গরমে আম খাওয়ার উপকারিতা কি কি বিস্তারিত জানুন
আম খাওয়ার উপকারিতা জানেন না এমন মানুষ খুব কমই আছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন পাকা আমে কোন এসিড থাকে? জানতে হলে আপনাকে আজকের পোস্টটি এক্ষুনি একবার পড়ে নিতে হবে। গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফলের মধ্যে আম অন্যতম।
আম খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। আম খাওয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং আম পাকলে তাতে কোন এসিড থাকে আজ আমরা আলোচনা করবো। তাহলে চলুন আর
কথা না বাড়িয়ে আজকের মত আলোচনা শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আম খাওয়ার উপকারিতা
- আমের উপকারিতা ও অপকারিতা
- আম খাওয়ার উপকারিতা
- পাকা আমের অপকারিতা
- পাকা আমে কোন এসিড থাকে
- আম খাওয়ার সঠিক সময়
- আম খেলে কি ওজন বাড়ে
- পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে
- কাঁচা আমের উপকারিতা
- আম পাকলে হলুদ হয় কেন
- কাঁচা আম টক কিন্তু পাকা আম মিষ্টি কেন
- আমের পুষ্টি উপাদান
- আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
আমের উপকারিতা ও অপকারিতা
আমের উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা কমবেশি সকলেই জানি। আম পাকা হোক কিংবা কাঁচা হোক উভয়ই আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ক্যালোরি, আমিষ, বিটা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ফোলেট, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, কপার, ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন ই থাকে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে।আম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর যা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। শুধু কি তাই, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখতেও আমের ভূমিকা অনবদ্য। আবার পেটের যেকোনো সমস্যা বিশেষ করে বদহজমের মতো সমস্যা দূর করতে আম খুব ভালো কাজ করে। কারণ, এতে ফাইবার এবং এনজাইম রয়েছে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতেও দারুন কাজ করে মৌসুমী এই ফলটি। তবে অতিরিক্ত আম খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, এতে প্রাকৃতিকভাবে সুগার বেশি থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া বাজারে অনেক সময় কেমিক্যাল যুক্ত আম বিক্রি করা হয় স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ফলে অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে আপনার গ্যাস্ট্রিক বা বদহজমের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া আমে ক্যালোরির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি থাকায় অতিরিক্ত খেলে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকতে পারে। আম যেহেতু গ্রীষ্মকালীন একটি ফল, ফলে গরমে আম বেশি খেলে শরীরে গরম ভাব সৃষ্টি হতে পারে।
যার ফলে আপনার মাথাব্যথা, মাথা ঘোরার মত অস্বস্তিও হতে পারে। তাই আম খাওয়ার সময় এর পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরী। সবশেষে বলবো আম খেলে যেমন উপকার পাওয়া যাবে, তেমনি অতিরিক্ত খেলে অপকারও হতে পারে। তাই আম খাওয়ার সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
আম খাওয়ার উপকারিতা
আম খাওয়ার উপকারিতা যে অনেক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আম আমাদের দেশের খুবই জনপ্রিয় একটি মৌসুমী ফল। স্বাদের পাশাপাশি এর পুষ্টিগুণও অনেক। ঠিক সে কারণেই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। কারণ, এতে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় সকল ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। প্রিয় পাঠক, আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই আম খাওয়ার বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ফলেট এবং কপার। যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে পারে। এছাড়াও আমে থাকা ভিটামিন এ ও অন্যান্য ২৫ ধরনের ক্যারোটিনয়েডস প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে।
- দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ চোখের যে কোন ধরনের রোগ সারাতে প্রয়োজন বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ। তাছাড়া আমাদের শরীরে "ভিটামিন এ" এর চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশের যোগান দিতে পারে আম। ফলে চোখের সমস্যা বিশেষ করে রাতকানা, চোখের শুষ্কতা, চোখের জ্বালাপোড়া ইত্যাদি প্রতিরোধে আম দারুন কার্যকরী একটি ফল।
- পেটের হজম সহজ করেঃ বদ হজম কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে আপনি মৌসুমী ফল আম খেতে পারেন। কেননা আমে এমাইলেজ নামক একপ্রকার এনজাইম রয়েছে, যা পেটের খাবার খুব সহজে হজম করতে পারে। এতে কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা দূর হয়। বিশেষ করে যারা গ্যাস্ট্রিক, অম্বল এর সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত পরিণত পরিমাণে আম খেলে খুব ভালো ফল পাবেন।
- ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ আমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি থাকায় এটি আমাদের ত্বকে কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে ত্বক উজ্জ্বল, মসৃণ এবং টানটান হয়। তাই ত্বক ভালো রাখতে এবং ত্বকের তারুল্য বাড়াতে আপনি আমের মৌসুমে নিয়মিত আম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- এমনকি নাকের ব্ল্যাকহেডস দূর করতেও কাজ করে পাকা আম। আপনি যদি প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পাকা আম খেতে পারেন তাহলে আপনার মুখের কালো দাগ অনেকটাই বিলীন হয়ে যাবে।
- হৃদযন্ত্র সচল রাখেঃ আপনি কি হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে বলব এখন চলছে আমের মৌসুম। নিয়মিত আম খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারন, আমে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ঠিক তেমনি হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকটাই কমে আসে।
- রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে আম খুবই উপকারী একটি ফল। কারণ এতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ভিটামিন সি যা একসাথে আমাদের শরীরে রক্ত তৈরি করতে সাহায্য করে। সুতরাং যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন বিশেষ করে গর্ভবতী নারী বা কিশোরীরা তারা নিয়মিত আম খেলে উপকার পাবেন।
- চুল ভালো রাখেঃ আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দুটি উপাদান হল ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই। এই দুটি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে এবং অকালে চুল পড়া রোধ করে। ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে আমে। ফলে নিয়মিত আম খেলে এই দুটি উপাদান আমাদের মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
- ডায়াবেটিসে উপকারীঃ যদিও আমে সুগার থাকে তবে এটি হাই ফাইবার যুক্ত হওয়ার কারণে রক্তে হঠাৎ করে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি করে না। ফোলে ডায়াবেটিসেও আম উপকারী। তবে ডায়াবেটিক রোগীদের পরিমিত পরিমাণে আম খাওয়া ভালো।
- ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ আমে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোয়ারসেটিন, এস্ট্রাগালীন এবং ফেনোলিক এসিড। এই উপাদানগুলো আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে স্তন ক্যান্সার, লিউকেমিয়া এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের মত প্রাণভাতী ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে আম খেলে আপনি মরণব্যাধি ক্যান্সার থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
- স্মরণ শক্তি বাড়ায়ঃ আমে থাকার ভিটামিন বি-৬ এবং গ্লুটামিন এসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং আপনাদের যাদের বয়সের কারণে স্মৃতিশক্তি অনেকটাই লোপ পেয়েছে কিংবা কোন কথা মনে রাখতে পারেন না, তারা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আমের মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে আম খাবার চেষ্টা করুন।
- এসিডিটি কমায়ঃ কাঁচা এবং পাকা আম উভয়েই পুষ্টিগুণে ভরপুর। কিন্তু বিশেষ করে কাঁচা আমে থাকা বেশ কিছু উপাদান আমাদের পাকস্থলীর অম্লতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই পেটের অম্লতা দূর করতে আপনি কাঁচা আম ও লবণ সামান্য পানিতে ফুটিয়ে খেতে পারেন। এতে পেট ঠান্ডা থাকবে।
- শরীরের পানি শূন্যতা দূর করেঃ গরমকালের স্বাভাবিকভাবেই ঘামের কারণে আমাদের শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। যার ফলে অনেকেই পানি শূন্যতায় ভোগেন। পানিশূন্যতা দূর করতে আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে আম খান। কেননা আমে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে জলীয় অংশ ও ইলেকট্রোলাইট। যা শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে এবং বাড়তি শক্তির যোগান দেয়।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ কোলেস্টরেল বেড়ে গেলে সাধারণত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই কোলেস্টেরল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনি খেতে পারেন আম। কারণ, আমে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার ও ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- লিভার পরিশুদ্ধ করেঃ কাঁচা আম লিভারের জন্য খুবই উপকারী। কাঁচা আম খেলে এটি লিভার থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়। ফলে লিভারের কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর করেঃ আমে থাকা বেশ কিছু উপাদান আমাদের শরীরে সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। এই উপাদানটি যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
- হাড় শক্ত ও মজবুত করেঃ আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে রয়েছে। যা হাড়ের ক্যালসিয়াম ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে হাড় মজবুত হয়। তাই হাড় মজবুত করতে কিংবা হাড়ের যেকোনো সমস্যা দূর করতে আপনি আম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- ব্রেস্টফিডিং মায়েদের জন্য উপকারীঃ গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। কারণ, এতে যে ফোলেট রয়েছে তা শিশুর স্নায়ুবিক গঠনে সাহায্য করে।
- জ্বর ও গলা ব্যাথার উপশমেঃ অসময়ে জ্বর এবং গলা ব্যথা সারাতে আপনি কাঁচা আম ও লবণ একসাথে পানিতে ফুটিয়ে খেতে পারেন। এতে গলা ব্যথা এবং জ্বর থেকে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন।
- রক্ত পরিষ্কার করেঃ নিয়মিত আম খেলে এটি আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে। ফলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীরও সতেজ থাকে।
- শরীরের প্রদাহ কমায়ঃ একটু বয়স হলেই আমাদের শরীরের গীটে গীটে ব্যথা হয়। অনেকে আবার বাতের সমস্যায় ভুগতে থাকেন। এ সমস্যা থেকে আপনাকে পরিত্রান দিতে পারে আম। কেননা আমে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ, ব্যথা এবং আর্থাইটিস রোগের উপশমে দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
- শরীরকে ক্ষারীয় করেঃ আমাদের শরীরের অ্যালকালী নামক রাসায়নিকের ভারসাম্য ঠিক রাখতে প্রয়োজন টারটারিক এসিড, ম্যালিক এসিড এবং সাইট্রিক এসিড। এই তিনটি উপাদানই আপনি পেয়ে যাবেন আমের মধ্যে। সুতরাং শরীরের ক্ষারীয় উপাদান ঠিকঠাক রাখতে আজ থেকেই আম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- ওজন কমায়ঃ এই মৌসুমে যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তারা নিশ্চিন্তে আম খেতে পারেন। কেননা আমে এতসব ভিটামিন থাকার কারণে একটি আম খেলেই আপনার শরীরের সকল চাহিদা মিটে যাবে। সাথে ফাইবারও যোগান দেবে অতিরিক্ত পুষ্টি ও শক্তির। তাই বলবো গরমে কোল্ড ড্রিঙ্কস খাওয়া ছেড়ে ওজন কমানোর খাদ্য হিসেবে নির্বাচন করে নিন আম।
- হিটস্ট্রোক ঠেকাতেঃ প্রচন্ড গরমের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাছাড়া গরমে এটি একটি সাধারণ ঘটনা। এই হিট স্ট্রোক থেকে রেহাই পেতে আপনি গরমের শুরু থেকেই আম খাওয়া শুরু করুন। কারণ, আম খেলে এটি আমাদের শরীরের ভেতর যেমন শীতল রাখে তেমনি শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া থেকে ভেতরের অঙ্গ গুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
- বডি স্ক্রাব হিসেবেঃ শুধু আপনার নিজের খাওয়ার জন্য নয়, বরং আপনার বডিকেও খাওয়াতে পারেন আমের নির্যাস। জেনে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন! হ্যাঁ সত্যিই তাই। বডি স্ক্রাব হিসেবে আপনি পাকা আম ব্যবহার করতে পারেন। একটি পাকা আম খুব ভালো করে পেস্ট করে তার সাথে সামান্য মধু আর দুধ মিশিয়ে নিন। এবারে এই পেস্ট আপনার পুরো শরীরের ভালো করে ম্যাসাজ করে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। তাতে শরীরের ত্বক ভালো থাকবে।
- শ্বেত সারের ভালো উৎসঃ সব থেকে ভালো উৎস হলো পাকা আম। কারণ, এতে ভিটামিন বি-১ ভিটামিন বি-২ ছাড়াও রয়েছে থায়ামিন ফসফরাস রিবোফ্লাইভিং এবং আয়রন।
- ঘুমের জন্য উপকারীঃ ঘুমের সমস্যা দূর করতে আপনি আম খেতে পারেন। কারণ, আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। এই ভিটামিন আমাদের শরীরের স্নায়ু গুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখে। ফলে ঘুম ভালো হয়।
- দাঁতের গোড়া মজবুত করেঃ আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। বিশেষ করে পাকা আমের তুলনায় কাঁচা আমে ভিটামিন সি বেশি থাকে। যা আমাদের দাঁত ভালো রাখতে এবং দাঁতের গোড়া, মাড়ি শক্ত করতে জরুরি।
- শারীরিক ক্ষয় রোধ করেঃ নিয়মিত আম খেলে এটি আমাদের শরীরের ক্ষয় রোধ করে। সেই সাথে শারীরিক স্থুলতা কমিয়ে শরীর গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
- ভেষজ গুণাবলীঃ শুধু খাওয়ার জন্যই নয় বরং আমের আরও বেশ কিছু ভেষজ গুণাবলীও রয়েছে। যেগুলি আমাদের স্কিন ক্যান্সার সহ শরীরের আরো বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ নিরাময়ে কাজ করে।
- লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করেঃ আমে থাকা কপার আমাদের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- ফুসফুস ও মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোনো প্রাকৃতিক ফলে থাকা ক্যারোটিন গ্রহণ করলে তাতে ফুসফুস এবং মুখে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে। সে হিসেবে আপনি আম খেতেই পারেন।
- মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করেঃ আমাদেরকে শরীরে মিনারেলের ঘাটতি হলে বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধতে শুরু করে। আমে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে আম খেলে এই ঘাটতি খুব সহজেই পূরণ হয়ে যায়। আবার গরমের সময় আমাদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়া লবণের ঘাটতিও পূরণ করে আম।
- ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করেঃ আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি থাকার কারণে এই দুটি উপাদান আমাদের শরীরকে যেকোনো ধরনের ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে দূরে রাখে। যে কোন ঠান্ডা জনিত রোগ কিংবা ফ্লু দেখা দিলে আপনি নিশ্চিন্তে আম খেতে পারেন।
পাকা আমের অপকারিতা
পাকা আমের অপকারিতাও রয়েছে। আম খাওয়ার নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে এ কথা ঠিক, কিন্তু আপনি যদি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে পাকা আম খান সেক্ষেত্রে আপনার বেশ কিছু শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন-- রক্তের শর্করার মাত্রা বৃদ্ধিঃ পাকা আমে সুগার থাকে প্রচুর পরিমাণে। যদিও এই সুগার প্রাকৃতিক তবুও অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আর ইনসুলিন উৎপাদনের ভারসাম্য নষ্ট হলে আপনার শরীরে ক্লান্তি ভাব, মাথা ঘোরা এমনকি ডায়াবেটিক শক পর্যন্তও হতে পারে।
- ওজন বৃদ্ধিঃ একটি মাঝারি আমের পাকা আমে প্রায় ১৫০ ক্যালোরি থাকে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন দিনে একাধিক আম খেলে আপনার শরীরে অজান্তেই অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রবেশ করবে। তাই যারা ওজন কমাতে চাইছেন বা ডায়েটে আছেন তাদের জন্য আম খাওয়া খুব একটা সুখকর নয়। বিশেষ করে রাতে পাকা আম খেলে শরীরে ফ্যাট জামার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ পাকা আম সুস্বাদু এবং স্বাদে মিষ্টি হলেও এতে কিছুটা অ্যাসিডিক উপাদান থাকে। ফলে অতিরিক্ত আম খেলে আপনার পাকস্থলীতে এসিড বেড়ে গিয়ে হতে পারে অম্বল, বুক জ্বালাপোড়া, চুকা ঢেকুর ওঠা।
- ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানাঃ পাকা আমে ফাইবার এবং চিনি একসাথে থাকার কারণে অতিরিক্ত খেলে হজমে ব্যাঘাত ঘটে। এতে করে অন্ত্রে চাপ পড়ে এবং দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়। আবার সব ধরনের আমে ফাইবার কম বেশি থাকে। যে কারণে হজম প্রক্রিয়ায় আম খুব একটা উপকারী নাও হতে পারে।
- এলার্জির প্রবণতাঃ আমে ইউরুশিয়ল নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ থাকে। কিছু কিছু মানুষের শরীরে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- চুলকানি, ত্বকে রেস এবং মুখ ও ঠোঁটে জ্বালাপোড়া। বিশেষ করে অতিরিক্ত খেলে।
- দাঁতের ক্ষয়ঃ আমরা সকলেই জানি সুগার দাঁতের এনামেল নষ্ট করে। আমে যেহেতু প্রাকৃতিক সুগার অতিরিক্ত পরিমাণে থাকে। তাই আম খাওয়ার পরে যদি আপনি দাঁত সঠিকভাবে পরিষ্কার না করেন বা ব্রাশ না করেন বা পানি না খান সেক্ষেত্রে আপনার দাঁতের মাঝে এসিড তৈরি হয়ে দাঁতের ক্ষয় দাঁতের ব্যথা, এমনকি ক্যাভিটি পর্যন্ত হতে পারে।
- রক্তচাপ কমিয়ে দেয়ঃ আমে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ বেশি থাকে। যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত আম খেলে যাদের স্বাভাবিক রক্তচাপ রয়েছে তাদেরও ব্লাড প্রেসার হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। যার ফলস্বরূপ আপনার মাথা ঘোরা, শারীরিক দুর্বলতা, ঝিমুনি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
- গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি থাকাঃ একটি পাকা আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৬০-৬৫। এটি মাঝারি থেকে উচ্চ পর্যায়ের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ একটি পাকা আম খাওয়ার পর আপনার শরীরে রক্তের শর্করার মাত্রা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
- ব্রণ ও ত্বকের সমস্যার প্রকোপঃ আম খাওয়ার ফলে অনেক সময় ইনসুলিন স্পাইক হয়। যা আমাদের শরীরে এন্ড্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ত্বকের ব্রণ চুলকানি বা অন্যান্য চর্ম রোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যাদের ত্বক তৈলাক্ত তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়।
- কৃত্তিমভাবে পাকানো আমের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ অনেক সময় বাজারে কেমিক্যাল যুক্ত আম পাওয়া যায়। যেগুলো সাধারণত ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা ইথিলিন গ্যাস দিয়ে পাকানো হয়। কৃত্রিমভাবে পাকানো আম খেলে আপনার মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, লিভার ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে। এই আম খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও উপকারী নয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী বা শিশুদের জন্য ভীষণই ঝুঁকিপূর্ণ।
- লিভার ও কিডনির উপর চাপঃ প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত আম খেলে আপনার লিভারে চর্বি জমে যেতে পারে। যার ফলে আপনার হতে পারে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। একইভাবে কিডনির উপরে চাপ পড়ে।বিশেষ করে আম খাওয়ার পর যদি পানি না খান।
- কোলেস্টেরলের ভারসাম্য নষ্ট করেঃ যদিও আমে কোন প্রকার ট্রান্স ফ্যাট নেই, কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালোরির কারণে শরীরে ট্রাইগ্লাসারাইড এবং এলইডিএল কোলেস্টেরল এর পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। যার কারণে আপনার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
- পানি শূন্যতাঃ পাকা আম খাওয়ার পর সাধারণত শরীরে জলীয় উৎপাদনের চাহিদা বেড়ে যায়। অনেকেই আম খাওয়ার পর পানি খেতে ভুলে যান কিংবা পানি কম পরিমাণে খান। ফলে শরীরে ডিহাইট্রেশন দেখা দেয়। যা আপনার কিডনি এবং ত্বক উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
- পেটের সমস্যাঃ বিশেষজ্ঞদের মতে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে আম খেলে এটি আপনার পেটের সমস্যার প্রধান কারণ হতে পারে। কারণ, আমে গাজনযোগ্য কার্বোহাইড্রেট থাকে। যা আপনার ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বাড়িয়ে দিতে পারে। সাথে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে আপনার পাঁচনতন্ত্রকে।
- আমবাতঃ আমবাত মূলত ত্বকের একটি ছত্রাক জনিত রোগ। ফলে অতিরিক্ত আম খেলে আমে থাকা ছত্রাক কারো কারো শরীরে প্রবেশ করলে জ্বর হতে পারে। এমনকি ত্বকে চুলকানি ফুসকুড়ি, ত্বকের লালচে ভাব ইত্যাদি সৃষ্টি করতে পারে।
- শরীর গরম করেঃ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে আম খেলে শরীর গরম হয়। তাই অত্যধিক গরমে অতিরিক্ত আম খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আবার আয়ুর্বেদিকের মতে, পাকা আম ও দুধ একসাথে কখনোই খাওয়া উচিত নয়। কারণ, তাতে পেটের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
- আর্থাইটিসের সমস্যাঃ যারা বাত এর সমস্সযা বা গিটের ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন তারা সীমিত পরিমাণে আম খাওয়ার অভ্যাস করুন। অতিরিক্ত খেলে আপনার বাতের ব্যথা আরো বেড়ে যাবে।
- মুখের সমস্যাঃ অতিরিক্ত আম খাওয়ার পরে অনেকেই ম্যাংগো মাউথ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এই সমস্যার প্রধান উপসর্গগুলো হল মুখের ভেতর চুলকানি, মুখের চারপাশে ফোসকা পড়া, ঠোঁট এবং জিহ্বায় জ্বালাপোড়া করা, মুখ ফুলে যাওয়া।
- অতিরিক্ত ভিটামিন এঃ আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। আর অতিরিক্ত আম খেলে আপনার শরীরে ভিটামিন এ এর মাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে হাড় ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে।
পাকা আমে কোন এসিড থাকে
পাকা আমে কোন কোন এসিড থাকে জানেন কি? আমরা সকলেই আম খাই কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের সম্মুখ কোন ধারন নাই বললেই চলে। তাহলে জেনে রাখুন আমে মূলত সাইট্রিক এসিড থাকে। যা আমের স্বাদ ও ঘ্রাণ অটুট রাখে। এছাড়া টারটারিক ও ম্যালিক অ্যাসিডও রয়েছে সামান্য পরিমাণে। সাইট্রিক এসিড একটি প্রাকৃতিক অর্গানিক এসিড,যা যে কোন ফলের স্বাদকে সামান্য অম্ল বা টক করে তোলে। তবে পাকা আমে এই এসিডের পরিমাণ কাঁচা আমের তুলনায় অনেকটাই কম থাকে। কারণ, আম পাকলে তাতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ এবং সুক্রোজ এর পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এই চিনির আধিক্য এসিডের টক-ভাবকে কমিয়ে মিষ্টি স্বাদ তৈরি করে।
আর ম্যালিক এসিড সাধারণত সব ফলেই থাকে। ম্যালিক eসিড মূলত ফলের টক স্বাদ অটুট রাখে। পাকা আমে ম্যালিক এসিডের পরিমাণ কম থাকে বলে পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে। অপরদিকে টারটারিক এসিডও আমের অম্লতার জন্য দায়ী। কিন্তু আমে এর উপস্থিতি খুবই সামান্য পরিমাণে থাকে। প্রাকৃতিক এই এসিড গুলো শরীরের হজমে সাহায্য করে
এবং ভিটামিন সি এর সঙ্গে মিল রেখে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। আবার সাইট্রিক এসিড একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। যা আমাদের শরীরে কোষের ক্ষয় রোধে সহায়ক। তাই পাকা আম শুধু সুস্বাদু নয় বরং আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
আম খাওয়ার সঠিক সময়
আম খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি? আম খাওয়ার উপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। কিন্তু আম শুধু খেলেই চলবে না বরং আম খেয়ে এর উপকারিতা পেতে আপনাকে সঠিক সময় মেনে আম খেতে হবে। প্রিয় পাঠক, এবার চলুন জেনে নিই আম খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে-- মধ্য সকালঃ আম খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল মধ্য সকাল অর্থাৎ সকালের নাস্তার পর এবং দুপুরের খাবার খাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্ত। অর্থাৎ সকাল ও দুপুরের মাঝে মাঝে সময়। কারণ, এই সময় হজম শক্তি সবচেয়ে বেশি থাকে। ফলে আমে থাকা চিনি শরীরের সঠিকভাবে শোষিত হয় এবং চর্বি হিসেবে জমা হয় না। তবে সকালে নাস্তার সাথেও আপনি অল্প পরিমাণে আম খেতে পারেন।
- বিকেলে হালকা স্নাক্সস হিসেবেঃ বিকেলে নাস্তার সাথে অথবা ক্ষুধা লাগলে আপনি মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার বা অন্যান্য তেলে ভাজা খাবারের পরিবর্তে বিকল্প খাবার হিসেবে বেছে নিতে পারেন পাকা আম। কারণ বিকেল বেলা আম খেলে শরীরের শক্তি বেড়ে যায় এবং মেজাজও ভালো থাকে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আমের সাথে আপনি বাদাম জাতীয় কোন খাবার রাখেন।
- দিনের যেকোনো সময়ঃ আপনি একটি গোটা আম দিনের যেকোনো সময় বড় খাবারের পর খেতে পারেন। অর্থাৎ সকালের নাস্তার পর কিংবা দুপুরের খাবার পর।
- সকালে খালি পেটেঃ অনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে আম খেতে পছন্দ করেন। ভুলেও এই কাজ করবেন না। কারণ, সকালে আম খেলে এতে শরীরে পরিপাক ক্রিয়া মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে আপনাদের যাদের এসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা ভুলেও সকালে খালি পেটে আম খাবেন না। তাতে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, খালি পেটে আম খেলে রক্তে সুগারের মাত্রাও হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে।
- রাতে খাওয়ার পরেঃ স্বাভাবিকভাবে রাতের দিকে হজম শক্তি অনেকটা কমে আসে। আমে যেহেতু প্রাকৃতিক সুগার রয়েছে। তাই রাতে খেলে পেটে হজমে সমস্যা হবে। এতে আপনার গ্যাস অম্বলও হতে পারে। তাছাড়া আম যেহেতু নিজেই পরিপূরক খাবারের কাজ করে তাই রাতের খাবারের পর পর আম খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
আম খেলে কি ওজন বাড়ে
আম খেলে কি ওজন বাড়ে? এই প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। আবার অনেকেই আছেন যারা ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আমের সিজনে আম খাওয়াই ছেড়ে দেন। দেখুন আম খেলেই যা আপনার ওজন বাড়বে বিষয়টা এমন না। বরং আপনার ওজন বাড়ার বিষয়টি নির্ভর করবে আপনি প্রতিদিন কি পরিমান আম খাচ্ছেন,আপনার দৈনন্দিন ক্যালোরির চাহিদা কত এবং আপনি প্রতিদিন কতটুকু শারীরিক পরিশ্রম করছেন তার ওপর। আমে সাধারণত প্রাকৃতিক সুগার, কার্বোহাইড্রেট ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফাইবার এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। তবে আমে চিনি ও ক্যালরি থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
বিশেষ করে একটি মাঝারি আমে প্রায় ১৫০-২০০ ক্যালোরি থাকে। তাই নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত পরিমাণে আম খেলে আপনার শরীরে দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। আবার যদি সেই ক্যালরি খরচ না হয় অর্থাৎ আপনি যদি কোন শারীরিক পরিশ্রম না করেন, তাহলে সেই অতিরিক্ত ক্যালরি আপনার শরীরে চর্বি হিসেবে জমতে থাকবে
এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আপনার ওজনও বেড়ে যাবে। কিন্তু পরিমিত পরিমাণে আম খেলে সাথে সুষম খাদ্য রাখলে ও নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ওজন কখনোই বাড়বে না এতোটুকু বলতে পারি। সুতরাং বুঝতেই পারছেন ওজন বাড়বে কিনা তা নির্ভর করবে আপনি কতটা আম খাচ্ছেন এবং আপনার সার্বিক জীবন যাপন কেমন তার উপর।
পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে
পাকা আমে কি কি ভিটামিন আছে? পাকা আম খাওয়ার পাশাপাশি আমে থাকা ভিটামিন গুলো আমাদের জেনে রাখা জরুরি। পাকা আমে নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে এই ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং রাতকানা প্রতিরোধ করে।এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমাদের ত্বকের জন্য উপকারী। ভিটামিন ই ও রয়েছে পাকা আমে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে আমাদের শরীরে কাজ করে এবং কোষগুলোকে সুস্থ রাখে। তবে পাকা আমে ভিটামিন কে এর পরিমাণ থাকে খুবই সামান্য। যা রক্ত জমাট বাধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
আবার ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে থায়ামিন, নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন, রিবোফ্লাভিন এবং ফোলেট। যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বাড়াতেও শক্তি উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও পাকা আম বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ এর একটি প্রাকৃতিক উৎস। যা ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী।
এসব ভিটামিন শরীরের নানা ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থ কার্যকারিতা বজায় রাখে। ফলে প্রতিদিন এর খাদ্য তালিকায় পাকা আম যুক্ত করলে তা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এর ঘাটতি পূরণে কার্যকার ভূমিকা রাখতে পারে।
কাঁচা আমের উপকারিতা
কাঁচা আমের উপকারিতাও অনেক। এখন চলছে পুরোদমে আমের মৌসুম। বাজারে গেলেই দেখা পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা আমের এবং দামও হাতের নাগালের মধ্যে। শুধুমাত্র গরমকালে একটুখানি নুন মরিচ দিয়ে কাঁচা আম খেতেই যে ভালো লাগে তা কিন্তু নয় বরং এটি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। অনেকে আবার কাঁচা আমের শরবত খেতেও পছন্দ করেন।পুষ্টিবিদদের মতে, ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে প্রায় ৪৪ ক্যালোরি পটাশিয়াম থাকে। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি ৫৪ মিলিগ্রাম ও ম্যাগনেসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম। এবার চলুন জেনে নিই কাঁচা আমের আরো বিশেষ কিছু গুণের কথা-
- ওজন হ্রাস করেঃ আপনারা যারা ওজন কমাতে চান বা শরীরের বাড়িতি ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলতে চান তারা ফলমূলের মধ্যে নিশ্চিন্তে বেছে নিতে পারেন কাঁচা আম। কারণ, পাকা আমের থেকে কাঁচা আমে চিনির পরিমাণ কম থাকে। এতে ক্যালোরি খরচ সহজ হয়।
- বমি বমি ভাব দূর করেঃ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকেরই বমি বমি ভাব হয়। এই সমস্যা আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা বেশি হয়। বমি বমি ভাব দূর করতে আপনি খেতে পারেন কাঁচা আম। কারণ, কাঁচা আম বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
- গ্যাস্ট্রিক দূর করেঃ আপনার কি বুকে প্রচন্ড জ্বালাপোড়া হয় কিংবা অম্লতার সমস্যায় ভুগছেন। তাহলে বলব অম্লতা কমাতে আপনি এক টুকরো কাঁচা আম মুখে নিতে পারেন। কারণ, কাঁচা আম অম্লতা দূর করতে খুব ভালো কাজ করে।
- যকৃতের সমস্যা দূর করেঃ আপনার যকৃত সুস্থ রাখতে এবং যকৃতের যেকোনো রোগ দূর করতে প্রাকৃতিক ঔষধ হতে পারে কাঁচা আম। কারন, আপনি যখন কাঁচা আম চিবিয়ে খান ঠিক তখন পিত্তরস এর পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে যকৃত ভালো থাকে এবং অন্ত্রের রোগ সংক্রমণ দূর হয়।
- ঝিমুনি ভাব দূর করেঃ সাধারণত গরমকালে দুপুরে খাওয়ার পর পর শরীরে একটা ঝিমুনি ভাব চলে আসে। এই ঝিমুনি ভাব দূর করতে আপনি খাওয়ার পর পর কয়েক টুকরো কাঁচা আম খেয়ে ফেলুন। এতে আপনার ঝিমুনি দূর হবে।
- ঘামাচি প্রতিরোধেঃ গরমের সময় ঘামাচি খুবই অস্বস্তি করে এবং খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এই ঘামাচি দূর করতে আপনি খেতে পারেন কাঁচা আম। কারণ, কাঁচা আমে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ঘামাচি প্রতিরোধে ম্যাজিক এর মত কাজ করে। সাথে সানস্ট্রোক হতেও বাধা দেয়।
- রক্তের সমস্যায় উপকারীঃ কাঁচা আমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং লৌহ থাকার কারণে এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে সক্ষম। ফোলে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে আপনি কাঁচা আম খেতে পারেন। এছাড়াও রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা এবং হেমোফিলিয়ার মত রক্তের সমস্যা দূর করতেও সক্ষম কাঁচা
- পেটের সমস্যা দূর করেঃ পেটের যেকোনো ধরনের সমস্যা বিশেষ করে বদ হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি প্রতিরোধে দারুন কাজ করে কাঁচা আম। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আপনি মধু সহযোগে তাতে সামান্য নুন মাখিয়ে কয়েক টুকরো কাঁচা আম খেয়ে ফেলুন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
- শরীরে লবণের ঘাটতি পূরণ করেঃ গরমকালে ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ বেরিয়ে যায়। কাঁচা আম খেলে শরীরে এই লবণের ঘাটতি পূরণ। এক্ষেত্রে আপনি কাঁচা আম জুস করেও খেতে পারেন।
- ডায়াবেটিস রোধেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাধারণত পাখা আম খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। তবে কাঁচা আম খেলে আপনি ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। কারণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঁচা আম দারুণ কার্যকরী।
- মাড়ির রক্ত পড়া বন্ধ করেঃ কাঁচা আম আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এর যোগান দিতে পারে। বিশেষ করে মাড়ি এবং স্কার্ভির রক্ত পড়া বন্ধ করতে পারে কাঁচা আম। আবার আমচুর স্কার্ভি প্রতিরোধেও কার্যকরী। শুধু কি তাই আপনার মুখের দুর্গন্ধ কিংবা দাঁতের ক্ষয় রোধ করতেও কাঁচা আম বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- শারীরিক শক্তি বাড়ায়ঃ একটা আম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। ফলে সামগ্রিক শরীরের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- শরীর ঠান্ডা রাখেঃ কাঁচা আমের থাকা পটাশিয়াম গরমের সময় আমাদের শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। ফলে গরমে কাঁচা আম খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং ঘাম কম হয়।
- হজম ভালো হয়ঃ পাকা আমে রয়েছে গ্যালিক অ্যাসিড, যা আমাদের পেটের হজম ক্রিয়া খুব সহজ করে।
- ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ কাঁচা আম প্রচুর পরিমাণ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী। সুতরাং ত্বক ও চুল ভালো রাখতে আপনি কাঁচা আম নিয়মিত খেতে পারেন।
- হার্ট ভালো রাখেঃ কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকার কারণে এটি আমাদের হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বিশেষ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- চোখ ভালো রাখেঃ চোখের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ভিটামিন এ, লুটেইন এবং জিয়া জেস্থিন, যা আপনি পুরোটাই পেতে পারেন কাঁচা আম খেয়ে। সুতরাং চোখ ভালো রাখতে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে আপনি কাঁচা আম খেতেই পারেন।
- গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ গর্ভাবস্থায় একজন গর্ভবতী মা এবং তার গর্ভস্থ গুণের জন্য ফোলেট জরুরী। কারণ ফোলেট গর্ভকালীন সময়ে নবজাতকের নিউরাল টিউব প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় আপনার গর্ভস্থ সন্তানের কথা ভেবে হলেও নিয়ম করে কাঁচা আম খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- শরীর সতেজ রাখেঃ প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহে শরীর ঠান্ডা এবং হাইড্রেটেড রাখতে আপনি খেতে পারেন কাঁচা আমের এক গ্লাস শরবত। এই শরবত খেলে আপনার শরীর যেমন সতেজ থাকবে তেমনি মেজাজ হবে ফুরফুরে।
- লিভার সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত নিয়ম করে কাঁচা আম খেলে এটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে লিভারও সুস্থ থাকে।
- মাথা ব্যথা দূর করেঃ প্রচন্ড গরমে অনেকেরই মাথাব্যথা করে। মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি খেতে পারেন কাঁচা আমের এক গ্লাস শরবত।
আম পাকলে হলুদ হয় কেন
আম পাকলে হলুদ হয় কেন বলুন তো! আম পাকলে হলুদ হয় কারণ এটি একটি প্রাকৃতিক ও জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফল। কাঁচা আমের রং সাধারণত সবুজ হয়। কারণ, এতে উচ্চমাত্রার ক্লোরোফিল নামক সবুজ রঞ্জন পদার্থ থাকে। কিন্তু ফল যত পরিপক্ক হতে থাকে ঠিক ততটাই এই ক্লোরোফিল ধীরে ধীরে ভেঙ্গে যেতে থাকে।একইভাবে আম যতই পাকতে থাকে এর ক্লোরোফিলের পরিমাণ ঠিক ততটাই কমে যেতে থাকে। আর স্বাভাবিকভাবেই ক্লোরোফিল এর জায়গায় ক্যারোটিন, জ্যানথোফিল ও অন্যান্য রঞ্জক পদার্থ গঠিত হতে থাকে। এই পদার্থ গুলোর জন্যই আম পাকলে হলুদ হয়ে যায়। এই রঞ্জন পদার্থগুলো শুধুমাত্র রঙের পরিবর্তনই করেনা
বরং পাকা ফলের স্বাদ, ঘ্রাণ ও পুষ্টিগুণেও পরিবর্তন আনে। এছাড়া পাকার সময় আমের মধ্যে এনজাইনের সাহায্যে কিছুটা রাসায়নিক পরিবর্তনও ঘটে। যেমন- স্টার্চ চিনি হয়ে যায় এবং এসিডের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে আম মিষ্টি হয় খেতে। সুতরাং আম পাকলে শুধু রং নয় বরং এর গন্ধ, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণেও পরিবর্তন চলে আসে। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন।
কাঁচা আম টক কিন্তু পাকা আম মিষ্টি কেন
কাঁচা আম টক কিন্তু পাকা আম মিষ্টি কেন হয় জানেন কি? এর পেছনে রয়েছে প্রাকৃতিক রাসায়নিক পরিবর্তন এর একটি সুন্দর ব্যাখ্যা। কাঁচা আমে সাইট্রিক, টারটারিক এবং ম্যালিক এসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। ফোলে কাঁচা আম খেতে টক হয়। তবে আম যখন ধীরে ধীরে তাকে ঠিক তখন এই এসিড গুলোর পরিমাণ কমতে শুরু করে।সেই সাথে আমে থাকা স্টার্চ বা শ্বেতসার শর্করায় রূপান্তরিত হয়। এই শর্করাগুলোর মধ্যে গ্লুকোজ, সুক্রোজ ও ফ্রুকটোজ থাকে বেশি পরিমাণে। যা আমকে মিষ্টি স্বাদ যুক্ত করে। ফোনে স্বাভাবিকভাবেই পাকা আমে এসিড কমে গিয়ে মিষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায়। ঠিক এই কারণেই পাকা আম খেতে মিষ্টি লাগে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কাঁচা আম টক এবং পাকা আম মিষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো রাসায়নিক উপাদানের পরিবর্তন ও শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি।
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের পুষ্টি উপাদানঃ
আমের পুষ্টি উপাদান
আমের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আম খাবার নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা আমরা এতক্ষণ জেনেছি। এবার আমরা জানবো আমের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। তাহলে চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আম এবং কাঁচা আমে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা নিচে ছকের মাধ্যমে দেখে নিন-প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের পুষ্টি উপাদানঃ
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালরি | ৯০ |
ক্যারোটিন | ২৭৪০ মাইক্রোগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১৪ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৬ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৪১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি-১ | ০.১ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০৮ মিলিগ্রাম |
রিবোফ্লাভিন | ০.৯ গ্রাম |
আয়রন | ১.৩ গ্রাম |
খনিজ লবন | ০.৫ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৯ গ্রাম |
প্রোটিন | ১ গ্রাম |
শ্বেতসার | ২০ গ্রাম |
ভিটামিন এ | ২৭ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন বি-৬ | ০.১১৯ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১৬৮ মিলিগ্রাম |
কপার | ০.১১০ মিলিগ্রাম |
শর্করা | ২০ গ্রাম |
আমিষ | ১ গ্রাম |
ফাইবার | ০.৭ গ্রাম |
জলীয় অংশ | ৭৮.৬ মিলিগ্রাম |
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা আমের পুষ্টি উপাদানঃ
ক্যালরি | ৬০ |
পানি | ৮৩-৮৫ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১১ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৩৬.৪ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন ই | ০.৯ মিলিগ্রাম |
থায়ামিন | ০.০৮ মিলিগ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ১.৯৮ গ্রাম |
আয়রন | ০.৬ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১৬৮ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | ৪৩ মাইক্রোগ্রাম |
প্রোটিন | ০.৮৩ গ্রাম |
সুগার | ১৩.৭ গ্রাম |
ভিটামিন এ | ৫৪ মাইক্রোগ্রাম |
ভিটামিন কে | ৪.২ মাইক্রো গ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১০ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ১.৬ গ্রাম |
আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
আম খাওয়ার উপকারিতা আমরা বিস্তারিতভাবে আজকের আর্টিকেল আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এখন চলছে আমের মৌসুম গ্রীষ্মকাল বা মধুমাস। আর মধুমাস মানেই কিন্তু চারিদিকে রসে মাথা মাখি আর আম খাওয়ার দিন। আবার স্বাদ, গন্ধ এবং পুষ্টির দিক থেকেও আম অন্যান্য ফলের থেকে সেরা। সেদিক থেকে বিবেচনায় আমকে ফলের রাজা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়েছে।আম কাঁচা বা পাকা উভয় আমাদের শরীরের পক্ষে ভালো। তবে খেতে হবে সঠিক সময়ে এবং নিয়ম মেনে। তাছাড়া গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে শারীরিক প্রশান্তি পেতে রসালো আমের জুড়ি মেলা ভার। ভালো থাকুন সুস্থ
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url