সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে বলব আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। কিন্তু প্রচুর পুষ্টিগুণে ঠাসা এই সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের পক্ষে ভীষণই উপকারী।

সূর্যমুখী-তেলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
আজকে আমরা জানবো সূর্যমুখী তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এই তেলের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে। যা আমাদের অনেকেরই অজানা। সাথে আরও জানবো ত্বকের যত্নে আপনি কিভাবে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করবেন এবং এই তেলের দাম সম্পর্কে। তাহলে চলুন আলোচনা শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

সূর্যমুখী তেলের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং গুটিকতক অপকারিতা রয়েছে। যা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। সূর্যমুখী তেল মূলত একটি উদ্ভিজ্জ তেল, যা কিনা সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তৈরি করা হয়। এই তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে অন্যান্য বীজের তেলে যে সকল ক্ষতিকারক উপাদান থাকে তা সূর্যমুখী তেলে নেই বললেই চলে।
সূর্যমুখী তেল একটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিড। বিশেষ করে এটি অমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই, আইরন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস এবং প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণই উপকারী। হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে, মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতে, গ্যাস্ট্রিক আলসার রোধে, হাঁপানি, গাটের ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা কমাতে, 
 
ডায়াবেটিসে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং কিডনির সমস্যা দূর করতে এই তেল দারুন কাজ করে। শুধু তাই নয়, ত্বক এবং চুলের যত্নেও সূর্যমুখী তেলের জুড়ি মেলা ভার। কারণ, এই তেলে রয়েছে ভিটামিন ই। যা ত্বক আদ্র রাখতে এবং সেই সাথে ত্বকের যেকোনো ধরনের কালো দাগ, ব্রণের দাগ এমনকি বলিরেখার প্রবণতা কমাতেও সাহায্য করে।
 
আবার ত্বকের যেকোনো ধরনের গভীর ক্ষত সারাতেও খুব ভালো কাজ করে সূর্যমুখী তেল। তবে সূর্যমুখী তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে। কেননা এই তেল অত্যধিক অমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডে পরিপূর্ণ। যা অতিরিক্ত ব্যবহারে শরীরের ইনফ্ল্যামেশন বেড়ে যেতে পারে। এতে করে অমেগা-৩ ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।
 
ফলে দীর্ঘমেয়াদি সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে হৃদরোগ থেকে শুরু করে অন্যান্য শারীরিক প্রদাহ জনিত যে কোন রোগের ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আবার সূর্যমুখী তেল উচ্চ তাপমাত্রায় কোন কিছু ভাজতে ব্যবহার করলে তাতে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা আমাদের শরীরের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। শুধু কি তাই, অতিরিক্ত সূর্যমুখী তেল খেলে আপনার ওজনও বেড়ে যেতে পারে। তাই বলবো সূর্যমুখী তেল মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার না করে পরিমাণ মতো ব্যবহার করা উচিত।

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা

সূর্যমুখী তেলের বেশ কিছু উপকারী দিক রয়েছে। এটি এক ধরনের ভোজ্য তেল যা প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই এই তেলের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ সূর্যমুখী তেল মূলত পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে দারুন কাজ করে। কারণ, এই উপাদানগুলি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
  • হৃদপিণ্ড ভালো রাখেঃ সূর্যমুখী তেলে থাকা ভিটামিন ই আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং সেই সাথে হৃদপিণ্ডও ভালো রাখে। শুধু তাই নয়, এটি রক্তনালীর কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করতেও বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • প্রদাহ কমাতেঃ সূর্যমুখী তেল শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে আমাদের শরীরে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কারণ, সূর্যমুখী তেলের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ বিশেষ করে আর্থাইটিস এবং অন্যান্য প্রদাহ জনিত রোগের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
  • শারীরিক দুর্বলতা কাটাতেঃ আপনি কি শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন? তাহলে বলবো সূর্যমুখী তেল সেবন করুন। সূর্যমুখী তেলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য শক্তি যা শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে এবং শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
  • হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দূর করেঃ সূর্যমুখী তেলে অন্যান্য তেলের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ভিটামিন ই বেশি থাকে, যা শ্বাসকষ্টের জন্য উপকারী। ফলে নিয়ম মেনে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে আপনি হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ আপনি কি শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত!! তাহলে বলবো আজ থেকেই নিয়ম করে সূর্যমুখী তেল সেবন শুরু করুন। কারণ, সূর্যমুখী তেলের ফ্যাটি অ্যাসিড আপনার শরীরের বিপাকক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। এতে করে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমতে থাকে। তাছাড়া সূর্যমুখী তেল খেলে এটি অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ফলে ওজনও কমতে থাকে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের জন্য সূর্যমুখী তেল বেশ উপকারী। কারণ, এতে থাকা পলি আনসাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • হজমে সাহায্য করেঃ নিয়মিত সূর্যমুখী তেল সেবনে এটি পেটের যেকোনো সমস্যা বিশেষ করে গ্যাস-অম্বল, বদহজম, পেট ফাঁপা ইত্যাদি দূর করে এবং সেইসাথে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ আপনি আপনার দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন সূর্যমুখী তেল সেবন করে। কারণ, সূর্যমুখী তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ নিয়মিত সূর্যমুখী তেল সেবনে এর এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন এবং রোগ থেকে দূরে রাখে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ আপনি কি জানেন সূর্যমুখী তেল সেবনে আপনি মরণব্যাধি ক্যান্সার রোগ থেকেও রক্ষা পেতে পারেন।শুনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! হ্যাঁ সম্মানিত পাঠক, সূর্যমুখী তেলে রয়েছে ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। কারণ, এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষের মিউটেশন ও ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • শরীরের বিষাক্ত টক্সিন অপসারণেঃ সূর্যমুখী তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন অপসারণে কাজ করে। ফলে শরীর ভেতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায়ঃ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সূর্যমুখী তেল। বিশেষ করে মা-বোনদের প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক চক্র এবং গর্ভাবস্থায় এই তেল অত্যন্ত কার্যকরী।
  • মানসিক চাপ কমায়ঃ সূর্যমুখী তেলের দারুণ একটা সুগন্ধ রয়েছে। সাথে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা মন প্রফুল্ল রাখতে এবং মানসিক চাপ কমাতেও বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সূর্যমুখী-তেলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ অনেক সময় বয়স জনিত কারণে আমরা পুরনো অনেক কথাই স্মরণ করতে পারিনা। এই সমস্যা দূর করতে আপনি খেতে পারেন সূর্যমুখী তেল। কারণ, সূর্যমুখী তেলের অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এতে করে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
  • ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণেঃ সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে আপনি আজ থেকেই নিয়ম করে সূর্যমুখী তেল সেবন শুরু করুন।
  • জ্বর কমায়ঃ জ্বর কমাতেও সূর্যমুখী তেল দারুন কাজ করে। এই তেলের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য খুব সহজেই জ্বরের উপশম ঘটাতে পারে।
  • শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেঃ অনেকে আছেন যাদের হাত বা পায়ের তালু জ্বালাপোড়া করে, গরম থাকে। এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আপনি আজ এখন থেকেই সূর্যমুখী তেল ব্যবহার শুরু করুন। কেননা এই তেলে থাকা পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শরীরের অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা অনুভূতি কমাতে কাজ করে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ বর্তমানে ছোট-বড় কম বেশি সকলেই চোখের সমস্যায় জর্জরিত। অনেকেই আছেন যারা দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পান না। আবার অনেকের কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। চোখের দৃষ্টিশক্তির এই সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে সূর্যমুখী তেল। কারণ, এই তেলে রয়েছে "ভিটামিন ই" যা চোখ ভালো রাখে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
  • ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেলঃ ত্বকের জন্য সূর্যমুখী তেল ভীষণই উপকারী। ত্বকের যেকোনো ধরনের ব্ল্যাকহেডস বলুন আর হোয়াইট হেডস বলুন ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারে এই তেল। এছাড়াও নিয়মিত সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে এটি ত্বক আদ্র ও মসৃণ রাখার পাশাপাশি ত্বকের বয়স জনিত ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • চুল ভালো রাখেঃ শুধু ত্বকের জন্যই নয়, চুল ভালো রাখতে বিশেষ করে চুলের বৃদ্ধিতে এবং চুলের পুষ্টির জন্য সূর্যমুখী তেল উপকার। নিয়মিত চুলে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে এটি চুলকে যেমন ময়েশ্চারাইজড রাখে তেমনি চুলের আগা ফাটাও রোধ করে।

সূর্যমুখী তেলের ক্ষতিকর দিক

সূর্যমুখী তেলের ক্ষতিকর দিকও কম নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে এর উপকারের পরিবর্তে শারীরিক বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এবার চলুন মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করলে আপনার কি কি ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে সে সম্পর্কে জেনে নিন-
  • যারা ওজন কমাতে চান তাদের অতিরিক্ত পরিমাণ সূর্যমুখী তেল সেবন না করাটাই ভালো। কেননা সূর্যমুখী তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে এটি আপনার শরীরে সঞ্চিত হয়ে ওজন বাড়াতে পারে। শুধু সূর্যমুখী তেল নয়, যে কোন তেলই উচ্চ ক্যালরি যুক্ত হওয়ার কারণে অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা ওজন বাড়ার কারণ হতে পারে।
  • যদিও সূর্যমুখী তেল হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহারে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ সূর্যমুখী তেলে থাকা পলি আনসেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড গুলি যখন শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে জমে যায় তখন তা ইনফ্লেশন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে। এতে করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • সূর্যমুখী তেলে অত্যাধিক পরিমাণে ওমেগা ছয় ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড যদিও আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান, কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রহণ করলে শরীরের ওমেগা-৬ ও অমেগা-৩ এর অনুপাত অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যেতে পারে। এতে শরীরের প্রদাহ বৃদ্ধির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
  • উচ্চ তাপমাত্রায় সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করলে তাতে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়। এই ট্রান্স ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং কোলেস্টেরনের স্তরকে প্রভাবিত করে।
  • শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত পরিমাণে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারের ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা ডায়াবেটিস টাইপ ২ এর ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে সূর্যমুখী তেল সেবনে এতে থাকা অমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের হরমোন উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • আপনি জেনে অবাক হবেন যে, সূর্যমুখী তেলে থাকা পলি আনসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড খুব সহজেই অক্সিডাইজ হতে পারে। যখন তেল অক্সিডাইজ হয়ে যায় তখন এটি শরীরে ফ্রী রেডিকেল তৈরি করে। যা কোষের ক্ষতি তো করেই, সেই সাথে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
  • যদিও সূর্যমুখী তেল হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। কিন্তু এর অতিরিক্ত ব্যবহারে এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের তর বাড়িয়ে দিতে পারে।
  • দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত পরিমাণে সূর্যমুখী তেল সেবনে এটি লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং লিভার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • সূর্যমুখী তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার আপনার পেটের সমস্যা বিশেষ করে হজমে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও অত্যধিক ব্যবহারে পেটের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে। এর ফলস্বরূপ আপনার ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে।
  • ত্বকের জন্যও সূর্যমুখী তেল অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। কেননা ত্বকে সূর্যমুখী তেল অতিরিক্ত ব্যবহার করলে তাতে তৈলাক্ত ভাব সৃষ্টি হতে পারে। যা ত্বকের গর্তে ময়লা জমে গিয়ে ব্রন বা অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
সম্মানিত পাঠক, সূর্যমুখী তেল যদিও উপকারী তবুও এর অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। উপরিউক্ত অপকারিতা গুলো এড়াতে আপনি নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে সূর্যমুখী তেল সেবন করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাতে উপকারিতাই বেশি পাবেন।

সূর্যমুখী তেলের ব্যবহার

সূর্যমুখী তেলের নানাবিধ ব্যবহার এখনো আমাদের অনেকেরই অজানা। অনেকেই আবার মনে করেন শুধুমাত্র রান্নার জন্যই ভোজ্য তেল হিসেবে সূর্যমুখী তেল ব্যবহৃত হয়। কিন্তু না! পুষ্টিকর এবং সহজলভ্য হওয়ায় রান্না ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজেও এই তেল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এবার চলুন এই তেলের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই-
  • ভোজ্য তেল হিসেবেঃ সূর্যমুখী তেল সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয় রান্নার জন্য। এটি উচ্চ তাপমাত্রায় খুব একটা পোড়ে না। ফলে রান্নার জন্য এই তেল বেশ উপযোগী। তাছাড়া ভাজাপোড়া খাবার সূর্যমুখী তেলে খুব ভালো হয়।
  • আচার তৈরিতেঃ যেমন আচার তৈরি করার জন্য খুবই উপযোগী। কারণ, আচার তৈরিতে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করলে আচারের স্বাদ যেমন বেড়ে যায় তেমনি আচার দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
  • ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের শুষ্কতা এবং খসখসে ভাব দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন সূর্যমুখী তেল। সূর্যমুখী তেলে এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ই পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে যা ত্বক নরম ও হাইড্রেটেড রাখে। সুতরাং প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে আপনি সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন।
  • চুলের যত্নেঃ চুলের জন্যও সূর্যমুখী তেল বেশ উপকারী। নিয়মিত চুলে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে এতে চুলের রুক্ষতা দূর করে এবং চুলকে সিল্কি ও মোলায়েম রাখে। শুধু তাই নয়, সূর্যমুখী তেল চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং আদ্রতা ও সরবরাহ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সূর্যমুখী তেল মাথায় মালিশ করলে চুল পড়া যেমন রোধ হয় তেমনি চুলের গ্রোথ ভালো হয়।
  • কসমেটিক্সে ব্যবহারঃ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক্স যেমন ধরুন- ক্রিম, লোশন, ফাউন্ডেশন, লিপ বাম ইত্যাদির প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় সূর্যমুখী তেল।এর ময়েশ্চারাইজিং গুণ ত্বক নরম ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে।
  • শরীর ম্যাসাজ করতেঃ আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যথা বিশেষ করে বেশি বা জয়েন্টের ব্যথা, মাথাব্যথা দূর করতে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, উচ্চ এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণসম্পন্ন হওয়ায় এই তেল শরীরের যে কোন প্রদাহের উপশম ঘটাতে পারে।
  • আসবাবপত্র পরিষ্কারক হিসেবেঃ বাড়ির আসবাবপত্র পরিষ্কারক হিসেবেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন সূর্যমুখী তেল। ঘরের বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্র পরিষ্কার করতে পালিশ হিসেবে আপনি এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে আসবাবপত্রের উজ্জ্বলতা যেমন বাড়বে তেমনি পরিষ্কারও থাকবে।
  • মেকআপ রিমুভার হিসেবেঃ মেকআপ রিমুভার হিসেবে সূর্যমুখী তেল একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। ফলে ত্বকে ভারী মেকাপ ব্যবহারের পরে আপনি মেকআপ রিমুভার হিসেবে ব্যবহার করতেই পারেন সূর্যমুখী তেল। এটি খুব সহজে আপনার ত্বক থেকে মেকআপ অপসারণ করবে এবং ত্বকও ভালো থাকবে।
  • শরীরের দুর্গন্ধ দূর করতেঃ অনেক সময় ঘামের কারণে আমাদের শরীরে দুর্গন্ধ হয়। ঘামের এই দুর্গন্ধ দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন সূর্যমুখী তেল। কেননা এই তেলে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য, যা খুব সহজেই শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে পারে।
  • পা ফাটা রোধেঃ শীতকালে আমাদের অনেকেরই পা বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি ফাটার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পা ফাটা রোধে আপনি পায়ে সূর্যমুখী তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে পায়ের ত্বক নরম ও মসৃণ থাকবে।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম সূর্যমুখী তেলের নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে। সুতরাং এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন সূর্যমুখী তেল শুধুমাত্র ভোজ্য তেল হিসেবে নয় বরং রূপচর্চা এবং ঘরোয়া কাজেও দারুণ কার্যকরী।

চুলের যত্নে সূর্যমুখী তেল

চুলের যত্নে সূর্যমুখী তেল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুল ময়েশ্চারাইজ করতে এবং চুলের গোড়া শক্তিশালী করতে সূর্যমুখী তেল দারুন কাজ করে। সম্মানিত পাঠক, এবার চলুন চুলের যত্নে আপনি সূর্যমুখী তেল কিভাবে ব্যবহার করবেন এবং এর উপকারিতা গুলো জেনে নিই -
  • চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করেঃ সূর্যমুখী তেলে থাকা ভিটামিন ই ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত চুলে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে চুলের গোড়া যেমন শক্ত হয় তেমনি চুলের ঘনত্বও বৃদ্ধি পায়।
  • চুলের রুক্ষতা দূর করেঃ চুলের রুক্ষ শুষ্ক ভাব দূর করতে আপনি নিয়ম করে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করুন। কেননা এটি চুলের শুষ্কতা ও খরখরে ভাব কমায় এবং সেই সাথে চুলকে সিল্কি করে তোলে। চুলের রুক্ষতা দূর করতে একটি ছোট বোতলে আপনি পরিমাণ মতো সূর্যমুখী তেল এবং সাথে কিছু জোজবা তেল মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি আপনার চুলে খুব ভালো করে ম্যাসাজ করুন।
  • চুলের আদ্রতা বজায় রাখেঃ চুলের আদ্রতা ধরে রাখতেও সূর্যমুখী তেল বেশ কার্যকরী। এর হাইড্রেটিং গুণের কারণে চুলের শুষ্কতা কমে যায় এবং চুল সজীব থাকে। চুলের আদ্রতা ধরে রাখতে আপনি সূর্যমুখী তেল হালকা কুসুম গরম করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুলের আদ্রতা ঠিক থাকবে।
  • খুশকি দূর করতেঃ আপনি কি চুলের খুশকি নিয়ে চিন্তিত! তাহলে বলব আজ থেকেই চুলে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার শুরু করুন। কারণ, এই তেলে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য খুশকি প্রতিরোধে কাজ করে এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে। চুলের খুশকি দূর করতে আপনি সূর্যমুখী তেল ও নিম তেল একসাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
  • চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেঃ চুলের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতেও দারুন কাজ করে সূর্যমুখী তেল। নিয়মিত নিয়ম মেনে চুনের সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে যায।
  • মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালনঃ নিয়মিত চুলে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে মাথার ত্বকের পোরস খুলে যায় যা রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। চুলের মাস্ক হিসেবে আপনি সূর্যমুখী তেল, মধু এবং ডিমের সাদা অংশ একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন এবং মিশ্রণটি চুলে ২০-৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলকে গভীর থেকে পুষ্টি প্রদান করবে।
  • চুলের সুরক্ষায়ঃ সূর্যমুখী তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলকে পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান থেকে খুব সহজেই রক্ষা করতে পারে। সুতরাং চুলের সুরক্ষায় আপনি অন্যান্য তেলের থেকে সূর্যমুখী তেল বেশি ব্যবহার করতে পারেন তাতে কোন অসুবিধা নেই।
  • প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবেঃ সূর্যমুখী তেল মূলত চুলে প্রাকৃতিক কন্ডিশনের হিসেবে কাজ করে। শ্যাম্পু করার পর আপনি অল্প কিছু পরিমাণ সূর্যমুখী তেল নিয়ে চুলের ডগায় লাগাতে পারেন। এতে চুল সিল্কি ও মোলায়েম থাকবে।
সম্মানিত পাঠক, উপরিউক্ত নিয়মে আপনি চুলের যত্নে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল ব্যবহারে আপনার চুলের স্বাস্থ্য যেমন সুরক্ষিত থাকবে তেমনি এটি প্রাকৃতিকভাবে চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করবে।

সূর্যমুখী বীজের দাম

সূর্যমুখী বীজের দাম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চান। সূর্যমুখী বীজের দাম সাধারণত বীজের ধরন, উৎপাদন স্থান, বাজারের চাহিদা এবং স্থানীয় সরবরাহের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে প্রতি ৫০০ গ্রাম সূর্যমুখী বীজ আপনি ৫০০-৬৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন। সে হিসেবে প্রতি এক কেজি সূর্যমুখী পাবেন ১৩০০ টাকায়। 
 
তবে এই দাম আবার বীজের গুণগতমানের ওপর নির্ভর করে কিছুটা কম বেশি হতে পারে। আবার আপনি যদি অর্গানিক বা বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত সূর্যমুখী বীজ কিনতে চান সে ক্ষেত্রে দাম আরো বেশি হতে পারে। সাধারণত বড় সাইজের প্যাকেটে সূর্যমুখী বীজ কেনার সময় দাম কিছুটা কম হয়। তবে ছোট প্যাকেটে বা দোকানে কিনলে দাম একটু বেশি হতে পারে।
 
শুধু তাই নয়, বাজারের দামের সাথে সাথে মৌসুমী কারণেও সূর্যমুখী বীজের দাম পরিবর্তিত হয়। যেমন ধরুন- মৌসুমে ভালো ফলন হলে দাম কমে যেতে পারে আবার খারাপ মৌসুমে বীজের দাম বেড়ে যেতে পারে। একইভাবে পাইকারি বাজারেও দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।

ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেল এর উপকারিতা

ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেল এর উপকারিতাও কম নয়। চুলের জন্য সূর্যমুখী তেল যেমন উপকারী তেমনি ত্বকের যত্নেও সূর্যমুখী তেল সমান ভাবে উপকারী। এবার আমরা জানবো ত্বকের যত্নে এই তেলের উপকারিতা সম্পর্কে-
সূর্যমুখী-তেলের-উপকারিতা-ও-অপকারিতা-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন
  • ত্বকের আদ্রতা বৃদ্ধি করেঃ সূর্যমুখী তেলে রয়েছে লিনোলিক এসিড যা ত্বক নরম ও মসৃণ রাখে। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য একটি উপকারী। সুতরাং আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয় তাহলে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে আপনি সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন। তাতে ভালো ফল পাবেন।
  • প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবেঃ সূর্যমুখী তেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে ভিটামিন ই। যা আমাদের ত্বকে শক্তিশালী প্রাকৃতিক এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত ত্বকে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে এটি ত্বককে খুব সহজেই পরিবেশগত ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
  • ত্বকের প্রদাহ কমাতেঃ সূর্যমুখী তেলে থাকা সেলিনিয়াম এবং ফ্যাটি এসিড ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহুক আমাদের বিশেষভাবে সাহায্য করে। এটি ত্বকের একাধিক সমস্যা বিশেষ করে একজিমা প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।
  • বয়সের ছাপ কমায়ঃ আমি তো ত্বকে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করলে এটি আমাদের থেকে বার্ধক্যের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। কারণ, সূর্যমুখী তেল ত্বকের কোষগুলি মেরামত করে এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ বয়সের ছাপ এবং বলিরেখা কমাতে কার্যকরী।
  • ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়ঃ অনেক সময় অতিরিক্ত সূর্যের তাপের কারণে আমাদের ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। জ্বালাপোড়া দূর করতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন সূর্যমুখী তেল। কার, এই তেলে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ যা ত্বককে সূর্যের অতিরিক্ত তাপ, রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করে।
  • পিগমেন্টেশন কমাতেঃ ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতেও সূর্যমুখী তেল দারুন কাজ করে। কারণ, সূর্যমুখী তেলে থাকা ভিটামিন ই ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে কাজ করে। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং সেই সাথে ত্বকের অস্বাভাবিক পিগমেন্টেশন বা দাগ কমাতেও সাহায্য করে।
  • ফোড়া ও ব্রণ প্রতিরোধেঃ সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকে ফোড়া ও ব্রনের প্রবণতা বেশি হয়। সুতরাং আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয় সে ক্ষেত্রে আপনি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করতে আজ থেকেই সূর্যমুখী তেল ব্যবহার শুরু করুন। তাছাড়া নিয়মিত ত্বকে সূর্যমুখী তেল ব্যবহারে এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন ত্বকের ফোঁড়া, ব্রনের দাগ, হোয়াইট হেডস, ব্ল্যাক হেডস, ত্বকের কালো দাগছোপ ইত্যাদি দূর করে।
  • ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াঃ সূর্যমুখী তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করে। সঠিকভাবে পুষ্টি পায় এবং ত্বক আরো উজ্জ্বল হয়।
  • স্পর্শকাতর ত্বকের জন্যঃ আপনার ত্বক কি অতিরিক্ত স্পর্শকাতর। ত্বক অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হওয়ার কারণে হয়তো আপনি ত্বকে কোন প্রসাধনী ব্যবহার করতে ভয় পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে বলবো আপনি চোখ বন্ধ করে নিশ্চিন্তে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, ত্বকের যত্নে এই তেলের তেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
  • ত্বকের সুরক্ষা বাড়াতেঃ ত্বকে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করলে এটি ত্বকে একটি প্রাকৃতিক ব্যারিয়ার তৈরি করে যা পরিবেশের যেকোনো ধরনের দূষণ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারে।

ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেল যেভাবে ব্যবহার করবেন

ত্বকের যত্নে সূর্যমুখী তেল অত্যন্ত উপকারী এবং প্রাকৃতিক একটি উপাদান। এই তেল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ। যা ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বকের যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে খুব ভালো কাজ করে। ত্বকে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে প্রথমেই আপনি ত্বক পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। 
 
যাতে করে ত্বকে কোনরকম ধুলো ময়লা বা মেকআপ না থাকে। এরপর হাতে ৩-৪ ফোটা তেল নিয়ে আপনি মুখের ত্বকে আলতো ভাবে মালিশ করুন। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার ত্বক তেল শুষে না নেয় ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত আঙ্গুলের সাহায্যে চাপ দিয়ে ম্যাসাজ করতে থাকুন। এতে করে তেল আপনার ত্বকে খুব সহজেই শোষিত হবে এবং ত্বক মসৃণ ও নরম হয়ে উঠবে। 
 
আবার আপনার ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক হয় সেক্ষেত্রে আপনি রাতের বেলা সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, ত্বকের আদ্রতা বাড়াতে এবং ত্বক সজীব রাখতে রাতে তেল ব্যবহার করা সবচেয়ে উপকারী। এর জন্য আপনি প্রতিদিন রাতে ঘুমের আগে ৫-১০ মিনিটের জন্য হালকা ম্যাসাজ করে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করুন।
 
বিশেষ করে শুষ্ক রুক্ষ ত্বকের জন্য এটি খুবই উপকারী। সূর্যমুখী তেল সানস্ক্রিনের বিকল্প না হলেও এটি সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে কিছুটা হলেও সুরক্ষা দিতে পারে। এছাড়াও আপনার ত্বকে যদি দাগের সমস্যা থাকে তবে সেই দাগ দূর করতেও ব্যবহার করতে পারেন সূর্যমুখী তেল। কারণ, সূর্যমুখী তেল ত্বকের কোষ পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে।
 
তবে ত্বকে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মাত্রায় তেল কখনোই ব্যবহার  করবেন না। কারণ, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে তেল ব্যবহারে আপনার ত্বক অতিরিক্ত তেল শোষণ করতে নাও পারে। এতে করে আপনার ত্বকের তৈলাক্ত বা  চিটচিটে ভাব বেড়ে যেতে পারে। যা কিনা ব্রন বা ফুসকুড়ির কারন হয়ে দাড়াতে পারে।

সূর্যমুখী তেলের দাম ২০২৪

সূর্যমুখী তেলের দাম ২০২৪ সালে কত তা অনেকেই জানতে চান। সূর্যমুখী তেলের দাম সাধারণত এর চাহিদা, ব্র্যান্ড, সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের উপর ভিত্তি করে কম বেশি হয়ে থাকে। বেশ কয়েক মাস আগে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী তেলের দাম বেশ অস্থির হয়ে উঠেছিল। 
 
শুধু সূর্যমুখী তেল নয়, সূর্যমুখী তেলের পাশাপাশি অন্যান্য ভোজ্য তেলের দামও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে বিশ্ববাজারে এই তেলের দাম কমলেও আমাদের দেশীয়বাজারে এর দাম বেশ চড়া। সম্মানিত পাঠক এবার চলুন ব্র্যান্ড ভেদে সূর্যমুখী তেলের দাম বিস্তারিত জেনে নিন-
  • কিংস ব্রান্ডঃ ২ লিটার কিংস ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল আপনি বর্তমানে পেয়ে যাবেন ৮৫০ টাকায় এবং একই সাথে ৫ লিটার সূর্যমুখী তেলের বোতল পাবেন ২১০০ টাকায়।
  • গোল্ডেন ড্রপঃ গোল্ডেন ড্রপের ৫ লিটার সূর্যমুখী তেল আপনি পাবেন ২০০২৫০ টাকায়।
  • ভিটা কেয়ারঃ এই ব্রান্ডের ৫ লিটার সূর্যমুখী তেল ২০৫০ টাকায় খুব সহজেই পেয়ে যাবেন।
  • আলীটালিয়া ব্র্যান্ডঃ আলীটালিয়া ব্র্যান্ডের প্রতি ১ লিটার সূর্যমুখী তেল আপনি পাবেন ৪২৫ টাকায় এবং দুই, তিন, পাঁচ লিটার সূর্যমুখী তেল পাবেন যথাক্রমে ৮৫০ টাকা, ১২৬০ টাকা এবং ১৯৯০ টাকায়।
  • রাধুনী ব্র্যান্ডঃ রাধুনী ব্র্যান্ডের প্রতি এক লিটার সূর্যমুখী তেল আপনি বাজারে ৪৩০ টাকায় পেয়ে যাবেন এবং ৫ লিটারের বোতলজাত সূর্যমুখী তেল পাবেন মাত্র ২০২৫ টাকায়।

সূর্যমুখী তেলের গুনাগুন

সূর্যমুখী তেলের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা এতক্ষণ জেনেছি। এবার আমরা জানবো এই তেলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। সম্মানিত পাঠক, প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখী তেলে যে পরিমাণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হলো-
পুষ্টি উপাদান
পরিমাণ
ক্যালরি ৮৮৪ কিলোক্যালরি
মোট ফ্যাট ১০০ গ্রাম
সাতুরাতেদ ফ্যাট ৯গ্রাম
মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৪৬ গ্রাম
পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ৪১ গ্রাম
কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম ০ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ০ গ্রাম
প্রোটিন ০ গ্রাম
ফাইবার ০ গ্রাম
ভিটামিন ই ৪১.০৮ মিলিগ্রাম
আয়রন ০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে ০.৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম ০ মিলিগ্রাম
ট্র্যান্স ফ্যাট ০ গ্রাম

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি আজকের আর্টিকেলে। যা পড়ে আপনি নিশ্চয়ই সূর্যমুখী তেলের অনেক অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। সূর্যমুখী তেল অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ। এই তেল অমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে। আবার সূর্যমুখী তেলে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের জন্য ভীষণই উপকারী।
 
শুধু তাই নয়, সূর্যমুখী তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। আবার রান্নার ক্ষেত্রে সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ উভয়ই বৃদ্ধি পায়। সুতরাং দৈনন্দিন সূর্যমুখী তেল ব্যবহার আপনার সুস্থ জীবন যাত্রার সহায়ক হতে পারে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরবর্তী আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url