পুষ্টিগুণে ঠাসা তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি জানতে চান? খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয় জানেন কি? হয়তো জানেন না। না জেনে থাকলে আজকের পোস্ট পড়ে জেনে নিতে পারবেন। প্রচন্ড গরমে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে লাল টুকটুকে এক ফালি রসালো তরমুজ খাওয়ার কোন বিকল্প নেই।
তাছাড়া পুষ্টিগুণেও তরমুজ অনন্য। ছোট থেকে বড় সকলেই ফলটি খেতে ভীষণই পছন্দ করে। আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় হল তরমুজের স্বাস্থ্য উপকারিতা, অপকারিতা এবং খালি পেটে এই ফলটি খেলে ঠিক কি হয়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
- তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
- তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
- তরমুজের অপকারিতা
- খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়
- তরমুজ খাওয়ার নিয়ম
- তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
- তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
- গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
- তরমুজে কি সুগার আছে
- তরমুজে কি এলার্জি আছে
- তরমুজে কি ভিটামিন আছে
- তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা কম বেশি আমাদের সবারই জানা। এখন চলছে তরমুজের মৌসুম। বাজারে গেলেই দেখা যায় তরমুজের ছড়াছড়ি। উপকারী এই ফলটি গরমের দিনের আমাদের শরীর ঠান্ডা রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এতে প্রায় ৯২% জল থাকে যা দেহের পানি শূন্যতা দূর করতে পারে। তাছাড়া তরমুজে থাকা ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম, আয়রন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, যা ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের চোখের উপকার করে। তরমুজে লাইসোপিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই ফলটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও দারুন কাজ করে।
কারণ, এতে রয়েছে সাইট্রুলিন যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আবার তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি হলেও গ্লাইসেমিক লোড কম হয়।ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এই ফলটি উপকারী। শুধু কি তাই, হজম করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও তরমুজ মহৌষধ এর মত কাজ করে। নিয়মিত তরমুজ খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমে।
আবার তরমুজে ফ্যাট বা কোলেস্টেরল না থাকায় এটি ওজন কমাতেও সহায়ক। তরমুজ খেলে এটি আমাদের শারীরিক ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি শরীর ও মন চাঙ্গা রাখে। তবে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে ঘটতে পারে বিপত্তি। বিশেষ করে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে আপনার পেট ফাঁপা বা গ্যাস্ট্রিকের মত সমস্যা হতে পারে। আবার এতে সুগার বেশি থাকার কারণে
অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যও তরমুজ খুব একটা উপকারী নয়। কারণ, এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। সংরক্ষিত তরমুজের মধ্যে আবার অনেক সময় ফরমালিন মেশানো থাকে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। সুতরাং বুঝতেই পারছেন অতিরিক্ত তরমুজ খেলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হতে পারে।
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা বেশি এর অপকারিতার থেকে। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি শুধুমাত্র খেতেই সুস্বাদু তা নয় বরং নানা ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। যা আমাদের শরীরের নানা উপকারে আসে। আজকে আলোচনার শুরুতেই চলুন জেনে নিই এক ফালি তরমুজ খাওয়ার হাজারো উপকারিতা সম্পর্কে-- শরীর হাইড্রটেড রাখেঃ তরমুজের প্রধান উপাদান হল পানি। অর্থাৎ এতে জলীয় অংশের পরিমাণ প্রায় ৯২ শতাংশ। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে যখন শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায় ঠিক তখন তরমুজ আমাদের শরীরের পানির চাহিদা পূরণে চমৎকার কাজ করে। সুতরাং তরমুজ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। আর হাইড্রেশন বাড়লে আপনার ত্বক ভালো থাকবে, কিডনি ঠিকমতো কাজ করবে এবং হজম শক্তিও বাড়বে।
- হৃদপিন্ডের জন্য উপকারীঃ তরমুজে রয়েছে লাইসোপিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রক্তনালীকে নমনীয় রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদরোগের ঝুকি কমে। তাছাড়া এতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকার ভূমিকা পালন করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ তরমুজের লাইসোপিন, ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীর থেকে ফ্রি রেডিকেলস খুব সহজেই দূর করতে পারে। ফ্রি রেডিকেল হলো এক ধরনের ক্ষতিকর উপাদান যা কোষ ধ্বংস করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, তরমুজে থাকা লাইসোপিন প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রতিরোধে কার্যকর।
- ত্বক ও চুলের যত্নে তরমুজঃ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি তে ভরপুর। সুতরাং তরমুজ খেলে একদিকে এর ভিটামিন সি আমাদের ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে। ফলে ত্বক টানটান ও উজ্জ্বল থাকে। অন্যদিকে ভিটামিন এ ত্বক ও চুলের কোষ মেরামত করে এবং নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। তাই বলবো ত্বক মসৃণ, দাগ মক্ত এবং উজ্জ্বল করতে আপনি মৌসুমী নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ তরমুজে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের থেকে কয়েক গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগ সংক্রমণ থেকে দূরে থাকে।
- হজমশক্তি বৃদ্ধি করেঃ আপনি কি দীর্ঘদিন যাবৎ কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? এখন চলছে তরমুজের মৌসুম। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনি নিয়মিত তরমুজ খান। কারণ, তরমুজে রয়েছে সামান্য ফাইবার এবং উচ্চমাত্রার পানি। এই দুটি উপাদানই আমাদের হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং অন্ত্রও পরিষ্কার থাকে। তাছাড়া আপনারা যারা হালকা হজমের খাবার খুঁজছেন তাদের জন্য তরমুজ একটি চমৎকার বিকল্প খাবার হতে পারে।
- ওজন কমায়ঃ আপনারা যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য তরমুজ হতে পারে আদর্শ খাদ্য উপাদান। কারণ, ১০০ গ্রাম তোর মধ্যে মাত্র ক্যালোরি থাকে ৩০ এর মত। আবার সুস্বাদু এই ফলটি খেতে মিষ্টি হলেও এতে ফ্যাট বা কোলেস্টেরল নেই বললেই চলে। ফলে তরমুজ বেশি খাওয়ার পরেও এতে ওজন বাড়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না বরং তা পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধা কমায়।
- চোখের জন্য উপকারীঃ তরমুজে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের শরীরে গিয়ে ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়। তাছাড়া এক টুকরো তরমুজে প্রায় ৯-১১ শতাংশ ভিটামিন এ থাকে। যা আমাদের চোখের জন্য ভীষণই উপকারী। সুতরাং চোখের রাতকানাসহ যে কোন সমস্যা দূর করতে তরমুজ দারুন কাজ করে। বিশেষ করে এটি চোখের শুষ্কতা দূর করে এবং কর্মিয়াকে সুরক্ষিত রাখে।
- ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করেঃ নিয়মিত তরমুজ খেলে এতে থাকা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সাথে সাথে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ ভাইরাস, ঠান্ডা, কাশি ইত্যাদি থেকে আমাদের শরীর বেশ সুরক্ষিত থাকে।
- পেশির ব্যথা দূর করেঃ তরমুজে রয়েছে সিট্রুলিন যা পেশীর রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে কাজ করে। এটি ব্যায়ামের পরে দ্রুত ব্যথা কমায় এবং রিকভারি করতে সাহায্য করে। সুতরাং শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম করার পরে তরমুজ বা তরমুজের জুস পান করলে পেশির ব্যথা দূর হয় এবং শারীরিকভাবে স্বস্তি পাওয়া যায়।
- কিডনির জন্য উপকারীঃ উচ্চ পানি এবং পটাশিয়াম এ দুটি উপাদান কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়। যা পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে তরমুজে। ফলে নিয়মিত তরমুজ খেলে এটি আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা কিডনি থেকে অতিরিক্ত বজ্র পদার্থ বের করে দেয়। এতে কিডনি ভালো থাকে এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে।
- ডায়াবেটিসেও উপকারীঃ তরমুজে প্রাকৃতিক সুগার থাকলেও এর গ্লাইসেমিক লোড হলো ৫ যা অনেকটাই কম। আবার গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ৮০, যা কিনা মাত্র এক বাটি কর্নফ্লেক্সের সমপরিমাণ। সে হিসেবে এতে ক্যালরির পরিমাণ একেবারেই কম। ঠিক এই কারণেই তরমুজ খেলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বাড়তে দেয় না। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরাও তরমুজ খেতে পারেন। তবে তা পরিমাণ মতো এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
- এসিডিটি কমায় এবং পেট ঠান্ডা রাখেঃ আপনার গ্যাস, অম্বল বা এসিডিটি দূর করতে পারে তরমুজ। কারণ, তরমুজে রয়েছে ক্ষারীয় উপাদান, যা আমাদের শরীরের এসিড ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলে পেট ঠান্ডা রাখতে, পেটের গ্যাস কমাতে এবং পেটের জ্বালাপোড়া দূর করতে তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
- অ্যানিমিয়া প্রতিরোধেঃ অ্যানিমিয়া প্রতিরোধেও তরমুজ চমৎকার কাজ করে। কারণ, এতে কিছু পরিমাণ আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। তাছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। ফলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে আপনি নিশ্চিন্তে তরমুজ খেতে পারেন।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ তরমুজে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে তরমুজ খেলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
- হাড় মজবুত করেঃ তরমুজের রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম। যা আমাদের হাড়ের গঠন বজায় রাখে এবং হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করে। সুতরাং বয়সজনিত কারণে আমাদের হাড়ের যে ক্ষয় হয় তা প্রতিরোধে কাজ করে তরমুজ।
- প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টারঃ প্রচন্ড গরমে তরমুজ খেলে এটি আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক এনার্জি পোস্টার হিসেবে কাজ করে। কারণ এতে রয়েছে চিনি ও ইলেকট্রোলাইট, যা অতি দ্রুত আমাদের শরীরকে এনার্জি সরবরাহ করতে পারে।
- ঘুম ভালো হয়ঃ যাদের নিদ্রা রোগ রয়েছে অর্থাৎ ভালো ঘুম হয় না তারা ভালো ঘুমের জন্য খেতে পারেন তরমুজ। কারন, তরমুজে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি-৬ স্নায়ু শান্ত রাখে। ফলে ঘুম ভালো হয়।
- অ্যাজমার ঝুঁকি কমায়ঃ অ্যাজমা রোগীদের জন্যও তরমুজ উপকারী। কারণ, তরমুজে থাকা ভিটামিন সি শ্বাসনালীর ইনফ্লামেশন কমিয়ে এজমার ঝুঁকি কমাতে কাজ করে।
- উচ্চ রক্তচাপজনিত মাথাব্যথা দূর করেঃ যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে অনেক সময় তাদের মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়। ঠিক এই সময় হাইড্রেশনের কারণে তরমুজ খেলে ডিহাইড্রেশনের মাথা ব্যথা কমায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
- দাঁত ভালো রাখেঃ তরমুজে থাকা ভিটামিন সি আমাদের দাঁতের জন্যও উপকারী। বিশেষ করে দাঁত শক্তিশালী করতে এবং দাঁতের মাড়ি মজবুত করতে তরমুজ ম্যাজিক এর মত কাজ করে।
- কোলেস্টের নিয়ন্ত্রণ করেঃ নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার ফলে এটি আমাদের শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ঠিক সে কারণেই তরমুজ খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখেঃ আপনি কি জানেন তরমুজ কেন লাল হয়? তরমুজের লাল হওয়ার প্রধান উৎস হল লাইকোপেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই লাইকোপেন উপাদানটি আমাদের শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে লাইকোপেন ক্যান্সার প্রতিরোধে হিসেবেও কাজ করে।
- উপকারী ফ্যাটঃ তরমুজে ফ্যাট এর পরিমাণ নেই বললেই চলে চলে। তবে যতটুকু আছে তা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী। বিশেষ করে মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড এই দুটি ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎপিণ্ড সহ আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুরক্ষার জন্য জরুরী।
- আর্থাইটিসের ঝুঁকি কমায়ঃ তরমুজে রয়েছে বিটা ক্রিপটোক্সানথিন নামক একপ্রকার প্রাকৃতিক রঙ্গন। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা দূর করে। তাছাড়া কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে বয়সজনিত কারণে রিউমাটয়েড আর্থাইটিসের ঝুঁকি কমায় তরমুজ।
- দেহের স্নায়ুর পুষ্টি যোগায়ঃ আমাদের শরীরে এবং মুখের ত্বকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মাকড়সা জালের মত অগণিত স্নায়ু। এই স্নায়ুগুলোকে সকল রাখতে প্রয়োজন ভিটামিন বি। যা আপনি পেতে পারেন তরমুজ থেকে। সুতরাং তরমুজ খেলে এটি স্নায়ুর যেমন পুষ্টি যোগায় তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায়।
- গর্ভাবস্থায় উপকারীঃ গর্ভকালীন সময়ে চিকিৎসকরা গর্ভবতী মা-বোনদের তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে, যা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শারীরিক ফোলা ভাব ও অসুস্থতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
- ত্বক পরিষ্কারক হিসেবেঃ অনেকের ঘাড় এবং মুখে ব্রনের সমস্যাই ভুগতে থাকেন। ঘাড় ও মুখের এই ব্রণের সমস্যা দূর করতে পারে তরমুজ। কারণ, তরমুজে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। আমাদের ত্বক থেকে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে পারে। সুতরাং তরমুজ একদিকে যেমন ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে তেমনি অন্যদিকে ত্বকে ব্রণের প্রবণতা কমায়।
তরমুজের অপকারিতা
তরমুজের অপকারিতাও রয়েছে তবে এর উপকারিতাই বেশি। তরমুজ যতই সুস্বাদু হোক না কেন, অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এটি আপনার শরীরের উপর কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকে আবার গরমে তৃষ্ণা মেটাতেও মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেয়ে থাকেন। কিন্তু অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া আদৌ কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী? চলুন জেনে নেয়া যাক-- হজমে সমস্যা করেঃ তরমুজ নিঃসন্দেহে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এতে থাকা ফ্রুকটোজ এবং ফাইবার পেটের মধ্যে গোলযোগ সৃষ্টি করে। তাতে স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। আবার অনেকের শরীর তরমুজে থাকা সুগার সঠিকভাবে শোষণ করতে পারে না। ফলে ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা এমনকি গ্যাস অম্বলের সমস্যাও হতে পারে।
- ডায়াবেটিসে ঝুঁকিপূর্ণঃ পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষ করে রক্তে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া এর লাইসেন্স ৭২। কোন খাবারে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক কতটুকু বাড়ে তা মূলত নির্ভর করে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোডের ওপরে।
- যদি গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭০ হয় তাহলে সেটি উচ্চমাত্রার এবং ৫৫ হলে সেটি কম মাত্রার। সুতরাং লাইসেন্স ইনডেক্স যত বেশি হবে রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক ততটাই বাড়তে থাকবে। ফলে অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তরমুজ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো।
- কিডনির ওপর প্রভাব ফেলেঃ তরমুজে উচ্চমাত্রার পানি এবং পটাশিয়াম রয়েছে যা কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। তাই আপনার যদি কিডনি জনিত কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি অতিরিক্ত না খেয়ে সীমিত পরিমানে তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- লিভারের প্রদাহ বাড়ায়ঃ আপনারা যারা অ্যালকোহল সেবন করেন তারা তরমুজ খাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ, তরমুজে লাইকোপেন থাকায় এটি অ্যালকোহলের সাথে বিক্রিয়া করে লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
- লাইকোপেনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ তরমুজে লাইকোপেন নামক একপ্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ফলে বেশি খেলে এটি বমি বমি ভাব, বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাস ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- হাইপারকোলেমিয়াঃ পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খেলে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত খেলে আপনার শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যার ফলস্বরূপ শারীরিক দুর্বলতা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
- রক্তচাপ কমায়ঃ তরমুজে সিট্র সিট্রুলিন থাকে যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তনালী প্রশস্ত করে ফেলে। ফলে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে আপনার রক্তচাপ হঠাৎ করে কমে যেতে পারে। যা কিনা আপনার মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ইত্যাদির কারণ হতে পারে।
- ইউরিন এর চাপ বাড়েঃ তরমুজে প্রায় ৯২% জলীয় অংশ থাকে। ফলে অতিরিক্ত খেলে স্বাভাবিকভাবেই তরমুজের পানি শরীরে ফ্লইডের ভারসাম্য বাড়িয়ে ইউরিনের চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে রাতে ঘুমের সময় এটি বেশি হয়।
- ওজন বাড়তে পারেঃ তরমুজে যদিও ক্যালরির পরিমাণ একেবারেই কম, তা সত্ত্বেও অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট জমতে থাকে। ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকেই যায়।
- এলার্জির সমস্যাঃ তরমুজের থাকা প্রোটিন কিছু কিছু মানুষের শরীরে এলার্জির কারণ হতে পারে। আর এলার্জির উপসর্গ হিসেবে ঠোঁট ফুলে যাওয়া, চোখ চুলকানো, চামড়ায় রেস পড়া, গলা চেপে আসা ইত্যাদি অনুভব হতে পারে।
- দাঁতের ক্ষয়ঃ তরমুজ খেলে দাঁত ও দাঁতের মাড়ি শক্ত হয় এ কথা ঠিক। কিন্তু তরমুজে প্রাকৃতিক সুগার ও এসিড বেশি থাকার কারণে অতিরিক্ত তরমুজ খেলে এটি আপনার দাঁতের এনামেল ক্রয় করে ফেলতে পারে। ফলে ক্যাভিটির আশঙ্কাও অনেকটাই বেড়ে যায়।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খাওয়ার ফলে এতে থাকা লাইকোপেন এবং অন্যান্য বায়োএকটিভ যৌগ আপনার শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য।
- পেটে ব্যথা ও অস্বস্তিঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত তরমুজ খেলে এতে থাকা ফ্রুকটোজ অনেক সময় হজমে সমস্যা করে। আপনার পেট ব্যথা ও পেটের অস্বস্তি বেড়ে যেতে পারে।
- প্রস্রাবের চাপ বাড়েঃ তরমুজে জলীয় অংশ বেশি থাকার কারণে অতিরিক্ত খেলে বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে, যা আপনার ডিহাইড্রেশন বা ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স ঘটাতে পারে।
- শরীরে ঠান্ডা লাগাঃ গরমের সময় আমরা সাধারণত ঠান্ডা তরমুজ খেতেই বেশি পছন্দ করি। আর এতেই আপনার ঠান্ডা জনিত রোগ বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ঠান্ডা তরমুজ বা ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা তরমুজ বেশি খাওয়ার ফলে ঠান্ডা লাগা, সর্দি লাগা, নাক দিয়ে পানি পড়া কিংবা গলা ব্যথা হতে পারে। তাই ঠান্ডা তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- ওভার হাইড্রেশনঃ তরমুজের তিন ভাগের দুই ভাগই জলীয় অংশ। ফলে অতিরিক্ত খেলে শরীরের পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে করে শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ অনেকটাই কমে যেতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত পানি যদি শরীর থেকে বের হতে না পারে তখন আপনার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- পা ফুলে যেতে পারে, কিডনি বিকল হতে পারে, শারীরিক ক্লান্তি ভাব হতে পারে।
খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়
অনেকেই আছেন যারা খালি পেটে তরমুজ খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন খালি পেটে তরমুজ খেলে ঠিক কি হয়? এটি আদৌ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর। খালি পেটে তরমুজ খেলে এটি আপনার শরীরের উপর কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, তরমুজ প্রায় ৯২% পানি, ফাইবার এবং সুগারে ভরপুর।ফলে খালি পেটে খেলে আপনার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। এতে আপনার পেট ফাঁপা, অম্বলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজম শক্তি দুর্বল তাদের এই সমস্যা বেশি হয়। আবার তরমুজ ঠান্ডা প্রকৃতির ফল হওয়ায় সকালে খালি পেটে খেলে আপনার সর্দি কাশিও হতে পারে। তাই চেষ্টা করবেন সবসময়ই ভরা পেটে তরমুজ খেতে।
তরমুজ খাওয়ার নিয়ম
তরমুজ খাওয়ার নিয়ম কি? তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি। এবার আমরা জানবো তরমুজ খাওয়ার বেশ কিছু নিয়ম সম্পর্কে। তরমুজ যদিও উপকারী কিন্তু নিয়ম না মেনে ভুল সময়ে খেলে হতে পারে বিপত্তি। তাই নিয়ম মেনে তরমুজ খাওয়াটা জরুরী। প্রিয় পাঠক, এবার চলুন জেনে নিই তরমুজ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে-- সকালে বা দুপুরেঃ তরমুজ খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো সকালে নাস্তার পরে কিংবা দুপুরে লাঞ্চের আগে। কারণ, এই সময় আমাদের হজম শক্তি তুলনামূলকভাবে অন্য সময়ের থেকে বেশি থাকে। ফলে তরমুজ সহজে হজম হয় এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। তবে আপনি চাইলে দুপুরের খাবার খাওয়ার পরও খেতে পারেন।
- ওয়ার্কআউট এর আগে বা পরেঃ যে কোন শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের আগে বা পরে তরমুজ খেলে এটি শরীরকে অতিরিক্ত এনার্জি দেয় এবং রিফ্রেশ করে।
- খালি পেটে না খাওয়াঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কারণ, তরমুজে পানি ও সুগার বেশি থাকার কারণে খালি পেটে তরমুজ খেলে অনেক সময় পেটে ব্যথা গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে। তাই তরমুজ খেতে হলে খালি পেটে না খেয়ে হালকা কিছু খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে খাওয়া উচিত।
- ভাতের সাথে না খাওয়াঃ তরমুজের সাথে ভাত খেলে হজম ক্রিয়ায় গোলযোগ সৃষ্টি হয়। তাই ভাত এবং তরমুজ একসাথে খাওয়া এড়িয়ে চলুন
- রাতে খাবারের পরেঃ তরমুজ না খাওয়া রাতে খাবারের পর তরমুজ না খাওয়াই ভালো। কারণ রাতে ঘুমানোর আগে তরমুজ খেলে আপনার হজমের সমস্যা হতে পারে। আবার তরমুজে পানির পরিমান বেশি থাকায় রাতের বেলা আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ বাড়তে পারে। যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সুতরাং রাতের বেলা তরমুজ খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ফ্রিজ থেকে বের করেই ঠান্ডা তরমুজ না খাওয়াঃ আমরা অনেক সময় প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা তরমুজ খেতে পছন্দ করি। অনেকে আবার তরমুজ কিনে সেটি ঠান্ডা করার জন্য ফ্রিজে রেখে দেন। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা তরমুজ বের করে খেলেই আপনার গলা ব্যথা, জ্বর, সর্দি, কাশি হতে পারে।তাই তরমুজ ফ্রিজ থেকে বের করে কিছুক্ষণ রেখে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার পর খাওয়া উচিত।
- তরমুজের সাথে পানি খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ তরমুজ খাওয়ার পরপর কখনোই পানি খাবেন না। কারণ, তরমুজ খাওয়ার পর পানি খেলে আপনার হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে গ্যাস বা এসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে। তাই তরমুজ খাওয়ার অন্তত ৩০-৪০ মিনিট পর পানি পান করুন।
- লবণঃ তরমুজ খাওয়ার পর কিংবা তরমুজের সাথে লবণ মিশিয়ে কখনোই খাবেন না। কারণ, তরমুজের সাথে লবণ মিশিয়ে খেলে তরমুজের পুষ্টিগুণ আপনার শরীরের সঠিকভাবে শোষিত নাও হতে পারে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
- দুধঃ তরমুজ এবং দুধ একসাথে খাওয়া কিংবা তরমুজ খাওয়ার পর দুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ, দুধ ও তরমুজ একসাথে খেলে তরমুজে থাকা ভিটামিন সি দুধের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে। এতে আপনার শরীর ফুলে যেতে পারে।
- উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবারঃ তরমুজ খাওয়ার পর পরে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন। অন্যথায় আপনি তরমুজের পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হবেন।
- ডিমঃ তরমুজ এবং ডিমও একসাথে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই দুটি আলাদা প্রকৃতির খাদ্য উপাদান। সুতরাং তরমুজ এবং ডিম একসাথে খেলে এই দুটি উপাদান বিক্রিয়া করে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, এই দুটি উপাদানই একে অপরকে খাবার হজম হতে বাধা প্রদান করে।
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে? এ প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই। দেখুন তরমুজ খেলে সাধারণভাবে ওজন বাড়ে না বরং এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কারণ তরমুজে প্রায় 92 ভাগ জল থাকে। যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পেট ভরিয়ে রাখে। আবার এতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। যা প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ৩০ ক্যালোরি থাকে। এছাড়া তরমুজে কোন ফ্যাট নেই বললেই চলে।আর প্রাকৃতিক সুগার থাকলেও তা অতিমাত্রায় নয়। ঠিক সে কারণে পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যায় না। অন্যদিকে তরমুজে থাকা ফাইবার আমাদের হজমে সাহায্য করে ক্ষুধা কমায়। যা ওজন কমাতে সহায়ক। সুতরাং যারা ওজন কমাতে চান তারা ওজন কমানোর বিকল্প হিসেবে খাদ্য তালিকায় ডাইট লস এই ফলটিকে যোগ করে নিতে পারেন।
তবে দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে আপনার শরীরে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট বেড়ে যেতে পারে। এতে আপনার ওজন কিছুটা বাড়লেও বাড়তে পারে। তাই বলবো তরমুজ খাওয়ার সময় এর পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন। কারণ, পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খেলে ওজন বাড়ার পরিবর্তে উল্টো আপনার ওজন কমতে পারে।
তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
তরমুজ খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে? যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। দেখুন তরমুজ খেলে ডায়াবেটিস বাড়বে কিনা তা মূলত নির্ভর করবে আপনার খাওয়ার পরিমাণ এর ওপর। কারণ, তরমুজ একটি মিষ্টি জাতীয় ফল হওয়ায় এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক সুগার থাকে। আবার এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৭২ যা তুলনামূলকভাবে বেশি।অর্থাৎ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়াতে পারে। তবে এর গ্লাইসেমিক লোড কম। কারণ, এতে ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। তাই আপনি যদি অল্প পরিমাণে যেমন- এক কাপ পরিমাণ তরমুজ খান তাহলে সেটি আপনার ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
যা আপনার ডায়াবেটিসের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে অতিরিক্ত খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে যা ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় ডায়াবেটিস রোগীদের তরমুজ খাওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খাওয়া এবং রক্তের শর্করার মাত্রা নজরদারিতে রাখা।
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার উপকারিতা কি কি? তরমুজের নানাবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা আমরা এতক্ষন জেনেছি। কিন্তু আপনি কি জানেন গর্ভকালীন সময়েও এই ফলটি দারুন উপকারী। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসকরা তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। গর্ভাবস্থায় তরমুজ খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে-- পানি শূন্যতা দূর করেঃ তরমুজে যেহেতু জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই গর্ভাবস্থায় তরমুজ খেলে এটি শরীরের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে। কারণ, এই সময় শরীরে পানির চাহিদা বেশি থাকে। তাই তরমুজ খেলে ডিভাইট্রেশনের ঝুঁকি কমে। যা শারীর ক্লান্তি ও মাথা ব্যথা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে।
- পুষ্টি যোগায়ঃ তরমুজের হাউড্রেটিং বৈশিষ্ট্য ছাড়াও এটি প্রচুর পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। এতে ভিটামিন এ, বি, বি-৬, এবং ভিটামিন সি রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে। ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী, ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ভিটামিন সি শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে কাজ করে।
- মর্নিং সিকনেস কমায়ঃ গর্ভকালীন সময়ের একটি সাধারণ সমস্যা হল সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর শরীরে বমি বমি ভাব অনুভূত হয়। এই সমস্যা প্রতিরোধে আপনি তরমুজ খেতে পারেন। কারণ, তরমুজ খেলে পেট ঠান্ডা থাকে। তাছাড়া এতে সুগার ও পানির সংমিশ্রণ সকালের মর্নিং ফিটনেস কমাতে সাহায্য করে।
- গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে থাকেন। ঠিক সে কারণেই এই সময় তরমুজ খেলে উপকার পেতে পারেন। কারণ, তরমুজে থাকা ফাইবার হজমের সহায়তা করে এবং মলত্যাগ সহজ করে।
- পা ফোলা কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় অনেকেরই শরীর ফুলে যায়। বিশেষ করে পা এবং পায়ের গোড়ালি। কিন্তু এই সময় তরমুজ খেলে তরমুজের এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাবলী এবং উচ্চ জলীয় উপাদান শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে। যা পা, হাত ফোলা ভাব কমায়।
- হিট রেস ও গরম লাগা কমায়ঃ গর্ভকালীন সময়ে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেড়ে যায়। তাই শরীরের তাপমাত্রা ঠান্ডা রাখতে আপনি তরমুজ খেতে পারেন। তরমুজ খেলে শরীর যেমন ঠান্ডা থাকে ঠিক তেমনি হিট রেস বা চর্ম সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- শিশুর গঠন ও বিকাশে সহায়কঃ তরমুজে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এটি আপনার গর্ভস্থ শিশুর চোখ, হাড় ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় রক্তচাপ বেড়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে আপনি তরমুজ খেতে পারেন। কারণ, তরমুজে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। যা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
- এসিডিটি দূর করেঃ গর্ভাবস্থার আরেকটি প্রধান সমস্যা হলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। এই সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে পারে তরমুজ। কারণ, তরমুজের ক্ষারীয় উপাদান পেটের এসিড কমাতে সাহায্য করে।
তরমুজে কি সুগার আছে
তরমুজে কি সুগার আছে? অনেকেই জানতে চান। তাহলে জেনে রাখুন তরমুজে সুগার থাকে। তবে এটি প্রাকৃতিক সুগার যা ফ্রুক-টোজ নামে পরিচিত। তরমুজে প্রায় ৬-৭ শতাংশ চিনি থাকে। যার ফলে এটি খেতে মিষ্টি স্বাদের হয়। তবে যেহেতু এই চিনি প্রক্রিয়াজাত নয় এবং প্রাকৃতিকভাবেই ফলের সাথেই থাকে তাই এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু নয়।যদি আপনি পরিমিত পরিমানে খান। আবার তরমুজের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হলেও এর গ্লাইসেমিক লোড কম। কারণ, এতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ফলে এটি দ্রুত রক্তে শর্করার পরিমান বাড়িয়ে দেয় না। তবে ডাইবেটিস রোগীদের তরমুজ খাওয়ার আগে তাদের ডায়েটিশিয়ানদের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
তরমুজে কি এলার্জি আছে
তরমুজে কি এলার্জি আছে? তরমুজ খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা ও শারীরিক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জেনেছেন। কিন্তু তরমুজে কি আদৌ এলার্জি থাকে। দেখুন কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি এলার্জির কারণ হতে পারে। কারণ, তরমুজে থাকা কিছু প্রাকৃতিক প্রোটিন যেমন- profilin এবং PR -10 শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।বিশেষ করে যারা আগে থেকে এলার্জিতে ভুগছেন তাদের এই সমস্যা হতে পারে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়াকে বলা হয় ওরাল এলার্জি সিনড্রোম। আর এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঠোঁট ফোলা, মুখ, গলা, জিভে চুলকানি ইত্যাদি হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে হাঁচি কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে যদিও তা বিরল। তাই বলবো তরমুজ খাওয়ার পর যদি এমন উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে দেরি না করে আপনার একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
তরমুজে কি ভিটামিন আছে
তরমুজে কি ভিটামিন আছে? তরমুজের এতসব স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং অপকারিতা জানার পর এবার আপনি নিশ্চয়ই তরমুজের সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে চলুন প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে কি পরিমান পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা আপনার সুবিধার্থে একটি ছকের মাধ্যমে তুলে ধরছি-পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
শক্তি | ৩০ ক্যালোরি |
পানি | ৯২ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.৬ গ্রাম |
নিয়াসিন | ০.২ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.১৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৭.৫ গ্রাম |
সুগার | ৬.২ গ্রাম |
ফাইবার | ৯৫ গ্রাম |
আয়রন | ০.২৪ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৯ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ১০ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১১ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১১২ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন সি | ৮.১ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন এ | ২৮৪ মাইক্রোগ্রাম |
খনিজ পদার্থ | ০.২ গ্রাম |
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা এতক্ষণ আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। যা পড়ে আপনি হয় নিশ্চয়ই উপকৃত হয়েছেন। প্রচুর পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে তরমুজ অন্যতম। এমনকি তরমুজের বীজও ফেলনা নয়, বরং তরমুজের মতো তরমুজের বীজও সমানভাবে উপকারী। একটা সময় ছিল যখন কেবলমাত্র মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে তরমুজ পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান কৃষি প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এখন বাজারে প্রায় সারা বছরই তরমুজ পাওয়া যায়। তরমুজের পুষ্টিগুণ এতটাই বেশি যে একে সুপারফুড হিসেবেও ধরা হয়। তাছাড়া আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি অন্যান্য খনিজের ঘাটতি পূরণ করতেও তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
পিন পয়েন্ট ম্যাক্স এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url