ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা কম বেশি সকলেই জানি। কিন্তু ধনিয়া ভেজানো জলের উপকারিতা জানেন কি? হয়তো জানেন না। না জানলে বলবো আজকে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
ধনেপাতার
উপকারিতার পাশাপাশি ধনিয়া ভেজানো জলেরও বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা
রয়েছে। এর পুরোটাই আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করব। তাহলে
চলুন আলোচনা শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
- ধনে পাতার উপকারিতা
- ধনে পাতার অপকারিতা
- ধনিয়া ভেজানো জলের উপকারিতা
- ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম
- বিলাতি ধনে পাতার উপকারিতা
- বিলাতি ধনে পাতার অপকারিতা
- ধনে পাতার উপকারিতা চুলের জন্য
- ধনে পাতার জুস
- ধনে পাতার পুষ্টিগুণ
- ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক। অনেকেই তরি তরকারিতে স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করেন ধনেপাতা। আবার অনেকে ধনেপাতের ভর্তা খেতেও বেশ পছন্দ করেন। এ তো গেল ধনেপাতার রসনা বিলাসের কথা। কিন্তু আপনি কি জানেন খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি ধনেপাতায় রয়েছে একগুচ্ছ ঔষধি গুনাগুন।ধনেপাতায়
রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ,
ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের মত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।
এছাড়াও নিয়মিত ধনেপাতা খেলে এটি আপনার শরীরে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে এর
যোগান দেয়। এছাড়াও ধনেপাতার অ্যান্টিসেপটিক ও এন্টি ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য
আপনার যেকোনো ধরনের চর্মরোগ
এবং
চুলকানিতে অব্যর্থ ঔষধ হিসেবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, ধনেপাতা আপনার রক্ত
প্রবাহ থেকে সকল ক্ষতিকর উপাদান দূর করে আপনার শরীরকে সুস্থ ও সতেজ করে
তোলে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে হতে পারে বিপত্তি।
বিশেষ করে ধনেপাতা লিভারের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে।
আবার
দীর্ঘমেয়াদী একটানা অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা সেবনের ফলে এর উদ্ভিদ তেল
আপনার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে। সুতরাং
বুঝতেই পারছেন ধনেপাতা উপকারী এ কথা ঠিক কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া একেবারেই
উচিত নয়। তাতে উপকারের পরিবর্তে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ধনে পাতার উপকারিতা
ধনেপাতার উপকারিতা না জেনেই আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন খাবারের সাথে ধনেপাতা ব্যবহার করে থাকি। আজকে আলোচনার শুরুতেই আপনাকে জানিয়ে দেব উপকারী এই পাতার গুনাগুন সম্পর্কে। তো আসুন জেনে নেই ধনেপাতার অসাধারণ সব স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-- পাচনতন্ত্র ভালো রাখেঃ ধনেপাতা আপনার পাচনতন্ত্র ভালো রাখে। কারণ, ধনে পাতায় থাকা ফাইবার আপনার পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং হজমে সাহায্য করে। ফলে আপনার পেটের গ্যাস, পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর হয়।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলীঃ ধনেপাতায় নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি ক্যারোটিনয়েডস এবং পলিফেনলস রয়েছে। এই উপাদান গুলি আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে পারে।
- হার্ট ভালো রাখতে ধনেপাতাঃ নিয়মিত ধনেপাতা খেলে এতে থাকা ফাইবার, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে। ফলে আপনার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকে অনেকটাই কমে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ ধনেপাতায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক উপাদান গুলি আপনার ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তাছাড়া ধনেপাতা রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণেও খুব ভালো কাজ করে।
- ধনেপাতা কোলেস্টেরল কমায়ঃ নিয়মিত নিয়ম করে ধনেপাতা খেলে এটি আপনার রক্তে কোলেস্টেরলের স্তর কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো কমেই, সাথে আপনার হৃদপিণ্ডও সুস্থ থাকে।
- এন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যঃ ধনেপাতার এন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ কমাতে কাজ করে। তাছাড়া আর্থাইটিস সহ অন্যান্য প্রদাহ জনিত রোগের ক্ষেত্রে ধনেপাতা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ ধনেপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। ফলে ধনেপাতা খেলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্তর বৃদ্ধি পায় এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে।
- স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ ধনেপাতা আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খুব ভালো কাজ করে।
- চুল পড়া রোধ করেঃ ধনেপাতা আপনার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। চুলে ধনেপাতা ব্যবহারের ফলে এটি আপনার চুলের আগা-ফাটা, চুল পড়া ইত্যাদি দূর করে এবং সেইসাথে চুলের গোড়া মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলে।
- পাকস্থলীর সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত ধনেপাতা সেবনে এটি আপনার পাকস্থলীর আলসার এবং অন্যান্য সমস্যার উপশমে বিশেষভাবে কাজ করে।
- ডিটক্সিফিকেশনঃ ধনেপাতা আপনার শরীরে অনেকটা প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। আপনার শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ খুব সহজে অপসারণ করে দিতে পারে ফলে আপনার শরীর ভেতর থেকে পরিষ্কার থাকে।
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ ধনেপাতায় থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সেইসাথে শরীরে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে।
- ক্ষত নিরাময়েঃ আপনার শরীরের যেকোনো ধরনের কাটা ছেঁড়া বা বা ক্ষত নিরাময়ে ধনেপাতা খুব দ্রুত এবং ভালো কাজ করে।
- মানসিক চাপ কমায়ঃ ধনেপাতা ধনেপাতায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখে। এতে করে আপনার মানসিক উদ্বেগ ও চাপ কমে।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপনারা যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন বা চোখে ঝাপসা দেখেন তারা আজ থেকে নিয়ম করে ধনেপাতার ব্যবহার শুরু করুন। কেননা ধনেপাতায় থাকা ভিটামিন এ আপনার চোখের সকল সমস্যা দূর করতে পারে।
- মৌসুমী ঠান্ডা কাশি নিরাময়েঃ অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আমাদের ছোট বড় সকলেরই ঠান্ডা কাশির সমস্যা লেগেই থাকে। আপনি কি জানেন ঠান্ডা কাশি নিরাময়ী ধনেপাতা বেশ উপকারী। কারণ, এতে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ।
- ত্বক ভালো রাখেঃ ধনেপাতা ত্বকের যত্নেও ধনেপাতা বেশ উপকারী। আপনার ত্বকে ব্রনের দাগ, কালো দাগ, রোদে ট্যান পোড়া ইত্যাদি ধনেপাতার গুনেই দূর হতে পারে।
- ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়ঃ নিয়মিত ধনেপাতা খেলে এটি আপনার রক্তে ভালো কোলেস্টেরনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়।
- মুখের আলসার নিরাময়ঃ ধনে পাতার অ্যান্টিসেপটিক গুণ আপনার মুখের আলসার নিরাময় বেশ ভালো কাজ করে।
- পিরিয়ডের সমস্যা দূরঃ করে মা-বোনদের পিরিয়ড জনিত সমস্যা দূর করে ধনেপাতা। ফলে ঋতুস্রাবের সময় রক্ত সঞ্চালন ভালো হওয়ার জন্য আপনি ধনেপাতা খেতেই পারেন।
- পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ ধনেপাতায় থাকা বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন এসকরবিক অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ম্যাঙ্গানিজ আপনার পাকস্থলীর ক্যান্সার রোধে কাজ করে।
- হাড়ের ব্যথা দূর করেঃ ধনেপাতের এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ আপনার বাতের ব্যাথা সহ হাড় এবং শরীরের সকল জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সক্ষম।
- ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতেঃ ধনেপাতায় রয়েছে অয়েল লিনোলেয়িক এবং লীনোলিক অ্যাসিড। যা আপনার ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ত্বকের ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
- গুটি বসন্ত প্রতিরোধেঃ ধনেপাতায় থাকা এন্টি মাইক্রোবিয়াল, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন সি এবং আয়রন আপনার গুটি বসন্ত রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
- এলার্জি সংক্রমণ কমায়ঃ ধনেপাতা আপনার এলার্জির সংক্রমণ কমাতেও কাজ করে। কারণ, এতে রয়েছে এন্টিহিস্টামিন নামক একটি উপাদান। যা এলার্জির সংক্রমণ থেকে আপনাকে দূরে রাখে।
ধনে পাতার অপকারিতা
ধনেপাতার উপকারিতার পাশাপাশি আবার কিছু অপকারিতাও রয়েছে। খাবারের স্বাদ বাড়ালেও অনেক সময় আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে এই ধনেপাতা। আসুন এবার এ জেনে নিন ধনেপাতার ক্ষতিকর দিকগুলো--- প্রথমেই বলি, গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা খাওয়া মোটেও উচিত নয়। কারণ এই সময় অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে আপনার গর্ভস্থ ভ্রুনের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ধনেপাতায় থাকা কিছু উপাদান মা-বোনদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কে নষ্ট করে ফেলে।
- অতিরিক্ত ধনে পাতা খেলে অনেক সময় আপনার মুখ ব্যথা হতে পারে। কারণ, এতে বিশেষ কিছু এসিডিক উপাদান রয়েছে যা আপনার ত্বককে সংবেদনশীল করার পাশাপাশি ঠোঁট, মাড়ি এবং গলা ব্যাথার সৃষ্টি করতে পারে।
- মাত্রাতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে আপনার শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতেই পারে। আর এলার্জির প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্বাসকষ্ট চুলকানি ত্বক ফুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত পরিমাণ ধনেপাতা খেলে আপনার হজমের সমস্যা হতে পারে। এতে করে পেটে ব্যথা, পেটে গ্যাস এমনকি ডায়রিয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
- ধনেপাতায় কিছু অ্যাসিডিক উপাদান থাকার কারণে আপনার ত্বককে সূর্যালোক থেকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এতে করে আপনার ত্বকের ভেতরে সূর্য রশ্মি একেবারেই প্রবেশ করতে পারে না। ফলে আপনার ত্বক "ভিটামিন কে" থেকে বঞ্চিত হয়।
- অনেক সময় অতিরিক্ত ধনেপাতা খেয়ে ফেলার ফলে আপনার বুকে ব্যথা হতে পারে এবং এই ব্যথা দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে।
- সাধারণত যাদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের ধনেপাতা না খাওয়াটাই ভালো। কারণ, ধনে পাতা খেলে আপনার ফুসফুসে আজমার সৃষ্টি হতে পারে এবং এতে করে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
- আপনাদের যাদের কিডনি জনিত সমস্যা রয়েছে বা কিডনিতে পাথরের সমস্যা রয়েছে তাদের ধনেপাতা খাওয়া খুব একটা সুখকর নয়। কারণ ধনেপাতার অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্টস আপনার কিডনির পাথর বৃদ্ধিতে কাজ করে।
- আপনি যদি রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের ঔষধ সেবন করেন সেক্ষেত্রে ধনেপাতা সীমিত পরিমানে। এটি আপনার ওষুধের সাথে বিক্রি করে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও ধনেপাতা খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতাকে অনেকটাই প্রভাবিত করে।
- শিশুদের অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। কারণ অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে আপনার শিশুর পাচনতন্ত্র ভারী হতে পারে। এতে করে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ধনেপাতা খেলে আপনার রক্তচাপ আরো নিচে নেমে যেতে পারে। ফলে যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়ম মেনে পরিমাণ বুঝে ধনেপাতা খাবেন।
ধনিয়া ভেজানো জলের উপকারিতা
ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। এবার আপনাকে জানাবো ধনে ভেজানো জলের উপকারিতা সম্পর্কে। ধনে ভেজানো জল খেলেও আপনি এর থেকে বেশকিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন। যেমন ধরুন-- ধনিয়া ভেজানো জল আপনার হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এতে করে আপনার কষ্টকাঠিন্য সহ পেটের অস্বস্তি দূর হবে।
- ধনিয়া ভেজানো জল আপনার শরীর থেকে সকল বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারে। এতে আপনার লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় শরীরও সুস্থ থাকে।
- ধনিয়া ভেজানো জলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং আয়রন যা আপনার অ্যানিমিয়া রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।
- নিয়মিত নিয়ম করে দুনিয়া ভেজানো জল খেলে এটি আপনার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্তর বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে আপনার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছে যায়।
- আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে এই ধনিয়া ভেজানো জল। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই জল ভীষণ উপকারী।
- নিয়মিত ধনিয়া ভেজানো জল পান করলে আপনার কিডনি পরিষ্কার থাকে। এতে করে কিডনির সকল রোগ থেকে আপনি মুক্তি পেতে পারেন।
- আপনারা যারা আর্থাইটিসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য সেরা দাওয়াই হলো ধনে ভেজানো জল। কারণ, এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ আপনাকে আর্থাইটিস থেকে পরিত্রান দিতে পারে।
- অনেকের শরীর সবসময় গরম থাকে এবং হাত বা পায়ের তালু জ্বালাপোড়া করে। সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনি আজ থেকে ধনে ভেজানো জল খেতে শুরু করুন। এতে আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমবে।
- যারা অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলতে চান প্রাকৃতিকভাবে তারা প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে ধনে পানি পান করতে পারেন। কারণ, এটি ওজন কমাতেও সহায়ক।
- আপনার চুলের জন্য ধনে ভেজানো পানি অত্যন্ত উপকারী। চুলে এই পানি ব্যবহার করলে আপনার চুলের আগা ফাটা ভেঙ্গে দূর হয়। কেননা এই পানিতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে যা আপনার চুলকে শক্তিশালী ও মজবুত করে তোলে।
- ধনে ভেজানো পানি রোধ খেলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এই পানির এন্টি অক্সিডেন্ট আপনার শরীরের ফ্রি রেডিক্যাল কমাতে খুব ভালো কাজ করে। ফলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে খুব সহজে আপনার শরীর রক্ষা পায়।
এবার চলুন ধনিয়া ভেজানো জল আপনি কিভাবে তৈরি করবেন সে পদ্ধতি জেনে নিন--
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- ধনে বীজ - ১৫-২০ গ্রাম
- পানির পরিমাণ- ২ লিটার
- ধনিয়া জল তৈরি করতে আপনি প্রথমেই ১৫-২০ গ্রাম পরিমাণ মতো ধনিয়া বীজ নিন।
- ধনে বীজগুলো ভালো করে পরিষ্কার জলে একবার ধুয়ে নিন। যাতে করে এতে কোনো ময়লা আবর্জনা না থাকে। কারণ, মুদীখানার দোকান থেকে কেনার পর অনেক সময় এই বীজে ধুলা ময়লা থাকতে পারে।
- ধোয়া শেষ হলে এবারে ধনে বীজগুলো শিলপাটার সাহায্যে থেঁতো করে নিন। থেঁতো করার সময় খেয়াল রাখবেন বীজগুলো যেন একেবারে মিহি হয়ে না যায়।
- এবার থেঁতো করা এই ধনিয়া বীজ আপনি সারা রাতভর ২ লিটার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এই জল চামচ দিয়ে গুলিয়ে তারপর একটি ছাঁকনির সাহায্যে ছেকে নিন।
- ব্যাস, তৈরি হয়ে গেলো আপনার ধনে জল। এই জল আপনি পরদিন সকাল থেকে শুরু করে সারাদিনে অল্প অল্প করে পান করতে থাকুন। এতে ভালো উপকার পাবেন।
ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম
ধনিয়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন। এবার আপনাকে জানাবো ধনিয়া পাতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। যদিও ধনেপাতা খাওয়ার নিয়ম অনেকেই জানেন।- সবজির তরকারিতেঃ ধনেপাতা সাধারণত সবজির তরকারিতে সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয়। আপনি আলু, বেগুন, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া, শিম, গাজর সহ আরো অন্যান্য সবজি তরকারি রান্নার সময় ধনেপাতা ব্যবহার করতে পারেন এতে আপনার সবজির স্বাদ আরো বেড়ে যাবে।
- মাংসের তরকারিতেঃ মানুষের তরকারিতে যেমন- মুরগির মাংস, গরুর মাংস রান্নার শেষে আপনি কিছুটা ধনেপাতা কুচি করে ছড়িয়ে দিন। এতে মাংসের স্বাদ আরো বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া শুধু ধনেপাতা এবং মুরগির মাংস দিয়ে দিয়ে আপনি চিকেন ধনীয়াও তৈরি করতে পারেন।
- ডাল রান্নায় ধনেপাতাঃ মসুর ডাল, চানা ডাল অথবা মুগ ডাল রান্নায় আপনি অনায়াসেই ধনেপাতা যোগ করে রান্না করতে পারেন। ডালের সুঘ্রাণ বৃদ্ধি পাবে।
- বিরিয়ানিতে ধনেপাতাঃ অনেকেই আছেন যারা পোলাও বা বিরিয়ানির সাথে ধনেপাতা খেতে পছন্দ করেন। ক্ষেত্রে বিরিয়ানি বা পোলাও রান্নার পর ওপর থেকে খানিকটা ধনেপাতার ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিন। এতে আপনার খাবারের স্বাদ গন্ধ দুটোই বাড়বে।
- কুরমাতে ধনেপাতার ব্যবহারঃ বিভিন্ন ধরনের কোরমা যেমন- সবজি কোরমা বা মাংসের কোরমাতেও আপনি নিশ্চিন্তে ধনিয়া পাতা ব্যবহার করতেই পারেন। এটি আপনার কোরমার মসলা ও স্বাদ এ নতুন মাত্রা যোগ করবে।
- মাছের তরকারিতেঃ মাছের তরকারি তো ধনেপাতা ছাড়া ভাবাই যায় না। যেকোনো ধরনের মাছ রান্না করতে আপনি ধনেপাতা ব্যবহার করুন। এতে খাবার যেমন সুস্বাদু হবে তেমনি খাবার খাওয়ার পর এক ধরনের ফ্রেশ অনুভূতি এনে দেবে।
- স্যুপের সাথেঃ যেকোনো ধরনের স্যুপের সাথে আপনি ধনেপাতা মিশিয়ে খেতে পারেন। সেটা হোক সবজি স্যুপ বা মাংসের স্যুপ। এতে করে স্যুপের মধ্যে একটা তাজা সুগন্ধ থাকবে।
- সালাদের সাথেঃ আপনি যেকোনো ধরনের সালাদের সাথে কুচানো ধনেপাতা ব্যবহার করুন। এতে সালাদ খেতে আরো সুস্বাদু হবে।
ধনেপাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যা মেনে চললে আপনার উপকার হবে। যেমন ধরুন-
- আপনি সবসময়ই তরতাজা এবং সতেজ ধনেপাতা ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। কারণ, কয়েকদিনের পুরনো ধনেপাতা বা শুকনো ধনেপাতার পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
- আপনি যেকোন তরকারিতে বা যেকোন খাবারের সাথে ধনেপাতা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নিন। কারণ, বাজার থেকে কেনা ধনেপাতায় অনেক সময় রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে।
- ধনেপাতা আপনি সাধারণত রান্না শেষে রান্নার সাথে ব্যবহার করুন। এতে ধনেপাতের পুষ্টিগুণ অটুট থাকবে। কারণ উচ্চ তাপমাত্রায় ধনেপাতা রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে।
বিলাতি ধনে পাতার উপকারিতা
ধনে পাতার উপকারিতা পেতে এবং অপকারিতা এড়াতে আপনি বিলাতি ধনেপাতাও খেতে পারেন। বিলাতি ধনেপাতা খাবার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যা আপনার জানা দরকার। বিলাতি ধনেপাতার উপকারিতা গুলোর মধ্যে রয়েছে--- প্রথমেই জানিয়ে দেই, বিলাতি ধনেপাতা এবং সাধারণ ধনেপাতার মধ্যে কোন সাদৃশ্য নেই। দুটো ধনেপাতা দেখতে সম্পূর্ণ আলাদা।
- বিলাতি ধনেপাতা খেলে এটি আপনার পেটের পেশী শিথিল করে এবং পেটের বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি কমায়।
- বিলাতি ধনেপাতায় রয়েছে শক্তিশালী আন্টি অক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রেডিক্যাল এর হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও এটি ক্যান্সার হার্ড ডিজিজ এবং অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে বেশ কার্যকর।
- বিলাতি ধনেপাতা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ফলেটের একটি দুর্দান্ত উৎস। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন থাকে যা আপনার শরীরের পুষ্টি জোগাতে কাজ করে।
- বিলাতি ধনেপাতা আপনার ত্বকের জন্যও উপকারী। ত্বকের প্রদাহ কমাতে এবং রেশ কমাতে খুব ভালো কাজ করে।
- এছাড়াও সাপে কামড়ানোর ডায়রিয়া ম্যালেরিয়া পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া অ্যাজমা উচ্চ রক্তচাপ জ্বর ঠান্ডা কাশি ইত্যাদি দূর করতে বিলাতি ধনেপাতা ম্যাজিকের মত কাজ করে।
বিলাতি ধনে পাতার অপকারিতা
সাধারণ ধনিয়া পাতার উপকারিতা ও অপকারিতার মত বিলাতি ধনেপাতারও কিছু অপকারিতা রয়েছে। যেমন-- অতিরিক্ত বিলাতি ধনেপাতা ব্যবহারে আপনার শরীরে এলার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- মাত্র অতিরিক্ত পরিমাণে বিলাতি ধনেপাতা সেবন করলে আপনার রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে। ফলে যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা এই ধনেপাতা সীমিত পরিসরে সেবন করুন।
- যারা ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন তাদেরকেই বলছি, আপনি যদি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ঔষধ সেবন করে থাকেন সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিলাতি ধনেপাতা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে আপনার রক্তের শর্করা খুব বেশি কমে যেতে পারে।
- তাছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে বিলাতি ধনেপাতা খেলে আপনার পেটের অস্বস্তি, গ্যাসের সমস্যা, বদহজম ডায়রিয়া এগুলোও হতে পারে।
- ধনেপাতা অনেক সময় ওষুধের সাথে বিক্রিয়া করে আপনার শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ঔষধ সেবন অবস্থায় ধনেপাতা খাওয়ার আগে আপনি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিয়ে তবেই খাবেন।
ধনে পাতার উপকারিতা চুলের জন্য
ধনে পাতার উপকারিতা শুধুমাত্র যে স্বাস্থ্যগত তা নয় বরং আপনার চুলের জন্য ভীষণই উপকারী। এবার চলুন ধনেপাতা ধ্বনি পাতার রস ব্যবহার করলে কি কি উপকার পাবেন সেগুলো জেনে নিন--- চুলে নিয়মিত ধনেপাতার রস ব্যবহার করলে কি আপনার চুলে অতিরিক্ত পুষ্টি প্রদান করে। থলে আপনার চুলের গোড়া মজবুত শক্তিশালী হয়। এতে করে চুল পড়া বন্ধ হয়।
- ধনেপাতার এন্টি ইনফ্লামেটরি এবং এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য আপনার মাথার স্ক্যাল্পে চুলকানি বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ এবং সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- আপনার চুলকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে চাইলে আজ থেকেই চুলে ধনেপাতা রস ব্যবহার শুরু করুন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি আপনার চুলকে উজ্জ্বল, মসৃণ এবং ঝলমলে করে তুলবে।
- ধনেপাতা সেল্ফের আদ্রতা ঠিকঠাক বজায় রাখে। নিয়মিত নিয়ম করে তুলে ধনেপাতা ব্যবহারে এটি আপনার স্ক্যাল্পকে হাইড্রেটেড রাখে এবং চুলকে শুষ্কতা দূর করে।
- চুলে ধনেপাতা ব্যবহার করলে এটি আপনার চুলের প্রাকৃতিক কালো রং ধরে রাখবে। বিশেষ করে যাদের চুল সাদাটে তাদের জন্য ধনেপাতার এইরস ভীষণ উপকারী।
- ধনেপাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন্ডা আপনার চুলের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
এলোভেরা ও ধনেপাতা
আমাদের ত্বক এবং চুল উভয়ের জন্য অ্যালোভেরা যে কতটা উপকারী তার বলার অপেক্ষা রাখে না। এই এলোভেরার সাথে আপনি ধনেপাতার পেস্ট মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে ফেলুন। এবার এই মিশ্রণটি আপনার চুলে ভালো করে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। হেয়ারমাক্স ব্যবহারে আপনার চুল হবে নরম এবং প্রাণবন্ত।
ধনেপাতার রস
আপনি শুধু ধনেপাতার রসও আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য কয়েক মুঠো ধনেপাতা পেস্ট করে তার সাথে কয়েক টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে নিন। এরপর একটি পেস্ট তৈরি করে এই পেস্টটি ভালোভাবে ছেঁকে এর থেকে নির্যাসটুকু বের করে নিন। ব্যাস, এবার ধনেপাতার এই রস আপনার মাথার ত্বকে লাগিয়ে আধাঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
ঠিক
আধা ঘন্টা পরে চুল সাধারন তাপমাত্রার পানিতে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
আপনি সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই হেয়ার মাস্কটি ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
ধনেপাতার রসের এই হেয়ার মাস্কটি নিয়মিত চুলে ব্যবহার করলে আপনার চুল যেমন
ঘন হবে তেমনি অতি দ্রুত লম্বা হবে। সেইসাথে চুলের হারানো উজ্জলতাও ফিরে
আসবে।
ধনেপাতার পেস্ট
খলি ধনেপাতার পেস্ট চুলে ব্যবহারের জন্য প্রথমে টাটকা তাজা কয়েক মুঠো ধনেপাতা নিন। এরপর পাতাগুলো ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বা পাটায় বেঁটে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এবারে এই পেস্ট আপনার চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পর মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি ও ধনেপাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে মুলতানি মাটিও বেশ উপকারী যা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আর চুলের যত্নে এই মুলতানি মাটির সাথে যদি ব্যবহার করেন ধনেপাতা তাহলে আপনার চুল আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। এর জন্য আপনি প্রথমেই ধনেপাতার একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার ধনেপাতার পেস্ট এর সাথে মেশান মুলতানি মাটি।
ধনেপাতার পেস্ট
খলি ধনেপাতার পেস্ট চুলে ব্যবহারের জন্য প্রথমে টাটকা তাজা কয়েক মুঠো ধনেপাতা নিন। এরপর পাতাগুলো ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বা পাটায় বেঁটে একটি পেস্ট তৈরি করে ফেলুন। এবারে এই পেস্ট আপনার চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ২০ মিনিট পর মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি ও ধনেপাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে মুলতানি মাটিও বেশ উপকারী যা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। আর চুলের যত্নে এই মুলতানি মাটির সাথে যদি ব্যবহার করেন ধনেপাতা তাহলে আপনার চুল আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। এর জন্য আপনি প্রথমেই ধনেপাতার একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার ধনেপাতার পেস্ট এর সাথে মেশান মুলতানি মাটি।
ধনেপাতা
ও মুলতানি মাটির এই মিশ্রণটি আপনার চুলে লাগিয়ে প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত
অপেক্ষা করুন।.২০ মিনিট পর আপনার চুল শুকিয়ে এলে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত ধনেপাতা ও মুলতানি মাটির হেয়ার মাস্ক ব্যবহারে আপনার চুল যেমন ঘন
হবে ঠিক তেমনি অতি দ্রুত লম্বা হবে। ভাল ফল পেতে এই হেয়ার মাস্ক আপনি
সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করুন।
সম্মানিত পাঠক, জানিয়ে দিলাম চুলের যত্নে ধ্বনি পাতার কিছু হেয়ারমাস্ক। উপরিউক্ত হেয়ারমাস্ক গুলির মধ্যে আপনি আপনার সুবিধা মত যে কোন একটি ব্যবহার করতেই পারেন।
ধনে পাতার জুস
ধনেপাতার উপকারিতা পেতে আপনি শুধু রান্নাই নয় বরং ধনে পাতার জুস করেও খেতে পারেন। ধনেপাতার এই জুস খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। অনেকেই আছেন যারা জানেন না ধনেপাতের দেশ কিভাবে তৈরি করতে হয়। তাহলে চলুন ধনেপাতার জুসের প্রস্তুত প্রণালী দেখে নিন-প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
- সতেজ টাটকা ধনেপাতা- ১ মুঠো
- পানি- ১ কাপ পরিমাণ
- লেবুর রস- ১ টেবিল চামচ
- মধু- স্বাদ মত এবং
- আদা- ১ টুকরো
- ধনেপাতার জুস তৈরি করতে আপনি প্রথমেই টাটকা সতেজ ধনেপাতা সংগ্রহ করুন।
- এবার ধনেপাতা গুলো খুব ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। যাতে করে এতে কোন ময়লা বা রাসায়নিক পদার্থ না থাকে।
- এবার একটি চাকুর সাহায্যে ধনেপাতা গুলো কুচি কুচি করে নিন। সেই সাথে আদার টুকরোটির ছালও ছাড়িয়ে নিন।
- অতঃপর কুচানো ধনেপাতা, আদার টুকরো এবং এক কাপ পানি একসাথে ব্লেন্ডারে খুব ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। প্রয়োজনে আপনি আপনার সুবিধামতো আরো পানি যোগ করতে পারেন।
- এবারে ব্লেন্ড করা মিশ্রণটি একটি ছাকনি বা পরিষ্কার পাতলা কাপড়ের সাহায্যে থেকে থেকে মিশ্রণ থেকে নির্যাসটুকু বের করে নিন।
- ব্যাস তৈরি হয়ে গেল আপনার ধনে পাতার জুস। এবার এই জুসের সাথে আপনি স্বাদমতো মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। আপনি চাইলে এর সাথে কয়েক টুকরো বরফও যোগ করতে পারেন।
ধনে পাতার পুষ্টিগুণ
ধনেপাতার এত সব উপকারিতা ও অপকারিতা জানার পর আপনি এবার নিশ্চয়ই ধনেপাতার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। সম্মানিত পাঠক এবার চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম ধনেপাতায় কি পরিমান পুষ্টি উপাদান থাকে তা নিচে একটি ছকের মাধ্যমে দেখে নিন---পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
খাদ্য শক্তি | ২৩ কিলো ক্যালরি |
ভিটামিন এ | ৭৬০০ IU |
ভিটামিন সি | ২৭.৭ গ্রাম |
ভিটামিন কে | ৫৫.৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-৬ | ০.২ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩০০ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৪৩ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ৪৮ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৪০ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১.৭ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৫০ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ২.৮ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৩.৭ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
প্রোটিন | ২.৭ গ্রাম |
ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমার মন্তব্য
ধনেপাতার উপকারিতা ও অপকারিতা আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি আজকের পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। ধনেপাতা খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই আছে। সুপরিচিত এই পাতাটি অসাধারণ সব পুষ্টি গুণে ভরপুর। রান্নাতে বলুন, চাটনিতে বলুন আর যেকোনো শরবতের সাথেই বলুন না কেন ধনে পাতা ব্যবহারের জুড়ি মেলা ভার।ধনেপাতা
মূলত শীতকালীন একটি সবজি হলেও বর্তমানে সারা বছরজুড়েই বাজারে দেখতে
পাওয়া যায়। তাই বলবো আপনি আজ থেকেই আপনার খাবারের সাথে ধনেপাতা যোগ করে
নিন। এতে আপনার উপকার হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সেই সাথে প্রতিনিয়ত
এইরকম তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের পিন পয়েন্ট ম্যাক্স
ওয়েবসাইটে। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url