয়ের পর ঋণ অনুমোদন করা হবে।
  • বিশেষ পুনর্বাসন ঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
  • আবেদন পত্র
  • আপনি যদি প্রবাস ফেরত হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার পরিচয় পত্র।
  • পুনর্বাসনের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এবং
  • পূর্ববর্তী ঋণ ও আয়-ব্যয়ের বিবরণী এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য।
নিয়মাবলীঃ
  • বিশেষ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে আপনি এই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন।
  • নির্ধারিত ফর্ম ও ডকুমেন্টস সহ আবেদন পত্র ব্যাঙ্কে জমা দিন।
  • আপনার আবেদন এবং সকল তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই এর পর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে ঋণের জন্য যোগ্য বলে গণ্য করা হবে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। উপরিউক্ত নিয়ম মেনে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে আপনি খুব সহজেই আপনার পছন্দমত লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫ আমরা ইতিমধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দিয়েছি। আবার আপনারা অনেকেই জানতে চান প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন পেতে অনলাইনে আবেদন করা যায় কিনা। দেখুন সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে আপনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
 
তবে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে আপনি Loan Application Form ডাউনলোড করে সেটি যথাযথভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় উপস্থিত হয়েই জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু ধার অতিক্রম করতে হবে। যেমন-
  • প্রথমেই আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট পেজে যেতে হবে। সেখান থেকে আপনি লোনের আবেদন বা অনলাইন আবেদন বিভাগের লিংক খুঁজে বের করুন।
  • আপনি যদি একেবারেই নতুন ব্যবহারকারী হন সেক্ষেত্রে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এর জন্য আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। তবে আপনার যদি আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট করা থাকে সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র লগইন করলেই চলবে।
  • এরপর আবেদন ফরমে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি যেমন- আপনার আয়ের তথ্য, প্রয়োজনীয় লোন এর পরিমাণ, আপনার পরিচয় পত্রের তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
  • আবেদন পত্রের সাথে সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সকল নথিপত্র যেমন ধরুন- আপনার আয়ের সনদ, পাসপোর্ট এর কপি, ভিসার কপি এবং অন্যান্য যে কোন প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।
  • সকল তথ্য সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই করার পরে আবেদন ফরমটি আপনি নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শাখায় নিজে উপস্থিত হয়ে জমা দিন। আবেদন ফরমটি জমা দেওয়ার পর আপনি একটি রেফারেন্স নম্বর পাবেন। যা দিয়ে আপনার আবেদন স্ট্যাটাস খুব সহজেই ট্র্যাক করতে পারবেন।
  • এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে সাত দিনের মধ্যে ফলাফল জানিয়ে দেবে।

কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয়

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন নিয়ম সম্পর্কে জেনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ছাড়াও আরো বেশ কিছু ব্যাংক রয়েছে যেগুলি প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রবাসী লোন প্রদান করে থাকে। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ছাড়া আর কোন কোন ব্যাংক প্রবাসী লোন দেয় এবং লোনের তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন-
  • সোনালী ব্যাংকঃ আপনি সোনালী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন পেতে পারেন। সোনালী ব্যাংক প্রবাসী লোনকে" প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্প" হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। এই ব্যাংক থেকে আপনি সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা প্রবাসী লোন পেতে পারেন এবং লোন পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ৩ বছর। অর্থাৎ প্রতিমাসে একটি করে সর্বমোট ৩৬ কিস্তিতে আপনি কি লোন পরিশোধ করতে হবে। সোনালী ব্যাংক থেকে প্রবাসী কর্মসংস্থান ঋণ প্রকল্পের সুদের হার ১২ শতাংশ।
  • অগ্রণী ব্যাংকঃ আপনি চাইলে অগ্রণী ব্যাংক থেকেও প্রবাসী লোন নিতে পারেন। অগ্রণী ব্যাংকে প্রবাসী লোনের নাম "প্রবাসী ঋণ প্রকল্প" নামে পরিচিত। অগ্রণী ব্যাংক প্রবাসী ঋণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করে থাকে। যার মেয়াদকাল ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত এবং সুদের হার ৯%-১২%।
  • অগ্রণী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন পেতে আপনাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মতোই সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে এবং উক্ত ব্যাংক শাখায় একটি একাউন্ট খুলতে হবে।
  • এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকঃ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে প্রবাসী লোন "এনআরবি মাইগ্রেশন লোন" নামে পরিচিত। এই ব্যাংক থেকে আপনি ১৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা প্রবাসী লোন পেতে পারেন। সেই সাথে ১-৩ বছরের মধ্যে আপনি লোন পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ আপনি যদি এক বছরে লোন পরিশোধ করতে চান, 
  • সেক্ষেত্রে আপনাকে মাসিক ১২ কিস্তিতে লোন পরিশোধ করতে হবে। অনুরূপভাবে আপনি যদি ২ বছরে লোন পরিশোধ করতে চান সেক্ষেত্রে ২৪ টি মাসিক কিস্তি এবং ৩ বছরে লোন পরিশোধ করতে চাইলে ৩৬ টি মাসিক কিস্তিতে লোন পরিশোধ করতে হবে।
  • পূবালী ব্যাংকঃ আপনি পূবালী ব্যাংক থেকেও প্রবাসী লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। পূবালী ব্যাংক প্রবাসী লোনের এই প্রকল্পটি "নন রেসিডেন্ট ক্রেডিট স্কিম"হিসেবে নামকরণ করেছে। পূবালী ব্যাংক নন রেসিডেন্ট ক্রেডিট স্টিমের আওতায় সর্বোচ্চ আড়াই লক্ষ টাকা ঋণ প্রদান করে থাকে যার মেয়াদকাল ২ বছর বা ২৪ মাস।
  • পূবালী ব্যাংক থেকে প্রবাসী লোন নিলে আপনাকে ২ বছরের মধ্যেই ১৩ শতাংশ সুদ হারে লোন পরিশোধ করতে হবে। এই ব্যাংকের প্রবাসী লোন এর অন্যতম সুবিধা হল এতে বাড়তি কোনো খরচ নেই এবং অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঋণ প্রদান করা হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনি কিভাবে লোন পাবেন সেই নিয়ম সম্পর্কে এতক্ষন জেনেছেন। এবার আমরা জানবো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুবিধা সম্পর্কে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে যা প্রবাসীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তো চলুন এই লোনের বিশেষ সুবিধা গুলো কি কি তা জেনে নিন-
  • স্বল্প সুদের হারঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের অন্যতম সুবিধা হল অন্যান্য ব্যাংকের থেকে এই ব্যাংক অত্যন্ত কম সুদ হারে ঋণ প্রদান করে থাকে, যা প্রবাসীদের জন্য সহজেই পরিশোধ যোগ্য।
  • দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধাঃ প্রবাসীরা তাদের প্রয়োজন অনুসারে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ খুব সহজেই পেতে পারেন যা তাদের আর্থিক অসচ্ছলতা দূর করে।
  • অতিথি প্রকল্পের সুবিধাঃ শুধু প্রবাসীদের জন্যই নয় বরং প্রবাসীরা যদি দেশে ফিরে আসার পর ব্যবসা করতে চান সে ক্ষেত্রেও তারা বিশেষ ঋণের আওতায় প্রবাসী ঋণ গ্রহণ করতে পারেন।
  • অবৈধ রেমিটেন্সের বৈধতাঃ যারা প্রবাসী রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন তারা সেই অর্থের উপর ভিত্তি করেও লোন পেতে পারেন।
  • বীমা সুবিধাঃ লোন গ্রহণকারীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে জীবন বীমা সুবিধায রয়েছে। যা লোন পরিশোধের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রদান করে।
  • পুনঃঅর্থায়ন এর সুযোগঃ একজন গ্রাহক যদি কোন কারণে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় তাহলে তিনি পুনরায় অর্থায়নের সুযোগ পাবেন, যা প্রবাসীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
  • আর্থিক অবস্থাঃ ঋণের জন্য শুধুমাত্র আবেদনকারীর নিজস্ব অর্থনীতিক অবস্থা বিবেচনা করা হয়। যাতে তারা সহজেই এ ঋণ গ্রহণ করতে পারেন।
  • বিশেষ অফারঃ বিশেষ বিশেষ সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ও অফার দিয়ে থাকে যা আরো সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।
  • পূর্ববর্তী ঋণ গ্রহীতাদের জন্য সুবিধাঃ যারা ইতিমধ্যেই এই ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন তারা পুনরায় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন।
  • সহজ আবেদন প্রক্রিয়াঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত সহজ এবং অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ঋণ প্রদান করা হয়।
  • মোবাইল ব্যাংকিংঃ সেবা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ঋণ ও অন্যান্য সেবা গুলি ব্যবহার করতে পারেন।
  • সেবা কেন্দ্রের সহজ প্রবেশাধিকারঃ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের বিশেষ সেবা কেন্দ্র রয়েছে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই ঋণের বিভিন্ন তথ্য এবং সেবা পেতে পারেন।
  • আইনগত সহায়তাঃ প্রবাসীদের জন্য আইনি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। যা তাদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
  • সামাজিক নিরাপত্তাঃ ব্যাংকটি প্রবাসীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। যা তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন নিয়ম সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র এবং প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করতে হয়। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন লোন এই ব্যাংক থেকে লোন নিতে আপনার কি কি লাগবে তা বিস্তারিত জেনে নিন-
প্রবাসী-কল্যাণ-ব্যাংক-লোন-নিয়ম-২০২৫-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
 
  • পরিচয় পত্রঃ প্রবাসী ও তার পরিবারের সকল সদস্যের জাতীয় পরিচয় পত্র এবং পাসপোর্ট এর ফটোকপি।
  • প্রমাণপত্রঃ প্রবাসী হিসেবে আপনাকে কাজের প্রমাণ দেখাতে হবে অর্থাৎ চাকরির চুক্তি, আপনার বাৎসরিক আয়-ব্যায়ের হিসাব ইত্যাদি ডকুমেন্টস আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।
  • আর্থিক বিবরণীঃ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে আপনার ব্যাংক একাউন্টের লেনদেনের বিবরণী ও মাসিক আয় সংক্রান্ত সকল তথ্য প্রদান করতে হবে।
  • গ্যারান্টরঃ যদি প্রয়োজন পড়ে সে ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ গ্যারান্টার হিসেবে আপনার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন এবং তাদের পরিচয়পত্র ও আয়ের তথ্যও জমা দিতে হতে পারে।
  • লোনের উদ্দেশ্যঃ আপনি ঠিক কোন উদ্দেশ্যে লোন নিচ্ছেন এবং লোন ব্যবহারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি লিখিত বিবৃতি জমা দিতে হবে।
  • ফরম পূরণঃ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত লোন আবেদন ফরম যথাযথভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে আপনাকে ব্যাংকে কর্মরত ব্যক্তির কাছে সেটি জমা দিতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হাউজ লোন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি বিশেষ ঋণ সুবিধা। যে ঋণের মাধ্যমে একজন প্রবাসী দেশে ফিরে নিজ আবাসস্থল তৈরি বা এপার্টমেন্ট ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ পেতে পারে। এই হাউজ লোন প্রবাসীদের সেইসব চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই প্রদান করা হয় যারা বিদেশে কাজ করছেন এবং দেশে তাদের জন্য একটি স্থায়ী আবাসের স্বপ্ন দেখছেন।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনি ১০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত হাউজ লোন পেতে পারেন। যা আপনি বাড়ি তৈরি, ফ্ল্যাট কেনা বা জমি ক্রয়ের জন্যও ব্যবহার করতে পারেন। শুধু তাই নয়, এই ঋণের সুদ হার ৯%-১২% পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ব্যাংকের থেকে অনেকটাই কম। আবার, এই ঋণের মাধ্যমে একজন প্রবাসী তার ইনকাম ভিত্তিক
 
ঋণের পরিমাণের জন্য আবেদন করতে পারেন। হাউজ ঋণের মেয়াদ সাধারণত ২০-২৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা গ্রাহকদের কিস্তির চাপ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে। এই লোনের জন্য আবেদন করতে হলে আপনার প্রবাসী হবার প্রমাণ, আয় সনদপত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে। ব্যাংকটি কেবলমাত্র গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্যই যে ঋণ প্রদান করে তা নয় বরং পুনর্গঠন বা সংস্কারের জন্যও লোন প্রদান করে থাকে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোন নিয়ম এবং লোন আপনি কিভাবে কত টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন তা ইতিমধ্যেই আজকের আলোচনা থেকে জানতে পেরেছেন। এবার আমরা জানবো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার সম্পর্কে। অন্যান্য ব্যাংকের থেকে তুলনামূলকভাবে কম সুদ হারে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ঋণ দিয়ে থাকে। তো চলুন আপনার সুবিধার্থে নিচে একটি ছকের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার তুলে ধরা হলো-
ঋণ ঋণের পরিমাণ ঋণের মেয়াদ সুদের হার
অভিবাসন বা মাইগ্রেসন ঋণ ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত ৩-৫ বছর ৯%
পুনর্বাসন ঋণ ৫০,০০০০০ টাকা পর্যন্ত ১০ বছর ৮%
বঙ্গবন্ধু অভিসারি বৃহৎ পরিবার ঋণ ১০,০০০০০ টাকা পর্যন্ত ৫ বছর ৭%
বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ ২০০০০০ টাঁকা পর্যন্ত ২-৩ বছর ৬%

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫ সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম ২০২৫ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কিভাবে লোন পাবেন বুঝতে পেরেছেন। মূলত প্রবাসী লোন এর উদ্দেশ্যই হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের সুবিধা অনুযায়ী তাদের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করা। এখানে লোন পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রবাসী কর্মী হতে হবে অথবা প্রবাস ফেরত হতে হবে। 
 
সেই সাথে লোন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে যা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। তাছাড়া এই ব্যাংকের আবেদন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং লোনের প্রক্রিয়াও দ্রুত। তাছাড়া ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে ৭৬০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধা প্রদান করেছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url